দক্ষিন আফ্রিকার ধর্ম, দক্ষিণ আফ্রিকায় ইসলামের প্রচার ও প্রসার ও বর্তমান অবস্থা ২০২৪:
বিশ্বখ্যাত কালজয়ী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার
স্মৃতিবিজড়িত রাষ্ট্র “দ্য ইউনিয়ন অব সাউথ আফ্রিকা'। সাদাকালোর
বর্ণবিভেদনীতির উচ্ছেদ সেখানকার অন্যতম আলোচ্য বিষয় হলেও খ্রিষ্টধর্মের প্রভাবিত এ
দেশে মুসলমানদের জীবনচিত্রও কম আলোচিত নয়। আফ্রিকা মহাদেশের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত
এ দেশটির আয়তন ১২ লক্ষ ১৯ হাজার ৯ শত ১২ বর্গকিলোমিটার। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের হিসাব
অনুযায়ী এখানকার মোট জনসংখ্যা ৫ কোটি ২৯ লক্ষ ৮১ হাজার ৯ শত ৯১ জন। বর্ণবাদে আলোচিত
এ দেশে কালো আফ্রিকান শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ, ৯ ভাগ সাদা, ৯ ভাগ অশ্বেতকায় এবং প্রায়
২ ভাগ ভারতীয়।
দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় প্রতিবেশী রাষ্ট্র নামিবিয়া, বোটসওয়ানা, জিম্বাবুয়ে, পূর্বে মুজাম্বিক এবং সুইজারল্যান্ড কর্তৃক পরিবেষ্টিত। দেশটি নয়টি প্রদেশ নিয়ে গঠিত। প্রদেশগুলো হচ্ছে ইস্টার্নকেপ, ফ্রিস্টেট, গাউতেঙ, ওয়াগুলু নাতাল, লিমপোপো, পুমালাঙ্গা, নদার্নকেপ, নর্থওয়েস্ট এবং ওয়েস্টার্নকেপ। এদেশের প্রশাসনিক রাজধানী প্রিটোরিয়া, জুডিশিয়াল রাজধানী বোইমফোনটেন এবং কেপটাউন হচ্ছে লেজিসলেটিভ রাজধানী। এছাড়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে জোহান্সবার্গ, ডারবান, পোর্ট এলিজাবেথ এবং ইস্ট লন্ডন অন্যতম।
১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে এটি ইউরোপীয় সাদা চামড়ার
কর্তৃত্ব সংবলিত খ্রিষ্টান ভূমি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে এটি গণপ্রজাতন্ত্রে
ফিরে আসে। ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে এখানকার লোকসংখ্যা ছিল প্রায় ২ কোটি ৯১ লক্ষ ৬০ হাজার।
এর মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যা ছিল মাত্র ৫ লক্ষ ১০ হাজার প্রায়; যা মোট জনসখ্যার শতকরা
মাত্র ১.৭ ভাগ। তবে বর্তমানে ৭৮ ভাগ খ্রিষ্টান, ১৫ ভাগ ধর্মীয় পরিচয়হীন, হিন্দু ১.৫
ভাগ, মুসলিম প্রায় ৬ ভাগ এবং অবশিষ্টরা ইহুদি ও লোকজধর্মের অনুসারী। মুসলমানদের মধ্যকার
শতকরা ৮৫ ভাগ মুসলমানের বংশধরগণ ইন্দোনেশিয়া, ভারত, মালয়, জানজীবার এবং মুজাম্বিক
থেকে আগত। তবে বর্তমানে সেখানে অভিবাসীসহ মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় শতকরা ৬ থেকে ৭
ভাগ হলেও স্থান বিশেষে মুসলমানদের সংখ্যা আরো বেশি বলে অনুমিত হয়।
দক্ষিণ
আফ্রিকায় ইসলামের প্রচার ও প্রসার
ইসলামের প্রাথমিক পর্বে কিংবা উত্তর আফ্রিকা
ও স্পেনে মুসলিম বিজয়ের সমকালে দক্ষিণ আফ্রিকায় ইসলামের দাওয়াত সম্প্রসারিত হয়।
বিশেষত বাণিজ্যিক যোগাযোগ ও ইসলাম প্রচারকগণের প্রচেষ্টার ফলে সেখানে ইসলামের দাওয়াত
পৌঁছে। কিন্তু এর বিস্তারিত ইতিহাস জানা যায় না। বিশেষত ১৪৮৭ খ্রিষ্টাব্দে দক্ষিণ
আফ্রিকায় পর্তুগিজ উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হলে মুসলমানদের জন্য দুর্দিন নেমে আসে। তারা
মুসলমানদের ধর্মীয় ইতিহাস ঐতিহ্য অনেকাংশেই ধ্বংস করে ফেলে। তবে সপ্তদশ শতাব্দীতে
ডাচ উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে আধুনিক সময়কাল পর্যন্ত সেখানে ইসলাম প্রচারের কয়েকটি পর্বের উল্লেখ পাওয়া
