আল কুরআন বলতে কী বুঝায়? আল হাদিস কাকে বলে? আল হাদিস সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

আল কুরআন বলতে কী বুঝায়?

আল কুরআন বলতে কী বুঝায়? আল হাদিস কাকে বলে? আল হাদিস সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।


ইসলামি শরিয়াহ বা আইনের প্রধান উৎস হলো আল কুরআন। এটি প্রধান চারটি আসমানি কিতাবের মধ্যে সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ। বিশ্বনবি ও সর্বশেষ নবি হযরত মুহম্মদ (সা.) এর ওপর ৬১০ থেকে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মোট ২৩ বছরে আল কুরআন অবতীর্ণ হয়।


আল কুরআনের পরিচয় : নিম্নে আল কুরআনের পরিচয় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :


১. আভিধানিক অর্থ : কুরআন শব্দটি আরবি। এটি আরবি 'কারাআ' শব্দ থেকে উৎপত্তি হয়েছে। এর শাব্দিক অর্থ পঠিত, পাঠ করা, আবৃত্তি। এটি সবার পড়া উচিত বা বেশি বেশি পঠিত হয়, এ কারণে এ গ্রন্থকে আল কুরআন বলা হয়।

 ২. পারিভাষিক অর্থ : পারিভাষিক অর্থে মহান আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক ইসলামের সর্বশেষ নবি হযরত মুহম্মদ (সা.) এর ওপর যে কিতাব বা গ্রন্থ নাজিল করা হয় তাই আল কুরআন নামে পরিচিত। অন্যভাবে বলা যায়, হযরত জিবরাইল (আ.) এর মাধ্যমে মহানবি (সা.) এর নিকট মৌখিকভাবে বর্ণিত আয়াতসমূহকে একত্রে আল কুরআন বলা হয়।



৩. অন্যান্য নাম : আল কুরআনের অনেকগুলো নাম রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আল কিতাব, কালামুল্লাহ, আফুরকান, আত তানজিল, আল হুদা, আন নুর, আল হক ও আর রহমত।

৪. আলোচ্য বিষয়: আল কুরআনের মূল আলোচ্য বিষয় হলো মানুষ। মানুষের সামগ্রিক জীবনের সকল সমাধানের বিষয়ে এখানে আলোচনা করা হয়েছে।

৫. অবতীর্ণ হওয়ার সময়কাল: আল কুরআন একদিনে অবতীর্ণ হয়নি। দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে প্রয়োজন অনুসারে আল কুরআন অবতীর্ণ হয়। এটি অবতীর্ণ হওয়া শুরু হয় ৬১০ খ্রিস্টাব্দে আর শেষ হয় ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে।

 


পরিশেষে বলা যায় যে, মানবজাতির একমাত্র মুক্তির পথ হচ্ছে ইসলামের অনুসরণ। আর ইসলামের মূল উৎস হলো আল কুরআন। এটি পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। এর বিধানসমূহ অপরিবর্তনীয় ও চিরস্থায়ী। আল কুরআনে পরিবর্তনের বা সংযোজনের কোনো সুযোগ নেই।

 

* আল হাদিস কাকে বলে? আল হাদিস সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।


ইসলামি আইন বা শরিয়তের দ্বিতীয় প্রধান উৎস হলো আল হাদিস। মহানবি (সা.) আরাফাতের ময়দানে বিদায় হজের ভাষণের সময় ঘোষণা করেছিলেন আল কুরআন ও আল হাদিসকে মানবজাতি যতদিন আকড়ে ধরে রাখবে ততদিন পথভ্রষ্ট হবে না। ইসলামি আইনশাস্ত্রে আল হাদিস অত্যন্ত গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহন করে।

* আল হাদিস: নিম্নে আল হাদিস সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:



১. আভিধানিক পরিচয়: হাদিস আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ বাণী, কথা, বার্তা, বিবৃতি ইত্যাদি।

২. পারিভাষিক পরিচয়: পরিভাষায় রাসুল (সা.) এর কথা, কাজ ও মৌন সম্মতিকে হাদিস বলা হয়। সাহাবিদের কথাকেও হাদিসের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

৩. আল হাদিসের নামকরণ: রাসুল (সা.) স্বয়ং এর নামকরণ করেছেন আল হাদিস। রাসুল (সা.) এর বাণী এবং অন্যান্য লোকের কথার মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণের জন্য এ নামকরণ করা হয়েছিল।

৪. আল হাদিসের অংশ : প্রতিটি হাদিসের দুটি অংশ থাকে। এগুলো হলো ইসনাদ বা সনদ (সমর্থন) ও মতন বা সারবস্তু।



ইসনাদ বা সনদ হলো হাদিসের প্রথম অংশ। যারা পরস্পরের নিকট হাদিসের সারাংশ পৌঁছে দেন এতে তাদের নাম সন্নিবেশিত হয়েছে। আর মতন হলো হাদিসের মূল অংশ।

৫. আল হাদিস বর্ণনাকারী: হাদিস বর্ণনাকারীকে রাবি বলা হয়। অসংখ্য সাহাবি আল হাদিস বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে আবু হুরায়রা (রা.) সর্বোচ্চ হাদিস বর্ণনা করেছেন।

 


পরিশেষে বলা যায় যে, মহানবি হযরত মুহম্মদ (সা.) এর মুখ নিঃসৃত বাণীই হলো আল হাদিস। আল হাদিসের মাধ্যমে আল কুরআনের মূলনীতিগুলোর সুষ্ঠু ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের প্রয়োগ হয়। আল হাদিস শব্দটির সাথে সুন্নাহ শব্দটি গভীরভাবে সম্পর্কিত। সর্বোপরি বলা যায় যে, ইসলামের উৎস হিসেবে আল হাদিসের গুরুত্ব অপরিসীম।

Post a Comment

Previous Post Next Post