পররাষ্ট্রনীতি কি? পররাষ্ট্রনীতির নিয়ামকসমূহ আলোচনা করে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে উত্তম পররাষ্ট্রনীতির বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করুন।

পররাষ্ট্রনীতি কি

ভূমিকা:

পররাষ্ট্রনীতি হলো কোনো রাষ্ট্রের সেসব কার্যধারা যা তার রাষ্ট্রীয় স্বার্থ সংরক্ষণের নিমিত্তে তার সীমারেখার বাইরে অবস্থিত অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে যোগাযোগ রক্ষার জন্য সম্পাদন করে থাকে। স্নায়ুযুদ্ধোত্তর বিশ্বের প্রতিটি দেশেরই পররাষ্ট্রনীতিতে লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। কারণ বিশ্ব রাজনীতির মেরুকরণের ফলে এবং শক্তিবলয়ের কারণে প্রতিটি দেশের পররাষ্ট্রনীতি এখন ঢেলে সাজাতে হচ্ছে। 

তবে পররাষ্ট্রনীতির সাধারণত লক্ষ্য থাকে নিজ দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ তথা অন্যদেশের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নিজ স্বার্থকে অক্ষুণ্ণ রাখা। তাই এক একটি দেশ তার নিজের মতো করে পররাষ্ট্রনীতি সাজিয়ে তোলে।  মনে রাখতে হবে, পৃথিবীতে কোনো রাষ্ট্রই এককভাবে স্বীয় লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে পূর্ণাঙ্গতা দান করতে পারে না। কোনো রাষ্ট্রই অন্যান্য রাষ্ট্র থেকে দূরত্ব বজায় রেখে তার অগ্রগতি সুনিশ্চিত করতে পারে না। সুতরাং এটাই স্বাভাবিক যে, প্রতিটি রাষ্ট্রকে তার অস্তিত্ব এবং অগ্রগতির স্বার্থে অন্য রাষ্ট্রসমূহের সাথে নানাবিধ সম্পর্কে আবদ্ধ হতে হবে।

Table of Contents

পররাষ্ট্রনীতি কি?

সাধারণভাবে বলতে গেলে পররাষ্ট্রনীতি হলো কোনো দেশের জাতীয় নীতিরই অংশ যা বহির্বিশ্বের সাথে সম্পর্কযুক্ত। বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি রাষ্ট্র যে পরিকল্পনা, উদ্দেশ্য ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে করে তাই পররাষ্ট্রনীতি। প্রতিটি দেশই তার সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও স্বকীয়তা বজায় রেখেই তার পররাষ্ট্রনীতি ঠিক করে। একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশেরও একটি নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতিআছে যা পরিবর্তিত বিশ্ব প্রেক্ষাপটে পরিবর্তিত, বর্ধিত ও যুগোপযোগী হয়েছে।

পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে জার্মান রাষ্ট্রনায়ক অটোভন বিসমার্ক বলেন, "কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ নীতির সম্প্রসারণই হলো পররাষ্ট্রনীতি।" 

পররাষ্ট্রনীতি কি

ররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে লার্কে, ও সৈয়দ বলেন, "The foreign policy of a state usually refers to the general principles by which a state governs its reaction to the international environment."

হার্টম্যান (Hartmann) বলেছেন যে, "A foreign policy is a systematic statement of deliberately selected national interest."

এখানে তিনি বলতে চেয়েছেন যে, পররাষ্ট্রনীতি হলো একটি রাষ্ট্রের দ্বারা সুনিশ্চিতভাবে নির্বাচিত বা মনোনীত তার রাষ্ট্রীয় স্বার্থসমূহ সম্পর্কে সুসংঘবদ্ধ বিবৃতি। একটি আদর্শ পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণের প্রক্রিয়ায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পৃক্ত হয়ে আছে। সমস্ত প্রকার স্বার্থের বিচার-বিশ্লেষণের পর যেগুলো জাতীয় স্বার্থের সাথে সংগতিসম্পন্ন নয় সেগুলোকে পরিত্যাগ করা হয়।

Prof. Padelford Lincoln বলেন, "পররাষ্ট্রনীতি হলো একটি দেশের জাতীয় নীতির একটি অংশ যার দ্বারা অন্য একটি দেশের সাথে সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং এ সম্পর্ক জাতীয় স্বার্থের ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত।"

