অর্থের কার্যাবলী লিখ। অর্থের কার্যাবলি ব্যাখ্যা কর। অথবা, অর্থের কার্যাবলি বর্ণনা কর।
দ্রব্য বিনিময়ের অসুবিধা দূর করার জন্য অর্থের প্রচলন হয়। পরবর্তী সময়ে এর কার্যাবলির প্রসারণ হয়। বিভিন্ন সময়ে অর্থনীতিবিদরা অর্থের বিভিন্ন কাজ উল্লেখ করেন। অধ্যাপক David Kinley অর্থের কাজ তিন অংশে ভাগ করেন। প্রাথমিক কাজ, মাধ্যমিক কাজ এবং সহায়ক কাজ।
Table of Contents
অর্থের কার্যাবলি :
প্রাথমিক কাজ বলতে তিনি অর্থকে বিনিময়ের মাধ্যম এবং মূল্যের পরিমাপক হিসেবে বিবেচনা করেন। অর্থের মাধ্যমিক কাজ হিসেবে মূল্যের ভান্ডার এবং সংগতি লেনদেনের মান নির্ণায়ক বিবেচনা করা হয়। সহায়ক তারল্য, আয় বণ্টন ইত্যাদির আকারে হয়। আধুনিক অর্থনীতিবিদরা অর্থের কাজকে দুই অংশে ভাগ করেন।
।i.স্থিতিশীল কাজ এবং
ii. গতিশীল কজ।
ক. অর্থের স্থিতিশীল কার্যাবলি অর্থের স্থিতিশীল কাজকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়-
১. বাণিজ্যিক কাজ,
২. সামাজিক কাজ এবং
৩. মনস্তাত্ত্বিক কাজ।
বাণিজ্যিক কাজের মধ্যে আছে:
১. বিনিময়ের মাধ্যম,
২. মূল্যের পরিমাপক,
৩. মূল্যের সংরক্ষক এবং
৪. স্থগিত লেনদেনের মান নির্ণায়ক।
১. বিনিময়ের মাধ্যম:
অর্থ বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। অর্থের গুরুত্ব এর প্রাথমিক কাজের মধ্যে নিহিত। কারণ সমাজে দ্রব্যের লেনদেন এবং ঋণ পরিশোধের মাধ্যম হিসেবে অর্থের ব্যবহার হয়। বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে মুদ্রার প্রচলন হওয়ায় দ্রব্য বিনিময়ের অসুবিধা দূর হয়।
মানুষ তার বুচি, অভ্যাস ও চাহিদার অনুযায়ী দ্রব্য অল্প সময়ে সহজে লেনদেন করতে পারছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যদি দ্রব্যের সংখ্যা 100 থেকে অর্থাৎ অর্থের n = 100 হবে তবে দ্রব্য বিনিময়ের অধীনে এদের লেনদেনের জন্য 100 (1001)/2 = 4950টি বিনিময় অনুপাত বা আপেক্ষিক মূল্যানুপাত প্রয়োজন হবে।
অর্থ থাকলে একই কাজের জন্য মাত্র 100টি বিনিময় অনুপাত দরকার। এ অবস্থায় n (n-1)/2 সংখ্যক বিনিময় অনুপাত দরকার। অর্থের নিজের উপযোগ নেই। কোনো অভ্যাস নিজে সরাসরি পূরণ করতে না পারলেও দ্রব্য ও সেবার ক্রয়ক্ষমতা আছে বলে এটি মানুষের অভাব পূরণে সাহায্য করে।
বিনিময়ের মাধ্যম
হিসেবে অর্থ ক্রেতা এবং বিক্রেতার মধ্যে লেনদেনের জন্য প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করে। বিনিয়োগ,
বণ্টন, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ইত্যাদির উন্নয়ন এবং প্রসারণে বিনিময়ের মাধ্যম
হিসেবে অর্থের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
২. মূল্যের পরিমাপক:
অর্থ দ্রব্যমূল্যের পরিমাপক বা হিসাবের একক হিসেবে কাজ করে। তবে হিসাব রাখার উত্তম মাধ্যম হলো অর্থ। অর্থনীতিতে বিভিন্ন লেনদেন, বিভিন্ন কাজকর্ম, পণ্যের মূল্য, আয়, ব্যয় ইত্যাদি পরিমাপের জন্য কোনো সাধারণ পরিমাপক দরকার। অর্থ এ ভূমিকা পালন করে।
বর্তমানে প্রতিটি জিনিসের মূল্য অর্থের
মাধ্যমে পরিমাপ করা হয়। ফলে অতি সহজেই এদের হিসাব রক্ষা করা সম্ভব। এর সাহায্যে প্রয়োজনীয়
আর্থিক বিবরণী সহজে তৈরি করা যায়। এ বিবরণী ব্যবসায়ীদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। কারণ
এর সাহায্যে ব্যবসা বাণিজ্যের লাভ-লোকসানের হিসাব সহজে জানা সম্ভব। বস্তুগত ইনভেনটরির
