কোটা আন্দোলন: নেতৃত্বের কৌশল আর ছাত্ররা সংগঠিত হচ্ছে যেভাবে ।

 

কোটা আন্দোলন: নেতৃত্বের কৌশল আর ছাত্ররা সংগঠিত হচ্ছে যেভাবে ।

কোটা সংস্কার আন্দোলন সমন্বয় করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলনটি যেন কোনোভাবেই বিতর্কিত না হয় সেটি তারা নিশ্চিত করতে চান ।

 

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সরজিল আলম বলেনঃ

কোন রাজনৈতিক দলের ব্যানারে আলাদা ব্যানারে এসেছে তার পরিচয় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

 

বাংলাদেশের ছয় বছরের মাথায় কোটা সংস্কার দ্বিতীয় বড় আন্দোলন এটি সারা দেশে ছাত্র আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি নিয়ে সজাগ এখন অনেকের।

 

৫জুন  আদালতের রায়ের পর থেকেই মূলত বিক্ষুব্ধ হন কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা। ভিন্নভাবে তারা প্রতিবাদ শুরু করেন। তবে পহেলা জুলাই থেকে তারা সংঘবদ্ধভাবে সারাদেশে আন্দোলন কর্মসূচি দেন।

 কোটা সংস্কারের এবার ছাত্ররা নাম দিয়েছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায় এই আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয় হল বিভাগভিত্তিক নেটওয়ার্ক  কাজে লাগিয়েছে। ক্যাম্পাসে আবাসিক হলে গণসংযোগ এবং প্রচারপত্র বিলি হয়েছে।

 

আরেক নারী সমন্বয়ক রাফিয়া রেশমা হৃদি  বলেন:

শুরু থেকে নারী উপস্থিতি সেরকম ছিল না। পরে এ বিষয়টি প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে প্রত্যেকটা নারী যারা আসতে চাই এ আন্দোলনে  কিন্তু বিভিন্ন বাধার কারণে আসতে পারেনি তাদের সেই বাঁধাগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করা হয় তাদেরকে সাহস দেওয়া হয়। হলের যে গ্রুপ আছে সেগুলোতে যখন আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে বা কয়টায় উপস্থিত থাকতে হবে এ গুলো যখন জানিয়ে দেয়া হচ্ছে তখন নারী শিক্ষার্থীরা হচ্ছে স্বপ্রণোদিত হয়ে সেখানে অংশগ্রহণ করছেন।

 

  আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কেও ব্যাপকভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে।

 

সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন :

 আমাদের ফেসবুক বা আমাদের হচ্ছে অনলাইন বিভিন্ন মাধ্যমের মাধ্যমে আমরা মিটিং করছি এবং একসাথে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার চেষ্টা করছি এবং যারা ঢাকায় বিশুদ্ধ কর্মসূচি পালন করছে তাদের সাথে সরাসরি আমরা বৈঠক করে আমরা বিভিন্ন পয়েন্টগুলো ভাগ করে দিচ্ছি যে কোন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় কোন হওয়ার কোন পয়েন্টে নিবে। এভাবে আমরা সমন্বয় করে আন্দোলন পরিচালনা করছি।

 

 শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে সড়ক অবরোধ এবং অবস্থান কর্মসূচির নাম দেয় "বাংলা ব্লকেড" ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে বাংলা ব্লকের ছড়িয়ে পড়ে খুলনা থেকে চট্টগ্রামে, বরিশাল থেকে সিলেট বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহী কুমিল্লা সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক বন্ধ করে দিয়ে "রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ চলছে আনতে সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত" এরকম নোটিশ টানিয়ে দেয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এখানে আন্দোলনকারীরা জানাচ্ছেন তারা কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয় করে এই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন এবং চালিয়ে যাবেন ।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ আন্দোলনে প্রথম থেকেই সোচ্চার হয়েছেন সেখানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ছাত্র-ছাত্রীদের সংগঠিত করতে গঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক আহবায়ক কমিটি আন্দোলনের প্রচারে নানা কৌশল তারা কাজে লাগিয়েছেন।  ক্যাম্পাসে দেখা গেছে মাইকিং আবাসিক হলগুলোতে হয়েছে গণসংযোগ।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আহবায়ক কমিটির সদস্য ফারহানা বিনতে জিগর ফারিনা বলেন:

শহর থেকে আমরা একদমই অনেক দূরে তাই আমরা এখান   থেকে যতটা নিজেরা পারি নিজেদের word-of-mouth দিয়ে ডাকার চেষ্টা করছে মাইকিং করছি , প্রতিনিয়ত কর্মসূচি রাখছি , অবরোধ করে অবরোধ দেখেও অনেক মানুষ আছে আমাদের সঙ্গে জয়েন করছেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক আরিফ সোহেল তিনি জানান এই আন্দোলনের নেতৃত্ব এবং কর্মসূচি নিয়ে তারা এবার বিশেষভাবে সচেতন।  এক ব্যক্তি কেন্দ্রিক বা হচ্ছে কিছু ব্যক্তিকেন্দ্রিক কোন নেতৃত্ব এখানে আসলে এই মুহূর্তে আমরা পসিটিভলি দেখছি না। আমরা চাচ্ছি খুবই স্বতঃস্ফূর্তভাবে আন্দোলনকে একটা ডেমোক্রেটিক চরিত্র রেখেই তৈরি হোক । যেহেতু এটা একটা ডেমোক্রেটিক দাবি এবং সারাদেশে জনগণের দাবি ।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে এবার কাউকে একক  মুখপাত্র নির্বাচন করা হয়নি সারাদেশের আন্দোলনকে সুসংগঠিত করতে প্রাথমিকভাবে ৬৫সদস্যের একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়।

 

 সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন : না আমরা কোন একক নেতৃত্ব এক মুখপাত্র রাখিনি । আমাদের এখানে যারা সমন্বয়ক আছেন

তারাই যেকোনো সময় যেকোনো সামনে আসতে পারেন, কথা বলতে এইখানে কোন একক নেতৃত্ব নেই আসলে। বলেছিল একটা পলিসি ছিল যে যারা আসলে  পরিচিত ফেজ বা যাদের নিয়ে রাজনৈতিক কোন বিতর্ক আছে তাদেরকে আমরা এই প্লাটফর্মে সামনে রাখিনি।

এ আন্দোলনের সমন্বয় কমিটিতে যারা আছেন তাদের মধ্যে ২০১৮ সালের কোটাবিরোধী আন্দোলনের অভিজ্ঞতাসম্পন্নরা জায়গা পেয়েছেন। সমন্বয়কারীদের অনেকেই আছেন যারা

ছাত্র রাজনীতি কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সদস্য ।আন্দোলনের সম্ভব শাড়িতে থাকা এবং কমিটির এক নম্বর সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তি নামে একটি সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা দুই নম্বর সমন্বয়ক সানজিদা আলম ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেলে নির্বাচিত হল সংসদের সদস্য ছিলেন। এছাড়া কমিটির সমন্বয়ক হিসেবে রয়েছেন বাম ছাত্র সংগঠনের কর্মী ও।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সরজিল আলম বলেনঃ

পুরো বাংলাদেশে একসাথে একই দাবি উত্থাপন করেছি  একে আন্দোলন করেছি  এবং যেদিন আমাদের আন্দোলন শেষ হয়ে যাবে আমাদের এই ব্যানার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সেদিন থেকেই  এটির ব্যবহার শেষ হয়ে যাবে।

 

নারী সমন্বয়ক রাফিয়া রেশমা হৃদি  বলেন:

  আন্দোলনকে আসলে কোনো তৃতীয় পক্ষ তাদের স্বার্থ হাসিল করতে ভাগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না। কারণ সংগঠনে জায়গা দিয়ে এই আন্দোলনটি অনেক বেশি অতীতের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েছে।

এবার আন্দোলন চার দাবিতে শুরু হলেও এখন ছাত্রদের দাবি এক দফা শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরির সকল শ্রেণীর নিয়োগে কোটা ব্যবস্থার সংস্কার চান। এক্ষেত্রে আদালতের মাধ্যমে কোটাব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হবে সেটি দল-মত-নির্বিশেষে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী মানতে চাচ্ছেন না।

 

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সরজিল আলম বলেনঃ

এই যে পরিপত্রটি আদালত চাইলে আবার কিন্তু বাতিল করতে পারে।আমরা চাই নির্বাহী বিভাগ তাদের একটি গবেষণার মাধ্যমে একটি কমিশন গঠন করে কোটা সংস্কার করুক ।

 

বাংলাদেশের ব্যবস্থায় ত্রুটি থাকার কারণেই আরেকটি ছাত্র আন্দোলন সৃষ্টি হয়েছে এবং স্থায়ী সমাধান দরকার আর এবার ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের কোটাব্যবস্থার চূড়ান্ত সমাধান দেখতে চান শিক্ষার্থীরা।


Post a Comment

Previous Post Next Post