বদরের যুদ্ধ ,কারণ, ঘটনা ও ফলাফল
কুরাইশদের অত্যাচারের
মাত্রা বেড়ে গেলে জীবন রক্ষার্থে মহানবি (স) ও অন্য মুসলমানরা মক্কা ছেড়ে ৬২২
খ্রিষ্টাব্দে মদিনায় হিজরত করেন । এর ফলে মুসলমানদের ওপর তাদের ক্ষোভ যেমন বৃদ্ধি
পেয়েছিল তেমনি মদিনাবাসীর সাথেও তাদের শত্রুতা সৃষ্টি হয়েছিল। বিভিন্ন কারণে এ শত্রুতা
আরও বেড়ে গেলে ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ মার্চ (১৭ রমজান, দ্বিতীয় হিজরি) বদর
প্রান্তরে মক্কার কুরাইশ ও মদিনার মুসলমানদের মধ্যে একটি যুদ্ধ হয় । এটি ঐতিহাসিক
বদর যুদ্ধ নামে পরিচিত।
বদরের যুদ্ধের কারণ
মক্কার কুরাইশদের শত্রুতা:
মক্কায় হযরত মুহাম্মদ
(স)-এর ইসলাম প্রচারিত হলে কুরাইশরা এটিকে অঙ্কুরে বিনষ্ট করার চেষ্টা করে। তাদের
চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মুহাম্মদ (স) মদিনায় হিজরত করার পর মাত্র
দুই বছরের মধ্যে ইসলাম ধর্ম ব্যাপক প্রসার লাভ করে। সেখানে ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত
হলে কুরাইশরা ভীষণভাবে ঈর্ষান্বিত হয় । তারা মদিনার মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করার
জন্য ষড়যন্ত্র করতে থাকে। মহানবি (স) তাদের কার্যক্রমের ওপর সজাগ দৃষ্টি
রেখেছিলেন। ঐতিহাসিক মুহাম্মদ আলী বলেন, 'ক্ষুদ্র মুসলিম সম্প্রদায়কে রক্ষার
দায়িত্ব মুহাম্মদ (স)-এর ওপর এসেছিল এবং তিনি একজন দক্ষ সেনানায়কের মতো শত্রুর
গতিবিধি খেয়াল রাখার গুরুত্ব উপলব্ধি করেছিলেন। ১২ ফলে কুরাইশদের যুদ্ধের হুমকি
তিনি মোকাবিলার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হন।
আবদুল্লাহ ইবনে উবাইর ষড়যন্ত্র:
খাযরাজ গোত্রের নেতা
আবদুল্লাহ ইবনে উবাই মদিনার একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিল । তার স্বপ্ন ছিল মদিনার
ভবিষ্যৎ শাসক হওয়া। মহানবি (স)-এর মদিনায় হিজরতের পর আবদুল্লাহ ইবনে উবাই-এর
শাসক হওয়ার সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যায়। ফলে সে গোপনে কুরাইশদের সাথে ষড়যন্ত্র
করে মহানবি (স)-কে মদিনা থেকে বহিষ্কারের পরিকল্পনা করে এবং মহানবি (স) তথা
ইসলামের বিরুদ্ধে একটি মোনাফেক দল গঠন করে । মদিনার মুনাফেকদের এ মনোভাব মক্কার
কুরাইশদের মনোবল আরও বাড়িয়ে দেয়। ফলে তারা মদিনা আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হতে
থাকে ।
মদিনায় মুসলমানদের শক্তি বৃদ্ধি:
মদিনায় গিয়ে মহানবি
(স) ‘মদিনা সনদের' মাধ্যমে
একটি ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। মদিনায় তাঁর মর্যাদা ও ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
এ. এইচ. সিদ্দিকীর মতে, “মদিনা
সনদের ফলে মুহাম্মদ (স) সর্বোচ্চ সামরিক, বিচারিক, প্রশাসনিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের
প্রধান হলে মদিনা রাষ্ট্র একটি শক্ত ভিত্তি লাভ করে।” ফলে মক্কার কুরাইশরা
মুসলমানদের এ অগ্রগতিতে শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তাই তাদের ধ্বংস করার জন্য তারা মদিনা
আক্রমণে অগ্রসর হলে বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
ইহুদিদের বিশ্বাসঘাতকতা:
মদিনার ইহুদি
সম্প্রদায় মুহাম্মদ (স)-কে তাদের ধর্মে আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে মদিনায় আমন্ত্রণ জানায়।
কিন্তু দ্রুত ইসলামের সম্প্রসারণ ঘটলে তারা ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠে। তাদের ধর্মীয় ও
নাগরিক স্বাধীনতা দেওয়া সত্ত্বেও ইহুদিরা কোনো দিনই মুসলমানদের ভালো চোখে দেখেনি।
তারা মদিনা সনদের ধারা লঙ্ঘন করে মক্কার কুরাইশদের কাছে তথ্য পাচার করে এবং সামরিক
ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্ররোচিত করাসহ নানাপ্রকার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় । ফলে “সমগ্র মদিনা শহর বিদ্রোহ
ও বিশ্বাসঘাতকতায় ভরে গিয়েছিল।”
বাণিজ্যিক পথ রুদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা:
সিরিয়া ও মক্কার
বাণিজ্য পথে মদিনা অবস্থিত ছিল। কুরাইশরা এই পথে সিরিয়া, মিসর ও অন্যান্য দেশের
সাথে বাণিজ্য করত। মহানবি (স)-এর নেতৃত্বে মদিনায় ইসলামি প্রজাতন্ত্র
সুপ্রতিষ্ঠিত হলে কুরাইশরা নির্বিঘ্নে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ হারাতে পারে এ
আশঙ্কায় তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। এস. এম.