আকারে হিসাব রাখা হলে ব্যবসায়ীদের পক্ষে লাভ-লোকসান পরিমাপ করা অত্যন্ত কঠিন।
মূল্যের পরিমাপক বা হিসাবের একক হিসেবে অর্থ পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে। আবার পণ্যের বিনিময় হার ঠিক করে। পরিমাপের মানদণ্ড হিসেবে অর্থ দ্রব্য, সেবা ও সম্পদের গুরুত্ব সম্পর্কে দিকনির্দেশ করতে পারে। এটি অন্য কোনো পরিমাপকের চেয়ে তুলনাবিহীন। কারণ সময়, গজ ইত্যাদি পরিমাপক স্থির থাকে। কিন্তু অর্থ স্থির পরিমাপক নয়।
কারণ দ্রব্যের পরিবর্তন হলে অর্থের মূল্যের পরিবর্তন হয়। তবে পরিবর্তনশীল হলেও মূল্যের পরিমাপক হিসেবে প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। মূল্য বা হিসাবের পরিমাপক হিসেবে অর্থ না থাকলে বর্তমান সভ্যতার বিকাশ ঘটত না।
উৎপাদন ক্ষেত্রে বর্তমানে যে বিশেষায়ন লক্ষ্য করা যায় তার জন্য দরকার বিনিময়ের প্রসারণ। অর্থকে হিসাবের একক বলে গ্রহণ করলে বিনিময়ের উন্নয়ন এবং প্রসারণ সম্ভব যা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
অধ্যাপক E. S. Klise এর মতে বলা যায়, "পরিবর্তনশীল হলেও মূল্যের পরিমাপক হিসেবে অর্থের উপযোগিতা অনস্বীকার্য। দৈনন্দিন জীবনে অর্থ এত বেশি ব্যবহার হয় যে আমরা এর উপযোগিতা অনুভব করতে পারি না।
অর্থ ছাড়া আধুনিক সভ্যতার উন্নয়ন ঘটত না এবং বজায় রাখাও সম্ভব নয়। বর্তমান যুগ বিশেষায়নের যুগ। বিশেষায়নের জন্য দরকার উন্নত বিনিময় ব্যবস্থা। এরূপ বিনিময় ব্যবস্থা সঙ্গচেয়ে কম সময় ও কম খরচে অর্থ ব্যবহারের মাধ্যমে গড়ে উঠতে পারে।
অর্থের সবচেয়ে বড় অবদান হলো দ্রব্য বিনিময়ের
অসুবিধা দূর করা। অর্থ সব দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ করতে পারে। ফলে বিভিন্ন দ্রব্যের
আপেক্ষিক মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, n সংখ্যক পণ্যের মধ্যে বিনিময়
নির্ধারণের জন্য দ্রব্য বিনিময়ের অধীনে n(n-1)/2 সংখ্যক আপেক্ষিক মূল্য নির্ধারণ প্রয়োজন। অথচ মুদ্রা অর্থনীতিতে n সংখ্যক মূল্য নির্ধারণ করলেই চলে।
৩. মূল্যের সংরক্ষক:
বিভিন্ন সম্পদের মাধ্যমে মানুষ ক্রয়ক্ষমতা ধরে রাখতে পারে না। অর্থ, স্টক এবং অপরাপর আর্থিক সম্পদ হলো ক্রয়ক্ষমতা ধরে রাখার বিভিন্ন মাধ্যম। মানুষের অভ্যাস, প্রত্যাশা, মূল্য ইত্যাদি পরিবর্তন হলে তাদের কাছে রাখা বিভিন্ন সম্পদের অনুপাতের পরিবর্তন হয়।
অর্থ 'হলো সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সম্পদ। এর মাধ্যমে ব্যবসায়ী ও সঞ্চয়কারী ভবিষ্যৎ ক্রয়ক্ষমতা অনেকটা স্থিতিশীল ও নিরাপদ ধরে রাখতে পারে। অর্থ সবচেয়ে তরল সম্পদ। অর্থের বিনিময়ে দ্রব্য ও সেবা দ্রুত ক্রয় করা যায় যা অন্য সম্পদের সাহায্যে করা সময়সাপেক্ষ।
অর্থ মূল্যের সংরক্ষক হিসেবে কাজ করে।
ক্রয়ক্ষমতার আকারে ভবিষ্যতের জন্য অর্থ ধরে রাখা সম্ভব। বিভিন্ন সময়ে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে
ব্যবসা বাণিজ্য, বিনিয়োগ ইত্যাদি কাজের জন্য অর্থকে মূল্যের সংরক্ষক হিসেবে ব্যবহার
করা যায়। এজন্য মিন্টন ফ্রিডম্যান অর্থকে "Temporary abode of purchasing
power" বলেন।
ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদরা মূল্যমানের সঞ্চয় হিসেবে অর্থের ভূমিকা স্বীকার করেননি। Alfred Marshall ছাড়া অপরাপর নয়া-ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদ বিভিন্ন সম্পদ অর্থের আকারে ধরে রাখার সুবিধা বিবেচনা করেননি।
