স্টক এক্সচেঞ্জ বলতে কী বুঝ?বাংলাদেশের স্টক এক্সচেঞ্জের উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপ

 

স্টক এক্সচেঞ্জ বলতে কী বুঝ?

স্টক এক্সচেঞ্জ বলতে কী বুঝ?

স্টক এক্সচেঞ্জ বলতে এমন স্থান বা বাজার বুঝায় যেখানে জয়েন্ট স্টক কোম্পানি, সরকার এবং আধা সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঋণপত্রের লেনদেন হয়। ১৯৫৮ সালে ইন্ডিয়ান আইনে স্টক এক্সচেঞ্জ এর কথা বলা হয় ।

ইন্ডিয়ান আইনে স্টক এক্সচেঞ্জের সংজ্ঞা বলা হয়েছে, "Stockexchange means anybody of individuals, whether incorporated or not, constituted for the purpose of assisting or controlling the business of buying selling or dealing in securities." অর্থাৎ, স্টক এক্সচেঞ্জ হলো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত এক ধরনের সংঘ, যা ঋণপত্র ক্রয়, বিক্রয় অথবা লেনদেন সহায়তা বা নিয়ন্ত্রণের জন্য গঠন করে।

পরিশেষে বলা যায় যে, তালিকাভুক্ত না হলে স্টক এক্সচেঞ্জে কোনো কোম্পানির শেয়ার, বন্ড, ডিবেঞ্চার ইত্যাদি লেনদেন হয় না। তাছাড়া সদস্য ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি এ বাজারে শেয়ার লেনদেনে অংশগ্রহণ করতে পারে না।


 বাংলাদেশের স্টক এক্সচেঞ্জের উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপ :


যেসব সংস্কারমূলক কার্যক্রম এবং অপরাপর কার্যক্রম স্টক মার্কেট উন্নয়নে ত্বরান্বিত করছে তা সংক্ষেপে নিম্নে বর্ণনা করা সম্ভব :


১. কিছু সরকারি মালিকানাধীন সংস্থা থেকে পুঁজি প্রত্যাহার করে সেগুলো ব্যক্তিমালিকানায় হস্তান্তর এবং সরকারের শেয়ারের পরিমাণ কমানো হয় ।

২. সরকারি সঞ্চয় মাধ্যম এবং ব্যাংক আমানতের সুদের হার কমানো হয় ।

৩. কর্পোরেট কর কমানো শেয়ার ও ডিবেঞ্চার বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্জিত মূলধনি লাভের ওপর কর অব্যাহতি এবং ১০,০০০ টাকার বেশি লভ্যাংশ আয়ের ওপর থেকে কর বিলোপ ।

৪. সিকিউরিটি ও এক্সচেঞ্জে কমিশন গঠনের মাধ্যমে ঋণপত্র ইস্যু, মূলধন বাজারের নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন এবং ঋণপত্রে বিনিয়াগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয় নিশ্চিতকরণ

৫. নমনীয় বৈদেশিক বিনিময় হার চালু এবং চলতি লেনদেন হিসেবে টাকাকে বিনিময়যোগ্য হিসেবে ঘোষণা বিনিময় নিয়ন্ত্রণ শিথিল বিশেষ করে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মূলধন এবং ক্ষতি প্রত্যাবাসন আইন শিথিল করে ।

৬. সব ধরনের সুদের হার উন্মুক্তকরণ ।

৭. বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য অর্থনীতির সব খাত উন্মুক্ত হয় ।

উপরোক্ত সংস্কারমূলক কর্মসূচির পরও ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহ সৃষ্টির লক্ষ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ইতোমধ্যে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করছে যার উল্লেখযোগ্য দিক হলো :

ক. শেয়ারবাজারে সুযোগ সুবিধাসংক্রান্ত তথ্য ও বৈদেশিক বিনিময়সংবলিত প্রোফাইল প্রকাশ ।

খ. কম্পিউটারভিত্তিক তথ্য পদ্ধতি উন্নয়ন ।

গ. শেয়ারবাজারে মাসিক কাজের রিভিউ প্রকাশ করা ।

ঘ. ট্রেডিং কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে করার জন্য ট্রেডিং কক্ষে আরও ২টি বুথ চালু ।

ঙ. কোম্পানি সচিবদের প্রশিক্ষণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া ।

