ন্যানো টেকনোলজি কি? ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার। ন্যানো টেকনোলজির সুবিধা ও অসুবিধা।

ন্যানো টেকনোলজি কি? ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার। ন্যানো টেকনোলজির সুবিধা ও অসুবিধা।

ন্যানো টেকনোলজি কি? ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার। ন্যানো টেকনোলজির সুবিধা ও অসুবিধা।

 

ন্যানো টেকনোলজি কি 


গ্রিক শব্দ Nanos থেকে Nano শব্দটি এসেছে। যার অর্থ বামন বা জাদুকরী ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষুদ্রাকৃতির মানব বা অন্য কোনো প্রাণী ।

ন্যানো মূলত পরিমাপের একক; যা এক মিটারের একশ কোটি ভাগের এক ভাগের সমান বা এক সেকেন্ডের একশ কোটি ভাগের এক ভাগ। পদার্থের ক্ষুদ্রতম একক যে পরমাণু তাও এক ন্যানোমিটারের দশ ভাগের এক ভাগ। জীবকোষে যে DNA থাকে তা দুই ন্যানোমিটার প্রশস্ত।

যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে অণু-পরমাণু দিয়ে বিভিন্ন বস্তু বা ডিভাইস & Drugs তৈরি করা হয় সেই প যুক্তিকে ন্যানো টেকনোলজি বলে। বিশদভাবে, যখন কোনো একটি বস্তুর কার্যক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কোনো বিশেষ প্রযুক্তি বা যন্ত্র ব্যবহার করে অণু-পরমাণুগুলোকে ন্যানোমিটার স্কেলে পরিবর্তন করা হয় তখন সেই প্রযুক্তিকে ন্যানো টেকনোলজি বলা হয়। এ প্রযুক্তির প্রধান সুবিধা হচ্ছে এর মাধ্যমে  কোনো পদার্থের অণু-পরমাণুকে ইচ্ছামতো সাজিয়ে কাঙ্ক্ষিত রূপ দেওয়া যায়।

সেক্ষেত্রে উৎপাদিত পদার্থটির মধ্যে কৃত্রিম গুণ ঢুকিয়ে দেওয়া যায়। বিজ্ঞানের সব শাখাতেই এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে জিন প্রকৌশল, তড়িৎ প্রকৌশল, যন্ত্র প্রকৌশল ইত্যাদি ক্ষেত্রে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়। সামনের যুগ হবে ন্যানো প্রযুক্তির যুগ। হৃদরোগ হলে ন্যানো রোবট শরীরের ভিতর ঢুকিয়ে হার্টের সকল সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করবে বলে বিজ্ঞানীদের আশাবাদ। ন্যানো টেকনোলজির কল্যাণে বিভিন্ন জিনিস হবে ছোট এবং হালকা। ইন্টেল প্রসেসরের সার্কিট সাইজ হচ্ছে ৩০ ন্যানোমিটার। ভবিষ্যতে এটিকে আরও ছোট সাইজে নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে। ফলে মোবাইল, কম্পিউটার ইত্যাদির আকৃতি অনেক ছোট হয়ে আসবে। 


ন্যানো টেকনোলজির দুটি প্রক্রিয়া রয়েছে। যথা :

১। Top to Bottom.

২। Bottom to Top.

 

১। Top to Bottom : এ পদ্ধতিতে কোনো জিনিসকে বড় থেকে ছোট করে নির্দিষ্ট আকৃতি প্রদান করা হয়।

২।  Bottom to Top : এ পদ্ধতিতে অতি ক্ষুদ্র আকারের ছোট ছোট জিনিস দিয়ে বড় কোনো বস্তু তৈরি করা হয়।

 

ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার বা প্রয়োগঃ

২।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত প্রায় সকল ধরনের উপাদানেই ন্যানো প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। যেমন

(১) রাসায়নিক শিল্পে বিভিন্ন পদার্থ তৈরিতে, কোনো কিছুর প্রলেপ তৈরিতে এবং পানি বিশুদ্ধকরণ কাজে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়।


(২) খাদ্য শিল্পে বিভিন্ন প্রকার সুস্বাধু খাদ্য তৈরিতে, খাদ্যজাত দ্রব্য প্যাকেজিং ও সিলভার তৈরিতে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।


(৩) চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিশেষ করে ক্যানসার চিকিৎসায় এ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে রোগ নিরাময়ের পথ অনেকটা প্রশস্ত হচ্ছে।


(৪) ইলেকট্রনিক শিল্পে বিভিন্ন যন্ত্রপাতিতে বিদ্যুৎ খরচ, ওজন এবং আকৃতি কমিয়ে কার্যক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।


(৫) হাইড্রোজেন আয়ন এবং ন্যানো ফুয়েল সেল তৈরিতে এ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়।


(৬) মানব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরিতে এ প্রযুক্তি ব্যবহারের চেষ্টা চলছে। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন এতে ভবিষ্যতে অনুভূতি দেওয়াও সম্ভব হবে।


(৭) ব্যাটারি শিল্পে প্রচলিত সৌরকোষের চেয়ে আরও অধিক সাশ্রয়ী মূল্যের ন্যানোটেক সৌরকোষ তৈরি করে যে ব্যাটারি তৈরি করা হবে সে ব্যাটারি অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন হবে এবং দীর্ঘসময় শক্তির যোগান দেবে।


(৮) ক্রীড়া সামগ্রী তৈরিতেও এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।


(৯) কম্পিউটার হার্ডওয়্যার তৈরিতে এ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মেমোরি, গতি ও দক্ষতা বাড়ছে এবং আকৃতি ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে।

 

ন্যানো প্রযুক্তির সুবিধা :

২।

(১) ন্যানোটেকনোলজি ইউজ করে উৎপাদিত স্মার্ট ড্রাগ নামে ঔষুধ ব্যবহার করে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা যায়।


(২) ন্যানোটেকনোলজি যেমন- ন্যানোপার্টিকেল, ন্যানোটিউব, ইত্যাদি দ্বারা উৎপাদিত পণ্য মজবুত, বেশি টেকসই বা স্থায়ী, আকারে তুলনামূলকভাবে ছোট এবং ওজনে হালকা হয় ৷

 

(৩) প্লাজমা ডিসপ্লে, ন্যানো ডায়োড, ন্যানো ট্রান্সজিস্টর ইত্যাদি ব্যবহারের ফলে ইলেকট্রনিক জগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হচ্ছে। কোয়ান্টাম কম্পিউটিং বিকশিত হচ্ছে।

 

ন্যানো প্রযুক্তির অসুবিধা :

২।

(১) ন্যানোটেকনোলজি খরচ বেশি। ফলে এই প্রযুক্তির প্রয়োগে উৎপাদিত পণ্য এখনও অনেক দামি।


(২) অল্টানেটিব জ্বালানি উৎপাদনের ফলে তেল, গ্যাসের দাম কমে যেতে পারে। ফলে প্রচলিত জ্বালানিসহ ডায়মন্ড, সোনা ইত্যাদির দাম কমে গেলে অর্থনীতির নতুন মেরুকরণ হতে পারে।


(৩) মানুষের শরীরের জন্য ন্যানো প্রযুক্তি ক্ষতি করে।


Post a Comment

Previous Post Next Post