মূল্যের
সংরক্ষক হিসেবে অর্থের ভূমিকার ওপর প্রথম গুরুত্বারোপ করেন J. M. Keynes। তিনি তারল্য
পছন্দ ধারণা প্রবর্তন করে অর্থের এ দিকের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এরপর অর্থের এ কাজ
সবাই গুরুত্বপূর্ণ বলে স্বীকার করেন।
৪. স্থগিত লেনদেনের মান নির্ধারক:
অর্থ ভবিষ্যৎ
লেনদেন মিটানোর মানদণ্ড হিসেবে কাজ করে। অর্থ স্থগিত দেনা পাওনা নির্ধারণ করে অর্থনৈতিক
কাজ ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে। বিভিন্ন দেশে ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধের জন্য অর্থ ব্যাপকভাবে
ব্যবহৃত হয়।
খ. সামাজিক কার্যাবলি:
অর্থ লেনদেনের
মাধ্যম হিসেবে শুধু বাণিজ্য নয়, এমন অনেক দায়িত্ব পালনে মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা করে।
উদাহরণ হিসেবে উপহার, জরিমানা, কর, সাহায্য ইত্যাদি উল্লেখ করা যায়। অর্থ বিভিন্ন লোকের
মধ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বন্ধন সৃষ্টি করে।
গ. মনস্তাত্ত্বিক কার্যাবলি:
ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
এ কারণে অর্থ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানুষের ব্যয় আচরণ প্রভাবিত করতে পারে। 'টাকার
মায়া' অর্থের মনস্তাত্ত্বিক কাজের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত বলে মানুষ সম্পদের
একাংশ তরল আকারে রাখতে চায়। সবচেয়ে তরল সম্পদ হিসেবে অর্থ এরূপ আশা পূরণ করতে পারে।
ঘ. মুদ্রার গতিশীল কার্যাবলি:
আধুনিক অর্থনীতিবিদরা
মনে করেন অর্থ উৎপাদন, ব্যবসা বাণিজ্য, ভোগ, বণ্টন, আয়, মূল্যের পরিবর্তন ইত্যাদির
ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অর্থের গতিশীল কার্যাবলি এসব উপাদানের ওপর
প্রভাব সৃষ্টি করে। নিম্নে মুদ্রার কার্যাবলি আলোচনা করা হলো:
প্রথমত: অর্থ সুষ্ঠুভাবে
ব্যবহার হলে উৎপাদন, নিয়োগ এবং ভোগ বেড়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। বিপরীত অবস্থায়
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
দ্বিতীয়ত: অর্থ সম্পদ এবং
দ্রব্য বণ্টনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে থাকে। সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার হলে সমাজে আয় বণ্টনের
বৈষম্য দূরীকরণে অর্থ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। আবার অপরিকল্পিতভাবে ব্যবহার
করলে সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টি করতে পারে।
তৃতীয়ত: অনেক দেশে অতিরিক্ত
সরকারি ব্যয় মিটানোর জন্য কর রাজস্ব যথেষ্ট নয়। আবার জনগণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ গ্রহণের
তেমন সুযোগ নেই। এ অবস্থায় সরকার নতুন মুদ্রার ওপর নির্ভর করতে পারে।
চতুর্থত: অর্থ সাধারণ
মূল্য প্রভাবিত করতে পারে। অর্থ মন্দা ও তেজিভাব সৃষ্টি করে সামাজিক কল্যাণ প্রভাবিত
করতে পারে। অর্থের স্থিতিশীল এবং গতিশীল কাজ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, সাধারণ অবস্থায়
প্রথম কাজ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আর্থিক নীতি প্রণয়নে গতিশীল কাজ গুরুত্বসহকারে
বিবেচনা করতে হয়। ব্যক্তির বেলায় স্থিতিশীল কাজ গুরুত্বপূর্ণ হলেও জাতীয় দিক থেকে গতিশীল
