ভিটামিন কি? ভিটামিন কত প্রকার ও কি কি?
ভিটামিন এক বিশেষ ধরনের জৈব যৌগ যা প্রাণীদেহে
খুব অল্প পরিমাণে প্রয়োজন কিন্তু এর অভাবে দেহের স্বাভাবিক কার্যকলাপে বিঘ্ন ঘটে ।
এরা বিপাকীয় জৈব প্রভাবকের ভূমিকা পালন করে। ভিটামিনসমূহ প্রত্যক্ষভাবে দেহ গঠনে অংশগ্রহণ
না করলেও এদের অভাবে দেহের ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধিসাধন বা দেহে তাপ ও শক্তি উৎপাদনের বিভিন্ন ক্রিয়াগুলো
সুসম্পন্ন হতে পারে না। জীবদেহের নানা অভ্যন্তরীণ ক্রিয়াকলাপ এদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত
হয়। এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ ধরনের ভিটামিনের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে । এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য
ভিটামিনগুলো হল A, D, E, K, B-কমপ্লেক্স, C-গোষ্ঠীভুক্ত অন্যান্য ভিটামিন এবং P ভিটামিন।
ভিটামিন কত প্রকার ও কি কি?
দ্রাব্যতার উপর ভিত্তি করে ভিটামিনকে দুই ভাগে
ভাগ করা হয়েছে। যথা:
ক. চর্বিতে দ্রবণীয়:
ভিটামিন এ (রেটিনল), ভিটামিন ডি (কেলসিফেরল)'' ভিটামিন ই (টোকোফেরল), ভিটামিন কে (ফাইলোকুইনন)।
খ. পানিতে দ্রবণীয়:
ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি (এসকরবিক এসিড)। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স কি কি নিয়ে
গঠিত?
ভিটামিন বি১, বি২,
বি৬, বিq, বি১২ ইত্যাদি নিয়ে গঠিত।
ভিটামিনের বৈশিষ্ট্যসমূহ
১। অধিকাংশ ভিটামিনসমূহ উদ্ভিদ দেহে সংশ্লেষিত
হয়।
২। উৎসেচক নিয়ন্ত্রিত জৈব
রাসায়নিক বিশ্লেষণে ভিটামিন সহঅনুঘটক হিসেবে কাজ করে।
৩। ভিটামিন সাধারণত উৎপত্তিস্থানে কাজ করে।
৪। জীবের বৃদ্ধিতে খুব অল্প পরিমাণে ভিটামিনের
প্রয়োজন হয়।
৫। ভিটামিন নন-এন্টিজেনিক।
৬। ভিটামিন অতি অল্প পরিমাণে কোষীয় বিপাকে অনুঘটক রূপে কাজ বা কোন রাসায়নিক বিক্রিয়া নির্দেশ করে।
ভিটামিন 'এ'
এর উৎস কি কি?
ভিটামিন 'এ'
এর রাসায়নিক নাম রেটিনল, উদ্ভিদ দেহে উৎপন্ন ক্যারোটিনয়েড জাতীয়
রঞ্জক পদার্থ থেকে প্রধানত ভিটামিন এ সংশ্লেষিত হয়। এরা এন্টিজেরোপথালমিক ভিটামিন
নামে পরিচিত ।
ভিটামিন এ এর উৎস : যকৃত, ডিমের কুসুম, কৈ মাছের তেল, লালশাক, ঘি, মাংস,
বাঁধাকপি, টমেটো, মিষ্টিকুমড়া প্রভৃতি ।
ভিটামিন 'এ'-এর কাজ
ক. ভিটামিন ‘এ’ দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক রাখে এবং
রক্তের স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখে। এটি দেহের পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
খ. চোখের রেটিনায় অবস্থিত রোডোপসিন নামক এক প্রকার রঞ্জক পদার্থ তৈরিতে ভিটামিন'এ' সহায়ক।
গ. ইহা এপিথেলিয়াল কোষের অখণ্ডতা রক্ষায় সহায়তা
করে।
ঘ.মানবদেহের যে কোন স্থানের ক্ষত প্রতিহত করে।
ঙ. কার্বোহাইড্রেট বিপাকে সহায়তা করে।
ভিটামিন 'এ'-এর অভাবজনিত ফলাফল
ক. ভিটামিন ‘এ’ -এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়; দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়; সর্দি, কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি বিভিন্ন রোগ দেখা দেয় ।
খ.এ ভিটামিনের অভাবে আবরণী কলার কোষগুলো ক্ষয়প্রাপ্ত
হতে থাকে। ফলে ত্বক ক্রমশ অমসৃণ ও শুষ্ক হয়ে উঠে ।
ভিটামিন 'সি' এর উপকারিতা কি?
সাধারণত ভিটামিন ‘সি’ টাটকা ফলমূল, শাকসবজি এবং টক জাতীয় ফলমূলে পাওয়া যায়। নিম্নে ভিটামিন ‘সি' এর উপকারিতা উল্লেখ করা হল :
i.
ভিটামিন 'সি' স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে ।
ii.
এটি দাঁত ও হাড়ের পুষ্টি সাধন করে।
iii.
রক্তের বিশুদ্ধতা ও স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখতে সহায়তা করে
।
iv.
পাকস্থলী সুস্থ রাখে এবং দেহের ক্ষয় নিবারণ করে ।
v.
বিভিন্ন রোগ জীবাণুর হাত থেকে দেহকে রক্ষা করে ।
vi.
কোমলতা ও সৌন্দর্য রক্ষা করে ত্বকের ।
ভিটামিন 'ডি'
এর উৎস কি?
