নারী ও রাজনীতি বলতে কী বুঝ?_নারীবাদের উদ্দেশ্য কী?_নারীবাদী বিভিন্ন ধারা বা তত্ত্ব বর্ণনা কর।

নারী ও রাজনীতি বলতে কী বুঝ?_নারীবাদের উদ্দেশ্য কী?_নারীবাদী বিভিন্ন ধারা বা তত্ত্ব বর্ণনা কর।


নারী ও রাজনীতি বলতে কী বুঝ?

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার মধ্যে নারী ও রাজনীতি ধারণাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচিত বিষয়। কেননা নারীরা আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে নারীরা পুরুষদের পাশাপাশি পারিবারিক, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পরিমণ্ডলে অবদান রেখে চলেছে। তাই নারীকে নিয়ে আজ সকলে নতুন করে ভাবছে। ফলে নারীকে নিয়ে অধ্যয়নের পরিধি ক্রমান্বয়ে প্রসারিত হচ্ছে। দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে নারী ও রাজনীতি অধ্যয়নের প্রয়োজনীয়তা।

নারী ও রাজনীতি : যে রাজনীতিতে নারীর সরাসরি অংশগ্রহণ, ক্ষমতার চর্চা ও মত প্রকাশের সুযোগ নিহিত সেই রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে নারী রাজনীতি বলে । মূলত নারীর সরাসরি অংশগ্রহণ মূলক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নীতি নির্ধারণের প্রক্রিয়াকে নারী রাজনীতি বলে। এটি নারী কেন্দ্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা। বর্তমানে নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তারাও রাজনীতির আওতা

নারীবাদ কী?



নারীবাদ একটি আধুনিক মতবাদ। অন্যান্য মতবাদ হতে এটি ভিন্ন ধরনের মতবাদ। কেননা এটি একক কোনো কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। অদ্যাবধি নারীবাদের এমন কোনো সংজ্ঞা গড়ে উঠেনি যেটি সব সময়ের জন্য সর্বজনীনভাবে প্রযোজ্য । তাই নারীবাদের একক কোনো সংজ্ঞা পাওয়া যায় না। কেননা ঐতিহাসিক এবং সংস্কৃতিগতভাবে মূর্ত বাস্তবতা, সচেতনতা, উপলব্ধি ও কার্যকলাপের ওপর নারীবাদ প্রতিষ্ঠিত ।

নারীবাদ : ‘নারীবাদ' এর ইংরেজি প্রতিশব্দ 'Feminism'ফরাসি শব্দ 'Femme' থেকে ইংরেজি 'Feminism' শব্দটি এসেছে যার অর্থ হলো 'নারী' (Women)এই 'Femme' শব্দটির সাথে 'Ism' বা 'বাদ' কথাটি যুক্ত হয়ে ‘নারীবাদ' বা 'Feminism' এর উৎপত্তি হয়েছে। বস্তুত সমাজবাদ, সাম্যবাদ, জাতীয়তাবাদ, ফ্যাসিবাদ, পুঁজিবাদ, বর্ণবাদ প্রভৃতির আদলে 'Feminism' এর অনুবাদ করা হয় ‘নারীবাদ'। ফরাসি সমাজতন্ত্রী চার্লস ফুরিয়ের (Charles Fourier) ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে সর্বপ্রথম 'Feminism' শব্দটির আবিষ্কার করেন। তবে ঊনবিংশ শতাব্দীর ৮০ এর দশকে ‘ফ্রেঞ উইমেন্স সাফ্রেজ সোসাইটি' (French Women's Suffrage Society)-এর প্রতিষ্ঠাতা হুবারটিন অকলার্ট (Hubertine Auclert) 'Feminism' বা 'নারীবাদ' কথাটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন।