ইমামুদ্দিনের মতে, “একজন
সত্যিকারের জেনারেল হিসেবে তিনি (মুহাম্মদ (স) মক্কাবাসীকে (কুরাইশ) অর্থনৈতিকভাবে
পঙ্গু করার জন্য সচেতন হয়ে সিরিয়ার সাথে মক্কার ব্যবসা বন্ধ করার পরিকল্পনা করেন
যা বদরের যুদ্ধকে ত্বরান্বিত করে।”
দস্যুবৃত্তি ও লুটতরাজ:
মক্কাবাসী ও তাদের
মিত্ররা প্রায়ই মদিনার প্রান্তসীমায় লুটতরাজ করত। তারা মুসলমানদের ফলের গাছ
ধ্বংস করত এবং গবাদি পশু ধরে নিয়ে যেত। ৬২৩ খ্রিষ্টাব্দের শেষ দিকে কুরজ বিন
জাবিরের নেতৃত্বে একটি কুরাইশ বাহিনী মদিনার উপকণ্ঠে হামলা চালিয়ে কয়েকটি উট ধরে
নিয়ে যায়। সে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইকে এই বলে সতর্ক করে যে, মুহাম্মদকে (স) মদিনা
থেকে বহিষ্কার না করলে কুরাইশরা মদিনা আক্রমণ করবে। তাদের এসব অত্যাচার ও অন্যায়
কার্যকলাপের স্বাভাবিক পরিণতিই ছিল বদরের যুদ্ধ। তাই মাওলানা মোহাম্মদ আলী বলেন, “ইসলামের ক্রমবর্ধমান শক্তিকে
ধ্বংসের জন্য কুরাইশদের দীর্ঘদিনের উদ্যোগ বদরের যুদ্ধের কারণ।”
মুহাম্মদ (স)-কে আশ্রয়দান:
মক্কাবাসী মুহাম্মদ (স)
ও তাঁর সাহাবিদের বিপ্লবী বলে মনে করতেন। মদিনাবাসী তাদের আশ্রয় দেওয়ায় মক্কার
কুরাইশরা তাদের ওপর অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়। সৈয়দ আমীর আলী বলেন, “মক্কাবাসী মুহাম্মদ (স)
ও তাঁর শিষ্যদেরকে বিপ্লবী বলে মনে করত। মদিনাবাসী তাঁদের আশ্রয় দিলে কুরাইশরা
তাদের ওপর অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়। এ জন্য মক্কাবাসী ও মদিনাবাসীর মধ্যে যুদ্ধ
অনিবার্য হয়ে ওঠে।”
নাখলার খণ্ড যুদ্ধ:
কুরাইশদের সাথে
মদিনাপ্রবাসী মুসলমানদের প্রথম সংঘর্ষ ঘটে নাখলায়। কুরাইশদের ধ্বংসাত্মক
কার্যাবলি থেকে মদিনা রাষ্ট্রকে রক্ষার উদ্দেশ্যে হযরত মুহাম্মদ (স) আবদুল্লাহ
ইবনে জাহসের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি গোয়েন্দা দল মক্কার উপকণ্ঠে প্রেরণ করেন।
কিন্তু আবদুল্লাহ ভুলক্রমে মক্কাগামী কুরাইশদের একটি কাফেলাকে নাখলা নামক স্থানে
আক্রমণ করে বসে। ফলে সেখানে একটি খণ্ড যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে কুরাইশ নেতা আমর বিন
হাজরামি নিহত ও অপর দুই ব্যক্তি বন্দি হন। এস. এম. ইমামুদ্দিন বলেন, “আব্দুল্লাহ আল হাজরামির
পুত্রের (আমর) মৃত্যু মক্কাবাসীদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি করে এবং এটিই বদরের যুদ্ধের
প্রত্যক্ষ কারণ হিসেবে আবির্ভূত হয় ।
আবু সুফিয়ানের মিথ্যা প্রচারণা:
এ সময় কুরাইশ নেতা আবু
সুফিয়ান বাণিজ্যের অজুহাতে সমরাস্ত্র সংগ্রহের জন্য সিরিয়া যান। গাজা থেকে আসা এ
কাফেলায় প্রায় ৫০,০০০ দিনার মূল্যের অস্ত্রশস্ত্র ও ধনসামগ্রী ছিল। নাখলার
যুদ্ধে বিপর্যস্ত কুরাইশরা মক্কায় কাফেলায় নিরাপদে ফিরে আসার জন্য ব্যাকুল হয়ে
পড়ে। এ সময় মক্কায় খবর আসে যে, মক্কায় ফেরার পথে কুরাইশদের কাফেলায় মদিনার
মুসলমানরা হামলা করেছে। এ খবরের সত্যতা যাচাই না করেই কুরাইশরা আবু জেহেলের
নেতৃত্বে প্রায় ১০০০ সৈন্য নিয়ে মদিনা আক্রমণের জন্য যাত্রা করে।
ঐশীবাণী লাভ:
কুরাইশদের আগমনের সংবাদ
পেয়ে মহানবি (স) চিন্তিত হয়ে পড়েন। তিনি আল্লাহর দরবারে পরবর্তী করণীয় কী হবে
তা সম্পর্কে নির্দেশ লাভের জন্য প্রার্থনা করেন। আল্লাহ ঐশীবাণী নাজিল করে জানিয়ে
