আর্থিক ব্যবস্থাপনা কাকে বলে? আর্থিক ব্যবস্থাপকের কার্যাবলি বর্ণনা কর।

আর্থিক ব্যবস্থাপনা কাকে বলে? আর্থিক ব্যবস্থাপকের কার্যাবলি বর্ণনা কর।

 

আর্থিক ব্যবস্থাপনা কাকে বলে? আর্থিক ব্যবস্থাপকের কার্যাবলি বর্ণনা কর।

 

আর্থিক ব্যবস্থাপনার ধারণাটি ব্যবস্থাপনার বিষয়বস্তু হতে এসেছে। ব্যবস্থাপনা হচ্ছে কতিপয় পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করার জন্য প্রতিষ্ঠানের সম্পদের কাম্য ব্যবহার নিশ্চিত করা। আর নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ, বিনিয়োগ এবং সম্পদের ব্যবস্থাপনা আর্থিক ব্যবস্থাপনা।

 

আর্থিক ব্যবস্থাপনা: আর্থিক ব্যবস্থাপনা দু'টি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। এদের একটি শব্দ হলো "আর্থিক এবং অন্য শব্দটি হলো "ব্যবস্থাপনা"। "আর্থিক" শব্দটি দ্বারা বুঝানো হয়েছে অর্থ বা অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযোগ্য যাবতীয় সম্পদ। আর "ব্যবস্থাপনা" শব্দ দ্বারা বুঝানো হয়েছে পরিকল্পনা, সমন্বয় সাধন, নির্দেশনা, প্রেষণা এবং নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যাবলি সমষ্টিকে। সুতরাং আর্থিক ব্যবস্থাপনা বলতে কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে আর্থিক পরিকল্পনা প্রণয়ন, অর্থের ব্যবহার, সমন্বয় সাধন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, নির্দেশনা, প্রেষণা ও নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যাবলির সমষ্টিকে বুঝায়।

 

 প্রামাণ্য সংজ্ঞা:

 

Brealey, Myers and Marcus এর মতে, "Financial management is the process of putting the available funds to the best advantage from the long term point of view of business objectives." অর্থাৎ, ব্যবসায়িক

 


উদ্দেশ্যের দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে প্রাপ্তিসাধ্য তহবিলের সুবিধাজনক বিনিয়োগের প্রক্রিয়া হচ্ছে আর্থিক ব্যবস্থাপনা।

 

Khan & Jain এর মতে, "Financial management is concerned with the duties of the financial manager in the business firm." অর্থাৎ, আর্থিক ব্যবস্থাপনা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ব্যবস্থাপকদের কার্যাবলির সাথে জড়িত।

 

Weston & Brigham এর মতে, "Financial management is an area of financial decision making harmonizing individual motives and enterprise goals." অর্থাৎ, একক উদ্দেশ্য এবং প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্যসমূহ সমন্বয়কারী আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্র হচ্ছে আর্থিক ব্যবস্থাপনা।

 

Burton Kolb এর মতে, "ব্যবসায়ের প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ, বণ্টন এবং নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত কার্যাবলির সাথে আর্থিক ব্যবস্থাপনা সম্পৃক্ত।"

 

Huges Huges & Kapoor এর মতে, “অর্থ সংগ্রহ এবং সংগৃহীত অর্থের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করার সাথে সম্পর্কিত সকল

 


কার্যাবলিকে আর্থিক ব্যবস্থাপনা বলে।" পরিশেষে বলা যায় যে, আর্থিক ব্যবস্থাপনা বলতে ঐ সকল পদ্ধতিকে নির্দেশ করে যা দ্বারা তহবিল সংগ্রহ করা যায় এবং তহবিলের দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও বণ্টন সম্ভব হয়। এটি মূলত প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপকীয় কার্যাবলির সাথে সম্পৃক্ত যা আর্থিক সম্পদের পরিকল্পনা ও নিয়ন্ত্রণের কাজ করে থাকে।

 

আর্থিক ব্যবস্থাপকের কার্যাবলি বর্ণনা কর।

 

বাংলা অর্থায়ন বা অর্থসংস্থান শব্দটি ইংরেজি 'Finance' শব্দ থেকে এসেছে। অর্থায়ন বা অর্থসংস্থান শব্দটি দ্বারা অর্থের সংস্থান, যোগান বা সংগ্রহকরণকে বুঝায়। অর্থায়ন হলো কোনে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক পরিকল্পনা প্রণয়ন, পরিকল্পনা অনুসারে সুবিধাজনক উৎস হতে বিভিন্ন মেয়াদে অর্থ সংগ্রহ, লাভজনক খাতে সুষ্ঠু বিনিয়োগ, সংরক্ষণ, সমন্বয়সাধন ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সম্পদ বৃদ্ধি করা।

 

আর্থিক ব্যবস্থাপকের কার্যাবলি: আর্থিক ব্যবস্থাপককে যেসব কার্যাবলি সম্পাদন করতে হয় তা নিম্নে আলোচনা করা হলো-

 

১. আর্থিক পরিকল্পনা: একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য কী পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, কত সময়ের জন্য প্রয়োজন, কখন প্রয়োজন এবং 'সংগৃহীত অর্থ কোন কোন খাতে ব্যয় করা হবে তার পরিকল্পনাই হচ্ছে আর্থিক পরিকল্পনা।

 