কাজ বেশি গুরুত্বের দাবিদার।
ঙ. অর্থের সহায়ক সম্পূরক কার্যাবলি:
অর্থ কিছু সহায়ক কাজ সম্পাদন করে অধ্যাপক David Kinley তার 'Money' বইতে। এদেরকে সম্পূরক কাজ বলে উল্লেখ করেন। জনগণের জীবনযাত্রার স্তর অনুযায়ী এসব কাজের সৃষ্টি হয়। এজন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্তর যত বেশি হয় এসব কাজের গুরুত্ব তত বেশি হয়। ডেভিড কিনলে অর্থের ৪টি কাজ তার সহায়ক বইতে উল্লেখ করেন। যথা:
১. মূলধনের গতিশীলতা এবং তারল্য বৃদ্ধির সহায়ক,
২. ব্যয় ক্ষেত্রে প্রান্তিক উপযোগের সমতা বিধান,
৩. সামাজিক আয় বণ্টন এবং
৪. ঋণ ব্যবস্থার ভিত্তি।
১. মূলধনের গতিশীলতা এবং তারল্য বৃদ্ধির সহায়ক:
অর্থের মূল্য থাকায় এটি মূলধনের গতিশীলতা এবং তারল্য বাড়াতে পারে। নগদ অর্থ সম্পদের একত্ব তুলে ধরতে পারে। সম্পদ নগদ অর্থে রূপান্তর হলে এর তারল্য এবং গতিশীলতা বাড়ে। অপরাপর সম্পদের তুলনায় অর্থের মালিক বেশি সামাজিক এবং অর্থনৈতিক শক্তি অর্জন করে। কারণ অর্থের সাহায্যে সব ধরনের দ্রব্য ও সেবার ওপর তার নিয়ন্ত্রণ বাড়ে।
২. ব্যয় ক্ষেত্রে প্রান্তিক উপযোগের সমতা বিধান:
প্রতিযোগী ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিমাণে অর্থ বণ্টন বা ব্যবহার
করা যায়। এ বণ্টন বা ব্যবহারের আলোকে দ্রব্যের ওপর ব্যয়ের প্রান্তিক উপযোগ পরিমাপ করা
সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সর্বোচ্চ তৃপ্তি পাওয়ার জন্য ভোক্তা তার অর্থ বিভিন্ন
ক্ষেত্রে এমনভাবে ব্যয় করে যাতে প্রতি একক অর্থের প্রান্তিক উপযোগ সমান হয়। অনুরূপভাবে
অর্থ উৎপাদককে আয় সর্বোচ্চকরণে সহায়তা করতে পারে। কারণ উৎপাদক বিভিন্ন উপকরণের মধ্যে
এমনভাবে বিকল্পন করবে যাতে এদের প্রান্তিক উৎপাদন সমান হয়।
৩. সামাজিক আয় বণ্টন:
বিভিন্ন উপকরণের
মধ্যে জাতীয় আয় বণ্টনে অর্থ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বিশেষায়িত উৎপাদন ব্যবস্থায় লক্ষ
লক্ষ শ্রমিক জমির মালিক। পুঁজিপতি এবং উদ্যোক্তা প্রয়োজন। উৎপাদনের ওপর এভাবে যৌথমালিকানা
নির্ধারিত হয়। উৎপাদিত পণ্য হলো জাতীয় আয়। অর্থের সাহায্য ছাড়া উপকরণের মধ্যে এর বণ্টন
করা সম্ভব। অর্থ এক্ষেত্রে শুধু বন্টনের কাজ সহজ করে না, উপরন্ত ন্যায্য বণ্টনে সহায়তা
করতে পারে।
৪. ঋণ ব্যবস্থার ভিত্তি:
মুদ্রা আধুনিক
ঋণের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। বাণিজ্যিক ব্যাংক নগদ রিজার্ভের ভিত্তিতে ঋণ সৃষ্টি করে।
ঋণের ভিত্তি হলো অর্থ। প্রায় সব ঋণ অর্থের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। ঋণ আধুনিক ব্যবসা বাণিজ্যের
ভিত্তি। এজন্য আধুনিক অর্থ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঋণের পরিবর্তন
অর্থের পরিবর্তনের মাধ্যমে হয়ে থাকে।
উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়
যে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্তর যতবেশি হয় অর্থের সহায়ক কাজের গুরুত্ব তত বেশি হয়। আসলে
Kinley যেসব কাজকে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিবেচনা করেন আধুনিক অর্থনীতিবিদরা তাকে স্থিতিশীল
কাজ বলে। অন্যদিকে সহায়ক কাজকে গতিশীল বলে চিহ্নিত করেন। তবে স্থিতিশীল কাজের মধ্যে
তার অর্থের সামাজিক এবং মনস্তাত্ত্বিক কাজ অন্তর্ভুক্ত করেন।