Joseph Frankle বলেন, "পররাষ্ট্রনীতি হলো সিদ্ধান্ত ও ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার ফল যা এক রাষ্ট্রের সাথে অন্য রাষ্ট্রের সম্পর্ক সৃষ্টি করে।"

সুতরাং বলা যায় যে, পররাষ্ট্রনীতি হলো জাতীয় নীতির সেই গুরুত্বপূর্ণ অংশ যার দ্বারা অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে নিজ দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ, সম্প্রসারণ ও সমন্বয় করা হয়।

পররাষ্ট্রনীতির নিয়ামকসমূহ:

একটি দেশের পররাষ্ট্রনীতি তার আয়তন, জনসংখ্যা, ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান, প্রাকৃতিক সম্পদ, পারমাণবিক সম্পদ, জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণ ও অর্থনৈতিক নীতির ওপর নির্ভরশীল। নিচে পররাষ্ট্রনীতির নিয়ামকসমূহ আলোচনা করা হলো:

১. আয়তন:

আয়তন বা একটি দেশের মোট ভূমির পরিমাণ তার পররাষ্ট্রনীতি সাজানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। যেমন রাশিয়ার পররাষ্ট্রনীতি আর ভ্যাটিকানসিটির পররাষ্ট্রনীতি একই ধারায় প্রবাহিত হয় না। কারণ রাশিয়ার বৃহৎ এলাকা তাকে অন্যরকম পদাঙ্ক অনুসরণ করতে শেখায়। তাই পররাষ্ট্রনীতির প্রণয়নে আয়তন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

পররাষ্ট্রনীতি কি

২. জনসংখ্যা:

জনসংখ্যা একটি দেশের সম্পদ। তাই যে দেশের জনসংখ্যা যত সেই দেশের পররাষ্ট্রনীতির কৌশল তেমন। যেমন: চীনের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কারণে তাদের পররাষ্ট্রনীতি অন্যরকম। আবার ভারতেও প্রচুর পরিমাণে জনসংখ্যা থাকার কারণে তারাও বিশ্ব অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছে। ফলে অন্য দেশগুলো যেহেতু তাদের প্রতি বেশি পরিমাণে নজর দিচ্ছে তাই তারা পররাষ্ট্রনীতিতে তাদের স্বার্থ কীভাবে বৃহৎ থেকে বৃহত্তর হয় সেই ব্যাপারে তৎপর। তাই বলা যায়, পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম নিয়ামক হলো জনসংখ্যা।

৩. অর্থনৈতিক শক্তি:

অর্থনীতি একটি দেশের পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। একটি দেশের অর্থনৈতিক শক্তি নির্ভর করে সেই দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির ওপর। অর্থনৈতিকভাবে। শক্তিশালী দেশ তার পররাষ্ট্রনীতিকে এমনভাবে প্রণয়ন করে যাতে তার বাজার সম্প্রসারিত হয় এবং উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সরবরাহ যেন বাধার সম্মুখীন না হয়। তাছাড়া অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবশালী দেশ সবসময়ই চেষ্টা করে কম মূলধন ব্যয় করে তার সর্বোচ্চ লাভ বের করে নিয়ে আসতে যেটি তার অর্থনীতিকে আরও ব্যাপকভাবে প্রসারিত করে। 

পররাষ্ট্রনীতি কি

আবার উন্নয়নশীল বা অর্থনৈতিকভাবে কম উন্নতদেশগুলোও তার মালামাল আনতে যেন কোনো রকম প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি না হয় এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো যেসব বৃহৎ শক্তির দেশের ওপর নির্ভরশীল তাদের যেন স্বার্থ সংরক্ষিত থাকে এ ব্যাপারে তারা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। এছাড়া উন্নয়নশীল দেশগুলো পররাষ্ট্রনীতির ব্যাপারে সাহায্য দাতাগোষ্ঠীর স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়। তাছাড়া বর্তমানে সব দেশই অর্থনীতিকে একটি দেশের সম্মান-মর্যাদার প্রধান বিষয় মনে করে। তাই পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক শক্তি একটি ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।

৪. সামরিক শক্তি:

একটি দেশের জাতীয় শক্তি বা অভ্যন্তরীণ শক্তির প্রকাশ ঘটে সামরিক শক্তির মাধ্যমে। বর্তমান বিশ্বে সেই দেশই বেশি শক্তিশালী যার সামরিক বাহিনী বেশি শক্তিশালী। সামরিক বাহিনী বলতে স্থল, নৌ ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত বাহিনীকে বুঝায়। শক্তিশালী সামরিক বাহিনী পররাষ্ট্রনীতির মূল প্রভাবক। একটি দেশের শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন করতে হলে এ তিনটি বিষয়কেই যথেষ্ট মানসম্পন্ন, প্রযুক্তিসম্পন্ন ও সুসজ্জিত হতে হবে। 

পররাষ্ট্রনীতি কি

তাছাড়া সামরিক শক্তি সৈন্য বাহিনীর গুণগত দিক, উৎকর্ষতা ও প্রশিক্ষণের ওপর নির্ভর করে। একটি দেশের পররাষ্ট্রনীতিতে সামরিক শক্তির ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। একদিকে সামরিক শক্তির কলেবর বৃদ্ধির জন্য পররাষ্ট্রনীতি সাজাতে হবে আবার সামরিক শক্তি দ্বারা অন্য দেশের ওপর প্রভাববিস্তার করতে হবে। যেমন: পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক পাকিস্তানের স্বার্থ রক্ষার জন্য। ঠিক তেমনি এক একটি দেশ অপর দেশের বলয় গ্রহণ করার জন্য পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করে। যেমন: মিশর, দক্ষিণ কোরিয়া আমেরিকার সাথে বন্ধুত্ব করেছে।

৫. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা:

আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম নিয়ামক। উন্নয়নশীল দেশগুলো উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে সহযোগিতা লাভের উদ্দেশ্যে তাদের পররাষ্ট্রনীতি সাজায়। যেমন: বাংলাদেশে তার পররাষ্ট্রনীতিতে পুঁজিবাদী ও সমাজতান্ত্রিক উভয় দেশের সাথেই সুসম্পর্ক বজায় রাখে।

পররাষ্ট্রনীতি কি

৬. মতাদর্শগত পরিবেশ:

একটি রাষ্ট্রের পূর্ব ইতিহাস, জাতিগত চরিত্র, ঐতিহ্য এবং চিরন্তন ধ্যান-ধারণার ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট মতাদর্শগত প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। এই মতাদর্শগত প্রেক্ষাপট একটি দেশের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে অন্যতম নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে মতাদর্শগত পার্থক্য যে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে তার প্রমাণ হলো সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ সংঘাতের পটভূমিকায় মতাদর্শগত পার্থক্যের বিষয়টি বাস্তবে মূল্যবোধ নীতি ও আদর্শের প্রতি একটি রাষ্ট্র কতখানি দায়বদ্ধ থাকে তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠতে পারে। 

পররাষ্ট্রনীতি কি

সাম্প্রতিককালে বিশ্ব রাজনীতিতে বিভিন্ন রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিসংক্রান্ত বক্তব্যগুলো বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখি যে, কোনো রাষ্ট্র যদি গণতন্ত্রকে রক্ষা করার কথা বলে, তো অপর রাষ্ট্র সাম্রাজ্যবাদকে প্রতিহত করার কথা বলে। আবার কোনো রাষ্ট্র যদি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের কথা বলে, তো অপর রাষ্ট্র বিশেষ একটি রাষ্ট্রের একাধিপত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামের কথা বলে।

উত্তম পররাষ্ট্রনীতির বৈশিষ্ট্য:

পররাষ্ট্রনীতি এক একটি দেশের একেক রকম হলেও একটি বিষয়ে সকল দেশের পররাষ্ট্রনীতির দৃষ্টিভঙ্গি এক ও অভিন্ন। আর তা হলো নিজ দেশের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রাখা। প্রতিটি স্বাধীন, সার্বভৌম দেশের পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করতে হয় তার নিজস্ব চিন্তা-ভাবনাকে কেন্দ্র করে। তারপরও বিশ্ব কল্যাণের জন্য, পারস্পরিক সৌহার্দ ও সম্প্রীতি বাড়ানোর জন্য উত্তম পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করা বাঞ্ছনীয়। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে কোনো দেশের প্রণীত পররাষ্ট্রনীতি যেন আর একটি দেশের স্বার্থে আঘাত না করে। নিচে উত্তম পররাষ্ট্রনীতির বৈশিষ্ট্যসমূহ তুলে ধরা হলো:

১. উত্তম পররাষ্ট্রনীতির বৈশিষ্ট্য হলো স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, ভৌগোলিক অখণ্ডতা বজায় রাখা এবং দ্বিপক্ষীয় যত সমস্যা আছে তার সমাধান করা। তাছাড়া প্রতিবেশী দেশ যদি কোনো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয় তার সমাধান করা। যেমন: আমরা বর্তমানে তিস্তা নিয়ে যে সমস্যায় আছি ভারতের উচিত তার আশু সমাধান করা।

পররাষ্ট্রনীতি কি

২. মুক্তবাজার অর্থনীতি ও বিশ্বায়নের যুগে কারো সাথে খারাপ সম্পর্ক বা কাউকে অবহেলা করে টিকে থাকা যাবে না। তাই উত্তম পররাষ্ট্রনীতিতে সবার সাথেই বন্ধুত্ব এবং কারোর সাথেই শত্রুতা নয় এমন নীতি অনুসরণ করতে হবে।

৩. পররাষ্ট্রনীতির আর একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা, কারণ পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতা ছাড়া নিজেদেরও উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। তাই সকলের সাথে মতপার্থক্য দূর করে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা উত্তম পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

পররাষ্ট্রনীতি কি

৪. পররাষ্ট্রনীতি এমনভাবে সাজাতে হবে যেন পারস্পরিক শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্ন না ঘটে। কারণ মনে রাখতে হবে প্রতিবেশী দেশ যদি অস্থিতিশীল হয় তবে সেই দেশটিও অস্থিতিশীল হবে। তাই নিজেদের শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থেই প্রতিবেশীর শান্তি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ কোনো কারণে যদি বাংলাদেশ অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে তাহলে এর প্রভাব মিয়ানমারেও পড়বে।

পররাষ্ট্রনীতি কি

৫. পররাষ্ট্রনীতির আর একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হলো যেন কোনো প্রকার জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দিয়ে না ওঠতে পারে সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকা। কারণ জঙ্গিবাদ একটি দেশের নিরাপত্তা বিঘ্ন করার জন্য যথেষ্ট। তাই এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।

৬. প্রত্যেক রাষ্ট্রে পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়নের উদ্দেশ্যে সংগৃহীত তথ্য ও উপাত্তের বিশ্লেষণ প্রয়োজন। সব রাষ্ট্রেই এ কাজের জন্য পৃথক সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থা রয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের চরিত্র ও প্রকৃতি পূর্বের তুলনায় অনেক জটিল ও গভীর হয়েছে। এর পরিণামে তথ্য বিশ্লেষণের কাজটিও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছে। 

এছাড়া বর্তমান বিশ্বে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। গণমাধ্যমগুলো যেমন একদিকে হতে পারে মুদ্রণযন্ত্রনির্ভর আবার হতে পারে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থানির্ভর। গণমাধ্যমের ব্যবহারের ফলে আজকাল বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে সংঘটিত কোনো ঘটনা অত্যন্ত দ্রুততার সাথে পৃথিবীর সর্বত্র পৌঁছে যায়। তাই উত্তম পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়নে উপর্যুক্ত বিষয়সমূহের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া অত্যন্ত আবশ্যক।

উপসংহার:

বর্তমান বহু মেরুকেন্দ্রিক বিশ্বে পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন বিরাট সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়ছে। যেমন: আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপানকে পাশ কাটিয়ে পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করা সম্ভব নয়। তাছাড়া এসব দেশসমূহ অর্থনীতির চাবিকাঠি হিসেবে পরিগণিত। তাই তারা যেমন পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করতে বলে, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তেমন পরাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করতে হয়। বহু মেরুকেন্দ্রিক বিশ্বেও যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাকে কেউ ছোট করে দেখে না। তাই প্রতিটি দেশই তাদের পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়নে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়। তাই উত্তম পররাষ্ট্রনীতি ইচ্ছা থাকলেও প্রণয়ন করা সম্ভব নয়।

Post a Comment

Previous Post Next Post