চ. ট্রেডিং অটোমশিনের ব্যাপারে টেন্ডার আহ্বান এবং অটোমেটেড ট্রেডিং চালু করার ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ ।

ছ. শেয়ারবাজারের দৈনন্দিন কার্যকলাপ রেডিও এবং টেলিভিশন মাধ্যমে সম্প্রচার করা ।

জ. বৈদেশিক বিনিয়োগে অকৃষ্ট করা ও বৈদেশিক বিনিয়োগে অংশগ্রহণ ।

ঝ. জনগণের মধ্যে শেয়ারবাজারের প্রতি সচেতনতা এবং আগ্রহ সৃষ্টি করা ।

 উপর্যুক্ত আলোচনার বলা যায় যে, বাংলাদেশে শেয়ারবাজার উন্নয়ন করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং আর কিছু পদক্ষেপের সুপারিশ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।


 বাংলাদেশে স্টক এক্সচেঞ্জের কার্যাবলি ব্যাখ্যা কর ।


উত্তর স্টক এক্সচেঞ্জ হলো ঋণপত্রের একটি মধ্যবর্তী বাজার যেখানে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার, ডিবেঞ্চার, বন্ড ইত্যাদি ক্রয়-বিক্রয় হয়। বাংলাদেশে বর্তমান দুটি স্টক একচেঞ্জ রয়েছে। এক মধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ স্বাধীনতার আগেই প্রতিষ্ঠিত হয়। অপরটি হলো চট্টগ্রাম স্টক এক্সেচেঞ্জ, যা পরে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। 

 স্টক এক্সচেঞ্জের কার্যাবলি : নিম্নে স্টক এক্সচেঞ্জের কার্যাবলি দেওয়া হলো :

 i. দুটি স্টক এক্সচেঞ্জ বিনিয়োগে আবদ্ধ মূলধন হস্তান্তর এবং তারল্য নিশ্চয়তা বিধান করছে। বলা যায় ঢাকা এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ ঋণপত্রের লেনদেনের অবিচ্ছিন্ন বাজার হিসেবে কাজ করছে। বাজারজাতকরণে এরূপ সুবিধা থাকায় ঋণপত্রের মালিকরা সুবিধামতো সময় এবং যুক্তিসংগত মূল্য ঋণপত্র বিক্রি করে এরূপ আর্থিক সম্পদ নগদ অর্থে রূপান্তর করতে পারছে। স্টক মার্কেটের এরূপ ভূমিকা দেশের বিনিয়োগকারীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলা হয় ।

 ii. দুটি স্টক এক্সচেঞ্জ ব্যক্তির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কর্পোরেশন ইত্যাদির সঞ্জয় ঋণপত্রে বিনিয়োগে সহায়তা করে তাদের জন্য লাভজনক অর্থায়ন হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্টক এক্সচেঞ্জ না থাকলে এসব সঞ্চয় বাণিজ্যিক বা অপরাপর ব্যাংকে কম সুদের হারে আমানতের আকারে জমা হতে পারত। স্টক এক্সচেঞ্জ দেশের জনগণ এবং বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক সঞ্চয় বাড়াতে উৎসাহিত করছে বলা যায়। এভাবে এরা বাংলাদেশের বিভিন্ন পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি বিনিয়োগ তহবিল বাড়াতে সহায়তা করে বলা যায়।

 iii. স্টক এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্প এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিনিয়োগ তহবিল বণ্টনে সহায়তা করে। অর্থাৎ উৎপাদনশীল উৎ পরিমাণ বাড়াতে এরা সহায়তা করেছে।

 iv. স্টক এক্সচেঞ্জ পরোক্ষভাবে শিল্পখাতে অর্থসংস্থানে ভূমিকা পালন করে। প্রথমত, বিভিন্ন শিল্প নিজেদের কাছে রাখা ঋণপত্র স্টক মার্কেটের দালালদের মাধ্যমে বিক্রি করে জরুরি সময়ে মূলধন সংগ্রহ করতে পারে। আবার ঋণপত্রের ক্রেতা প্রয়োজনে এগুলোকে জামানত রেখে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারে । এভাবে স্টক এক্সচেঞ্জ ঋণপত্র ইস্যুকারী কোম্পানি এবং ঋণপত্রে বিনিয়োগকারীদেরকে মূলধন সংগ্রহ করতে সহায়তা করছে বলা যায়, কারণ স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এবং বিনিয়োগকারীর পক্ষেই এভাবে তহবিল সংগ্রহ করা সম্ভব। বাংলাদেশে বিগত এক দশকে শিল্পের যেটুকু প্রসারণ হয়েছে তা স্টক এক্সচেঞ্জে বিশেষত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছাড়া সম্ভব হতো না বলা যায়।

