জমজম কূপের ইতিহাস ,কাবাগৃহ সৃষ্টির ইতিহাস

 জমজম কূপের ইতিহাস , কাবাগৃহ সৃষ্টির ইতিহাস

 জমজম কূপের ইতিহাস , কাবাগৃহ সৃষ্টির ইতিহাস


জমজম কূপের ইতিহাস 


ভূমিকা : পুণ্যভূমি মক্কায় অবস্থিত জমজম কূপ আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের এক বিশেষ নিয়ামত হিসেবে স্বীকৃত মুসলিম জাতির কাছে জমজমের পানির গুরুত্ব অপরিসীম। বালুকাময় মরুভূমিতে অবস্থিত এ কূপ আল্লাহ তায়ালার অসীম ক্ষমতার পরিচয় বহন করে ।

জমজম কূপের পরিচয় :

‘জমজম' শব্দটি আরবি। এর শাব্দিক অর্থ থেমে যাওয়া, বন্ধ হওয়া বা আটকানো। হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর পুত্র ইসমাইল (আ.) ও সহধর্মিণী বিবি হাজেরার স্মৃতি বিশ্বের বুকে ধরে রাখার জন্য আল্লাহ তায়ালা যে কৃষ্ণ সৃষ্টি করেন তা জমজম কূপ নামে পরিচিত। নিম্নে এ কূপ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :

১. জমজম কূপের উৎপত্তির ইতিহাস :

জমজম কূপের ইতিহাস ,কাবাগৃহ সৃষ্টির ইতিহাস

হযরত ইব্রাহিম (আ.) তার পুত্র ইসমাইল (আ.) ও স্ত্রী বিবি হাজেরাকে আল্লাহর আদেশে বিরান নামক মরুভূমিতে রেখে এসেছিলেন। সেসময় সামান্য খাবার ও পানি শেষ হলে ক্ষুধা ও পিপাসার কারণে তারা অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়ে। এসময় বিবি হাজেরার স্বাস্থ্য ভেঙে গিয়েছিল। তার ওষ্ঠদয় শুষ্ক, মৃগ নয়নযুগল কোটরস্থ এবং উজ্জ্বল মুখমণ্ডল ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল। সেসময় বিবি হাজেরা সামান্য খাবার ও পানির সন্ধানে হন্যে হয়ে ঘুরতে থাকেন। তিনি শিশুপুত্র | কার্যক্রম ইসমাইল (আ.)-কে বালির ওপর রেখে পানি খুঁজছিলেন। হঠাৎ ইসমাইল (আ.)-এর পায়ের আঘাতে পানির ফোয়ারা বইতে থাকে ।  তারপর থেকে এ ফোয়ারা প্রবাহিত হয়ে চলেছে।

২. জমজম কূপের নামকরণ :

 হযরত ইসমাইল (আ.)-এর পায়ের আঘাতে সৃষ্ট ফোয়ারাটি প্রবাহিত হতে থাকলে বিবি হাজেরা বালু দিয়ে পানি আটকিয়ে রাখার চেষ্টা করছিলেন। তিনি এসময় পানির প্রবাহ থামানোর জন্য ‘জমজম' বলছিলেন। আরবি ভাষায় জমজম শব্দের অর্থ থাম থাম । বিবি হাজেরার মুখনিসৃত এ শব্দ থেকেই জমজম কূপের নামকরণ করা হয়েছে।

৩. জমজম কূপের সংস্কার : 

হযরত মুহম্মদ (সা.)-এর পিতামহ আব্দুল মুত্তালিব প্রাক ইসলামি যুগে হাজিদের পানি সরবরাহ করার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি একবার স্বপ্নে জমজম কূপ সংস্কার করার আদেশপ্রাপ্ত হন। তিনি এ আদেশ অনুযায়ী পুনরায় জমজম কূপ খনন করেন। খননকার্য সম্পাদনের সময় তিনি তলোয়ার, সোনার হরিণসহ অনেক বস্তু আবিষ্কার করেন ।

জমজম কূপের ইতিহাস ,কাবাগৃহ সৃষ্টির ইতিহাস


৪. জমজম কূপের ধর্মীয় গুরুত্ব :