দেন— “তাদের সাথে যুদ্ধ করো যারা
তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে, তবে সীমালঙ্ঘন করো না। কারণ সীমালঙ্ঘনকারীকে আল্লাহ পছন্দ
করেন না (আল-কুরআন সূরা বাকারা: ১৯০)।” অতঃপর মহানবি (স) যুদ্ধ-সংক্রান্ত মন্ত্রণাসভার
পরামর্শক্রমে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন।
বদরের যুদ্ধের ঘটনা
কুরাইশদের মদিনা আক্রমণের সংবাদ শুনে মুহাম্মদ (স) ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে ৩১৩ জন সৈন্য নিয়ে কুরাইশদের গতিরোধ করার জন্য মদিনার ৮০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত বদর প্রান্তরে উপস্থিত হন। এদিকে আবু জেহেলের নেতৃত্বে কুরাইশ বাহিনী এক হাজার সৈন্য নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়। আরবীয় রীতি অনুসারে মল্লযুদ্ধে প্রথমে কুরাইশদের বীর উতবা, শায়বা ও ওয়ালিদ অগ্রসর হলে মহানবি (স)-এর নির্দেশে হামজা, আলী ও আবু উবায়দা কুরাইশদের পরাজিত করেন। উপায়ান্তর না দেখে আবু জেহেল মুসলমানদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।
পরে উভয়
বাহিনী সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয় । কিন্তু কুরাইশ বাহিনী পরাজিত হয়ে পালিয়ে যায়।
আবু জেলেসহ ৭০ জন কুরাইশ যুদ্ধে নিহত এবং ৭০ জন বন্দি হয়। অপরদিকে ১৪ জন মুসলমান শাহাদাতবরণ
করেন। কুরাইশদের মধ্যে যারা যুদ্ধবন্দি হিসেবে মুসলমানদের হাতে ধরা পড়ে, মহানবি (স)
তাদের প্রতি উদার ও মহানুভব আচরণ করেন। তাদের মধ্যে সামর্থ্যবানদের ৪ হাজার দিরহাম
মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। আর যারা মুক্তিপণ দানে অসমর্থ ছিল তাদেরকে মুসলমানদের
বিরোধিতা না করা এবং মুসলমান বালকদের শিক্ষাদানের শর্তে মুক্তি দেওয়া হয়।
বদর যুদ্ধের ফলাফল
মীমাংসাত্মক যুদ্ধ:
বদরের
যুদ্ধ ছিল মুসলমানদের অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধ। আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও একত্ববাদকে
প্রতিষ্ঠা করে অসত্য ও পৌত্তলিকতাকে নির্মূল করার জন্য মুসলমানরা এ যুদ্ধে অবতীর্ণ
হয়েছিল । অন্যদিকে এ যুদ্ধে মুসলমানরা জয়লাভ না করলে ইসলাম পৃথিবীর বুক থেকে
চিরতরে মুছে যেত। এ জন্য এটিকে মীমাংসার যুদ্ধ বলা যায়। তাই বদরের যুদ্ধ ইসলামের
ইতিহাসে মুসলমানদের জন্য একটি যুগান্তকারী ও গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য ।
প্রথম সামরিক বিজয়:
বদরের
যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ সামরিক বিজয়। মক্কার কুরাইশরা মনে
করেছিল, সামরিক অভিযান প্রেরণ করলে মুহাম্মদ (স)-এর শক্তি বিনষ্ট হবে. এবং ইসলাম
ধূলিসাৎ হবে। কিন্তু তাদের এ আশা পূরণ হয়নি। জোসেফ হেলের মতে, “বদরের
যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে প্রথম বড় ধরনের সামরিক বিজয়। এ বিজয় স্বজাতীয়দের ওপর মুসলমানদের
শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে। ফলে মুসলমানদের শক্তি ও ক্ষমতা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে।
মুসলমানদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি:
অল্প
সংখ্যক মুসলমান সহস্রাধিক কুরাইশদের সাথে জয়লাভ করে আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হন।
