আসাবিয়া কি? ইবনে খালদুনের আসাবিয়া তত্ত্ব

 

আসাবিয়া কি? ইবনে খালদুনের আসাবিয়া তত্ত্ব


আসাবিয়া কি? ইবনে খালদুনের আসাবিয়া তও্ব

ভূমিকা:

রাজ্য ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও আরবদের সমাজজীবন ছিল গোত্রভিত্তিক । গোত্রভুক্ত সদস্যদের আত্মীয়তাবোধকে আল আসাবিয়া বলা হতো । এটি ছিল গোত্রের সদস্যদের মাঝে সামাজিক চেতনা । এ চেতনা দ্বারা গোত্রীয় সদস্যদের পারস্পরিক সহযোগী সহানুভূতিশীল মনোভাবকে বুঝায় ।

আসাবিয়া : নিম্নে আসাবিয়া সম্পর্কে আলোচনা করা হলো : 

১. আসাবিয়া :

বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ও ঐতিহাসিক ইবনে খালদুন তার বিখ্যাত গ্রন্থ আল-মুকাদ্দিমার দ্বিতীয় অধ্যায়ে যাযাবর বা বেদুইন সমাজের আলোচনা প্রসঙ্গে আল আসাবিয়া প্রত্যয়টি ব্যবহার করেন। এর ইংরেজি প্রতিশব্দ 'Social Solidarity' যাকে বাংলায় বলা হয় ‘সামাজিক সংহতি’ বা ‘গোত্র সংহতি'। ইবনে খালদুনের মতে— রক্ত, জাতীয়তা প্রভৃতির মাধ্যমে সামাজিক সংহতি গড়ে ওঠে। গোত্রপ্রীতি ছিল আরব বেদুইনদের মূল প্রেরণা। এর মূলকথা হলো গোত্রের অন্য সদস্যদের প্রতি সীমাহীন ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, আনুগত্য ও শ্রদ্ধাবোধ ।

আসাবিয়া শব্দটি আরবি। যার অর্থ গোত্র সংহতি বা গোত্রীয় চেতনা। নিজ গোত্রের প্রতি আনুগত্য ও আত্মীয়তাবোধকে আসাবিয়া বলা হয়। প্রাক ইসলামি এবং ইসলামি যুগে আরবদের মাঝে আসাবিয়া বা গোত্রপ্রীতি দেখা যায়। 


২. আসাবিয়া চর্চা : 

রাষ্ট্রে একত্রে বসবাসের কারণে বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষ পরস্পর সংযুক্ত হয় এবং তাদের মাঝে সংহতি ও ঐক্য সৃষ্টি হয় । বলা হয়ে থাকে, রাষ্ট্র সৃষ্টির মূল কারণ হলো সংহতি বা আসাবিয়া (Group Mind)। জীবন জীবিকার অভাব পূরণ এবং বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। 

ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ মানুষ পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এ কারণেই সৃষ্টি হয় আসাবিয়া বা গোত্রীয় সংহতি। প্রাক ইসলামি যুগ থেকে বর্তমান পর্যন্ত আসাবিয়ার চর্চা দেখা যায়; প্রাক ইসলামি যুগে শেখ গোত্রের শাসনকার্য পরিচালনা করতেন ।  তবে বিচার, সমর ও অন্যান্য সাধারণ বিষয়ে তিনি সর্বময় কর্তা ছিলেন না।

গোত্রের অঙ্গীভূত কওম বা পরিবারের প্রধানদের দিয়ে গঠিত পরামর্শ সভার মতামত নিয়ে তিনি কার্যসম্পাদন করতেন। শেখের প্রতি আনুগত্য ছিল সর্বজনীন। স্বগোত্রীয় গোত্রের সদস্যদের প্রতি প্রত্যেকে সহানুভূতিশীল ও বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল । নিজ গোত্রের প্রতি কোনো অপমান হলে প্রত্যেকেই তা সমানভাবে উপলব্ধি করতো । গোত্রীয় সংহতির চেতনায় উদ্বুদ্ধ আরব জাতি স্বাধীনতা বা আত্মসম্মানে আঘাতপ্রাপ্ত হলে মরণপণ সংগ্রামে অবতীর্ণ হতো ।


উপসংহার : 

পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাক ইসলামি যুগে আসাবিয়া তথা গোত্রপ্রীতি আরব জনগণের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছিল। গোষ্ঠীর সদস্যদের মাঝে পারস্পরিক সম্মান ও নিঃশর্ত আনুগত্য বিদ্যমান ছিল। তৎকালীন সময়ে সমাজজীবনে গোত্রই ছিল নিরাপত্তার চাবিকাঠি ।


Post a Comment

Previous Post Next Post