যায়।
বিশেষকরে এ শতাব্দীতে ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া
কোম্পানি জাভা বা বর্তমান ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকায় তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা
করে। এ সময় তাদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার নিমিত্তে ইন্দোনেশীয় নাগরিকদেরকে গ্রেফতার
করে নিজেদের প্রয়োজনে কেপটাউনসহ দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে নির্বাসনের জন্য প্রেরণ
করতো। দাস হিসেবে বিক্রি, শ্রমিক হিসেবে কাজে লাগানো থেকে শুরু করে আফ্রিকান সমাজে
তাদের বাণিজ্যিক ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সহায়তার কাজে তাদেরকে ব্যবহার করা হতো। ইন্দোনেশিয়ার
ডাচবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলমানরা যুক্ত থাকার কারণে নির্বাসিত ব্যক্তিদের প্রায়
সকলেই ছিলেন মুসলমান। মূলত এ কাজটি তারা নিষ্ঠুরতার সাথে করলেও এর মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকায়
মুসলমানদের বিস্তার ঘটে।
কৃষ্ণাঙ্গরাই মূলত দক্ষিণ আফ্রিকার মূল
অধিবাসী। সপ্তদশ খ্রিষ্টাব্দে ডাচরা একদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার উপর নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা
করে, অপরদিকে সেই সময়েই মালয় ও জাভাসহ তারা পার্শ্ববর্তী দ্বীপসমূহে ঔপনিবেশিক শাসন
প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চালায় । জাভা ও মালয় দ্বীপসমূহে মুসলমানরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ।
এসব অঞ্চলের ছোট ছোট দ্বীপসমূহেও মুসলিম সালতানাত প্রতিষ্ঠিত ছিল। ফলে মুসলমানদেরকে
পদানত করে ডাচ উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা কঠিন হয়ে পড়ে। ডাচদের কর্তৃত্ব মেনে না নিয়ে মুসলমানরা
ডাচদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যায়। এ স্বাধিকার আন্দোলন ঠেকানো এবং ডাচ আধিপত্য
প্রতিষ্ঠার পথকে সুগম করার জন্যে তারা জুলুম নির্যাতনের মাধ্যমে দমনপীড়ন চালায়। সেখানকার
মুসলমান বণিকদের বিভিন্ন অজুহাতে বন্দি করলেও তারা বিদ্রোহের ভয়ে স্বস্তিতে থাকতে
পারেনি। তাই তারা শাসক, বণিক এবং সমাজের অভিজাত শ্রেণির মুসলমানদের অনেককেই হাজার হাজার
মাইল দূরে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে নির্বাসিত করে.
ইন্দোনেশিয়ার দক্ষিণ মহুক্কাস অঞ্চল থেকে
১৬৫৭-৫৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম কিছুসংখ্যক মুসলমানকে গ্রেফতার করা হয় তাদের এসব অঞ্চলে
ডাচদের প্রভাব বিস্তারকে নিষ্কণ্টক করার জন্য। তারা বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হবার জন্য
স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে লোভ ও আগ্রহ সৃষ্টির কৌশলের পাশাপাশি ডাচদের ক্ষমতার প্রকাশ
ঘটানোর জন্য গ্রেফতার অভিযানও পরিচালনা করে। বিশেষকরে যারা তাদের বাণিজ্যিক বিরোধী
হিসেবে চিহ্নিত হবে তাদেরকেই গ্রেফতার করে বাইরের কোনো স্থানে নিরুদ্দেশে পাঠানো হয়।
এরই অংশ হিসেবে মুসলমানদেরকে তাদেরই অন্যতম উপনিবেশ দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে প্রেরণ
করা হয়। প্রথমত স্থানীয় মুসলিম বণিকদেরকে এখানে নির্বাসিত করা হয়েছিল যারা ডাচদের