মূলত নারীবাদ হচ্ছে নারী সম্বন্ধীয় মতবাদ। আভিধানিক অর্থে, নারীবাদ হচ্ছে একটি আন্দোলন, যা পুরুষের মতো একজন মানুষ হিসেবে নারীর পূর্ণ অধিকার দাবি করে থাকে। অন্যভাবে বলা যায় নারীবাদ হচ্ছে মূলত নারী ও পুরুষের সমন্বয়ে একটি ন্যায়বিচারভিত্তিক সুসম ও উন্নত সমাজ সৃষ্টির প্রক্রিয়ামাত্র।

 

প্রামাণ্য সংজ্ঞা :

রোজালিন্ড ডেলমার (Rosalind Delmar) 'What is Feminism' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, "Feminism is usually defined as an active desire to change women's position in society." অর্থাৎ সাধারণভাবে নারীবাদ বলতে বুঝায় সমাজে নারীর অবস্থান পরিবর্তনের জন্য সক্রিয় আগ্রহ।

ক্রিস্টিনা হফ সমার্স (Christina Hoff Sommers)- 'Who Stole Feminism' গ্রন্থে লিখেছেন, "Feminism is a concern for women and a determination to see them fairly treated." অর্থাৎ নারীবাদ হলো নারীর জন্য উদ্বেগ এবং নারীর প্রতি ন্যায়সংগত আচরণ প্রত্যক্ষ করতে দৃঢ় সংকল্প ।

জুডিথ অ্যাস্টেলারা (Judith Astellara) বলেছেন, নারীবাদ হলো সামাজিক রূপান্তর ও আন্দোলনের লক্ষ্যে একটি পরিকল্পনা, যা নারী নিপীড়ন বন্ধ করার চেষ্টা করে।

 

নারীবাদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে এস্টেল ডি. ফ্রিডম্যান (Estelle D. Freedman) তাঁর 'No Turning Back' নামক গ্রন্থে বলেছেন, “নারীবাদের একটি বিশ্বাস যে, নারী ও পুরুষের অন্তর্নিহিত মূল্যমান সমান। যেহেতু অধিকাংশ সমাজব্যবস্থা পুরুষ গোষ্ঠী হিসেবে অধিকতর সুযোগ সুবিধা প্রদান করে।

 

'Subversive Women' গ্রন্থপ্রণেতা সাসকিয়া উইরিঙ্গা (Saskia Wieringa) বলেছেন, “নারীবাদ হচ্ছে একটি বিধ্বংসী প্রক্রিয়া, যা নারী সম্বন্ধে প্রচলিত ধারণা পাল্টে দিয়ে এর নতুন অর্থ খুঁজে বের করে; জেন্ডার সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাকে বর্জন করে ব্যক্তিগত এবং সামগ্রিকভাবে নারীত্ব সম্পর্কে নতুন ধারণা প্রদান করে।”

 

পরিশেষে বলা যায় যে, বস্তুত নারীসমাজের ওপর পুরুষের নিপীড়ন, এর কারণ ও ফলাফল এবং নারীমুক্তির কৌশল নির্ধারণই নারীবাদের প্রধান উদ্দেশ্য । নারীবাদ হচ্ছে এমন একটি তত্ত্বীয় কাঠামো ও প্রায়োগিক প্রয়াস, যা নারীসমাজের ওপর পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বহুমাত্রিক নির্যাতন, এর কারণ ও ফলাফল এবং নারীমুক্তির দিকনির্দেশনা প্রদান করে।

 

 নারীবাদের উদ্দেশ্য কী?