মুসলমানদের মনোবল, শক্তি, সাহস ও উদ্দীপনা বৃদ্ধি পায়। ফলে তারা শহিদ
হওয়ারও অনুপ্রেরণা লাভ করে। তাই ঐতিহাসিকেরা মনে করেন, এ বিজয় অন্ধ
ধর্মবিশ্বাসের ওপর মহান আল্লাহর একত্ববাদের বিজয়। সৈয়দ আমীর আলী বলেন, “যে
অদ্ভুত পরিস্থিতি বদরের বিজয় অর্জনে প্রভাব ফেলেছিল এবং তা থেকে যে ফলাফল ঘটেছিল সেসব
মুসলমানদের মনের ওপর গভীর রেখাপাত করেছিল । তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেছিল যে,
স্বর্গের ফেরেশতা তাদের পক্ষে অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল।”
ইসলামের মর্যাদা বৃদ্ধি ও এর প্রসার:
বদর
যুদ্ধের আগে ইসলাম শুধু মদিনার মধ্যেই একটি ধর্ম হিসেবে প্রচলিত ছিল কিন্তু এরপর
এটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উন্নীত হয় এবং ইসলামের মর্যাদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।
বদরের যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয় ইসলাম প্রচারে নবযুগের সৃষ্টি করে। তাই ঐতিহাসিক
জোসেফ হেল বলেন, “ইসলাম ধর্মের প্রতি আরব বিশ্ব এমনকি পৃথিবীর মানুষের আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়।
দলে দলে লোক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। এর ফলে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে সমগ্র আরব উপদ্বীপে
ইসলাম সম্প্রসারিত হয়।'
কুরাইশদের দম্ভ ভঙ্গ:
বদরের
যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার আগ পর্যন্ত মক্কার কুরাইশ ও তার মিত্ররা মনে করত যে, সামরিক
অভিযান পরিচালনা করলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু বদরের যুদ্ধে শোচনীয়
পরাজয় মক্কাবাসীর গৌরব এবং কুরাইশ গোত্র ও বংশের দম্ভের মর্মমূলে চরম আঘাত করে।
তাদের নেতৃত্বের রদবদল ছিল বদরের যুদ্ধে বিজয়ের প্রত্যক্ষ ফল।
মুহাম্মদ (স)-এর পার্থিব ক্ষমতার ভিত্তি স্থাপন:
বদর
যুদ্ধের মাধ্যমে মুহাম্মদ (স) তাঁর পার্থিব ক্ষমতার ভিত্তি স্থাপন করেন। এ যুদ্ধের
পর মদিনায় মুসলমানদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। মুহাম্মদ (স) মদিনার রাষ্ট্রনায়ক
হিসেবে একক শক্তির অধিকারী হন। তিনি বিভিন্ন দেশে প্রতিনিধি প্রেরণ করেন। ফলে আরব
বিশ্বে তাঁর প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায়। তাই ঐতিহাসিক পি. কে. হিট্টি বলেন, ‘বদরের
যুদ্ধেই মুহাম্মদ (স) পার্থিব ক্ষমতার ভিত্তি স্থাপন করলেন। ইসলাম তার প্রথম
চূড়ান্ত সামরিক বিজয় অর্জন করল ।
পরবর্তী বিজয় ও বিশ্বজয়ের পথ প্রদর্শক:
ঐতিহাসিক
পি. কে হিট্টি বলেন, ‘এই সম্মুখ যুদ্ধে নিয়মানুবর্তিতা এবং মৃত্যুর প্রতি উপেক্ষার যে দৃষ্টান্ত
মুসলমানরা প্রদর্শন করল তাতেই ইসলামের পরবর্তী বিজয়ের বিশেষ লক্ষণসমূহ প্রস্ফুটিত
হয়ে উঠেছে।' তাই বদরের যুদ্ধে জয়লাভের ফলে হযরত মুহাম্মদ (স) ৬২৭ খ্রিষ্টাব্দে
খন্দকের যুদ্ধ, ৬২৮ খ্রিষ্টাব্দে হুদায়বিয়ার সন্ধি, ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে মুতার
যুদ্ধ, ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দে মক্কা বিজয় ও হুনায়েনের যুদ্ধ এবং ৬৩১ খ্রিষ্টাব্দে
তাবুক অভিযানে সাফল্য লাভ করেন। এ যুদ্ধে জয়লাভ করায় মুসলমানদের জন্য পরবর্তী