বাণিজ্যিক কর্তৃত্ব মেনে নিতে অস্বীকৃত জানিয়েছিল ।
রাজনৈতিকভাবে ইন্দোনেশীয় অঞ্চল থেকে প্রথম নির্বাসনের খবর জানা যায় ১৬৬৭ সালে। এ সময় মালয় ও জাভা দ্বীপের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অথচ শিল্প বাণিজ্য ও শিক্ষা সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ মুসলিম সালতানাত প্রতিষ্ঠিত ছিল। মূলত মুসলমান সুলতানগণই বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাই বাণিজ্যিক প্রয়োজনেই সুলতানদেরকে পরাভূত করা ডাচদের প্রধান লক্ষ্য হয়ে ওঠে। বিশেষকরে যে সকল সুলতান স্বীয় রাজ্যের উপর ঔপনিবেশিক আগ্রাসন মেনে নিতে অসম্মতি জ্ঞাপনের পাশাপাশি ডাচদের জন্য অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভীতির কারণ হয়ে দাড়ায় এ সকল সুলতান তাদের প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। তাদের পারিষদবর্গের অনুগত সদস্য ও প্রধান বাণিজ্যিক ব্যক্তিত্বসহ অনেককেই গ্রেফতার করে হত্যা করা হতো অথবা নির্বাসনে পাঠানো হতো।
১৬৬৭ সালে সুমাত্রার সুলতান শাইখ আব্দুর রহমান মাতাবী
শাহ এবং স্বীয় প্রধান পারিষদ শাইখ মাহমুদসহ সুমাত্রার শাসকশ্রেণি ও বণিকগোষ্ঠীর অনেককেই
বন্দি করা হয় এবং দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে নির্বাসন দেওয়া হয়। কেপটাউনের কনস্টানটিয়াতে
তাদের মাজার অদ্যাবধি বিদ্যমান আছে। তাদের কবরকে এখনো শ্রদ্ধার সাথে আউলিয়ার মাজার
হিসেবে দেখা হয়। কেননা শাইখ আবদুর রহমান মাতাবী শাহ এবং শাইখ মাহমুদ শুধু মুসলিম শাসকই
ছিলেন না, তারা অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ মুসলমান হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।
দক্ষিণ আফ্রিকায় নির্বাসিত হবার পরও বন্দিজীবনের
বিভিন্ন পর্যায়েও তারা অন্যান্য নির্বাসিত ব্যক্তি যাদেরকে শ্রমিক ও দাস হিসেবে ব্যবহার
করা হয়েছিল তাদের মধ্যে ইসলাম শিক্ষা দেওয়ার কাজ চালিয়ে গেছেন। ইসলামের একজন দায়ী
হিসেবে নির্যাতিত জনগোষ্ঠীসহ সর্বসাধারণের কাছে তারা আউলিয়া হিসেবে শ্রদ্ধার পাত্র
হয়ে ওঠেন।
রাজনৈতিকভাবে নির্বাসিত দ্বিতীয় পর্বের
ব্যক্তি হচ্ছেন সুলতান শাইখ ইউসুফ। তিনি বানতাম অঞ্চলের সুলতান ছিলেন। শিল্প, বাণিজ্য
ও শিক্ষা সংস্কৃতিতে বানতাম সে সময়ের একটি উল্লেখযোগ্য সালতানাত হিসেবে পরিগণিত ছিল।
১৬৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ২ এপ্রিল তার অনুচর ও পারিষদবর্গ এবং পারিবারিক সদস্যগণসহ কয়েকশত
মুসলমানকে গ্রেফতার করে দক্ষিণ আফ্রিকায় নির্বাসন দেওয়া হয়। তাদেরকে প্রাণে হত্যা
না করে কেপটাউনের দূর-পার্শ্ববর্তী ইস্ট নদীর সম্মুখবর্তী জানডভেইট নামক কৃষিভূমি অঞ্চলে
নির্বাসিত ও আশ্রিত করা হয়।
১৬৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জুন তাদেরকে এ অঞ্চলে
নির্বাসিত করা হয় মূলত মুসলমানদের দৃষ্টি এড়ানোর জন্য। কেননা কেপটাউনে নির্বাসিত
করলে বিষয়টি জানাজানি হতে পারে। তাছাড়া তারা পূর্বে নির্বাসিত মুসলমানসহ স্থানীয়দের
দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হতে পারে। এজন্য তাদেরকে শহর থেকে দূরে গ্রামীণ ও পাহাড়ি অঞ্চলে
নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ডাচদের এ পরিকল্পনা বিপরীত ফল প্রদান করেছে।
