আর্থিক বিশ্লেষণের উদ্দেশ্য ও আর্থিক বিশ্লেষণের প্রকারভেদ লেখো ।
প্রত্যেক কোম্পানি তাদের আর্থিক লেনদেনের সামগ্রিক চিত্র আর্থিক বিবরণী তৈরির মাধ্যমে বার্ষিক প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করে। সাধারণত এসব বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরি করা হয় নিয়ন্ত্রণকারী, ঋণদাতা, মালিক, শেয়ারহোল্ডার এবং ব্যবস্থাপনায় ব্যবহারের উদ্দেশ্যে।
আর্থিক বিশ্লেষণ: আর্থিক বিবরণী তৈরি করা হয় নির্দিষ্ট পদ্ধতি, নীতি এবং গাইড লাইন অনুসরণ করে। যা হিসাববিজ্ঞানের নীতিমালা বা Generally Accepted Accounting Principle (GAAP) নামে পরিচিত। বাংলাদেশে বিদ্যমান সব পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিকে তার শেয়ারহোল্ডারদের নিকট বার্ষিক প্রতিবেদন পাঠাতে হয়।
একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সিদ্ধান্তসমূহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব সিদ্ধান্তসমূহ গ্রহণের পূর্বে ব্যবস্থাপকের কারবারের গতিপ্রকৃতি, সম্পত্তি, দায় প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া আবশ্যক। বিনিয়োগকারীকে বিনিয়োগ প্রকল্পকে পূর্ববর্তী সময় থেকেই যাচাই করা আবশ্যক। এসব তথ্য পেতে হলে প্রতিষ্ঠানের আয় বিবরণী এবং উদ্বর্তপত্র দেখা প্রয়োজন। মূলত আর্থিক বিবরণী বিগত বছরের আর্থিক কার্যকলাপ নিয়ে আলোচনা করে।
আর্থিক বিবরণী হলো প্রতিষ্ঠানের প্রাণ। কোম্পানির বর্তমান শেয়ারহোল্ডারগণ আর্থিক বিবরণী দেখে তাদের বিনিয়োগ সম্পনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। আর্থিক বিবরণী থেকে প্রতিষ্ঠানের মো আয়, নিট আয়, শেয়ার প্রতি সম্পত্তি, শেয়ার প্রতি লভ্যাংশ, ঋণ শেয়ার মূলধন অনুপাত ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়। আয় বিবরণী এবং উদ্বৃত্তপত্রের মধ্যে সঠিকভাবে সম্পর্ক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সফলতা ও দুর্বলতা নির্ণয় করার বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়াকে আর্থিক বিশ্লেষণ বলে।
পরিশেষে বলা যায় যে, কোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কার্যাবলির পর্যালোচনাকেই আর্থিক বিশ্লেষণ বলে। অন্যভাবে বলা যায় আর্থিক ব্যবস্থাপকের কার্যক্রমের নিরীক্ষাকেই আর্থিক বিশ্লেষণ বলে। আর্থিক বিবরণী আর্থিক বিশ্লেষণের সাথে সম্পৃক্ত। আর্থিক বিবরণী ব্যবহাকারীদের কাছে সহজবোধ্য তথ্য উপস্থাপন (করার জন্য বিশ্লেষণ করা হয়।
আর্থিক বিশ্লেষণের উদ্দেশ্য।
আর্থিক উপাত্তের নির্বাচন, সম্পর্ক নির্ণয় ও মূল্যায়নের পদ্ধতিকে আর্থিক বিশ্লেষণ বলে। আর্থিক বিশ্লেষণ ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে কারবারের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিছু বিষয়কে সামনে রেখে আর্থিক বিশ্লেষণ করা হয়। সে বিষয়গুলোকে বলা হয় আর্থিক বিশ্লেষণের উদ্দেশ্য।
আর্থিক বিশ্লেষণের উদ্দেশ্য: নিম্নে আর্থিক বিশ্লেষণের উদ্দেশ্যসমূহ আলোচনা করা হলো:
১. ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের পূর্ববর্তী বছরগুলোর লাভ-লোকসানের সঠিক তথ্য বের করা।
২. প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সচ্ছলতার সংখ্যাত্মক হিসাব করা।
৩. আর্থিক ব্যবস্থাপকের দক্ষতা পরিমাপ করা।
৪. কোনো নির্দিষ্ট দিনের/মাসের/বছরের আর্থিক তথ্য উপস্থাপন করা।
