কর্ডোভাকে 'ইউরোপের বাতিঘর' বলা হয় কেন?
ব্যাখ্যা কর।
অথবা, 'ইউরোপের বাতিঘর' হিসেবে কর্ডোভা
নগরীর বর্ণনা দাও।
উত্তর ভূমিকা: ৭৫৬ খ্রিস্টব্দে
স্পেনে স্বাধীন উমাইয়া আমিরাত প্রতিষ্ঠা করে প্রথম আব্দুর রহমান রাজধানী কর্ডোভাকে
তৎকালীন যুগের মধ্যমণি বা জগৎমণি হিসেবে গড়ে তোলেন। সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা কর্তৃক
স্থাপিত এবং পরবর্তী পর্যায়ে তার উত্তরাধিকারীদের দ্বারা সমৃদ্ধ কর্ডোভা ছিল জ্ঞানবিজ্ঞানের
জাঁকজমকপূর্ণ নগরী।
কর্ডোভাকে ইউরোপের বাতিঘর বলার কারণ: নিম্নে
কর্ডোভাকে ইউরোপের বাতিঘর বলার কারণ সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো-
১. উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা: কর্ডোভার শিক্ষাব্যবস্থা
অত্যন্ত উন্নত ছিল। যার কারণে ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে শিক্ষার্থীগণ কর্ডোভাতে
ছুটে আসতো। অসংখ্য কবি, সাহিত্যিক, ভাষাবিদ, বৈয়াকরণিক, চিকিৎসক, ঐতিহাসিক, দার্শনিক,
জ্যোতির্বিদ কর্ডোভায় অবস্থান করায় তৎকালীন কর্ডোভা জ্ঞানবিজ্ঞানের পাদপীঠ হিসেবে পরিচিতি
লাভ করে।
২. উন্নত গ্রন্থাগার: কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার
ছাড়াও কর্ডোভাতে আরও ৭০টি গ্রন্থাগার ছিল। এতে ৪,০০,০০০ পাণ্ডুলিপি রক্ষিত ছিল এবং
এর ক্রমিক সংখ্যা নিরূপণের জন্য ৪৪ খানা বালাম বই ছিল।
৩. চিকিৎসা ব্যবস্থা: চিকিৎসা ব্যবস্থায়
কর্ডোভা ছিল অত্যন্ত উন্নত। এখানে ৫০টি হাসপাতাল ছিল।
৪. স্থাপত্যশিল্প: আব্দুর রহমান
আদ দাখিল ৮০ হাজার দিনার ব্যয়ে বিখ্যাত কর্ডোভা জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কর্ডোভার
স্থাপত্য ইতিহাসে আজ জোহরা প্রাসাদ অনন্য সৌন্দর্যে সুষমা মণ্ডিত হয়ে আছে।
৫. তিলোত্তমা নগরী: দুই লাখের অধিক
অট্টালিকা, ৬০ হাজার. প্রাসাদ এবং ৮৪ হাজার বিপণি কর্ডোভাকে তিলোত্তমা নগরীতে পরিণত
করে।
৬. শিল্প ক্ষেত্রে উন্নয়ন: কর্ডোভা বস্ত্রশিল্প,
চর্মশিল্প, লৌহ এবং অলংকার তৈরির শিল্পে সমৃদ্ধ ছিল। উন্নতমানের মিহি সুতিবস্ত্র, রেশম,
সিল্ক ও লিনেন বয়নে কর্ডোভার বয়ন শিল্পীরা দক্ষতা অর্জন করেন।
৭. যোগাযোগ ব্যবস্থা: কর্ডোভার সড়কগুলো
পাকা গাঁথুনিতে মসৃণ ও মজবুত ছিল। রাস্তায় বাতির ব্যবস্থাও ছিল। ঐতিহাসিক ড্রেপার বলেন,
"সূর্যাস্তের পর একজন লোক রাস্তার বাতির সাহায্যে সরল রেখাক্রমে ১০ মাইল পথ পদব্রজে
যেতে পারত। ৭০০ বছর পরও লন্ডনে কোনো সরকারি বাতি ছিল না।"
৮. অজু-গোসলের ব্যবস্থা: মধ্যযুগীয় ইউরোপে
যেখানে স্নানকে কুসংস্কার বলে মনে করা হতো, তখন শুধু কর্ডোভাতেই ৯০০ স্নানাগার ছিল।
উপসংহার: পরিশেষে বলা
যায় যে, মধ্যযুগে ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চল যখন অন্ধকারাচ্ছন্ন, তখন স্পেনের কর্ডোভাতেই,
জ্ঞানবিজ্ঞান, শিক্ষাদীক্ষা, শিল্পসাহিত্য ও সংস্কৃতির আলোকবর্তিকা সর্বপ্রথম প্রজ্বলিত
হয়। মধ্যযুগে অন্ধকারাচ্ছন্ন ইউরোপে একমাত্র কর্ডোভা নগরীই আলোকবর্তিকা প্রদর্শন করতে
সক্ষম হয়েছিল।