শাইখ ইউসুফকে ঘিরে জানডভেইট অঞ্চলটি ফেরারি দাস, শ্রমিক এবং পূর্বাঞ্চলীয় অন্যান্য মুসলিম নির্বাসিতদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় এ অঞ্চলটিতে প্রথম মুসলিম কমিউনিটি গঠনের জন্য সকলের আশার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। শ্রমিক, দাস এবং নানা কাজে ব্যবহৃত নির্যাতিত মুসলমানগণ শাইখ ইউসুফকে ঘিরে ধর্মচর্চায় আত্মনিয়োগ করে।
ডাচরা অনুধাবন করতে সক্ষম হয় যে, মুসলমানদের
ইমানি চেতনা তাদের স্বাধীনতাবোধকে জাগ্রত করে থাকে। তাই তারা নির্বাসিত ব্যক্তিদেরকে
ধর্মচর্চায় বাধা দিয়েছিল। নামাজসহ প্রকাশ্য ধর্মচর্চাতো দূরের কথা তাদেরকে কালিমা
পাঠ করলেও শাস্তি প্রদান করা হতো। এমন প্রেক্ষাপটে এসব মুসলমান সারা দিনের ক্লান্তিময়
শ্রম শেষে নিজেদের আশ্রয়স্থলে ফিরে রাতের গভীরে পাহাড়ি এলাকায় সমবেত হয়ে সারাদিনের
নামাজ একসাথে আদায় করতেন। সেইসাথে শাইখ ইউসুফের নিকট ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা
গ্রহণ করতেন। আজও এ অঞ্চলে মুসলমানগণ সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করে এবং এরা বানতাম ও মাকাসসার
অঞ্চল থেকে আগত হয়ে এখানে আশ্রিত ছিলেন বলে জানডভেইট জেলার পার্শ্ববর্তী এ অঞ্চলকে
‘মাকাসসার' নামে
অভিহিত করা হয়।
সৌদি আরবের ইয়ামেন অঞ্চলের মক্কী বংশোদ্ভূত
সায়্যিদ আলাউয়্যি নামক জনৈক মুসলিম মনীষী ১৭৪৪ খ্রিষ্টাব্দে হাজী মাতারিম নামক জনৈক
ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্রমণে এসেছিলেন। তিনি পরবর্তীতে তুয়ান সায়্যিদ
নামে পরিচিত ছিলেন। তারা সন্দেহভাজন হিসেবে কেপটাউনে ডাচ কর্তৃক ধৃত হন । ইসলাম প্রচার
ও দক্ষিণ আফ্রিকান বন্দি মুসলমানদের গোপন সংবাদ ও তথ্যসংগ্রহের অভিযোগে তাদেরকে গ্রেফতার
করে রবিন দ্বীপে কারারুদ্ধ করা হয়।
কিছুদিন পরে জেল থেকে মুক্ত হয়ে তারা কেপটাউনে পুলিশ
কনস্টেবল হিসেবে চাকরির সুযোগ লাভ করেন। এ পেশাকে তারা ইসলাম প্রচার ও তথ্যসংগ্রহের
সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেন। তারা দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে বন্দিশিবির বা ‘স্লাভ কোয়ার্টার'
এ গমন করেন। তারা প্রায়ই রাতের অন্ধকারে বন্দিদেরকে ইসলাম শিক্ষাদানের জন্য সেখানে
যেতেন এবং ইসলামের খেদমতে এমন কর্মকাণ্ডের জন্যই তুয়ান সায়্যিদকে কেপটাউন অঞ্চলের
প্রথম অফিসিয়াল ইমাম হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয় ।
ইন্দোনেশিয়ার তিডোর অঞ্চলের মুসলিম যুবরাজ
ছিলেন আব্দুলাহ কাজি আবু সুলাইমান। তিনি অত্যন্ত শিক্ষিত এবং স্বাধীনচেতা যুবরাজ ছিলেন।
ডাচদের কোপানলে পড়ে তিনি ১৭৬৭ খ্রিষ্টাব্দে গ্রেফতার হয়ে কেপটাউনে প্রেরিত হন। তিনি
ছিলেন পবিত্র কুরআনের হাফিজ। তিনি কারারুদ্ধ অবস্থায় স্মৃতিপট থেকেই পবিত্র কুরআন
লিপিবদ্ধ করেন। তার লিখিত সেই কুরআনের কপি কেপটাউনে এখনো সংরক্ষিত আছে। তিনি ১৭৯৩ খ্রিষ্টাব্দে
জেল থেকে মুক্তি পান এবং ঐ বছরই স্থানীয় মুসলমানদের শিক্ষার সুযোগ তৈরির জন্য কেপটাউনে
একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এটাই দক্ষিণ আফ্রিকার মুসলমানদের জন্য প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এটি নির্বাসিত বন্দি, দাস, শ্রমিক ও মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গ মুসলমানদের
কাছে জনপ্রিয় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
শুধু মুসলমানদের শিক্ষা সম্প্রসারণেই নয়,