৫. প্রতিষ্ঠানের বর্তমান দায়ের পরিমাণ এবং তা পরিশোধের ক্ষমতা নির্ণয় করা।
৬. তথ্যের সঠিকতা যাচাই করা।
৭. বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আর্থিক সম্পদের তুলনামূলক চিত্র প্রকাশ করা।
৮. তথ্য ব্যবহারকারীদের কাছে ফার্মের তথ্য সরবরাহ করা।
৯. যেকোনো ব্যবসায়িক ও আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করা।
১০. এজেন্সি সমস্যা দূর করা।
আর্থিক বিশ্লেষণের প্রকারভেদ।
উত্তর আর্থিক উপাত্তের নির্বাচন, সম্পর্ক নির্ণয় ও মূল্যায়নের পদ্ধতিকে বিশ্লেষণ বলে। আর্থিক বিশ্লেষণ ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে কারবারের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিছু উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আর্থিক বিশ্লেষণ করা হয়।
আর্থিক বিশ্লেষণের প্রকারভেদ: আর্থিক বিশ্লেষণ সাধারণত দুপ্রকার। যথা:
১. অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণ ও
২. বাহ্যিক বিশ্লেষণ।
১. অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণ:
প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব প্রয়োজনে আর্থিক ব্যবস্থাপক যখন আর্থিক বিবরণীসমূহ বিশ্লেষণ করেন তখন তাকে অভ্যন্তরীণ আর্থিক বিশ্লেষণ বলে। সাধারণত প্রতিষ্ঠানে অভ্যন্তরের বিভিন্ন পক্ষ আর্থিক বিশ্লেষণ, অনুকূল ব্যবসায়ের অতীত কার্যাবলির পর্যালোচনা, চলতি সময়ের কার্যক্রম মূল্যায়ন ও নিয়ন্ত্রণ এবং ভবিষ্যৎ কার্যাবলির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য কারবারের আর্থিক বিবরণীসমূহ বিশ্লেষণ করে থাকে।
এ বিশ্লেষণের সাহায্যে কারবারের কর্মদক্ষতা, ব্যবস্থাপনায় সফলতা, ব্যর্থতা, আর্থিক গতিপ্রকৃতি, অবস্থা, প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা প্রভৃতি নির্ধারণ, যাচাই ও মূল্যায়ন করা যায়। কারবারের অতীত অবস্থার সাথে বা শিল্পের অনুপাতের সাথে বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অর্জিত অনুপাতের সাথে তুলনা করে অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণ করা হয়। কর্মের হিসাব বিভাগে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও কর্মীগণের দ্বার। অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণ প্রস্তুত/সম্পাদন করা হয়।
২. বাহ্যিক বিশ্লেষণ:
কারবারের অভ্যন্তরীণ কোনো কর্মকর্তা
বাদে প্রতিষ্ঠানের তথ্য জানার কোনো অধিকার নেই এমন ব্যক্তি যখন আর্থিক বিবরণী যাচাই
করে, তখন তাকে বাহ্যিক বিশ্লেষণ বলে। ব্যবসায় আর্থিক সংগতি, ঋণ পরিশোধ ক্ষমতা, মুনাফা
অর্জন ক্ষমতা, লভ্যাংশের হার ইত্যাদি সম্পর্কে পরিচালনা কর্তৃপক্ষ ছাড়াও বিভিন্ন বাক্তি
জানতে আগ্রহী হতে পারে। এসব ব্যক্তির মধ্যে রয়েছেন-
i. বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ।
ii. কারবারের পাওনাদার।
iii. বিমা কোম্পানিসমূহ।
iv. অধ্যাপকগণ।
v. CA অধ্যয়নরত ছাত্ররা।
vi. বিনিয়োগকারীরা।
পরিশেষে বলা যায় যে, আর্থিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে যেসব তথ্য পাওয়া যায় তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও প্রতিষ্ঠানকে নিরীক্ষিত হিসাবের মাধ্যমে যাবতীয় তথ্যাবলি সরবরাহ করা হয়। আর্থিক বিশ্লেষণের উল্লিখিত দুটি পদ্ধতির মাধ্যমে সাধারণত তা সম্পন্ন করা হয়।