জমজম কূপের ধর্মীয় গুরুত্ব অপরিসীম । প্রত্যেক মুসলিমের মনে বিশ্বাস যে, এ কূপের পানি অত্যন্ত পবিত্র। এ পানি পান করার মাধ্যমে রোগবালাই থেকে মুক্ত হওয়া যায় এবং কলুষিত মন পবিত্র হয়ে যায় । মক্কায় হজের সময় লাখ লাখ হাজি একত্রিত হন এবং তারা এ পানি সংগ্রহে ব্যাকুল হয়ে পড়েন ।


উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, জমজম কূপের পানি সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদের কাছে আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত হিসেবে স্বীকৃত। প্রতিবছর অসংখ্য লোক হজ ও ওমরাহ পালন করতে মক্কায় যান এবং জমজম কূপের পানি সংগ্রহে খুবই আগ্রহী থাকেন । তারা এই কূপের পানিকে অত্যন্ত ভক্তির সাথে পান করেন ।



 কাবাগৃহ সৃষ্টির ইতিহাস

কাবাগৃহ সৃষ্টির ইতিহাস


মুহাম্মদ (স)-এর মাধ্যমে ইসলাম প্রচারিত হওয়ার আগে কাবাগৃহের কারণে আরব উপদ্বীপ সমকালীন বিশ্বে বিশেষ পরিচিতি লাভ করে । এটি কখন নির্মিত হয়েছিল তা সঠিক জানা যায় না । প্রাচীন বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যের মাধ্যমে জানা যায় যে, স্বর্গীয় আদিরূপের অনুকরণে হযরত আদম (আ) এটি নির্মাণ করেছিলেন। নবি হযরত নূহ (আ)-এর সময় সৃষ্ট মহাপ্লাবনের সময় এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 


পরবর্তী সময়ে হযরত ইবরাহিম (আ) ও হযরত ইসমাইল (আ) এটি পুনর্নির্মাণ করেন বলে জানা যায় । পি. কে. হিট্টির বর্ণনামতে, “নির্মাণের প্রাথমিককালে এ ঘরটির মাথায় কোনো ছাদ ছিল না এবং এটি একটি কালো উল্কাপিণ্ডের আশ্রয়স্থল হিসেবে বিবেচিত হতো। আর এই কালো উল্কাপিণ্ডকে ভক্তিযোগ্য বস্তুপিণ্ড হিসেবে শ্রদ্ধা করা হতো।” 


ঐতিহাসিক আল ইয়াকুবীর বর্ণনামতে, “প্রাক-ইসলামি যুগে লোহিত সাগরের উপকূলে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি বাইজান্টাইন জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দিয়ে পরবর্তীকালে একজন আবিসিনীয় এটি পুনর্নির্মাণ করেন। এটির চারদিকে ছড়িয়ে থাকা অঞ্চলকে পবিত্র অঞ্চল (হারাম) বলে গণ্য করা হতো। 

কাবাগৃহ সৃষ্টির ইতিহাস


এখানে বার্ষিক তীর্থযাত্রা অনুষ্ঠিত হতো এবং বিশেষভাবে কোরবানি দেওয়া হতো ।”৩১ নির্মাণের পর থেকেই কাবাগৃহ সমাজ ও রাজনীতির সাথে সাথে ধর্মীয় ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। হযরত ইসমাইল (আ) এর কাবাগৃহ সংস্কার করার পর পরবর্তী কয়েক বছর এটি ধর্মীয় গৃহ হিসেবে সমাজে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। 

কাবাগৃহ সৃষ্টির ইতিহাস

পরবর্তী সময়ে বনু জুরহাম ও বনু খুজাআহ গোত্রের মাধ্যমে এ গৃহে মূর্তিপূজা শুরু হয়। মূর্তিপূজাকে কেন্দ্র করে কাবাগৃহ তথা মক্কা নগরী বিখ্যাত বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। প্রাক-ইসলামি যুগে কাবাগৃহে ৩৬০টি মূর্তির পূজা করা হতো এবং এ কাবার কর্তৃত্ব পাওয়ার জন্য বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে প্রায়ই যুদ্ধ হতো। এ ধারা মুহাম্মদ (স)-এর নবুয়ত লাভের আগ পর্যন্ত চালু ছিল। মুহাম্মদ (স) এর মাধ্যমে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের যাত্রা শুরু হলে কাবাগৃহে রক্ষিত মূর্তিগুলো ধ্বংস করা হয় এবং এটিকে ইসলামি সভ্যতার কিবলাহ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয় ।


Post a Comment

Previous Post Next Post