বিশ্বজয়ের পথ উন্মুক্ত হয়। বদরের যুদ্ধের জয়ের সূত্র ধরেই মুসলমানরা পরবর্তী
১০০ বছরের মধ্যে পশ্চিমে আফ্রিকা মহাদেশ, ইউরোপের কিছু অংশসহ পূর্বে ভারতবর্ষ
পর্যন্ত নিজেদের সাম্রাজ্যভুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিল ।
ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের মনোবলে ভাঙন:
মদিনার
ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা মুসলমানদের উন্নতিতে ঈর্ষা পোষণ করত। কিন্তু বদর যুদ্ধে
মুসলমানরা জয়লাভ করায় পার্শ্ববর্তী বেদুইন গোত্রগুলোর ওপর মুহাম্মদ (স)-এর
কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে মক্কার কুরাইশদের মতো মদিনার ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের
মনোবল ভেঙে পড়ে। এছাড়া মদিনার অন্যান্য গোত্র ও সম্প্রদায়ের ওপরও ইসলামের
কর্তৃত্ব জোরদার হয়। পি. কে. হিট্টির মতে, 'ইসলাম পুনর্জীবন লাভ করল এবং
আত্মরক্ষার পরিবর্তে সম্প্রসারিত হওয়ার নীতি গ্রহণ করল ।
কুরাইশদের দম্ভ ভঙ্গ:
বদরের
যুদ্ধের বন্দিদের প্রতি মহানবির নজিরবিহীন ব্যবহার
বন্দিদের সবাইকে মদিনায় আনা হয়েছিল একমাত্র দুজন ব্যতীত, উকবা বিন আবি মুয়াইত এবং নজর বিন হারিস। যারা সবসময় মক্কাতে মুসলমানদের প্রতি নিদারুণ নির্যাতন করেছিল এবং হযরত মুহম্মদ (সা.) ও কুরআন শরিফের প্রতি অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতো। তাদের পথিমধ্যে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো।
মুসলমানদের
মদিনাতে প্রবেশ করার একদিন পরে বন্দিরা প্রবেশ করল। যখন বন্দিরা প্রবেশ করল,
স্ত্রী সওদা বিন জামাহ বন্দি আৰু ইয়াজিদ সুয়াহিলকে লক্ষ করলেন—দুহাত
পিছনে বাঁধা। তখন তার কোমল নারী মন, সহানুভূতিশীল রমণী হৃদয় থাকতে পারল না। তিনি
বলে উঠলেন, “হে আবু ইয়াজিদ। তুমি কি তোমার আত্মা ও হাতকে সমর্পণ করেছ? মৃত্যু
এ অপেক্ষা শ্রেয় ছিল।"
তিনি এ মন্তব্য করলেন এজন্য যে তার হাত পিছনে
বাঁধা ছিল, যা দেখা যাচ্ছিল না এবং তিনি এ বন্দিটিকে মুখোমুখি দেখলেন তাই থাকতে না
পেরে ঐ কথা বললেন। হযরত মুহম্মদ (সা.) তখন
ঘর থেকে স্ত্রীর মন্তব্য শুনতে পেয়ে বলে উঠলেন, “হে সওদা, তুমি কি
আল্লাহ ও আল্লাহর দূতের বিরুদ্ধে তাদের উত্তেজিত করতে চাও।”
তিনি উত্তর দিলেন “হে আল্লাহর নবি, আল্লাহর শপথ যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন। যখন
আমি বন্দিটিকে ঐ অবস্থায় দেখলাম, তখন আমি নিজেকে ঠিক রাখতে না পেরে ঐ কথা বলেছি।”
বুঝা যায় তখনকার মানুষ কত বাকস্বাধীনতা ভোগ করতেন এবং বন্দিদের প্রতিও তাঁদের মন
কত মমতায় ভরা ছিল ।
মূল কথা হযরত মুহম্মদ (সা.) নিজেই ছিলেন দয়ার
সাগর, ক্ষমার পাহাড়। তাই তিনি যখন মুসলমানদের মধ্যে বন্দিদের বণ্টন করে দিলেন,
তখন সাথে দিলেন কঠোর নির্দেশ, কোনো বন্দির প্রতি কোনোরূপ অন্যায় ব্যবহার না করতে,
যতক্ষণ না মক্কাবাসীগণ তাদের উদ্ধার করে, যতক্ষণ না আল্লাহ কোনো নির্দেশ দেন।
মহানবি যুদ্ধক্ষেত্র হতে বিজয়ী বেশে ফেরার পথে আপন সঙ্গীদের নিয়ে হেঁটে ফিরলেন
এবং বন্দিদের উটের ও ঘোড়ার পিঠে চাপিয়ে আনলেন। ফেরার পথে তাঁরা নিজেরা শুকনো
খেজুর খেয়ে দিন কাটাতেন কিন্তু বন্দিদের খেতে দিতেন মিহি আটার রুটি। বিশ্ব