কৃষ্ণাঙ্গ অমুসলিমদের ইসলামে দীক্ষা গ্রহণে এ মাদ্রাসার ভূমিকা অগ্রগণ্য। এখানে আরবি
ভাষায় ইসলাম চর্চার পাশাপাশি আফ্রিকান ভাষাতেও ইসলামের চর্চা সম্প্রসারিত হতো। ১৭৯৩
সালেই মুসলমানগণ কেপটাউনে একটি মসজিদ নির্মাণের অনুমতি চেয়ে ডাচ প্রশাসনের নিকট আবেদন
করে। সে আবেদন মঞ্জুর হলে সেখানে মসজিদ নির্মিত হয় এবং এ মসজিদকে ঘিরে ইসলামের ও প্রসার
সহজতর হয়ে ওঠে। ফলে নির্বাসিত ও স্থানীয় জনগণের কাছে ইসলাম জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মুসলমান ছাড়াও ভারতীয়
মুসলমানদের দ্বারাও দক্ষিণ আফ্রিকায় ইসলামের বিস্তার ঘটে। বিশেষত ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে
দক্ষিণ ভারতীয় অঞ্চল থেকে খোদাই শ্রমিকসহ প্রয়োজনীয় শ্রমিক হিসেবে ব্রিটিশরা তাদের
উপনিবেশীয় অঞ্চল দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রেরণ করে। এ শ্রমিকের মধ্যকার অনেকেই ইসলামের
অনুসারী ছিল। এছাড়া উত্তর ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বেশকিছু মুসলিম বণিক দক্ষিণ আফ্রিকায়
বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে গিয়ে নাতাল, ট্রান্সভাল এবং কেপটাউনে বসবাস শুরু
করে।
১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে নাতাল প্রদেশের ডারবান
অঞ্চলের গ্রিস্ট্রিটে প্রথম জুময়া মসজিদ নির্মিত হয়। এছাড়াও ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে দক্ষিণ
আফ্রিকায় গণতন্ত্রায়ন হলে দক্ষিণ এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকা থেকেও অনেক মুসলমান দক্ষিণ
আফ্রিকায় এসে বসবাস শুরু করে। এদের মধ্যে অধিকাংশই কেপটাউন, ডারবান, পোর্টএলিজাবেথ,
ইস্টলন্ডন, কিমবার্নি, প্রিটোরিয়া অথবা জোহানেসবার্গে বসতি ড়ে তুলেছে।
মুসলমানদের
বর্তমান অবস্থা
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হবার
পর দক্ষিণ আফ্রিকান নাগরিকদের জীবনের মৌলিক পটপরিবর্তন হয়েছে। বিশ্ববরেণ্য কিংবদন্তি
নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার মানবতাবাদী দর্শনের পরিপ্রেক্ষিতে সমাজের নির্যাতিত কালো মানুষসহ
পিছিয়ে পড়া নিষ্পেষিত মুসলিম জনগোষ্ঠী অনেকাংশে আশার প্রদীপ দেখতে পেয়েছে। মুসলমানরা
শিক্ষাদীক্ষা, অর্থনীতি ও সামাজিক দিক থেকে অনেক পিছিয়ে থাকলেও বর্তমানে কিছুটা এগিয়ে
যাবার সুযোগ পাচ্ছে। মুসলমানদের জন্য উচ্চশিক্ষার সুযোগ যেমন কন ছিল তেমনি শিক্ষা গ্রহণের
পরে চাকরির পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকায় তারা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে তেমন আগ্রহীও হয়ে
ওঠেনি।
ডাচ ও ইংরেজদের নির্যাতন ও নিষ্পেষণে তারা
ক্ষুদ্র দোকানিতে পরিণত হয়। তবে এখনো সেখানকার একটি বড় অংশ দোকানদার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী,
অধিকাংশই শ্রমিক এবং কিছুসংখ্যক মুসলমান পেশাজীবী হিসেবে জীবিকানির্বাহ করে। ইতিহাসবিদ
M. Ali Kettani বলেন, "Muslims are largely concentrated in the provinces of
the Cape, Natal and Transvall. Muslims are to be found in most-towns and
villages of these provinces but with higher concentration in Durban, Cape Town,
Johannesburg and Pretoria. About one third of Muslims are traders others are
workers and some are professionals."
