আল মালা কি, আল মালা গঠনের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি

 
আল মালা কি, আল মালা গঠনের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি


আল মালা কি, আল মালা গঠনের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি

আল মালা বা মন্ত্রণাসভা: প্রাক-ইসলামি আরবে ‘আল মালা' নামে একটি রাজনৈতিক সংগঠন বা মন্ত্রণাসভা ছিল। এ পরিষদ মক্কার বিবদমান গোত্রগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করত। এর উদ্দেশ্য ছিল শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা, গোত্রীয় ভারসাম্য রক্ষা করা এবং মৈত্রী ও সদ্ভাব তৈরি করা। তবে এ পরিষদের কোনো নির্বাহী ক্ষমতা ছিল না। এটি কেবল পরামর্শ দিতে পারত।

আল মালা কি : 

আল মালা আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ মন্ত্রণা পরিষদ বা শাসন পর্ষদ। প্রাক ইসলামি যুগে একদল বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি বা বিভিন্ন বিবদমান গোত্রের অধিপতিদের নিয়ে গঠিত মন্ত্রণা সভাকে বলা হতো আল মালা। এ পরিষদ মক্কার কুরাইশ গোত্রগুলোর মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করতো এবং স্বীয় স্বার্থে পার্শ্ববর্তী এলাকার বেদুইন গোত্রগুলোর সাথে একটি মৈত্রী জোটও গঠন করেছিল। আল মালা মূলত একটি উপদেশ প্রদানকারী সংস্থা ছিল । নিম্নে আল মালা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

১. মালার সদস্যদের দায়িত্ব : 


মালার সব সদস্যের সমান অধিকার ছিল । তারা আইন প্রণয়নের তুলনায় বিচারক হিসেবে বেশি ভূমিকা পালন করতো। মালার সদস্যদের দায়িত্ব ছিল গোত্রীয় সভার ব্যবস্থা করা, গোত্রীয় ভারসাম্য বজায় রাখা গোত্রের মাঝে মৈত্রী ও সদ্ভাব প্রতিষ্ঠা করা, দরিদ্র গোত্রের সদস্যদের সাহায্য করা, অতিথিদের অভ্যর্থনা জানানো প্রভৃতি । এছাড়া যুদ্ধসংক্রান্ত দায়িত্বসমূহ হলো যুদ্ধের ঘোষণা, সৈন্য পরিচালনা করা, যুদ্ধলব্ধ মালামাল বণ্টন, যুদ্ধবন্দিদের উদ্ধার প্রভৃতি কার্য ।

২. পরামর্শকক্ষ :


মক্কার শাসনভার মূলত কুরাইশদের ওপর ন্যস্ত ছিল । মন্ত্রণা পরিষদ মালার সভার জন্য কাবাগৃহের পাশে একটি বৃহৎ কক্ষ ছিল। মালার নেতৃবৃন্দকে নিয়ে সভাপতি উক্ত সভায় পরামর্শসভা বসাতেন । উক্ত কক্ষকে দারুন নদওয়া বলা হতো । এখানে বসে সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ যেকোনো সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতেন।

৩. সাধারণ সভা : 

কাবাঘর প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভা নাদিউল কাউম নামে পরিচিত। এখানে নগর ও কাবাগৃহবিষয়ক অথবা সর্বসাধারণ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে সাধারণভাবে আলোচনা করা হতো ।

৪. দফতরসমূহ : 


পবিত্র কাবার রক্ষণাবেক্ষণের সাথে মক্কার শাসনব্যবস্থা জড়িত ছিল। এ শাসনব্যবস্থা পাঁচটি দফতরে বিভক্ত ছিল । এগুলো হলো :

ক. রিফাদা : তীর্থযাত্রীদের অভ্যর্থনা ও তত্ত্বাবধান দপ্তর । 

খ. শিফায়া : জমজম কূপ থেকে তীর্থযাত্রীদের জন্য পানি সরবরাহ ও তত্ত্বাবধানের দপ্তর ।

গ. নায়সি : সৌর ও চান্দ্রবছরের মধ্যে পঞ্জিকার সামঞ্জস্য বিধান দপ্তর,

ঘ. লিওয়া : যুদ্ধের সময় পতাকা বহন দপ্তর ও 

ঙ. হিজাবা : কাবাগৃহের আবরণ প্রদানের দপ্তর । 


আল মালা কি


আল মালার কার্যাবলি : নিম্নে আল মালার কার্যাবলি সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :


১. শান্তিশৃঙ্খলা ও গোত্রীয় ভারসাম্য রক্ষা :


আল মালা মক্কা ও শহরতলীতে শাসনব্যবস্থা তদারকি করতো। এছাড়াও বিভিন্ন গোত্রের মধ্য ভারসাম্য রক্ষা করা এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের বেদুইনদের সাথে মৈত্রীজোট গঠন করাও এ পরিষদের কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত ছিল । সহজ কথায় আল মালার উদ্দেশ্য ছিল মক্কা নগরের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা, গোত্রীয় ভারসাম্য রক্ষা করা এবং আন্তঃগোত্রীয় মৈত্রী ও সদ্ভাব বজায় রাখা ।

২. শাসন পরিচালনা : 

আল মালার কোনো কার্যনির্বাহী ক্ষমতা ছিল না। নৈতিকতা প্রয়োগ ও প্রলুব্ধকরণের ওপর নির্ভর করে এ পরিষদ পরিচালিত হতো। তবে প্রত্যেক গোত্র স্বাধীনভাবে কাজ করলেও আল মালার সিদ্ধান্ত অমান্য করতো না। কোনো গোত্র অন্যায় করলে তাকে বয়কট করার নীতির প্রচলন ছিল।

৩. পরামর্শ প্রদান :

মক্কার শাসনভার মূলত কুরাইশদের ওপর ন্যস্ত ছিল। আল মালার সভার জন্য কাবাগৃহের পাশে একটি বৃহৎ কক্ষ ছিল। আল মালার নেতৃবৃন্দদের নিয়ে সভাপতি উক্ত কক্ষে পরামর্শসভা বসাতেন। উক্ত কক্ষকে দারুন নদওয়া বলা হতো। এখানে বসে সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ যেকোনো সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতেন। কাবাঘর প্রাঙ্গণে প্রতিষ্ঠিত সাধারণ সভা নাদিউল কাউম নামে পরিচিত। এখানে নগর ও কাবাগৃহবিষয়ক অথবা সর্বসাধারণ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হতো।


আল মালা কি


৪. আল মালার দফতর ও কার্যাবলি :  পবিত্র কাবা রক্ষণাবেক্ষণের সাথে মক্কার শাসনব্যবস্থা জড়িত ছিল। এ শাসনব্যবস্থা পাঁচটি দফতরে বিভক্ত ছিল । যথা : 

ক. রিফাদা : তীর্থযাত্রীদের অভ্যর্থনা ও তত্ত্বাবধান দফতর। খ. শিফায়া : জমজম কূপ থেকে তীর্থযাত্রীদের জন্য পানি সরবরাহ ও তত্ত্বাবধানের দফতর।

গ. নায়সি : সৌর ও চান্দ্রবছরের মধ্যে পঞ্জিকার সামঞ্জস্যবিধান দফতর। 

ঘ. লিওয়া : যুদ্ধের সময় পতাকা বহন দফতর এবং 

ঙ. হিজাবা : কাবাঘরের আবরণ প্রদানের দফতর।

৫. আল মালার সদস্যদের দায়িত্ব : 


আল মালার সব সদস্যদের সমান অধিকার ছিল। তারা আইন প্রণয়নের তুলনায় বিচারক হিসেবে বেশি ভূমিকা পালন করতো। আল মালার সদস্যদের দায়িত্ব ছিল গোত্রীয় সভার ব্যবস্থা করা, গোত্রীয় ভারসাম্য বজায় রাখা, গোত্রের মাঝে মৈত্রী ও সদ্ভাব বজায় রাখা, দরিদ্র গোত্রের সদস্যদের সাহায্য করা, অতিথিদের অভ্যর্থনা জানানো। এছাড়া যুদ্ধসংক্রান্ত দায়িত্বসমূহ হলো যুদ্ধের ঘোষণা, সৈন্য পরিচালনা করা, যুদ্ধলব্ধ মালামাল বণ্টন, যুদ্ধ বন্দিদের উদ্ধার প্রভৃতি কার্যাবলি ।

উপসংহার :

পরিশেষে বলা যায় যে, মক্কার নিয়মতান্ত্রিক ও অনেকটা গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার মূলে ছিল আল মালা নামক মন্ত্রণা পরিষদ। ইসলামি যুগের মজলিস উস শুরা হলো আল মালারই পরিমার্জিত রূপ। প্রাক ইসলামি যুগে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এ মন্ত্রণা পরিষদ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।



 


Post a Comment

Previous Post Next Post