সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গত বেশ কয়েকদিন ধরে সর্বজনীন পেনশন স্কিম অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার বিষয়ে একজোট হয়ে আন্দোলন করছেন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ থেকে কর্মবিরতি কর্মসূচি শুরু হয়েছে ফলে, ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আদতে অচল হয়ে পড়েছে।
কেন শিক্ষকরা সর্বজনীন পেনশন স্কিম এর বিরোধিতা করছেন? সত্যিই কি এই স্কিম বৈষম্যমূলক? শিক্ষকদের বাইরে ও সার্বজনীন পেনশন স্কিম সাধারণ মানুষের আস্থার খুবই কম সেটিই বা কেন?
শিক্ষকদের আন্দোলনের কথা বলার আগে সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে কিছু কথা বলা প্রয়োজন । ২০২৩ সালের আগস্টে এই স্কিম উদ্বোধন করা হয় পেনশন স্কিম চালু করার মূল পটভূমি ছিল বেসরকারি খাতের মানুষকে পেনশনের আওতায় নিয়ে আসা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনের সময় স্পষ্ট করে বলেছিলেন যে এই স্কিম সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নয়, তবে গত আগস্ট মাসে জাতীয় পেনশনকর্তৃপক্ষ স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রত্যয় স্ক্রিন নামে একটি স্কিম চালুর ঘোষণা দেয়।
প্রত্যয় স্কিম কি?
২০২৪ সালের ১
জুলাই থেকে যারা স্ব-শাসিত স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্রায়ত্ত এবং সমজাতীয় সংস্থা এবং এদের
অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সমূহের যোগদানকারী নতুন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন থেকে প্রত্যেক
স্কিমের আওতায় পেনশন পাবেন মূলবেতনের ১০% বা সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা করে কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ
এবং সমপরিমাণ অর্থ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিমাসে জমা করে এইস্কিমে যুক্ত হবে।তাহলে প্রত্যয়
স্কিমে শিক্ষকদের আপত্তি আসলে কোথায়?
এই স্ক্রিনকে বৈষম্যমূলক আখ্যা দিয়ে এর বিরোধিতা করেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন । শিক্ষকরা বলছেন নতুন পেনশন ব্যবস্থায় অবসরকালীন সময়ে মাসে মাসে এখনকার চেয়ে 2.7 গুন টাকা পাওয়া যাবে কিন্তু এজন্য শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন থেকে টাকা কাটা হবে।
তাছাড়া নতুন ব্যবস্থায় অবসরের পর কোন এককালীন টাকা পাওয়ার ব্যবস্থা থাকছে না ।
বছর বছর পেনশন বাড়বে ও না এবং পেনশনারদের মনোনীত ব্যক্তি এখনকার মতো আজীবন পেনশন পাবেন
না। নতুন ব্যবস্থায় পেনশনারদের জন্য কোন উৎসব ভাতার কোন ব্যবসা থাকছে না । এ ধরনের
কয়েকটি সুবিধা না থাকার কথা উল্লেখ করে শিক্ষকরা বলছেন নতুন ব্যবস্থায় তাদের সুবিধা
অনেকখানি কমে যাবে।
এর বাইরে শিক্ষকরা এই স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করা কে তাদের জন্যও সম্মানহানিকর বলেও মন্তব্য করেছেন।
শিক্ষকদের বাইরে আর কারা এই নতুন পেনশন ব্যবস্থার আওতায় থাকবেন? বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বীমা ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন বাংলাদেশ, সব সরকারি ব্যাংক, সাধারণ বীমা সহ সব কর্পোরেশন পেট্রোবাংলা, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, বিএসটিআই সহ প্রায় ৪০০ সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান নতুন কর্মকর্তা- কর্মচারীরা এই নতুন পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আসবে। অন্য সরকারি চাকরিজীবীদের ও সর্বজনীন পেনশনের আওতায় ঘোষণা দিয়েছে সরকার সে অনুযায়ী আগামী বছর অর্থাৎ 2025 সালের ১ জুলাই থেকে যারা সরকারি চাকুরিতে অংশগ্রহণ করবেন তাদের জন্য নতুন একটি কর্মসূচি চালু করা হবে সেটির নাম হবে সেবক।
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের আগ্রহ এত কম কেন?
গত এক বছরে সরকারের চারটি সর্বজনীন পেনশন স্কিম এর আওতায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ ৩৩ গ্রাহক হয়েছেন। জমা পড়েছে ১০০ কোটি টাকারও কম ১৭ কোটি জনগণের এই দেশে পেনশন স্কিম মানুষের এই অংশগ্রহণ অত্যন্ত কম।
বিশ্লেষকরা বলছেন সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা কম থাকায় তারা এ ধরনের স্ক্রিনে আসছেন না। তাছাড়া দেশের অর্থনীতির সূচক গুলিতে ও নানামুখী ঝুঁকি রয়েছে। অনেক ব্যাংক টাকা নয় ছয় করার খবর নিয়মিত বের হচ্ছে এ অবস্থায় সরকার টাকা নিয়ে কিভাবে এবং কোথায় ব্যয় করবে? সঠিকভাবে এই টাকা ব্যবহার করতে পারবে কিনা? যদি এটা কার সদ্ব্যবহার না হয় তখন মানুষ ঠিকভাবে টাকা ফেরত পাবে কিনা? এসব নিয়ে মানুষের মধ্যে দ্বিধা দ্বন্দ্ব রয়েছে ।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন মানুষের মধ্যে সচেতনতা ও অভাব রয়েছে কোন স্কিমের সরকার যখন নিশ্চয়তা দেয় তখন সরকার নিজে দেওলিয়া হয়ে না যাওয়া পর্যন্ত টাকা নিয়ে কোনো সংশয় থাকার কথা নয়।
প্রত্যয় পেনশন
স্কিম নিয়ে চলমান অবস্থায় কি বলছে পেনশন কর্তৃপক্ষ? শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে পেনশন কর্তৃপক্ষ বলছে এই স্ক্রিণ বৈষম্যমূলক নয়
।তাছাড়া শিক্ষকদের বাইরে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো
থেকে এখন কোনো প্রতিবাদ আসেনি।
তাছাড়া স্ব-শাসিত
স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বাইরে সব সরকারি চাকরিজীবী আগামীতে নতুন
একটি পেনশন স্কিম এর আওতায় আসবেন সুতরাং এটি তাদের জন্য সম্মানহানিকর নয় ।