দক্ষিণ আফ্রিকান সমাজে ইসলাম সম্পর্কে
বেশ ইতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। বিশেষত ফ্রিমিস্কিং, অবাধ যৌনতা, মদসহ নেশা জাতীয়
দ্রব্যের ব্যাপক ব্যবহারে সামাজিকভাবে এক ধরনের হতাশা তৈরি হয়েছে। পারিবারিক ব্যবস্থা
ও সামাজিক অধঃপতনসহ এইডসের ভয়াল থাবা থেকে রক্ষা পাবার জন্য ধর্মীয় আশ্রয় বিশেষ
প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে।
২০১১ সালের ইউএনএইডস রিপোর্ট অনুয়ায়ী
দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রায় ৫.৬ মিলিয়ন লোক এইচআইভিতে আক্রান্ত। ২০০৮ সালের একটি গবেষণায়
সেখানকার মোট জনগোষ্ঠীর শতকরা ১৩.৯ ভাগ এইচআইভি জীবাণু বহনকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
এক্ষেত্রে ইসলামের আদর্শ ও নৈতিক দর্শন দক্ষিণ আফ্রিকান সমাজে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে
সক্ষম হয়েছে।
সেইসাথে ইসলামের বর্ণভেদ প্রথাবিরোধী চেতনা
দক্ষিণ আফ্রিকার কালো মানুষদেরকে আলোড়িত করতে সক্ষম হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি টিভি
চ্যানেল, বেতার এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াতে ইসলামের নৈতিক বিষয়সহ
বিভিন্ন দিক প্রচারিত হয়ে থাকে। বিশেষ করে মুসলমানদের কমিউনিটি রেডিও, রেডিও ইসলাম
এবং ভয়েস অব দ্যা কেপ এ ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে মুসলমানদের অনুষ্ঠানসমূহ বিশেষভাবে
প্রচার করে। সেইসাথে মুসলিম ভিউজ, ইসলাম দ্যা ওয়ে অব লাইফ নিউজ পত্রিকায় ইসলামি
আদর্শের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয় ।
শিক্ষালাভের জন্য মুসলমানদের স্বতন্ত্র
ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকলেও দক্ষিণ আফ্রিকার অধিকাংশ মুসলমান শিক্ষার্থী প্রচলিত
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই লেখাপড়া করে। তবে অনেকেই মাদ্রাসা থেকে ইসলাম সম্পর্কে শর্টকোর্স
সমাপ্ত করে থাকে। ইসলামি আইন এবং ইসলামি অর্থনৈতিক বিধিবিধান সম্পর্কেও লেখাপড়ার সুযোগ
আছে। উইটস ইউনিভার্সিটি এবং ওয়েস্টার্নকেপ ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে
কুরআন ও আরবি ভাষা অধ্যয়নের সুযোগ আছে।
দারুল
উলুম
দক্ষিণ আফ্রিকায় দারুল উলুম নামে ইসলাম
বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ
থেকে শিক্ষার্থীগণ এতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য আগমন করে থাকে। উল্লেখ্য দারুল উলুম
মাদ্রাসাসমূহ হচ্ছে দারউল উলুম জাকারিয়াহ, দারউল উলুম আজাদভিলে, দারউল উলুম প্রেটোরিয়া,
দারউল উলুম কেপটাউন, দারউল উলুম বেনোনি, দারউল উলুম নিউক্যাস্টল, দারউল উলুম স্প্রিংস,
দারউল উলুম ইসিপিংগো, দারউল উলুম ক্যাম্পেরডাউন, দারউল উলুম স্টারনড প্রভৃতি।
এছাড়াও মসজিদভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
ছাড়াও বিভিন্ন অঞ্চলে স্বায়ত্তশাসিত মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেইসাথে স্থানীয়ভাবে
শিক্ষালাভের পর দক্ষিণ আফ্রিকান মুসলিম ছাত্রদের জন্য মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, মক্কার
উম্মুল কোরা বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব ও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে
স্কলারশিপসহ লেখাপড়ার সুযোগ রয়েছে।
মুসলিম
জুডিশিয়াল কাউন্সিল
ইসলামের প্রচার ও প্রসারে বিভিন্ন সংগঠন
বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংগঠন হচ্ছে-
মুসলিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। সংস্থাটি ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়। মুসলমানদের
ঐক্য-সংহতি বৃদ্ধি, শিক্ষা, সমাজ সংস্কৃতি ও নৈতিক মান উন্নয়নে ভূমিকা পালন এবং বর্ণবাদী
