ইজরায়েলের হ্যানিবল নীতি কি, জানুন ভয়ংকর এই নীতি সম্পর্কে
গাজা যুদ্ধের শুরু থেকেই হাসপাতাল কিংবা
শরণার্থী ক্যাম্প, গাড়ি কিংবা আম্বুলান্স সবকিছুই গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ইসরাইলি সেনারা।
আন্তর্জাতিক মহলের নানামুখী চাপেও তারা তাদের
আগ্রাসন থামায়নি। এ রকম একরোখা ভাবেই চলছে
আগ্রাসন। তাদের চাওয়া যেকোন মূল্যেই হামাসের
হাতে জিম্মি ইজরায়িলি বন্দিদের ফিরিয়ে আনবে তারা ।
ইজরায়েলের এমন একগুয়ে আচরণে বিশ্লেষকেরা সন্দেহ করেছিলেন যে, এই যুদ্ধে ইসরাইল তাঁদের বহুল আলোচিত হ্যানিবাল নীতি অনুসরণ করছেন। বিশ্লেষকরা ধারণা করলেও ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম হারেজজের একটি অনুসন্ধানি প্রতিবেদন বলছে, ইজরায়েল আসলেই হ্যানিবাল নীতি অনুসরণ করেই যুদ্ধে এগোচ্ছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার সময় ইজরাইলের সেনাবাহিনীর হাইকমান্ড তাদের তথাকথিত হ্যানিবল নির্দেশিকা মোতায়ন করে। যেটি ২০১৬ সালে যেটি স্থগিত করা হয়েছিল। এতে বলা হয় যে, হ্যানিবাল নীতির কারণেই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সামরিক এবং বেসামরিক সবারই, বেড়ে গিয়েছে মৃত এবং হতাহতের সংখ্যা ।
আজকের প্রতিবেদনে ইজরায়েলের হ্যানিবল নীতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানব এবং সম্প্রতি হারেজের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে আসলে কি বলা হয়েছে সে সস্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করব।
Table of Contents
ইজরায়েলের হ্যানিবল নীতি কি ?
ইজরাইলের সামরিক বাহিনীর বহুল ব্যবহৃত একটি নির্দেশনা বা কৌশল হল হ্যানিবাল। এটি হ্যানিবল প্রসিডিউর বা হ্যানিবল প্রটোকল নামেও পরিচিত। এর মাধ্যমেই শত্রু পক্ষ কোন ইসরাই্লি সৈন্যকে আটক বা অপহরণ করলে তাকে যে কোনো মূল্যে উদ্ধারের চেষ্ঠা করা হয়। নিযুক্ত করা হয় বিপুল সংখ্যক সৈন্য এমনকি অপহৃত সৈন্যের জীবনের ঝুঁকি থাকার পরও অপহরণকারীদের উপর বৃষ্টির মতো গুলি বর্ষণের নির্দেশনা থাকে।
কোন সেনা সদস্যকে শত্রুপক্ষের বন্দী হওয়া ঠেকাতে যেকোনো কিছু করার অলিখিত যে নির্দেশনা দেয়া হয় সেটাই হ্যানিবাল কৌশল। যদিও এসব নির্দেশনা সবসময় মৌখিকভাবে দেয়া হয়। এরকম কোন লিখিত নির্দেশনা কখনোই কেউ দেখেনি।
কখন ইজরায়েলের হ্যানিবল নীতি কিঃ
১৯৮৬ সালের ইসরাইল প্রতিরক্ষা বাহিনীতে বিতর্কিত এই নীতিটি প্রথম চালু করা হয়েছিল। সেসময় লেবানন ভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লার হাতে তিন ইসরাইলি সেনা অপহৃত হয়। তখন সেখানে থাকা অন্যান্য সেনা সদস্যরা অপহরণকারীদের প্রতিরোধে গুলি চালায়নি।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হ্যানিবাল নির্দেশিকা চালু করা হয়। যেনো এরকম ঘটনা আর কখনোই না ঘটে। তবে ধারণা করা হয় তীব্র সমালোচনার হ্যানিবাল নির্দেশিকা ২০১৬ সালের পর আর অনুসরণ করা হয়নি।
ইজরায়েলের হ্যানিবল নীতি ও হারেজজের অনুসন্ধানি প্রতিবেদনঃ
৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ১১৩৯ জন নিহত
হয়েছিলেন এবং ২৫১ কে বন্দি হিসেবে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। হারেজজের প্রতিবেদনে বলা হয় যে, সাধারণদের জন্য
কোন সতর্কিকরণ ছাড়াই তখন ইজরায়েলের নির্দেশনা মোতায়ন করেছিল। তাই মৃতের
সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে অনেক।
হারেজজের দাবি তারা সামরিক নথি পর্যালোচনা
করে পেয়েছে যে, সকাল সাতটা ১৮ মিনিটে হামাসের
আক্রমণের প্রথম ঘণ্টায় বিভাগীয় সদর দপ্তরের দেয়া একটি আদেশ ছিল হ্যানিবল এন্ড ইরেজ। ইরেজ
হলো ইজরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের একটি এলাকা। পরে তদন্তে উঠে আসে যে, ইরেজের তিনটি সামরিক স্থাপনা
এই নির্দেশনা পাঠানো হয়েছিল।
হামলা শুরু হওয়া প্রায় ৫ ঘণ্টা পর আরেকটি
নির্দেশনা পাঠানো হয়। যেখানে বলা হয় একটি গাড়িও
গাজায় ফিরে যেতে পারবে না। কারণ সেনাদের প্রতি নির্দেশনা ছিল যে, যেকোন মূল্যে বন্দি
সেনাদের উদ্ধার করতে হবে।
সূত্রের বরাত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, তখন কি পরিমান হামাস সৈন্য ইসরাইলের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছিল সেটা ইসরাইলি সেনারা
জানতো না। তবে তাদের এতোটুকু ধারণা ছিল যে,
ইসরাইল সীমান্ত অনেক হামাস যোদ্ধা জড়ো হয়েছে সুতরাং এই বাক্যটির কি এবং অপহৃতদের
মধ্যে বন্দি সেনাদের ভাগ্যে কী হবে তা সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার ছিল।