ইরান কবে আক্রমন করবে ইসরাইল? জানুন সত্য।

তেহরানে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়ার হত্যাকাণ্ডের পর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি দিয়েছিল ইরান।  বলেছিল ইজরায়েলকে শাস্তি দেয়া হবে। আল আরাবিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সেই ঘোষণার প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও ইজরায়েলকে সেই শাস্তি দিতে ইরানি তোড়জোড়  খুব একটা লক্ষ্য করা যায়নি।

ইসমাইল হানিয়ার মৃত্যুর পর সব শেষ ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর মুখপাত্র বলেন, ইজরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের প্রতিশোধ মূলক হামলা দীর্ঘ সময় নিতে পারে। তার ওই মন্তব্যের পর ইরান কবে ইসরায়েলে হামলা চালাবে সেই বিষয়টি নিয়ে নতুন করে অনিশ্চয়তা শুরু হয়।  

এর আগে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলা চালিয়ে দেশটির দুই শীর্ষ কমান্ডার কে হত্যা করা হয়। ইরান খুব দ্রুতই সেই হামলার জবাব দিয়েছিল। তিন শতাধিক ক্ষেপনাস্ত্র ও ড্রোনের ঝাকের সাহায্যে ইরান ইসরাইলে আক্রমণ করেছিল।

এবার হানিয়ার হত্যাকাণ্ডের পর ইরানের প্রতিশোধ নিতে বিলম্ব করার বিষয়টি তেহরানের বর্তমান কৌশল সম্পর্কে পরিষ্কার কিছু বোঝা যাচ্ছে না।  ইরান কেন ইসরায়েলে হামলা করার বিষয়টি নিয়ে দ্বিধান্বিত তা ব্যাখ্যা করতে বিশ্লেষকরা কয়েকটি বিষয়ে সামনে হাজির করেছেন।  

সেগুলোর মধ্যে প্রধান একটি কারণ হলো ইজরায়েলের শক্তিশালী প্রতিক্রিয়ার ভয়ে ইরান হয়তো দ্বিধান্বিত এবং এই হামলার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি সরাসরি জড়িত হয়ে পড়ে তবে তা একটি বিস্তৃত সংঘাতে পরিণত হতে পারে।

দ্বিতীয়তঃ ইরানের বর্তমান নেতৃত্ব যার সর্বোপরি ইরানের ক্ষমতার উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখাকে অগ্রাধিকার দেয়। এ বিষয়ে বোস্টন ইউনিভার্সিটি ফ্রেডরিক এস পার্টি সেন্টার ফর দা স্টাডি অফ দা লং রেঞ্জ ফিউচারের ভিজিটিং ফেলো আরাশ আজিজী বলেন, ইরানের অনেকেই দেশটির রাজনৈতিক শ্রেণীর নেতৃত্ব স্থানীয় ব্যক্তিত্বসহ দেশটির নেতৃত্বকে সর্বাত্মক যুদ্ধের পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। যা দেশের জন্য সত্যিকার অর্থেই ধ্বংসাত্মক এবং সরকারের জন্য মারাত্মক হতে পারে।

ইরানের সমুদ্রসীমার কাছাকাছি মার্কিন সামরিক উপস্থিতিও হয়তো তেহেরান কে ইসরায়েলে হামলা থেকে বিরত রাখতে বাধ্য করছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ পেন্টাগনের মতে, এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি ইরানের নেতাদের ঠান্ডা করে দিয়েছে।

ইরান এর  আগেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর বিষয়টি তীব্রভাবে এড়িয়ে গেছে।  এর একটি প্রমাণ হল ইরানের আল কুদস ফোর্সের প্রধান কাশেম সোলাইমানিকে ২০২০ সালে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র তখনও ইরান যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। এমনকি কাশেম সোলাইমানীর ব্যাপক গুরুত্ব থাকার পরও ইরান যুক্তরাষ্ট্রের  সঙ্গে সংঘাতে জড়ানো থেকে বিরত ছিল।


আল আরাবিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইজরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের আক্রমণাত্মক অবস্থান নেওয়া থেকে বিরত থাকার আরেকটি কারণ হতে পারে য, ইসরায়েল হামাসের মধ্য গাঁজায় যুদ্ধ বিরতি আলোচনা।  ইরান চায়না এমন কোন সিদ্ধান্ত নিতে যা এই আলোচনাকে লাইনচ্যুত করতে পারে। এছাড়া এমনটা করে ইরান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দোষী হিসেবেও বিবেচিত হতে চায় না। 

আগামী নভেম্বরে হতে যাওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়েও সতর্ক ইরান। তেহরানের ক্ষমতাসীনরা এমন কিছু করতে চায় না যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড  ট্রাম্পের দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হওয়ার বিষয়টি ত্বরান্বিত হয়।  কারণ বর্তমান বাইডেন প্রশাসন ইরানের ব্যাপারে যতটা নমনীয় ডোনাল্ড ট্রাম্প হয়তো তার চেয়েও অনেক বেশি আগ্রাসী মনোভাব দেখাবেন বলে তাদের ধারণা। যার প্রমান নিকট অতীতেই পাওয়া গেছে।  

যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক এবং ইউনাইটেড এগেইন্সট নিউক্লিয়ার ইরানের সিনিয়র উপদেষ্টা সাঈদ গোলকার বলেন, ইজরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রকে একটি বড় সংঘর্ষে টেনে আনবে যা নভেম্বরের নির্বাচনে কমলা হ্যারিসের নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনাকে বিনষ্ট করতে পারে।  ইসলামিক প্রজাতন্ত্র অর্থাৎ ইরান ট্রাম্প  কে আবার নির্বাচিত হওয়া  থেকে আটকাতে যা প্রয়োজন নিজের তরফ থেকে তার সবটাই করবে।  

তবে এতগুলো শর্ত বা কারণ হাজির থাকার পরও হয়তো ইরান ইজরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে বাধ্য। বিশেষ করে নিজের মাটিতে মিত্রগোষ্ঠীর শীর্ষ নেতা গুপ্তহত্যার শিকার হওয়ার পর বিষয়টি ইরানের জন্য মর্যাদার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।


এমনকি গত এপ্রিলেও ইরান ইজরায়েলে প্রতিকি হামলা চালিয়েছিল। সেই ধরনের কোন আক্রমণ চালিয়ে হলেও প্রতিশোধ নিতে চাইবে ইরান। তবে এবারে এপ্রিলে ইরান ইজরায়েলে যেসব হামলা চালিয়েছে তার মতো ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন সরাসরি ব্যবহার করা নাও হতে পারে।

সর্বশেষ বলা যায়, সবমিলিয়ে ইরান এখনো কিছুটা বিধান্বিত। বিশেষ করে কিভাবে একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ এড়িয়ে ইজরাইলি আগ্রাসনকে বাধা দেয়া যায় সেই বিষয়টি নিয়ে ইরান অনেক বেশি বিধান্বিত। বর্তমানে ইরানের নেতৃত্ব এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বিশেষ করে দেশটির সমর্থকদের প্রত্যাশা এবং বাস্তবতার মাঝে যেই দূরত্ব সেটি কিভাবে মেটানো যায় সেটিই এখন তেহরানের মূল চিন্তা বলে বিশ্লেষকরা মনে করছ।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post