ও বৈষম্যমূলক আইনের প্রতিবাদ জানিয়ে থাকে। সেই সাথে খাবারের হালাল-হারামসহ ইসলামের
বিভিন্ন বিষয়ে সুপারিশ করে থাকে।
ইসলামিক
ইন্টারফেইস রিসার্চ ইনস্টিটিউট
ইসলামের বিষয়ে অবাধ তথ্যপ্রবাহ ও মুসলমানদের
মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ ও ঐক্যবদ্ধকরণের প্রয়াসে কাজ করে যাচ্ছে ইসলামিক ইন্টারফেইস রিসার্চ
ইনস্টিটিউট
অরগানাইজিং
এন্ড অরকেস্ট্রচিং দাওয়াহ ইন সাউদার্ন আফ্রিকা:
দক্ষিণ আফ্রিকার মুসলমানদেরকে বিভিন্ন
বিষয় সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, হাতে কলমে শিক্ষাদান, মুসলমানদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানকল্পে
কাজ করে যাচ্ছে অরগানাইজিং এন্ড অরকেস্ট্রচিং দাওয়াহ ইন সাউদার্ন আফ্রিকা,
দ্যা
সাউথ আফ্রিকান হাজ এন্ড উমরাহ কাউন্সিল:
দক্ষিণ আফ্রিকান মুসলমানদের সঠিক পন্থায়
হজব্রত পালনের সুযোগ সুবিধা প্রদানের নিমিত্তে কাজ করে ‘দ্যা সাউথ আফ্রিকান
হাজ এন্ড উমরাহ কাউন্সিল' প্রভৃতি।
সেইসাথে দক্ষিণ আফ্রিকার উল্লেখযোগ্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো হচ্ছে- ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে কেপটাউনে প্রতিষ্ঠিত 'সাউথ আফ্রিকা মুসলিম এসোসিয়েশন' ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত মুসলিম চিকিৎসকদের সংগঠন 'লাজনাতুল আতিবা’, ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত 'ইসলামিক কাউন্সিল অব সাউথ আফ্রিকা' ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত ‘উমলাস মারিয়ান হিল ইসলামিক সেন্টার' অন্যতম।
লাজনাতুল
আতিবা:
লাজনাতুল আতিবা হলো দক্ষিণ আফ্রিকার মুসলমান চিকিৎসকদের
দ্বারা গঠিত একটি সংগঠন। ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর মাসে মুসলিম যুব আন্দোলন আয়োজিত এক সভায়
মুসলমান চিকিৎসকগণ এ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। মূলত দেশের হতদরিদ্র
মানুষকে চিকিৎসা সেবার আওতায় আনার জন্য তারা নিরলস কাজ করে যান। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত
এ সংগঠনটি এ নামেই চালু থাকলেও ১৯৮১ সালে এর নামকরণ করা হয় 'সাউথ আফ্রিকান ইসলামিক মেডিক্যাল সোসাইটি'। বর্তমানে এটি মুসলমানগণ পরিচালিত
একটি বড় সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান।
উমনাস মারিয়ান ছিল ইসলামিক সেন্টার:
বর্তমান সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় ইসলাম বিস্তারে উমনাস মারিয়ান ইসলামিক সেন্টার বিশেষ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠনটি দক্ষিণ আফ্রিকার মুসলমানদের আর্থসামাজিক স্বার্থসহ নানাবিধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান, সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা, মুসলমানদের জ্ঞান চর্চার জন্য পাঠাগার প্রতিষ্ঠিত এবং ইসলাম প্রচারের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণে এ সংগঠনটি প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে চলেছে।
এ সংগঠনসমূহের সবগুলো বর্তমানে সক্রিয় না থাকলেও দক্ষিণ আফ্রিকার ইসলাম প্রচার, প্রসার ও মুসলমানদের নানাবিধ সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে অনেক অরাজনৈতিক সংগঠন মুসলমানদের উন্নয়নে ও দাওয়াতি সম্প্রসারণে কাজ করে যাচ্ছে।
ইসলামিক সংগঠন, মসজিদ ও ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের
পরিসংখ্যান সম্পর্কে ইতিহাস গবেষক M. Ali Kettani বলেন, "There are more than
150 Islamic organizations which have joined together to form an Islamic Council
of South Africa. There are about 200 mosques, Islamic Schools, and four
orphanages. There is an Institute of Islamic Law Studies in Cape Town."
