গুপ্তঘাতক সম্প্রদায়ের উপর টীকা লিখ।

গুপ্তঘাতক সম্প্রদায়ের উপর টীকা লিখ।

গুপ্তঘাতক সম্প্রদায়ের ওপর টীকা লেখ।

অথবা, গুপ্তঘাতক সম্প্রদায় সম্বন্ধে যা জান লেখ।

উত্তর ভূমিকা: ১০৯০ খ্রিস্টাব্দে হাসান বিন সাবাহ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত গুপ্তঘাতক সম্প্রদায়ের প্রধান কাজ ছিল হত্যা, গুম, লুট, অপহরণের মাধ্যমে রাজ্যজুড়ে ত্রাসের সৃষ্টি করা। এ সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা হাসান বিন সাবাহ নিজামুল মুলকের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সকল ঘৃণ্য কাজ পরিচালনা করতেন। তারা ছিল মূলত আতঙ্কবাদী।

গুপ্তঘাতক সম্প্রদায়ের কার্যকলাপ নিম্নে গুপ্তঘাতক সম্প্রদায়ের কার্যকলাপ বর্ণনা করা হলো-


১. সন্ত্রাসবাদী মতবাদ প্রচার: গুপ্তঘাতক সম্প্রদায় শিয়া সম্প্রদায়ের ইসমাইলি মতবাদের সমর্থক ছিল। হাসান বিন সাবাহ ১০৮৪ খ্রিস্টাব্দে ফাতেমি খলিফা আল মুসতানসিরের মৃত্যুর পর তার পুত্র নিজামের পক্ষ সমর্থন করে নিজামিয়া মতবাদ প্রচার করতে থাকেন। তাদের এ প্রচারণাকে দাওয়াত আল আজিরা বলা হয়।

২. প্রশিক্ষণ প্রদান: গুপ্তঘাতক সম্প্রদায় তাদের সদস্যদের কঠোর প্রশিক্ষণ প্রদান করতো। এর সদস্যদের অস্ত্রচালনা, ছদ্মবেশ ধারণ ও রুচিশীল, মার্জিত আচরণ শিক্ষা দেওয়া হতো, যেন তারা সবরকম পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারে। তাছাড়া তাদের প্রাচ্য, পাশ্চাত্য, খ্রিস্টান, ইহুদি, সুন্নি ধর্মযাজকদের আচার অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা শিক্ষা দেওয়া হতো। এসব প্রশিক্ষণের গণ্ডি পেরিয়ে তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড লিপ্ত হতো।

৩. নিজামুল মুলককে হত্যা: গুপ্তঘাতক সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা হাসান বিন সাবাহ এ সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করে ১০৯১ খ্রিস্টাব্দে সেলজুক সুলতান মালিক শাহের বিশ্বস্ত ও খ্যাতিমান উজির নিজামুল মুলককে হত্যা করে।


৪. অন্যান্য বিখ্যাত ব্যক্তিদের হত্যা: গুপ্তঘাতক সম্প্রদায় নিজামুল মুলক ছাড়াও বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিকে হত্যা করে। তারা ১১০৭ খ্রিস্টাব্দে নিজামুল মুলকের পুত্র ফখরুল মুলক, ১১৩০ খ্রিস্টাব্দে ফাতেমি খলিফা আল আমির এবং ১১৩৯ খ্রিস্টাব্দে রাজদরবারি জাওহারকে হত্যা করে। এছাড়া তারা সাম্রাজ্যের বহু মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে।

৫. লুটতরাজ, ছিনতাই ও অপহরণ: গুপ্তঘাতক সম্প্রদায় হত্যা করেই ক্ষান্ত হতো না, তারা লুটতরাজ করতো, ছিনতাই করতো, এমনকি শিশুদের অপহরণ করে তাদের দলে ভর্তি করতো। উল্লেখ্য, তারা আব্বাসি ও ফাতেমি সাম্রাজ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।

৬. দুর্গ প্রতিষ্ঠা: গুপ্তঘাতক সম্প্রদায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০,২০০ ফুট উঁচু আলামুত পর্বতে সুরক্ষিত দুর্গ প্রতিষ্ঠা করে। এ পর্বতে তারা দুর্ভেদ্য দুর্গ গড়ে তোলে। তাদের প্রধানকে শাইখ আল জাবাল বলা হতো। তাছাড়া হাসান বিন সাবাহ পর্বতের বৃদ্ধ মানব হিসেবে অভিহিত হন।


উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, গুপ্তঘাতক সম্প্রদায় ১০৯০ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়ে নিজামুল মুলক ও তার পুত্রসহ বিভিন্ন শাসক ও সভাসদকে হত্যা করে। তারা হত্যার পাশাপাশি লুণ্ঠন, ছিনতাই ও শিশু অপহরণ করে। অবশেষে ১২৫৬ খ্রিস্টাব্দে হালাকু খান গুপ্তঘাতকদের পরাজিত করে তাদের কর্মকান্ড বন্ধ করেন।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post