ইতিহাসে বন্দিদের প্রতি এ ব্যবহার আজও নজিরবিহীন ।
হযরত
মুহম্মদ (সা.) এর সাহাবা হযরত আবুবকর (রা.) ও হযরত ওমর (রা.) এর মধ্যে বন্দিদের
বিচারের বিষয় নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিল। হযরত ওমর তাঁর চিরাচরিত কঠোর স্বভাবের জন্য
মত দিলেন বন্দিদের হত্যা করা হোক। কেননা তা দেখলে অন্য কেউ আর ঐরূপ করতে সাহস করবে
না। কিন্তু হযরত আবুবকর (রা.) তাঁর চিরাচরিত কোমল স্বভাবের জন্য মত দিলেন দয়া
করার জন্য। দয়ার নবি মুহম্মদ (সা.) তাই করলেন।
একজন
কবি বন্দি ছিলেন। তিনি হযরতকে বললেন, “হে মুহম্মদ (সা.) আমার
পাঁচটি কন্যা, আমার অভাবে তারা না খেয়ে মরে যাবে। আপনি আমাকে তাদের
প্রতিদানস্বরূপ ছেড়ে দিন।” দয়ার নবি মুহম্মদ (সা.) সাথে সাথেই তাকে ছেড়ে দিলেন ।
দীর্ঘ আলোচনার পর বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হলো এক হাজার দেরহামের পরিবর্তে। তবে যে গরিব তাকে একেবারেই বিনা পয়সায় হযরত (সা.) অনুমতি দিলেন এবং তাদের মধ্যে যে গরিব অথচ কিছু লেখাপড়া জানে, তাদের দশজন করে মুসলমানকে আক্ষরিক জ্ঞান দান করার ভার দেওয়া হলো। তারপর তারা মুক্তি পেল।
হযরতের নির্দেশে বন্দিদের প্রতি মুসলমানগণ যে উদারতা প্রদর্শন করেছিলেন দুনিয়ার ইতিহাসে তার নজির নেই। মাত্র দুইজন গুরুত্বপূর্ণ অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়; অন্য সবার প্রতি অতিশয় উদার ব্যবহার করা হয়েছিল।
জনৈক বন্দির জবানির মাধ্যমে ঐতিহসিক স্যার উইলিয়াম মুর বলেন, "Blessings be on the men of Madinah who made us ride, while they themselves walked. They gave us wheaten bread to eat when there was little of it, contenting themselves with dates.” অর্থাৎ, মদিনাবাসীদের ওপর আশীর্বাদ বর্ষিত হোক; তারা আমাদেরকে ( কিংবা ঘোড়ায়) চড়তে দিয়ে নিজেরা হেঁটে চলত। তারা নিজেদের সামান্য রুটিও নিজেরা না খেয়ে আমাদেরকে খেতে দিয়ে নিজেরা খুরমা খেয়ে ক্ষুন্নিবৃত্তি করতো।”
বন্দি
বিনিময়ের মাধ্যমে এভাবে বদরের যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। বদরের যুদ্ধের পরাজয়ে
মক্কাবাসীদের এতই লজ্জা হয়েছিল যে তারা একে অন্যের প্রতি তাকাতে লজ্জাবোধ করতো।
তারা অত্যন্ত দুঃখে ম্রিয়মাণ অবস্থায় দিন কাটাত। তাদের মধ্যে অতি দুষ্ট লোকগুলো
উপদেশ দিত তোমরা কেঁদো না! তবে মুসলমানরা খুশি হবে। তাদের দলনেতা আবু সুফিয়ান
প্রতিজ্ঞা করেছিল যতদিন না সে এর প্রতিশোধ নিতে পারে, ততদিন কোনো স্ত্রীলোককে
স্পর্শ করবে না। এভাবে সে সায়িকের অভিযান তার নেতৃত্বে দুশো অশ্বারোহীকে সাথে
নিয়ে মদিনার শেষপ্রান্তে এক খেজুর বাগানে আগুন ধরিয়ে দেয়।
কিন্তু মদিনাবাসীগণ বের হয়ে আসার সাথে সাথে তারা পলায়ন করে। মুসলমানগণ পশ্চাদ্ধাবন করল, কিন্তু মক্কাবাসীগণ প্রাণভয়ে এত জোরে দৌড়ে ছিল যে, তারা তাদের উটের বোঝা হাল্কা করার জন্য মালপত্রগুলো পর্যন্ত রাস্তায় ফেলে দিয়ে গিয়েছিল, যাতে ছিল প্রচুর শুকনো খেজুর। এ শুকনো খেজুরকে আরবিতে সায়িক বলা হয়। তাই এ অভিযানের নাম সায়িকের অভিযান । এটি সংঘটিত হয়েছিল দ্বিতীয় হিজরির জিলহজ মাসে।
বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুসলমানদের তালিকা
বদরের
যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুসলমানদের সংখ্যা সম্পর্কে কিছুটা মতভেদ পরিলক্ষিত হয়।
বিভিন্ন রিওয়ায়াতে ৩০৭, ৩১৩, ৩১৫, ৩১৪ ও ৩১৯ জনের উল্লেখ পাওয়া যায় । তবে
রাসুলুল্লাহ (সা.) ব্যতীত ৩১৩ জন এবং রাসুলুল্লাহ (সা.) সহ ৩১৪ জনের রিওয়ায়াতটি
অধিকতর সঠিক ও প্রসিদ্ধ। আল বারাআ (রা.) বলেন, আমরা মুহম্মদ (সা.) এর সাহাবিগণ
বলাবলি করতাম যে, বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীগণের সংখ্যা তালুতের সঙ্গীদের সমান
যারা তাঁর সঙ্গে নদী পার হয়েছিলেন। মুসিন ব্যতীত আর কেউ নদী পার হতে পারেনি। তারা
ছিল ৩১০ এর ওপর বেজোড় সংখ্যক।
আবু আয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় থাকতে তাদেরকে বলেছিলেন, তোমরা কি অনুমোদন কর যে, আমরা বাণিজ্যে কাফেলার উদ্দেশ্যে বের হব হয়তোবা আল্লাহ আমাদেরকে গনিমতের মাল দিবেন? আমরা বললাম, হ্যাঁ। অতঃপর আমরা বের হলাম । একদিন বা দুই দিন পথ চলার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে লোক গণনার নির্দেশ দিলেন। গণনা করে দেখা গেল, আমরা ৩১৩ জন। রাসুলুল্লাহ (সা.) কে আমাদের সংখ্যার সংবাদ দিলে তিনি খুশি হলেন এবং আল্লাহর প্রশংসা করে বললেন, এতো তালুত বাহিনীর সংখ্যা।” ওদের মধ্যে ৮৩ জন মুহাজির সাহাবি এবং ২৩১ জন আনসার সাহাবি। আনসারদের মধ্যে আওস গোত্রের ৬১ জন এবং খাজরাজ গোত্রের ১৭০ জন । বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কয়েকজন সাহাবায়ে কিরামের একটি নামের তালিকা নিম্নে প্রদত্ত হলো :
মুহাজিরগণ :
১.
আবুবকর আস সিদ্দিক (রা.),
২.
আলি ইবনে আবি তালিব (রা.),
৩.
আনাস, মাওলা রাসুলুল্লাহ (সা.) হাবশি,
৪.
আকিল ইবনুল বুকায়র, ইবনে সাদের বর্ণনামতে, আবুল বুকায়র (রা.),
৫.
আবু মারছাদ আল গানাবি (রা.),
৬.
আবু কাবশা ফারসি (রা.),
৭.
আবু হুজায়ফা ইবনে উতবা ইবনে রাবিআ (রা.),
৮.
আবু সিনান ইবনে মিহসান আল আসাদি (রা.),
৯.
আবু সালামা ইবনে আবদিল আসাদ (রা.),
১০.
আবু সাবরা ইবনে আবি রুহম (রা.),
১১.
আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ (রা.),
১২.
আবু মাখশি সুওয়ায়দ ইবনে মাখশি আত তাই (রা.),
১৩.
আবদুর রাহমান ইবনে আওফ (রা.),
১৪.
আব্দুল্লাহ ইবনে জাহশ আল আসাদি (রা.),
১৫.
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ আল হুজালি (রা.),
১৬.
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ আল জুমাহি (রা.),
১৭.
আব্দুল্লাহ ইবনে মাখরামা বিন আবদিল উজজা (রা.),
১৮.
আব্দুল্লাহ ইবনে সুহায়ল ইবনে আমর (রা.)।
আনসারগণ :
১.
আইজ ইবনে মাইস ইবনে কায়স আল খাজরাজি (রা.),
২.
আক ইবনুল হারিস আন নাজ্জারি; তাকে আওফ ইবনে আফরা (রা) ও বলা হয়,
৩.
আস ইবনে খাওয়ালিয়্যি ইবনে আবাদিল্লাহ আল খাজরাজি (রা.),
৪.
আওস ইবনে ছাবিত ইবনুল মুনজির আন নাজ্জারি (রা.),
৫.
আওস ইবনুস সামিত আল খাজরাজি (রা.). আনতারা (রা.), মাওলা বনু সুলায়ম,
৭.
আদিয়্যি ইবনে আবিজ জাগবা আল জুহানি (রা.),
৮.
আব্দুল্লাহ ইবনে কায়স ইবনে সাখর আস সুলামি (রা.),
৯.
আব্দুল্লাহ ইবনে কার ইবনে আমর আন নাজ্জারি (রা.),
১০.
আব্দুল্লাহ উমায়র ইবনে আদি (রা.),
১১.
আব্দুল্লাহ ইবনে আবদিল্লাহ ইবনে উবায়্যি ইবনে সালুল আল খাজরাজি (রা.),
১২.
আব্দুল্লাহ ইবনে আবদ মানাফ ইবনুন নুমান আস সালামি (রা.),
১৩.
