প্রতিনিধিত্ব সমস্যা কী? প্রতিনিধিত্ব সমস্যার প্রকারভেদ আলোচনা কর। কীভাবে প্রতিনিধিত্ব সমস্যা সমাধান করা যায়?

প্রতিনিধিত্ব সমস্যা কী? প্রতিনিধিত্ব সমস্যার প্রকারভেদ আলোচনা কর। কীভাবে প্রতিনিধিত্ব সমস্যা সমাধান করা যায়?

 

প্রতিনিধিত্ব সমস্যা কী? প্রতিনিধিত্ব সমস্যার প্রকারভেদ আলোচনা কর। কীভাবে প্রতিনিধিত্ব সমস্যা সমাধান করা যায়?

শেয়ারহোল্ডারগণ প্রকৃতপক্ষে যে কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করে তার মালিক হয়। শেয়ারহোল্ডারগণ কোম্পানির পরিচালনায় অংশগ্রহণ করে না। তাদের এজেন্ট বা প্রতিনিধিত্ব হিসেবে ব্যবস্থাপকগণকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ফলে শেয়ারহোল্ডার ও ব্যবস্থাপকদের মধ্যে সম্পর্কের সৃষ্টি হয়।

প্রতিনিধিত্ব সমস্যা ব্যবস্থাপকদের প্রধান কাজ হচ্ছে শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষা করা। শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থরক্ষার জন্য ব্যবস্থাপকদের নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু মাঝে মাঝে দেখা যায় ব্যবস্থাপকগণ শেয়ারহোল্ডারগণের স্বার্থের কথা চিন্তা না করে নিজেদের স্বার্থে কাজ করে। অন্যভাবে বলা যায়, দুইপক্ষের পরস্পরবিরোধী উদ্দেশ্যের কারণে যে সমস্যায় সৃষ্টি হয় তাকে প্রতিনিধিত্ব সমস্যা/এজেন্সি সমস্যা বলে।

Ross and Jordon এর মতে, "The possibility of conflict of interest between the stockholders and management of a firm."

 

L. J. Gitman বলেন, "কর্পোরেট উদ্দেশ্যের ঊর্ধ্বে ব্যবস্থাপকের ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যকে স্থান দেওয়ার সম্ভাবনাকে প্রতিনিধিত্ব সমস্যা বলে।"

পরিশেষে বলা যায় যে, মালিকপক্ষ ও ব্যবস্থাপকের উদ্দেশ্য ভির হওয়ার কারণে এজেন্সি সমস্যা হয়ে থাকে।

প্রতিনিধিত্ব সমস্যার প্রকারভেদ আলোচনা কর।

মালিক চায় সবসময় নিজের সম্পদ বৃদ্ধি করতে। আর ব্যবস্থাপকগণ নিজেদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করতে চায়। তাই মালিকপক্ষ ও ব্যবস্থাপকের মধ্যে এ বিদ্যমান সম্পর্ককে বলা হয় প্রতিনিধিত্ব সম্পর্ক। তবে ব্যবস্থাপক ও মালিকপক্ষের এ আলাদা চাহিদার কারণে প্রতিনিধিত্ব সমস্যা সৃষ্টি হয়। James C. Van Home এজেন্সি সমস্যা সম্পর্কে একটি মতবাদ প্রকাশ করেছেন।

 


প্রতিনিধিত্ব সমস্যার প্রকারভেদ: 

'Fundamentals of Financial Management' বইয়ে তিন ধরনের সমস্যার কথা বলা হয়েছে। যথা:

১. মালিকপক্ষ সবসময় চায় কম বেতন দিয়ে কর্মচারী দিয়ে কাজ করাতে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী, যোগানদার, ক্রেতা এবং সামাজিক সম্প্রদায় তাদের নিজস্ব উদ্দেশ্য পূরণের জন্য কাজ করে অন্যদিকে মালিকপক্ষ এদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। তাই একদিকে মালিক চায় কম বেতন দিয়ে কাজ করাতে অন্যদিকে কর্মচারীরা চায় অধিক বেতন। তাই এদের মধ্যে বিরোধী মতামত ও স্বার্থের কারণে প্রতিনিধিত্ব সমস্যা সৃষ্টি হয়।

২. মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথক হওয়ার কারণেই এজেন্সি/প্রতিনিধিত্ব সমস্যার সৃষ্টি হয়। এখানে শেয়ারহোল্ডার ও ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য ভিন্ন হওয়ার কারণে প্রতিনিধিত্ব সমস্যা সৃষ্টি হয়। বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্টক বিস্তৃতভাবে ছড়িয়ে থাকার কারণে শেয়ারহোল্ডাররা ব্যবস্থাপনার ওপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে না। তাই মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপকগণ শেয়ারহোল্ডারদের কথা চিন্তা না করে নিজেদের কথা বেশি চিন্তা করে। প্রকৃতপক্ষে মালিকগণ ব্যবস্থাপকদের নিয়োগদান করে যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের কর্তৃত্ব দিয়ে থাকেন। তাই শেয়ারহোল্ডার নিজেদের জন্য ব্যবস্থাপনায় ত্রুটিবিচ্যুতি দেখার কারণে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সমস্যা তৈরি হয়। মূলত এ দ্বন্দ্ব থেকেই ব্যবস্থাপনা ও শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে সমস্যা তৈরি হয়।

