পুঁজিবাজারের হাতিয়ারসমূহ
কী? মুদ্রা ও পুঁজিবাজারের হাতিয়ারসমূহের মধ্যে পার্থক্য কী?
পুঁজিবাজারে মধ্যম
ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণপত্রের লেনদেন হয়। ফলে এ বাজারে লেনদেনের হাতিয়ার মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি
ধরনের হয়। পুঁজিবাজারে লেনদেনের বেলায় বিভিন্ন হাতিয়ার ব্যবহার হতে দেখা যায়।
পুঁজি বাজারের হাতিয়ার:
নিসে পুঁজি বাজারের হাতিয়ারসমূহ আলোচনা করা হলো:
১. কর্পোরেট বন্ড: বিভিন্ন কর্পোরেশন
কর্পোরেট বন্ড দীর্ঘমেয়াদি বন্ড ইস্যু করে। এসব পুঁজি বাজারের দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক হাতিয়ার।
দীর্ঘমেয়াদি মূলধন সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থা এসব বিক্রয় করে। সব ধরনের
ব্যাংক, বিমা কোম্পানি, পেনশন ফান্ড: ব্যক্তি এবং অপরাপর প্রতিষ্ঠান এরূপ বন্ড ক্রয়
করে।
২. মর্টগেজ: স্থাবর সম্পত্তির
উপর লিয়েনের আকারে জামানত রেখে এক ধরনের দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক প্রতিশ্রুতি হলো-মর্টগেজ।
এর বিপরীত কোনো কোম্পানি বিনিয়োগ তহবিল সংগ্রহ করতে পারে। বাণিজ্যিক ব্যাংক, সঞ্চয়ী
প্রতিষ্ঠান, বিমা ও পেনশন তহবিল এবং ব্যক্তি এরূপ মর্টগে এর বিপরীতে ঋণ তহবিল সরবরাহ
করে।
৩. সরকারি বন্ড এবং
ট্রেজারি নোট: সরকারি বন্ড এবং ট্রেজারি নোট দীর্ঘমেয়াদি ঋণপত্র যা মূলত
বাণিজ্যিক ব্যাংক, সঞ্চয়ী প্রতিষ্ঠান, বিমা কোম্পানি, ব্যক্তি এবং অপরাপর প্রতিষ্ঠান
ক্রয় করে। এই ধরনের বন্ডের মেয়াদ সাধারণত ৫ বছর হয়। অন্যদিকে ট্রেজারি নোটের মেয়াদ
অপেক্ষাকৃত কম। তবে ট্রেজারি বিলের মেয়াদ থেকে বেশি বলা যায়। সাধারণত ঘাটতি ব্যয় মিটানোর
জন্য সরকার এই ধরনের বন্ড ও ট্রেজারি নোট ইস্যু করে।
৪. মিউনিসিপ্যাল
বন্ড: উন্নত দেশে রাজ্য এবং স্থানীয়
সরকার এরূপ বন্ড ইস্যু করে। রাস্তাঘাট ও বিল্ডিং নির্মাণসহ বিভিন্ন মূলধনি প্রকল্পের
ব্যয় মিটানোর জন্য তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে এই ধরনের বন্ড ইস্যু করা হয়। এই ধরনের বন্ডের
ক্রেতাকে সাধারণত কর রেয়াত দেয়া হয়। বাণিজ্যিক ব্যাংক, সাধারণ বিমা কোম্পানি, ব্যক্তি
এবং অপরাপর প্রতিষ্ঠান এই ধরনের বন্ড ক্রয় করে।
৫. শেয়ার সার্টিফিকেট: পাবলিক লিমিটেড
কোম্পানি বিভিন্ন মূল্যমানের শেয়ার ইস্যু করে বিনিয়োগ তহবিল সংগ্রহ করতে পারে। এই ধরনের
শেয়ারের এক একটি লট সর্বনিম্ন পাঁচটি এবং সর্বোচ্চ প্যাশটি হয়। শেয়ারের দাম ১০ টাকা,
১০০ টাকা এবং ১০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। সাধারণত বিভিন্ন বিনিয়োগ কোম্পানি এবং অ-ব্যাংক
আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি স্টক মার্কেট থেকে এগুলো ক্রয় করে।
পরিশেষে বলা যায়
যে, উন্নত দেশে রাজ্য এবং স্থানীয় সরকার এরূপ বন্ড ইস্যু করে। রাস্তাঘাট ও বিল্ডিং
নির্মাণসহ বিভিন্ন মূলধনি প্রকল্পের ব্যয় মিটানোর জন্য তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে এই ধরনের
বন্ড ইস্যু করা হয়। বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিমা কোম্পানি এ ধরনের বন্ড ক্রয় করে।
মুদ্রা ও পুঁজিবাজারের
হাতিয়ারসমূহের মধ্যে পার্থক্য কী?
মুদ্রা ও পুঁজিবাজারে
আর্থিক লেনদেনের জন্য বিভিন্ন ধরনের হাতিয়ার ব্যবহার করা হয়। এ ব্যবহারের কারণে এদের
মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়।
মুদ্রা ও পুঁজিবাজারের
হাতিয়ারসমূহের মধ্যে পার্থক্য: নিয়ে মুদ্রা ও পুঁজিবাজারের হাতিয়ারসমূহের মধ্যে পার্থক্য
দেখানো হলো:
১. মুদ্রাবাজারের
হাতিয়ার স্বল্পমেয়াদি তহবিলের নিশ্চয়তা বিধান করে। পুঁজিবাজারের অনেক হাতিয়ার দ্বিতীয়
বাজারেও (Secondary market) বিক্রয়যোগ্য এবং তার মাধ্যমে 'দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ তহবিল
উঠানো সম্ভব।
২. মুদ্রাবাজারের
হাতিয়ারের বিক্রেতা হলো সরকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং বাণিজ্যিক বাংক। ক্রেতা হিসেবে
বিভিন্ন ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিলক্ষিত হয়। পুঁজিবাজারে বিভিন্ন হাতিয়ারের
যোগানের উৎস হলো সরকারে বিভিন্ন কর্পোরেশন এবং পৌর সংস্থা। ক্রেতা হিসেবে বাণিজ্যিক
ব্যাংক এবং অপরাপর আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পরিলক্ষিত হয়।
৩.মুদ্রাবাজারের
হাতিয়ার নিশ্চিত ফলাফল প্রদান করে। যেমন- স্বল্পমেয়াদি ট্রেজারি বিল বিনিয়োগের মাধ্যমে।
এগুলো নিশ্চিতভাবে লাভজনক। এক্ষেত্রে ঝুঁকির আশঙ্খা নেই বললেই চলে। কিন্তু মূলধন বাজারের
অনেক হাতিয়ার ঝুঁকিপূর্ণ।
৪. মুদ্রাবাজারে
যেসব হাতিয়ার ব্যবহার করা হয় সেগুলো মূলত স্বল্পমেয়াদি। মূলধন বাজারের হাতিয়ার মধ্যম
ও দীর্ঘমেয়াদি। একথা সত্য যে কোনো স্বল্পমেয়াদি হাতিয়ার বার বার ইস্যু করলে দীর্ঘমেয়াদি
হাতিয়ারের সমতুল্য প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি
করতে পারে। পরিশেষে
বলা যায় যে, প্রাথমিক ইস্যু বিবেচনা করলে মুদ্রা ও পুঁজিবাজারের হাতিয়ারের মধ্যে উপরিউক্ত
পার্থক্য গ্রহণযোগ্য বলা যায়।