 পরিশেষে বলা যায় যে, স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ঋণপত্র বিনিয়োগকারী ক্রয় করে স্টক মার্কেট ঋণপত্রের বাজারজাতকরণ এবং তারল্যের নিশ্চয়তা বিধান করে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।


 বাংলাদেশের স্টক এক্সচেঞ্জের উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপ :

যেসব সংস্কারমূলক কার্যক্রম এবং অপরাপর কার্যক্রম স্টক মার্কেট উন্নয়নে ত্বরান্বিত করছে তা সংক্ষেপে নিম্নে বর্ণনা করা সম্ভব :

১. কিছু সরকারি মালিকানাধীন সংস্থা থেকে পুঁজি প্রত্যাহার করে সেগুলো ব্যক্তিমালিকানায় হস্তান্তর এবং সরকারের শেয়ারের পরিমাণ কমানো হয় । সরকারি সঞ্চয় মাধ্যম এবং ব্যাংক আমানতের সুদের হার কমানো হয় ।

 বাংলাদেশে স্টক এক্সচেঞ্জের কার্যাবলি:

 নিয়ে বাংলাদেশে স্টক এক্সচেঞ্জের কার্যাবলির সমালোচনামূলক মূল্যায়ন উল্লেখ করা হলো ;

 ক. ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ :

পাকিস্তান আমলে ১৯৫৪ সালে স্থাপিত হওয়ার পর থেকে আশি দশক পর্যন্ত বিভিন্ন কারণে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ তেমন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারেনি। ব্যাপক নিয়ন্ত্রণ অনমীয় পরিবেশ উন্নয়ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে স্বপ্ন সুদের হারে ঋণ প্রাপ্তি এবং সম্ভবত বড় বড় পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির পক্ষ থেকে জনগণের কাছে জবাবদিহিতার অনিচ্ছা এদেরকে পুঁজিবাজার থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। অনুরূপ সরকারি বিভিন্ন সন্ধ্যায় মাধ্যম থেকে নিশ্চিত আয় এবং পুঁজি বাজারের ঝুঁকি এড়ানোর প্রবণতা থাকায় নব্বই দশকের প্রথম থেকে নিশ্চিত আয় এবং পুঁজিবাজার থেকে দূরে সরিয়ে দেশের বেশিরভাগ স্টক মার্কেট বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়নি।

নব্বই দশকের প্রথম থেকে বিভিন্ন সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা উপরোক্ত অবস্থার পরিবর্তন হয়, যা স্টক এক্সচেে ত্বরান্বিত এবং গতিশীল করে তোলে।

 খ. চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ :

 দেশে পুঁজি বাজারের বিকাশের লক্ষ্যে ১৯৯৫ সালের ১০ অক্টোবর চালু করা হয় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ। কোম্পানি আইন অনুযায়ী এটি একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে কাজ শুরু করে। এর অনুমোদিত মূলধন ১৫ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ২ কোটি ১৩ লাখ টাকা। বর্তমান সদস্যসংখ্যা ৭০ এবং ১২ জন সদস্য নিয়ে এর পরিচালনা পর্ষদ গঠিত। নিম্নের সাতটি কমিটির মাধ্যমে এ স্টক এক্সচেঞ্জ পরিচালিত হয় :

i. লিস্টিং কমিটি।

ii. ট্রেড ফ্লোর কমিটি

iii. সার্ভেল্যান্স কমিটি।

iv. আবিট্রেশন অ্যান্ড ডিফন্টাস কমিটি।

v. ফিনান্স কমিটি ।

vi. হিউম্যান রিসোর্স কমিটি।

vii. ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটি।

কাজ চালুর পর থেকে জুন ১৯৯৭ পর্যন্ত এ স্টক একচেঞ্জে মোট ১২৬টি সিকিউরিটি তালিকাভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে আইসিবি এর মিউচ্যুয়াল ফান্ড ৯টি এবং ডিবেদার ৪টি।

Post a Comment

Previous Post Next Post