২. তহবিল সংগ্রহ: ব্যবসায়ের যাবতীয় আর্থিক কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করার জন্য তহবিল সংগ্রহ করা আর্থিক ব্যবস্থাপকের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সাধারণত ব্যবসায়ের শুরুতে কারবার সম্প্রসারণের জন্য অর্থের প্রয়োজন হয়। সাধারণত দুটি উৎস হতে অর্থ সংগ্রহ করা যায়। যথা- ক. অভ্যন্তরীণ উৎস ও খ. বাহ্যিক উৎস। তবে প্রতিষ্ঠানের আকার ও ধরন অনুযায়ী কোন উৎস হতে অর্থ সংগ্রহ করা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাও আর্থিক ব্যবস্থাপকের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

 

৩. তহবিল বিনিয়োগ: আর্থিক ব্যবস্থাপকের অন্যতম আরেকটি কাজ হলো তহবিল সংগ্রহ করার পর তা লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করা। সাধারণত লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করে সর্বাধিক মুনাফা অর্জন করার জন্য তহবিল সংগ্রহ করা হয়। সে উদ্দেশ্যে প্রথমে প্রকল্পগুলোর খরচ ও আয় বিশ্লেষণ করে যে প্রকল্পের আয় বেশি হবে সেটি শনাক্ত করে সেই প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে হবে।

 

৪. আর্থিক নিয়ন্ত্রণ: আর্থিক কার্যাবলির ওপর যথাযথ নিয়ন্ত্রণ না থাকলে আর্থিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। তাই আর্থিক কার্যাবলির ওপর যথাযথ নিয়ন্ত্রণ রাখা ব্যবস্থাপকের জন্য অপরিহার্য। আর্থিক ব্যবস্থাপককে ব্যবসায়ের কার্যাবলির জন্য বরাদ্দকৃত তহবিলের ব্যবহার নিশ্চিতভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।

 

৫. তহবিল সংরক্ষণ: ব্যবসায়ের সবক্ষেত্রে সর্বদা ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা বিরাজমান। কোনো প্রকল্পে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা মোকাবিলা করতে হতে পারে। তাই বেশি ঝুঁকিসম্পন্ন এমন কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না যেখানে বিনিয়োগকৃত অর্থ হারানোর আশঙ্কা থাকে। এক্ষেত্রে তহবিল সংরক্ষণের জন্য আয়ের সাথে ঝুঁকির সমন্বয় করতে হবে।

 


৬. মুনাফা বণ্টন: আর্থিক ব্যবস্থাপক নিট মুনাফা আকারে প্রকাশিত তহবিলের বণ্টনের পরিমাণ নির্ধারণ করে থাকেন। তিনি মুনাফা বণ্টনে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন অথবা মুনাফা বণ্টন না করে ব্যবসায়ে রেখে দিয়ে বাহ্যিক অর্থসংস্থান পরিহার করতে পারেন। এছাড়া সংরক্ষিত মুনাফা দ্বারা বকেয়া দেনাও পরিশোধ করতে পারেন। তাই অর্জিত মুনাফার কত অংশ পুনঃবিনিয়োগের জন্য রাখবেন এবং কত অংশ শেয়ার মালিকদের মাঝে বণ্টন করা হবে সে ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং তা বাস্তবায়ন করেন যা আর্থিক ব্যবস্থাপকের অন্যতম কাজ।

 

৭. সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা: আর্থিক ব্যবস্থাপকের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো অর্থায়নের সাথে জড়িত সকল প্রকার সম্পত্তি সুশৃঙ্খলভাবে ব্যবস্থাপনা করা। কোনো প্রতিষ্ঠানের চলতি, স্থায়ী ও ভাসমান সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাকে সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা বলে।

 

৮. নগদ প্রবাহের পূর্বানুমান: ব্যবসায়ের 'লেনদেনের ফলে নগদ অর্থের বহিঃগমন ও অন্তঃগমন ঘটে। নগদ অর্থ ব্যবসায়ের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। কারণ অর্থ ছাড়া ব্যবসায়ের গতি সচল রাখা যায় না। এজন্য একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য নগদ অন্তঃগমন ও বহিঃগমন কখন ঘটবে তা পূর্বানুমান করা আর্থিক ব্যবস্থাপকের একটি অন্যতম কাজ।

 

৯. ভবিষ্যৎ মুনাফা পূর্বানুমান: বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা এবং তা বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ মুনাফা সম্পর্কে পূর্বানুমান করা একজন আর্থিক ব্যবস্থাপকের অন্যতম কাজ। ভবিষ্যৎ ব্যয় ও বিক্রয় সম্পর্কে পূর্বানুমান করতে পারলে একজন আর্থিক ব্যবস্থাপক সহজেই ভবিষ্যৎ প্রত্যাশিত মুনাফা নির্ণয় করতে পারেন।

 


১০. ব্যয় নিয়ন্ত্রণ: আর্থিক ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানের ব্যয় নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। প্রতিষ্ঠানের লাভ নির্ভর করে ব্যয় নিয়ন্ত্রণের ওপর। কারণ ব্যয় কম হলে মুনাফা বাড়ে। আর্থিক ব্যবস্থাপককে ব্যয় নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন হিসাবের বই বা অন্যান্য লেনদেনসংক্রান্ত তথ্যাবলি গুরুত্ব সহকারে পরীক্ষানিরীক্ষা 'করতে হয়।

 

উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, যদি উপরিউক্ত কার্যাবলিগুলো সঠিকভাবে সম্পাদন করা সম্ভব হয় তবে অর্থসংস্থানের মূল উদ্দেশ্য সফল হবে এবং প্রতিষ্ঠান তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছাতে পারবে বলে আশা করা যায়।

Post a Comment

Previous Post Next Post