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে হারাম আস সালামি (রা.),
১৪.
আব্দুল্লাহ ইবনে আবস (রা.),
১৫.
আব্দুল্লাহ ইবনে উরফুতা ইবনে আদিয়্যি আল আল খাজরাজি (রা.),
১৬.
আব্দুল্লাহ ইবনে ছালাবা (রা.),
১৭.
আব্দুল্লাহ ইবনে জায়দ ইবনে আবদ রাব্বিহ আল খাজরাজি (রা.),
১৮.
আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা আল খাজরাজি (রা.),
১৯.
আব্দুল্লাহ ইবনে তারিক ইবনে মালিক আল কুদাই (রা.),
২০.
আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়র ইবনুন নুমান আল আওসি (রা.)।
বদরের যুদ্ধে মুসলমান শহিদগণ
বদরের
যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর মধ্যে ১৪ জন সাহাবি শহিদ হন। তন্মধ্যে ৬ (ছয়) জন মুহাজির
এবং ৮ (আট) জন আনসার। তাদের মধ্যে আওস গোত্রের ২ (দুই) জন এবং খাজরাজ গোত্রের ৬
(ছয়) জন। তাদের নাম-
১. উবায়দ ইবনুল হারিস ইবদুল মুত্তালিব। মল্লযুদ্ধে মারাত্মকভাবে আহত হওয়ার ফলে যুদ্ধ শেষে মদিনায় প্রত্যাবর্তনের পথে ‘আস সাফরা নামক স্থানে পৌঁছে তিনি ইন্তেকাল করেন,
২. উমায়র ইবনে আবি ওয়াক্কাস, যিনি ছিলেন সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) এর ভ্রাতা। আল আস এর হাতে তিনি শহিদ হন । তখন তার বয়স ছিল ১৬ বছর, তাদের মিত্র,
৩. যুশ শিমালায়ন ইবনে আবদ আমর আল খুজাঈ,
৪. সাফওয়ান ইবনে বায়দা,
৫. বনু আদির মিত্র আকিল ইবনুল বুকায়র আল লায়ছি
৬.
উমার ইবনুল খাত্তাব (রা.) এর মুক্ত দাস মিহজা।
আনসার শহিদদের ৮ (আট) জন হলেন-
১. হারিসা ইবনে সুরাকা; হিব্বান ইবনুল আরিকার নিক্ষিপ্ত তির তার কণ্ঠনালীতে বিদ্ধ হয়ে তিনি শহিদ হন,
২. মুআওবিজ ইবনে আফরা,
৩. আওফ ইবনে আফরা; আফরা এ ভ্রাতৃদ্বয়ের মাতার নাম, তাদের পিতার নাম আল হারিস ইবনে রিফাআ ইবনে সাওলাদ,
৪. ইয়াযিদ ইবনুল হারিস, ইবনে ফুসহুমত বলা হয়,
৫. উমায়র ইবনুল হুমাম আস সালামি,
৬. রাফে ইবনুল মুআল্লা ইবনে লাওজান,
৭. সাদ ইবনে খায়ছামা,
৮.
মুবাশশির ইবনে আবদিল মুনজির ।
বদরের যুদ্ধে নিহত কুরাইশদের তালিকাঃ
প্রসিদ্ধ বর্ণনা মতে, এ যুদ্ধে কুরাইশদের ৭০ ব্যক্তি নিহত হয়। নিম্নে তাদের তালিকা প্রদত্ত হলো :
১. হানজালা ইবনে আবি সুফিয়ান হত্যাকারী জায়দ ইবনে হারিসা (রা.)।
২. আল হারিস ইবনুল হাদরামি আন নুমান ইবনে আমর (রা.)।
৩. ‘আমির
ইবনুল হাদরামি আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা.)।
৪. উমায়র ইবনে আবি উমায়র ও তাহার ৫ পুত্র সালিম (রা.) মাওলা আবি
হুজায়ফা। ৫. উবায়দা ইবনে সাইদ ইবনুল আস আজ জুবায়র ইবনুল আওয়াম (রা.)।
৬. আল আস ইবনে সাইদ ইবনুল আস আলি ইবনে আবি তালিব (রা.)।
৭. উকবা ইবনে আবি মুআয়ত আসিম ইবনে ছাবিত ইবনুল আফলাহ (রা.), এক
বর্ণনা মতে, আলি ইবনে আবি তালিব (রা.)।
৮. উতবা ইবনে রাবিআ ইবনে আবদ শামস উবায়দা উবনুল হারিস ইবনুল
মুত্তালিব, হামজা ও আলি (রা.)ও এ হত্যায় অংশগ্রহণ করেন ।
৯. শায়বা ইবনে রাবিআ ইবনে আবদ শামস হামজা ইবনে আবদিল মুত্তালিব
(রা.)।
১০. আল ওয়ালিদ ইবনে উতবা ইবনে রাবিআ আলি ইবনে আবি তালিব (রা.)।