কর্ডোভা মসিজদ সম্পর্কে যা জান লেখ।
অথবা, কর্ডোভা মসজিদের ওপর একটি টীকা লেখ।
উত্তর ভূমিকা: যেসব ইমারতের স্থাপত্যিক
বৈশিষ্ট্য মুসলিম স্থাপত্যকে সমৃদ্ধশালী করেছে কর্ডোভা মসজিদ তার মধ্যে অন্যতম। এটি
শুধুমাত্র পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম মসজিদই নয়; এর আলংকারক বৈশিষ্ট্যও অতুলনীয়। ৭৮৬ খ্রিস্টাব্দে
প্রথম আব্দুর রহমান কর্ডোভা মসজিদ নির্মাণ করে। পরবর্তীকালে তার উত্তরসূরিগণ এ মসজিদ
সংস্কারের মাধ্যমে শৈলিতা বৃদ্ধির প্রয়াস নেন।
কর্ডোভা মসিজদ: নিম্নে কর্ডোভা মসিজদ সম্পর্কে
আলোচনা করা হলো-
১. পরিচয়: তৎকালীন বিশ্বের বিস্ময় সৃষ্টিকারী ইসলামের তৃতীয় বৃহত্তম মসজিদটি আব্দুর রহমান আদ দাখিল ৭৮৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ৮০ হাজার দিনার ব্যয়ে এক বছরে মসজিদটির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়। পরবর্তীকালে বিভিন্ন শাসকের সংযোজন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন ইত্যাদির ফলে মসজিদের স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্যের ব্যাপক প্রসার ঘটে।
২. ভূমি নকশা: কর্ডোভা মসজিদটি পরবর্তীকালে কয়েকবার সম্প্রসারিত হওয়ায় মূল ভূমি নকশা এবং গঠন অনুমান করা অনেকটা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। আয়তাকার এ মসজিদটি পূর্ব ও পশ্চিম ৫৮৫ ফুট এবং উত্তর ও দক্ষিণে ৪১০ ফুট। এটি ২৬,৫০০ বর্গগজ এলাকাজুড়ে নির্মিত হয়।
৩. স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্য: পীতরঙের পাথর দিয়ে নির্মিত মসজিদের দেয়াল ৩৪ ফুট উঁচু এবং উপরে বাঙ্গুরা রয়েছে। দেয়ালের চারদিকের বুরুজগুলো খুবই সুদৃশ্য ও সুদৃঢ়। ২১২ × ২৪১ ফুট পরিমাপের কর্ডোভা মসজিদের লিওয়ান ১০টি খিলানরাজি দ্বারা ১১টি আইলে বিভক্ত ছিল। স্তম্ভগুলো মার্বেলের এবং এগুলোতে করিন্থীয় ক্যাপিটাল দেখা যাবে। ১১টি অশ্বখুরাকৃতি খিলান কাঠের ঢালু ছাদকে রক্ষা করছে।
৪. অলংকরণ: কর্ডোভা মসজিদের অলংকরণ ছিল অসাধারণ। নীল, কালো, গোলাপি, ধূসর রঙের মার্বেল ও গ্রানাইটের তৈরি প্রায় এক হাজার স্তম্ভ মসজিদের ভিতরে একটি মনোরম দৃশ্যের সৃষ্টি করে। এর মধ্যে কোনোটি গোল, আবার কোনোটি পেঁচানো ও শিকল ধরনের স্তম্ভ রয়েছে। স্তম্ভের উপরের খিলান ছিল লাল ও ফিকে পীত রঙের জেব্রা ডোরা কাটা। দ্বিতীয় হাকামের মিহরাবটি একটি আয়তাকার ফ্রেমে আবদ্ধ এবং মোজাইক করা ছিল। এর ওপর খাঁজকাটা খিলানের ব্যবহারও দেখা যায় এবং দুই পাশে দুই জোড়া গোলাকার স্তম্ভ ছিল। এটি লতাপাতা ও কুফিলিপি দ্বারা অলংকৃত এবং মিহরাবের সামনে খাঁজকাটা গম্বুজ ছিল।
উপসংহার: পরিশেষে বলা
যায় যে, মুসলিম স্থাপত্যের ইতিহাসে কর্ডোভা মসজিদ চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। প্রথম আব্দুর
রহমানের শাসনামলে নির্মিত এ অনিন্দ্যসুন্দর মসজিদটি মুসলমানদের অনুপস্থিতিতে গির্জা
হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মসজিদটি স্থাপনার পর থেকে মধ্যবর্তী বিভিন্ন সময়ে সংস্কারের
ফলে প্রাথমিক আকৃতির পরিবর্তন হয়ে বর্তমান
আকৃতি রূপ নিয়েছে।