বাইবার্সের পরিচয় দাও।

বাইবার্সের পরিচয় দাও।

 রুকনুদ্দিন বাইবার্স সম্পর্কে যা জান লেখ।

অথবা, রুকনুদ্দিন বাইবার্সের পরিচয় দাও।

উত্তর ভূমিকা: মিসরে মামলুক বংশের ইতিহাসে রুকনুদ্দিন বাইবার্স একটি অনন্য নাম। মামলুক সুলতানদের মধ্যে রুকনুদ্দিন বাইবার্স ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক। তিনি সামান্য অবস্থা থেকে নিজ যোগ্যতা ও প্রতিভাবলে মামলুক সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করেছিলেন। তিনি তার বীরত্বপূর্ণ কার্যাবলি দ্বারা মামলুক সাম্রাজ্যকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন।

রুকনুদ্দিন বাইবার্স নিম্নে রুকনুদ্দিন বাইবার্স সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-


১. পরিচয়: তুর্কি বংশোদ্ভূত রুকনুদ্দিন বাইবার্স ১২৩৩ খ্রিস্টাব্দে কিপচাকে জন্মগ্রহণ করেন। প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন একজন তুর্কি ক্রীতদাস। প্রথমে তিনি দামেস্ক এবং পরে হাসাতে ক্রীতদাস ছিলেন। এই তুর্কোমান ক্রীতদাসকে খুব অল্প বয়সে ৮০০ দিরহামের বিনিময়ে দামেস্কে বিক্রি করে দেওয়া হয়। কিন্তু তার চোখ দুটির একটিতে খুঁত থাকায় তাকে আবার ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ১২৪৬ খ্রিস্টাব্দে আইয়ুবি সুলতান আস সালিহ তাকে ক্রয় করেন। তার অসাধারণ প্রতিভা ও ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়ে আস সালিহ তাকে দেহরক্ষীর মর্যাদা দান করেন। আস সালিহের সেনাধ্যক্ষ হিসেবে ১২৫০ খ্রিস্টাব্দে তিনি ঐতিহাসিক মনসুরার যুদ্ধে ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে প্রথম রণদক্ষতার পরিচয় দেন। আস সালিহের কাছ থেকেই তিনি তার নামের শেষ অংশটি পেয়েছিলেন। যার অর্থ ধনুকধারীর মালিকাধীন। ঐতিহাসিক P. K. Hitti এর মতে, "দীর্ঘকায়, কৃষ্ণবর্ণ এই নেতা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী ও কর্মচঞ্চল, গমগমে কণ্ঠস্বরে ছিল কর্তৃত্বের সুর। এক কথায় জননেতার সব গুণই ছিল তার মধ্যে। [আরব জাতির ইতিহাস)


২. বীরত্বপূর্ণ কৃতিত্ব: সুলতান সাইফুদ্দিন কুতুজের রাজত্বকালে রুকনুদ্দিন বাইবার্স প্রধান সেনাপতির পদ লাভ করেন। ১২৬০ খ্রিস্টাব্দে মোঙ্গলদেরকে আইন ই জালুতের যুদ্ধে পরাজিত করে রুকনুদ্দিন বাইবার্স বীরত্বপূর্ণ কৃতিত্বের পরিচয় দেন। তার এ বীরত্বের পুরস্কারস্বরূপ তিনি সুলতান কুতুজের নিকট আলেপ্পোর শাসন ক্ষমতা জায়গির হিসেবে পেতে চাইলে সুলতানের সাথে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়।

৩. ক্ষমতা লাভ: মামলুক সুলতান কুতুজের সাথে মনোমালিন্যের ফলে রুকনুদ্দিন বাইবার্স সুলতান সাইফুদ্দিন কুতুজকে হত্যা করে ১২৬০ খ্রিস্টাব্দে ক্ষমতা লাভ করেন এবং নিজেকে মিসরের সুলতান বলে ঘোষণা করেন।


মৃত্যু: রুকনুদ্দিন বাইবার্স ১২৭৯ খ্রিস্টাব্দের ১ জুলাই দামেস্কে মৃত্যুবরণ করেন।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, রুকনুদ্দিন বাইবার্স ছিলেন মধ্যযুগের ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব এবং মামলুক বংশের শ্রেষ্ঠ সুলতান। তিনি সামান্য একজন দাস থেকে পর্যায়ক্রমে নানা বাধা অতিক্রম করে স্বীয় মেধা আর সামরিক প্রতিভা দ্বারা বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন; যা ইতিহাসে তাকে স্মরণীয় করে রেখেছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post