সাজার-উদ-দার সম্পর্কে একটি টীকা লেখ ।

 

সাজার-উদ-দার সম্পর্কে একটি টীকা লেখ ।

সাজার উদ দার কে ছিলেন?

অথবা, সাজার উদ দারের পরিচয় দাও।

অথবা, সাজার উদ দার সম্পর্কে একটি টীকা লেখ।

উত্তর ভূমিকা: মধ্যযুগে মিসরের মামলুক বংশের শাসন ইসলামের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায় সংযোজন করেছে। মামলুক বংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সাজার উদ দার অসামান্য কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী একজন নারী এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের ক্ষেত্রে চরম কৃতিত্বসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন।

সাজার উদ দার: নিম্নে সাজার উদ দার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-


১. পরিচয়: সাজার উদ দার জাতিতে ছিলেন তুর্কি। প্রাথমিক জীবনে তিনি ছিলেন একজন আর্মেনীয় ক্রীতদাসী। আব্বাসি খলিফা আল মুতাসিমের আশ্রিতা হয়ে তিনি তার হেরেমে প্রবেশ করেন। পরবর্তীতে ঘটনাক্রমে তিনি আইয়ুবি সুলতান আস সালিহকে বিয়ে করেন। সুলতান আস সালিহের ঔরসে তার খলিল নামে এক পুত্রসন্তানের জন্ম হয়। অতি অল্প বয়সে সন্তানটি মৃত্যুবরণ করলে মাতৃত্বের জন্য ইতিহাসে তিনি 'খলিলের মাতা' নামে পরিচিতি লাভ করেন। একজন নারী হওয়া সত্ত্বেও এক বিশাল সাম্রাজ্য পরিচালনা করার জন্য যথেষ্ট যোগ্যতা তার ছিল।

২. মামলুক বংশ প্রতিষ্ঠা: আইয়ুবি সুলতান আস সালিহের মৃত্যুর পর তার প্রথম স্ত্রীর পুত্র তুরান শাহ মিসরের সিংহাসনে আরোহণ করেন। কিন্তু তার বিমাতা সাজার উদ দারের গোপন ষড়যন্ত্র ও মামলুক সেনাপতি রুকনুদ্দিন বাইবার্সের সহযোগিতায় ১২৫০ খ্রিস্টাব্দের ২ মে তুরান শাহ নিহত হন। তিনি ছিলেন আইয়ুবি বংশের সর্বশেষ সুলতান। তার মৃত্যুতে মিসরের সিংহাসন শূন্য হয়ে পড়লে মামলুক আমিরগণ আস সালিহের বিধবা পত্নী সাজার উদ দারের প্রতিভা ও যোগ্যতার স্বীকৃতিস্বরূপ তোকে মিসরের সিংহাসনে বসান। এর মধ্য দিয়ে ১২৫০ খ্রিস্টাব্দে আইয়ুবি বংশের ধ্বংসস্তূপের ওপর সাজার উদ দার মিসরের মামলুক বংশের প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি মামলুক ছিলেন বলে তার প্রতিষ্ঠিত বংশকে মামলুক বংশ বলা হয়।


৩. কৃতিত্ব: সাজার উদ দার ছিলেন সর্বপ্রথম মুসলিম এবং ক্লিওপেট্রা ও জেনোবিয়ার পর তৃতীয় মহিলা, যিনি মিসরের সিংহাসনে উপবেশন করার সৌভাগ্য লাভ করেছিলেন। সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়ে সাজার উদ দার বিশেষ যোগ্যতার সাথে তিন মাস শাসনকার্য পরিচালনা করেন। তিনি নিজ নামে মুদ্রা প্রচলন করেন, যথারীতি তার নামে খুতবাও পাঠ করা হয়।

৪. পতন: যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আব্বাসি খলিফার অস্বীকৃতি জ্ঞাপক অপমানের ফলে মামলুক আমিরগণ রানি সাজার উদ দারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য ষড়যন্ত্র করতে থাকেন। ফলে সাজার উদ দার বাহরি মামলুকদের নেতা ও প্রধান সেনাপতি আইবেককে বিয়ে করে রাজক্ষমতা তার হাতে ছেড়ে দেন এবং রাজক্ষমতার অংশীদার হয়ে পড়েন। তবে এবারও লোভী ও উচ্চাভিলাষী সাজার উদ দার ক্ষমতার লোভে তুরান শাহের ন্যায় স্বামী আইবেককে হত্যা করে ক্ষমতা পুনর্দখল করেন। উচ্চাভিলাষী সাজার উদ দার ক্ষমতা পুনর্দখল করলে আইবেক সমর্থকদের হাতে তিনি নিহত হন। এভাবে তার ক্ষমতার অবসান ঘটে।


উপসংহার: পরিশেষে 'বলা যায় যে, মিসরের মামলুক বংশের ইতিহাসে সাজার উদ দারের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি আইয়ুবি বংশের ধ্বংসস্তূপের ওপর মিসরের মামলুক বংশের গোড়াপত্তন করেন এবং তিনি অসাধারণ কূটনৈতিক ক্ষমতাধর একজন নারী ছিলেন, যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। তবে তার শাসনকাল ছিল মাত্র তিন মাস।

Post a Comment

Previous Post Next Post