আল-মুইজকে পাশ্চাত্যের মামুন বলা হয় কেন?

আল-মুইজকে পাশ্চাত্যের মামুন বলা হয় কেন?

আল মুইজকে পাশ্চাত্যের মামুন বলা হয় কেন?

অথবা, আল মুইজকে কেন পাশ্চাত্যের মামুন বলা হয়?

উত্তর ভূমিকা: আব্বাসি খলিফা আল মামুন যেমন জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চায় ব্যাপক অবদান রেখেছেন, তেমনি প্রতীচ্যে উত্তর আফ্রিকার ফাতেমি খিলাফতের চতুর্থ খলিফা আল মুইজও সাম্রাজ্য সম্প্রসারণ ও শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করে জ্ঞানবিজ্ঞানে যথেষ্ট অবদান রাখেন। জ্ঞানবিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতা তথা শিক্ষা সংস্কৃতির উৎকর্ষ সাধনে তার অনন্য ভূমিকা তাকে পাশ্চাত্যের মামুন উপাধি এনে দিয়েছে।

আল মুইজকে পাশ্চাত্যের মামুন বলার কারণ যেসব কারণে আল মুইজকে পাশ্চাত্যের মামুন বলা হয় তা নিম্নে আলোচনা করা হলো-


১. আল আজহার মসজিদ প্রতিষ্ঠা: ৯৭২ খ্রিস্টাব্দে সেনাপতি জাওহার আল সিকিলি হযরত ফাতেমা (রা.)-এর স্মরণার্থে আল আজহার নামে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। পরবর্তী খলিফা, আল আজিজের রাজত্বকালে এই স্থানে একটি গ্রন্থাগার স্বাপিত হয় এবং তা তৎকালীন বিশ্বে সর্বশ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করে। ঐতিহাসিক লেনপুল যথার্থই বলেন, "মিসর বিজয় তার জীবনের লক্ষ্য ছিল এবং মিসরকে সমৃদ্ধিশালী নগরে পরিণত করাই ছিল তার জীবনের স্বপ্ন।"

২. জ্ঞানবিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক: জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চা ও বিকাশে আল মুইজ বিশেষ কৃতিত্বের দাবিদার। তিনি নিজে একজন সুশিক্ষিত ও সুবক্তা ছিলেন। বহু ভাষায় পারদর্শী খলিফা তার সময়কার একজন বিখ্যাত কবিও ছিলেন। খলিফার পৃষ্ঠপোষকতায় সে সময়ে কায়রো জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়। তিনিই কায়রোর বিখ্যাত আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি রচনা করেন।


৩. শিল্প ও সংস্কৃতির বিকাশ: খলিফা আল মুইজ একজন সুরুচিবোধসম্পন্ন ও সংস্কৃতিবান মানুষ ছিলেন। তার সময়ে সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বেশকিছু দৃষ্টিনন্দন অট্টালিকা, রাজপ্রাসাদ ও ধর্মীয় ইমারত নির্মাণ করা হয়। খলিফা আল মুইজ কেবল শিল্প সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন না, তিনি একজন খ্যাতনামা নৃপতিও ছিলেন। তার আমলে 'গাজি উলখাম' নামে শিয়াদের ধর্মীয় উৎসবের আয়োজন করা হতো। খলিফা আল মুইজ তার রাজত্বকালে সুশাসন প্রতিষ্ঠা,' রাজ্যজয়ের পাশপাশি জ্ঞানবিজ্ঞান তথা শিক্ষা-সংস্কৃতির- অর্ভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করেছিলেন। তাই তাকে পাশ্চাত্যের। মামুন বলা হয়। এসব বিবেচনায় ঐতিহাসিক আমির আলি. বলেন, "নিঃসন্দেহে মুইজ পাশ্চাত্যের মামুন ছিলেন।"


উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, খলিফা আল মুইজ কেবল বিজেতা ও প্রশাসকই ছিলেন না, তিনি জ্ঞানবিজ্ঞানের একনিষ্ঠ তত্ত্বাবধায়কও ছিলেন। তার আমলে বার্বাররা সভ্যতার সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করে। রাজ্যজয়, শাসনব্যবস্থার সুষ্ঠু বিন্যাস, শান্তি ও নিরাপত্তা স্থাপন এবং জ্ঞানবিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন বিধায় তাকে পাশ্চাত্যের মামুন বলা হয়।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post