ইসলাম কী? ইসলামের মৌলিক ভিত্তিসমূহ আলোচনা কর।

 

ইসলাম কী? ইসলামের মৌলিক ভিত্তিসমূহ আলোচনা কর।

ইসলাম কী? ইসলামের মৌলিক ভিত্তিসমূহ আলোচনা কর।


ইসলাম মানবজাতির জন্য আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। মানবজীবনের যাবতীয় সমস্যার সমাধান ইসলামে রয়েছে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ওপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করে তাঁর কাছে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে বিলিয়ে দেওয়া এবং নির্দ্বিধায় তাঁর যাবতীয় আদেশ নিষেধ ও বিধিবিধান মেনে চলার নামই ইসলাম। ইসলাম পাঁচটি মৌলিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। যিনি এ পাঁচটি ভিত্তিসহ ইসলামের যাবতীয় বিধিবিধান মেনে চলেন তিনিই মুসলিম।


* ইসলাম: 

ইসলাম শব্দটি আরবি। এর অর্থ আনুগত্য, আত্মসমর্পণ করা, বশ্যতা স্বীকার করা, গ্রহণ করা, মেনে নেওয়া ইত্যাদি। ইসলামের পরিচয় দিয়ে রাসুল (সা.) বলেছেন, "ইসলাম হলো এ সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই ও মুহম্মদ (সা.) আল্লাহর প্রেরিত রাসুল, সালাত কায়েম করা, জাকাত প্রদান করা, রমজানের রোজা রাখা এবং যাতায়াতের সামর্থ্য থাকলে বায়তুল্লাহ শরিফে হজ আদায় করা।"

মোটকথা, রাসুল (সা.) যা কিছু নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ করার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা, কালেমায়ে শাহাদত উচ্চারণ করা এবং ওয়াজিব কাজসমূহ বাস্তবায়ন করা ও অপছন্দনীয় কাজসমূহ বর্জন করাকে ইসলাম বলে।


প্রামাণ্য সংজ্ঞা:

আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি বলেছেন, "কালেমা শাহাদতের মাধ্যমে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) কে স্বীকার করে আল্লাহর নির্দেশিত কার্যাবলি সম্পাদন ও নিষিদ্ধ কার্যাবলি থেকে বিরত থাকার নাম ইসলাম।"

আল্লামা মওদুদি বলেছেন, "আল্লাহর আনুগত্য ও তাঁর বশ্যতা স্বীকার করে নেওয়া যে ধর্মের লক্ষ্য তাকে ইসলাম বলে।

ইমাম আবু হানিফা বলেন, "ইসলাম হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশসমূহ মেনে নেওয়া এবং সেগুলো অনুসরণ করা।"

আল মুজামুল ওয়াসিত গ্রন্থকার বলেন, "হযরত মুহগাদ (সা.) যা কিছু নিয়ে এসেছেন তার প্রতি বিনয় প্রকাশ করা ও এটি গ্রহণ করাকে ইসলাম বলে।"


* ইসলামের মৌলিক ভিত্তিসমূহ: 

ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেছেন, পাঁচটি বিষয়ের ওপর ইসলাম প্রতিষ্ঠিত- আল্লাহ তায়ালা এবং মুহম্মদ (সা.) এর প্রতি ইমান আনা, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা, রমজানে রোজা রাখা, জাকাত আদায় করা এবং, হজ পালন করা। এগুলোকে একত্রে আরকানুল ইসলাম অর্থাৎ ইসলামের ভিত্তি বা স্তম্ভ বলা হয়। নিয়ে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:



১. ইমান: 

ইমান অর্থ বিশ্বাস। এটি ইসলামের প্রধান এবং অন্যতম স্তম্ভ। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহতে, তাঁর রাসুলে, তিনি যে কিতাব তাঁর রাসুলের প্রতি অবতীর্ণ করেছেন তাতে এবং যে কিতাব তিনি পূর্বে অবতীর্ণ করেছেন তাতে ইমান আনো এবং কেউ আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, 'তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসুলগণ এবং আখিরাতকে প্রত্যাখ্যান করলে সে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। (সুরা আন-নিসা, আয়াত: ১৩৬)

 

২. সালাত: 

সালাত শব্দটি আরবি। মুমিন ব্যক্তির প্রথম ফরজ বিধান হলো সালাত বা নামাজ। ইমান দ্বারা আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং সালাত দ্বারা সে সম্পর্ক সুদৃঢ় ও সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে বান্দার সরাসরি সাক্ষাৎ ও আলাপ হয়। এজন্য সালাতকে মুমিনের মিরাজ বলা হয়। এ ইবাদত পালনের মাধ্যমে মানুষ আধ্যাত্মিক সফলতার চরম শিখরে উপনীত হতে পারে। মানুষকে সব ধরনের অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে সালাত।


৩. সাওম: 

সাওম শব্দটি আরবি। ফারসি ভাষায় একে রোজা বলা হয়। আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে ফজর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, যৌন সম্ভোগ এবং যাবতীয় অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকার নামই সাওম। সাওম পালনের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। দুনিয়াতে যারা সাওম পালন করবে আখিরাতে তাদেরকে দোজখের আগুন থেকে রক্ষা করবে। এ প্রসঙ্গে হাদিসের এক বর্ণনায় এসেছে, সাওম হলো ঢাল ও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার মজবুত দুর্গ। (আহমাদ, আল-মুসনাদ: ৯২১৪) 

৪. হজ: 

হজ শব্দটি আরবি। এর আভিধানিক অর্থ ইচ্ছা, সংকল্প, জিয়ারত বা সাক্ষাৎ। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে, নির্ধারিত নিয়মে কাবা ঘর ও সংশ্লিষ্ট স্থানসমূহ জিয়ারত করাকে হজ বলে। হজ মুসলিম উম্মাহর বিশ্ব সম্মেলন এবং ইসলামি ঐক্যের প্রতীক। হজে রাজা-প্রজা, ধনী-দরিদ্র, শিক্ষিত ও অশিক্ষিত সকল মুসলিম উম্মাহর মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকে না। ইহরাম অবস্থায় সাদা কাপড় পরিহিত লক্ষ লক্ষ মানুষ একই উদ্দেশ্যে সমবেত হয়। ভাষা ও বর্ণে ব্যবধান থাকলেও হজের সময় পরস্পর পরস্পরকে আলিঙ্গন করে এবং হাতে হাত মিলিয়ে পরিতৃপ্তি লাভ করে।

৫. জাকাত: 

জাকাত শব্দটি আরবি। এর আভিধানিক অর্থ প্রবৃদ্ধি, পরিশুদ্ধি, কোনো জিনিসের উত্তম অংশ ইত্যাদি। পরিভাষায় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট খাতে সম্পদের নির্ধারিত অংশের স্বত্ব অর্পণ করাকে জাকাত বলে।



উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ইসলাম হচ্ছে বিশ্বপ্রভু মহান আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক মনোনীত একমাত্র শাশ্বত জীবনদর্শন। মানবজীবনে ইসলামের মৌলিক ভিত্তিগুলো বাস্তবায়নের ফলে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণ সাধিত হয়। আর এ ভিত্তিগুলোর কোনো একটিকে অস্বীকার করলে মানুষ কাফির হয়ে যায়। ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের পাশাপাশি সামগ্রিক বিধিবিধান মেনে চলা প্রত্যেক মুসলমানদের জন্য আবশ্যক কর্তব্য।


Post a Comment

Previous Post Next Post