৩. পাওনাদারগণ তাদের অর্থ সবসময় মালিকপক্ষের কাছে বিনিয়োগ করে। ব্যবসায়ে পাওনাদার চায় মালিকপক্ষকে তদারক করতে। অন্যদিকে কোনো প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে ব্যাংক মনে করে ঐ প্রতিষ্ঠান ব্যাংক ঋণ না দিলে সে চলতে পারবে না আবার ঋণগ্রহীতা মনে করে ব্যাংক থেকে খঋণ গ্রহণ না করলে ব্যাংক চলতে পারবে না। এই জন্যই মালিকপক্ষ ও এজেন্সির মধ্যে সমস্যার সৃষ্টি হয়। এখানে মালিক চায় নিজের স্বার্থ রক্ষা করতে অন্যদিকে ব্যাংক চায় নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে তাই নিজেদের মধ্যে সমস্যা হয়।

পরিশেষে বলা যায় যে, প্রতিনিধিত্ব সমস্যা সৃষ্টি হয় শুধু নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য। এখানে সবাই সবার স্বার্থ খুঁজে থাকে। তাই এদের প্রতিনিধিত্ব সমস্যা সৃষ্টি হয়।

 


কীভাবে প্রতিনিধিত্ব সমস্যা সমাধান করা যায়?

শেয়ারহোল্ডার বা মালিকপক্ষের সাথে ব্যবস্থাপকের মধ্যে দ্বন্দ্বের স্বার্থগত দিক হতে নিজেদের মধ্যে প্রতিনিধিত্বমূলক সমস্যা দেখা দেয়। এ সমস্যার সমাধান করা না হলে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ক্ষতির দিকে ধাবিত হয়।

প্রতিনিধিত্ব সমস্যা দূরীকরণের উপায় নিম্নে প্রতিনিধিত্ব সমস্যা দূরীকরণের উপায় আলোচনা করা হলো:

১. প্রথমে দেখতে হবে মালিকপক্ষের কাজ ব্যবস্থাপনা করছে কি না তদারকি করতে হবে। এজন্য মালিকপক্ষকে নিরীক্ষা, নিয়ন্ত্রণ, পরিচালনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে তদারক করলে তাদেরকে Agency problem বলে।

২. কোম্পানি বড় ধরনের শেয়ার বিক্রয় করে অর্থায়ন করে থাকলে শেয়ারহোল্ডাররা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার সুযোগ পায়। তার জন্য কোম্পানির ব্যবস্থাপককে প্রতিষ্ঠানের প্রতি কাজ করার চাপ সৃষ্টি করা যায়। প্রয়োজন অনুযায়ী ভোটাধিকার প্রয়োগ করে ব্যবস্থাপক পরিবর্তন করতে পারে' এমন ক্ষমতা শেয়ারহোল্ডারদের থাকলে প্রতিনিধিত্ব হ্রাস পাবে।

৩. ব্যবস্থাপকদের কর্মে উৎসাহ প্রদানের জন্য বিভিন্ন সুযোগ বৃদ্ধি করা হয়। জনপ্রিয় উৎসাহ পরিকল্পনা হলো Stock option যেখানে ব্যবস্থাপকগণ ভবিষ্যতে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক শেয়ার ক্রয় করতে পারে।

৪. কোনো প্রতিষ্ঠান অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অধিগৃহিত হলে অধিগ্রহণকৃত ফার্মের ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ ঢেলে সাজাতে হবে। তাই অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান হতে অধিগ্রহণের ভয়ে ব্যবস্থাপকগণ প্রতিষ্ঠানের কাজ করে।


৫. কর্মচারী, কর্মকর্তা, মালিকপক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব বা বৈষম্য হ্রাস করতে হবে। তাদের মধ্যে বৈষম্য হ্রাস পেলে প্রতিনিধিত্ব সমস্যা দূর হবে।

৬. প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রতিটি কর্মচারীকে নগদ পুরস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে।

৭. কর্মচারী ও ব্যবস্থাপকদের কাজের দক্ষতার ওপর নগদ বোনাস প্রদান করতে হবে।


পরিশেষে বলা যায় যে, প্রতিনিধিত্ব সমস্যা দূরীকরণে উপরের বিষয়গুলো বেশি মনে রাখতে হবে। প্রতিনিধিত্ব সমস্যা দূরীকরণে উপরের বিষয়গুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

Post a Comment

Previous Post Next Post