হাজিব আল মনসুরকে কেন কার্যত শাসক বলা
হয়?
উত্তর ভূমিকা: স্পেনের মুসলিম
শাসনের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন হাজিব আল মনসুর। তিনি
স্পেনের উমাইয়া শাসনের এক সংকটময় মুহূর্তে ধূমকেতুর ন্যায় আবির্ভূত হয়েছিলেন। প্রশাসনিক
দক্ষতা ও মেধার বলে তিনি অতি দ্রুত বিভিন্ন পদ অলঙ্কৃত করে হাজিব বা প্রধানমন্ত্রীর
পদ গ্রহণ করেন। সমসাময়িক বিখ্যাত ব্যক্তিদের মধ্যে হাজিব আল মনসুর অন্যতম ছিলেন।
হাজিব আল মনসুরকে কার্যত শাসক বলা কারণ:
নিম্নে হাজিব আল মনসুরকে কার্যত শাসক বলা কারণসমূহ আলোচনা করা হলো-
১. সেনাবাহিনী সংস্কার সাধন: সেনাবাহিনীর
শক্তিই হচ্ছে একটি সাম্রাজ্যের প্রধান শক্তি। তাই এর উন্নতির জন্য এবং এর উপর নিরঙ্কুশ
প্রভাব বিস্তার করার জন্য তিনি ব্যাপকভাবে এর পুনর্গঠন করেন। হাজিব আল মনসুর স্পেনকে
ইউরোপের শক্তিশালী নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছেন। তিনি তার প্রিয় ও বিশ্বস্ত
সৈন্যদেরকে দায়িত্বশীল পদে নিযুক্ত করেন।
২. রাজ্যজয়: হাজিব আল মনসুর
প্রশাসনিক কাজে যেমন সফলতার পরিচয় দেন, তেমনি রণাঙ্গনেও সামরিক কুশলতার পরিচয় দেন।
শত্রুদের নিকট তিনি ছিলেন এক ভয়ঙ্কর সেনাপতি এবং নিজ সৈন্যদের নিকট ছিলেন মহামান্য
অধিকর্তা। ইবনে খালদুনের মতে, "তিনি ৫২টি সামরিক অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে প্রত্যেকটিতে
জয় লাভ করেন"।
৩. জ্ঞানবিজ্ঞানের উন্নতি: হাজিব আল মনসুর
স্পেনের সুখ্যাতি শক্তি ও সুনামকে আরও সম্প্রসারিত করেন। তিনি ছিলেন জ্ঞানবিজ্ঞানের
পৃষ্ঠপোষক এবং তার দরবারে জ্ঞানীগুণী ও মনীষীদের আনাগোনা ছিল। তিনি কর্ডোভাতে একটি
ভাষা একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। কবি, সাহিত্যিক ও ঐতিহাসিকগণ এখানে গবেষণাপূর্ণ আলোচনা
করতো। তিনি বহু স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেন। শিক্ষক ও ছাত্রদের
জ্ঞানার্জনের জন্য তিনি উৎসাহ দানস্বরূপ পুরস্কারের ব্যবস্থা করেন।
৪. ন্যায়বিচারক: হাজিব আল মনসুর
রাজ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য বিচারকগণকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করেন এবং
দুর্নীতিগ্রস্তকে কঠোর শাস্তি প্রদান করেন। অন্যায় আচারণের জন্য তিনি কাউকে ক্ষমা করতেন
না। তিনি ছিলেন সৎ, প্রতিভাবান, অভিজ্ঞ, কর্তব্যপরায়ণ ও অনুগত কর্মচারীদের প্রতি উদার
ব্যক্তিত্ব।
৫. বৈদেশিক নীতি: দশম শতাব্দীতে
হাজিব আল মনসুর ছিলেন শ্রেষ্ঠ সমরনায়ক, রাজনীতিবিদ ও কূটনীতিবিদ। নাবালক খলিফার দোদুল্যমান
ও পতনমুখী খিলাফতকে তিনি শুধু রক্ষাই করেননি বরং উন্নতি ও সমৃদ্ধিতে বিরল অবদান রাখেন।
তিনি খ্রিস্টানদের সাথে সমঝোতা না করে তাদেরকে পরাজিত করে মুসলিম শক্তির প্রাধান্য
প্রতিষ্ঠা করেন এবং বৈদেশিক শক্তির হাত থেকে স্পেনকে নিরাপদ রাখেন।
৬. জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম: জনকল্যাণের
নিমিত্তে হাজিব আল 'মনসুর যাতায়াত ব্যবস্থা, বাণিজ্য, কৃষি, শিক্ষা, শিল্প, সংস্কৃতি
প্রভৃতি ক্ষেত্রে নিরলস প্রচেস্টা চালিয়ে যান এবং বিরল প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। তিনি
নতুন নতুন সড়ক ও সেতু নির্মাণ করেন এবং পুরাতনগুলোকে সংস্কার সাধন করেন। গোয়াদাল কুইভার
নদীর ওপর তিনি ৪০,০০০ স্বর্ণ মুদ্রা ব্যয়ে একটি সেতু নির্মাণ করেন।
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার
পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, হাজিব আল মনসুর সামান্য অবস্থা থেকে দৃঢ় প্রত্যয় ও পরিশ্রমের
ফলে ধীরে ধীরে বিভিন্ন পদ অলঙ্কৃত করে রাজ্যের সর্বোচ্চ আসনে আসীন হয়েছিলেন। তার বিচার
বিভাগীয় বিচক্ষণতা, রণাঙ্গনের রণকুশলতা, জ্ঞানবিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতা এবং রাজ্য জয় স্পেনের
ইতিহাসে বিরল।
আরো পড়ুন পূর্ণাঙ্গ সাজেশন ও তার উত্তর একত্রে
স্পেনের মুসলমানদের ইতিহাস (৭১০-১৪৯২)