মুরাবিতুনদের পরিচয় দাও ।

মুরাবিতুনদের পরিচয় দাও ।

মুরাবিতুন কারা? তাদের শাসনকাল সংক্ষেপে বর্ণনা কর।

অথবা, মুরাবিতুনদের পরিচয় দাও।

উত্তর ভূমিকা: একাদশ শতাব্দীর শেষভাগে রাজশক্তি হিসেবে মুরাবিতুনদের উত্থান উত্তর আফ্রিকার ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটন।। ১০০২ খ্রিস্টাব্দে স্পেনের প্রভাবশালী উজির ও প্রধানমন্ত্রী হাজিব আল মনসুরের মৃত্যুর পর যখন উত্তর আফ্রিকায় উমাইয়াদের ক্ষমতা কমতে থাকে ঠিক তখন সাহারার বার্বারগণ সেখানকার একজন মুরাবিতুন বা ধর্মীয় নেতাকে তাদের শাসক হিসেবে মেনে নেয়।।

মুরাবিতুন: মুরাবিতুন একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ রাবাতে বা উপাসনালয়ে অবস্থানকারী এমন ব্যক্তি যিনি আধ্যাত্মিক জ্ঞানের অধিকারী। মুরাবিতুনগণের ধর্মীয় উপদেশ ও আলোচনা শোনার জন্য লোকজন রাবাতের আশেপাশে সমবেত হতো। মুরাবিতুনদের পুরুষেরা সাহারার প্রচণ্ড তাপ থেকে রক্ষা পেতে সবসময় কালো কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রাখত। এজন্য মুরাবিতুনদের মুলাচ্ছামিন (পর্দায় থাকা লোকজন) নামেও ডাকা হতো। তবে মেয়েরা বেশ স্বাধীনতা ভোগ করতো যদিও তারা বাইরে বেশি চলাফেরা করতো না। ১০০২ খ্রিস্টাব্দে হাজিব আল মনসুরের মৃত্যুর পর উত্তর আফ্রিকায় উমাইয়া বংশের শাসন ও নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে পড়লে সেখানকার বার্বারগণ একজন মুরাবিতুনকে নিজেদের শাসক হিসেবে মেনে নেয়।

মুরাবিতুনদের শাসনকাল: মুরাবিতুন বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন ইউসুফ বিন তাশফিন। ইউসুফ বিন তাশফিন ১০৬১ থেকে ১১০৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজ্যশাসন করেন এবং সাহারার বার্বারদেরকে সংগঠিত করেন। ১০৮৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি সেভিলের শাসক আল মুতামিদের আহ্বানে স্পেনে অভিযান চালান এবং খ্রিস্টান শাসক আলফান্সোকে জাল্লাকার যুদ্ধে পরাজিত করেন। তিনি মরক্কোতে একটি নগরী প্রতিষ্ঠা করে সেখানে রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেন। বাগদাদের আব্বাসি খলিফা তাকে 'আমিরুল মুসলিমিন' উপাধি প্রদান করেন। ইউসুফ বিন তাশফিনের মৃত্যুর পর তার পুত্র আলি বিন ইউসুফ ১১০৭ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে বসেন। আলি বিন ইউসুফ স্থানীয় খ্রিস্টান শক্তিগুলোকে কয়েকবার পরাজিত করেন। তিনি মাদ্রিদ, আলভেরাসহ বিখ্যাত সারাগোসা অধিকার করেন। তিনি ১১৪৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শাসন করেন। আলি বিন ইউসুফের মৃত্যুর পর তাশফিন, ইব্রাহিম এবং ইসহাক রাজ্য শাসন করেন। কিন্তু এই দুর্বল উত্তরাধিকারীদের কাছ থেকে খ্রিস্টানরা বিভিন্ন এলাকা দখল করে নেয়। মুয়াহিদুন বংশের প্রতিষ্ঠাতা- আব্দুল মুমিন বিন আলি ১১৪৬ খ্রিস্টাব্দে তেলেমসান নামক স্থানে মুরাবিতুনদের পরাজিত করেন এবং নাবালক মুরাবিতুন শাসক ইসহাককে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, মুরাবিতুনগণ স্বল্প সময়ের ব্যবধানে উত্তর আফ্রিকা ও স্পেনে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হন। কিন্তু যোগ্য শাসকের অভাবে মাত্র একশত বছরের মধ্যেই তারা পতনের সম্মুখীন হন। তাদের উত্থান যেমন বিস্ময়কর তেমনি তাদের পতনও ছিল দৃষ্টান্তমূলক। ১১৪৬ খ্রিস্টাব্দে মুরাবিতুনদের ধ্বংসস্তূপের ওপর মুয়াহিদুন বংশ প্রতিষ্ঠিত হয়।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post