ভিটামিন ‘ডি' এর রাসায়নিক নাম ক্যালসিফেরন। ভিটামিন ডি, সানসাইন ভিটামিন নামে পরিচিত। ভিটামিন 'ডি'
তেল বা চর্বিজাত দ্রব্য স্টেরয়েড পদার্থের জাত ।
ভিটামিন ডি এর উৎস :
ডিমের কুসুম, মাছের যকৃতের তেল, দুধ, মাখন, গরু ও খাসির কলিজা ইত্যাদি । এছাড়াও অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে
মানবদেহে ভিটামিন 'ডি' তৈরি হয় ৷
ভিটামিন 'ডি' এর কাজ কি?
ভিটামিন 'ডি'
এর কাজ :
ক. এই ভিটামিন দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটায়, হাড়কে শক্ত করে এবং বিকৃত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।
খ. এটি অন্ত্র হতে ক্যালসিয়াম আয়ন শোষণে সহায়তা
করে এবং হাড়ের ও রক্তের ক্যালসিয়াম আয়নের সমতা রক্ষা করে।
গ. দাঁত ওঠা ও অস্থি বৃদ্ধি সহায়তা করে ।
ঘ. দাঁতের স্বাভাবিক অবস্থা অক্ষুণ্ণ রাখতে এটি
অত্যন্ত কার্যকরী।
ভিটামিন 'ডি' -এর অভাবজনিত ফলাফল
ক. ভিটামিন ‘ডি’ -এর অভাবে শিশুদের রিকেটস রোগ
হয় । এ রোগে হাড় নরম হয় ও বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং দেহের ভারে বেঁকে যায় । অন্তঃসত্ত্বা
মায়েদের খাদ্যে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম না থাকলে সন্তানদের এ রোগের আশংকা থাকে ।
খ. দাঁতের গঠন ব্যাহত হয় এবং বয়স্কদের অস্টিওম্যালেসিয়া
রোগ হয়। ফলে বয়স্কদের হাড় হতে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস ক্ষয় হয়ে ক্রমশ দুর্বল ও নরম
হয়ে পড়ে।
গ. এ অভাবে শিশুদের মাথার সামনের দিক, হাতের কব্জি, পায়ের গোড়ালী মোটা হয়।
ঘ. ভিটামিন ‘ডি’ এর অভাবে ক্যালসিয়াম আয়ন এর কার্যাবলি বিঘ্নিত হয়। এর অভাবে শিশুদের দাঁত উঠতে বিলম্ব হয় ।
ভিটামিন 'ই' এর উৎস, কাজ ও অভাবজনিত ফলাফল লিখুন
ভিটামিন ‘ই’ এর রাসায়নিক নাম টোকোফেরল। একে এন্টিস্টেরিলিটি
ভিটামিনও বলা হয়। কয়েক প্রকার টোকোফেরল (আলফা, বিটা ) ভিটামিন 'ই' হিসেবে কাজ করে।
ভিটামিন 'ই' উৎস
দুধ, ডিম, মাছ, কলিজায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন 'ই' পাওয়া যায়। এছাড়াও
ছোলাবীজ,
মটরশুঁটি, শাকসবজি প্রভৃতিতেও
ভিটামিন 'ই' পাওয়া যায় ৷
ভিটামিন 'ই' কাজ
১। মাংসপেশীর গঠন যথাযথ রাখার জন্য ভিটামিন 'ই' অপরিহার্য।
২। ক্ষতস্থানে রক্তের জমাট বাঁধা, করোনারী থ্রম্বোসিস এর প্রতিষেধক হিসেবে ভিটামিন 'ই' কাজ করে ।
৩। পুষ্টি ও পুরুষের শুক্রাণু বিকাশে ভিটামিন 'ই' কার্যকরী।
ভিটামিন 'ই' এর অভাবজনিত ফলাফল
১। এর অভাবে মানবদেহের লোহিত রক্তকণিকাগুলোর ভাঙনের
প্রবণতা দেখা দেয়।
২। এ অভাবে প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং বন্ধ্যাত্ব
সৃষ্টি হয়।
৩। এর অভাবে পুরুষের শুক্রাণু ক্ষুদ্র হয় এবং
অকাল বার্ধক্য দেখা দেয় ।
ভিটামিন 'কে' এর উৎস, কাজ ও অভাবজনিত ফলাফল লিখুন।
ভিটামিন কে এর উৎস
সবুজ শাকপাতা, বাঁধাকপি, পালংশাক, শুটকি মাছ, টমেটো প্রভৃতিতে ভিটামিন 'কে' পাওয়া যায়। ভিটামিন কে এন্টিহোমোরেজ নামে পরিচিত।
ভিটামিন 'কে' এর কাজ
১। রক্তক্ষরণ বন্ধের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ
উপাদান ।
২। ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমে এই ভিটামিন
ব্যবহার করা হয়।
৩। মাইটোকন্ড্রিয়া ঝিল্লীতে জারণধর্মী ৪++ সংযোজনে সাহায্য করে ।
ভিটামিন 'কে' এর অভাবজনিত ফলাফল
১। এর অভাবে ক্ষতস্থান হতে ধারাবাহিকভাবে রক্তপাত
হতে থাকে ।
২। পিত্তের স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে ফলে জন্ডিসে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে ।
৩। রক্ত জমাট বাঁধতে সমস্যা দেখা যায়। কারণ ভিটামিন
'কে' জমাট বাঁধার সহায়ক
বস্তু তৈরিতে
সাহায্য করে।