তবে লেখকের এ পরিসংখ্যান ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দের
তথ্য অনুসারে সংযোজিত। বর্তমানে এ সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক সংগঠন
হিসেবেও কিছু মুসলিম সংগঠন কাজ করে থাকে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আফ্রিকা মুসলিম
পার্টি, ইসলামিক পার্টি এবং পিস এন্ড জাস্টিস কংগ্রেস বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
দক্ষিণ আফ্রিকার অধিকাংশ মুসলমানই সুন্নিধারায় বিশ্বাসী। এদের মধ্যকার অধিকাংশ
ভারতীয় বংশোদ্ভূতরা হানাফি মাজহাবের অনুসারী।
পক্ষান্তরে মালয়ী, কোকনী, ইন্দোনেশীয় ও পূর্ব আফ্রিকান বংশধারার মুসলমানগণ শাফেয়ী
মাজহাবের অনুসরণ করে থাকে। তবে কিছু কিছু মুসলমান মালেকী মাজহাবেরও অনুসরণ করে থাকে।
আফ্রিকার ন্যাশনাল লাইব্রেরিসহ বিভিন্ন
গ্রন্থাকারে পবিত্র কুরআন এখন পর্যাপ্তই
পাওয়া যায়। পবিত্র রমজান মাসে অধিকাংশ খুচরা বিক্রেতার দোকান, রেডিও স্টেশন, প্রকাশনা
ও সংগঠন-সংস্থার পক্ষ থেকে স্থানীয় মুসলমানদের শুভেচ্ছা জানানো হয়ে থাকে। ঈদ উদযাপনেও সেখানে মুসলিম-অমুসলিমদের মধ্যে
সৌহার্দের পরিবেশ লক্ষণীয়।
ইতিহাসবিদ M. Ali Kettani উল্লেখ করেন,
"The racial policy of the government forced division on the community into Indian, black, colored and white components. Muslims are however free to
observe their religious observances within each group and their contacts with
the Muslim world are good."
হালাল খাবার ব্যবস্থাপনা, পশু জবাই প্রক্রিয়ায়
হালাল গোশত সরবরাহ, হালাল রেস্টুরেন্ট ব্যবস্থাপনাও দক্ষিণ আফ্রিকায় আশানুরূপ না হলেও
মোটামুটি স্বাভাবিক রয়েছে। ইসলামি ব্যাংকিং পদ্ধতিরও সুযোগ তৈরি করতে সহায়তা করছে
বিভিন্ন ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে আল আরাফা ইসলামি ব্যাংক, ইসলামিক ব্যাংক প্রভৃতি
কাজ করে যাচ্ছে। মুসলিম পারিবারিক আইন প্রচলনের জন্য বিল আকারে প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে।
হয়তো অনতিবিলম্বে সেখানে ইসলামের পারিবারিক আইন রাষ্ট্রীয়ভাবেই কার্যকর হবে বলে আশা
করা যায়।
আলকায়েদাভিত্তিক উগ্রবাদী সংগঠনের কর্মকাণ্ড
যেমন মুসলিম ইমেজ নষ্ট করতে ভূমিকা পালন করে তেমনি খ্রিষ্টান মিশনারিদের মুসলামানদের
বিষয়ে মিথ্যাচার এবং অপপ্রচার ইসলামের প্রচার ও প্রসারে খানিকটা বাধা সৃষ্টির চেষ্টা
চালিয়ে থাকে। তবে আদর্শহীনতার মাঝে ইসলামের সুমহান আদর্শ আফ্রিকানবাসীকে মুক্তির নতুন
পথের সন্ধান দিতে অনেকাংশেই সফল হচ্ছে- এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় ।
দক্ষিণ আফ্রিকার মুসলিম ক্রিকেটার
দক্ষিণ আফ্রিকার মুসলিম ক্রিকেটারে ৭ জন। ৭ জন মুসলিম ক্রিকেটারের মধ্যে রয়েছে হাসিম আমলা, ইমরান তাহির, ওয়েন পারনেল, ইউসুফ আব্দুল্লাহ, সাবরাইন সামসি, বিহারডিন ও গোলাম বুদ্ধি ।
ছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট দলে একজন
নারী ক্রিকেটারও রয়েছেন। মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণকারী এবং দক্ষিণ আফ্রিকার
দলে খেলা একমাত্র মুসলিম নারী ক্রিকেটার শবনিম ইসমাইল।