আইন ই জালুতের যুদ্ধকে ভাগ্য নির্ধারণকারী
যুদ্ধ বলা হয় কেন
অথবা, আইন ই জালুতের যুদ্ধকে ভাগ্য নিয়ন্ত্রণকারী
যুদ্ধ বলার কারণ কী?
উত্তর ভূমিকা: আইন ই জালুতের
যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ১২৬০ খ্রিস্টাব্দের ৩ সেপ্টেম্বর আইন
ই জালুত প্রান্তরে মোঙ্গল বাহিনী ও মামলুক বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধটি সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধে
মোঙ্গলরা পরাজিত হয় ও মামলুক মুসলমানরা বিজয় লাভ করে। মিসরের ইতিহাসে এই যুদ্ধকে চূড়ান্ত
ও ভাগ্য নির্ধারণকারী যুদ্ধ হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
আইন ই জালুতের যুদ্ধকে ভাগ্য নির্ধারণকারী যুদ্ধ বলার কারণ: বাহরি মামলুক বংশের তৃতীয় সুলতান মুজাফফর সাইফুদ্দিন কুতুজের শাসনামলে (১২৫৭-১২৬০ খ্রি.) চেঙ্গিস খানের পুত্র হালাকু খান মিসর আক্রমণ করলে তাদের উভয়ের মধ্যে আইন ই জালুতের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নিম্নে এ যুদ্ধকে
ভাগ্য নির্ধারণকারী যুদ্ধ বলার কারণগুলো
উল্লেখ করা হলো-
১. আইন ই জালুতের যুদ্ধে মামলুক শক্তি
পরাজিত হলে অন্যান্য প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী সভ্যতার কেন্দ্রভূমির ন্যায় মিসরের কায়রোও
মোঙ্গলদের হস্তগত হতো।
২. আইন ই জালুতের যুদ্ধে মোঙ্গল আক্রমণ
প্রতিহত হওয়ায় মুসলিমদের নিকট প্রাচ্য আবার মিসরের অধীনে একত্রিত হয় এবং ইসলাম সুদৃঢ়
ভিত্তির ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।
৩. এ যুদ্ধে মুসলমানরা পরাজিত হলে মিসরে
মোঙ্গল বিজয় মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতো এবং রাজনৈতিক পটপরিবর্তন সাধন করতো।
৪. এ যুদ্ধে মামলুকদের বিজয়ের ফলে তারা ইরাকের মতো ধ্বংসযজ্ঞের হাত থেকে নিষ্কৃতি লাভ করে, পাশাপাশি বর্বর মোঙ্গলদের হাত থেকে ইসলামি সংস্কৃতি ও সভ্যতার উপাদানগুলো রক্ষা পায়।
৫. এ যুদ্ধের মধ্য দিয়ে মামলুকগণ প্রথমবারের
মতো দুর্জেয় ও দুর্ভেদ্য বলে বিবেচিত মোঙ্গল শক্তিকে পরাভূত করতে সক্ষম হয়।
৬. এ যুদ্ধে ধ্বংসাত্মক তাতার শক্তি প্রাচ্য
ও প্রতীচ্যকে সমানভাবে বিপদগ্রস্ত করেছিল। যদি তাতাররা মিসর জয় করতে সক্ষম হতো, তবে
উত্তর আফ্রিকা এবং স্পেনসহ ইউরোপের অভ্যন্তরেও তারা প্রবেশ করতো এবং দূর প্রাচ্য ও
প্রতীচ্যের ইসলামি ও খ্রিস্টীয় সভ্যতা ধ্বংস করে দিত।
৭. এ যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে পশ্চিম সীমান্তে মোঙ্গল বাহিনীর অগ্রযাত্রা চিরতরে প্রতিহত হয় এবং মিসরে 'মামলুকগণ তাদের গৌরব, ঐতিহ্য ও মর্যাদার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা
যায় যে, আইন ই জালুতের যুদ্ধ মিসরের ইতিহাসে একটি চূড়ান্ত ও ভাগ্য নির্ধারণকারী যুদ্ধ।
কেননা এ যুদ্ধে মামলুকরা পরাজিত হলে অন্যান্য অঞ্চলের ন্যায় প্রাচীন সভ্যতার কেন্দ্রস্থল
মিসরের কায়রোও মোঙ্গলদের হস্তগত হতো এবং ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি চরমভাবে ক্ষতির সম্মুখীন
হতো।