নারীবাদ হচ্ছে নারী সম্বন্ধীয় মতবাদ। নারীবাদ হচ্ছে একটি আন্দোলন যা পুরুষের মতো একজন মানুষ হিসেবে নারীর পূর্ণ অধিকার দাবি করে থাকে। নারীবাদ হলো নারী ও পুরুষের সমন্বয়ে একটি ন্যায়বিচারভিত্তিক সুসম ও উন্নত সমাজ সৃষ্টির প্রক্রিয়ামাত্র। অন্যান্য মতবাদ হতে নারীবাদ ভিন্ন ধরনের মতবাদ। এর একক কোনো সংজ্ঞা পাওয়া যায় না। তবে বর্তমানে নারীবাদের যে সংজ্ঞা দেওয়া হয় তা পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত হতে পারে। কারণ ঐতিহাসিক এবং সংস্কৃতিগতভাবে মূর্ত বাস্তবতা, সচেতনতা, উপলব্ধি ও কার্যকলাপের ওপর নারীবাদ প্রতিষ্ঠিত । নারীবাদের বিভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে।

 

 নারীবাদের উদ্দেশ্য : 

প্রত্যেক মতবাদেরই কিছু উদ্দেশ্য থাকে । নারীবাদের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। নারীসমাজের ওপর পুরুষের নিপীড়ন, এর কারণ ও ফলাফল এবং নারীমুক্তির কৌশল নির্ধারণই নারীবাদের প্রধান উদ্দেশ্য। সামাজিক আন্দোলন হিসেবে নারীবাদের উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নে তুলে ধরা হলো :

১. নারী-পুরুষ সমতা আনয়নের জন্য সকল বৈষম্যের অবসান ।

২. সমতাভিত্তিক সুসম সমাজ প্রতিষ্ঠা করা ৷

৩. নারীর জন্য অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন করা ।

৪. নারীর প্রতি সংঘটিত সকল সহিংসতার অবসান ঘটানো।

৫. পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীর চিরাচরিত ভূমিকা ও ভাবমূর্তির পরিবর্তন ঘটানো ।

 

 পরিশেষে বলা যায় যে, নারীবাদ হচ্ছে সমতা, মর্যাদা এবং নারীবাদের স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রাম, ঘরে-বাইরে নিজেদের জীবন ও দেহের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। এছাড়া নারীবাদ হচ্ছে এমন একটি আন্দোলন যা নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করে সমাজে জেন্ডার সমতা প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। নারীবাদীদের লক্ষ্য হলো সামাজিক বাধা দূর করে নারী-পুরুষ সমতা প্রতিষ্ঠা করা ৷

 

 নারীবাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ কর।

নারীবাদ হচ্ছে নারী সম্বন্ধীয় মতবাদ। নারীবাদ হচ্ছে একটি আন্দোলন যা পুরুষের মতো একজন মানুষ হিসেবে নারীর পূর্ণ অধিকার দাবি করে থাকে। নারীবাদ হলো নারী পুরষের সমন্বয়ে একটি ন্যায়বিচারভিত্তিক সুসম ও উন্নত সমাজ সৃষ্টির প্রক্রিয়ামাত্র । অন্যান্য মতবাদ হতে নারীবাদ ভিন্ন ধরনের মতবাদ। এর একক কোনো সংজ্ঞা পাওয়া যায় না। তবে বর্তমানে নারীবাদের যে সংজ্ঞা দেওয়া হয় তা পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত হতে পারে। অন্যান্য মতবাদের মতো নারীবাদেরও কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়।

নারীবাদের বৈশিষ্ট্য : নিম্নে নারীবাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ তুলে

ধরা হলো :

১. নারী-পুরুষ সমতা আনয়নের জন্য নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়ানো ।

২. অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য সম্পত্তির উত্তরাধিকারস্হ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রসমূহ নারী-পুরুষ সাম্য প্রতিষ্ঠা করা ।

৩. পুরুষতন্ত্রের ঘেরাটোপ থেকে নারীকে মুক্ত করার জন্য পিতৃতন্ত্রের উচ্ছেদ করা ৷

৪. নারীকে মানবজাতির অর্ধাংশ বিবেচনা করে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে তার যথাযথ ভূমিকা দাবি

৫. নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়ানো ।

৬. নারীর কর্মের পরিধি ও স্বীকৃতি এবং কর্মক্ষেত্রে নারীবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং

৭. আইনি বৈষম্য দূর করার জন্য অভিন্ন বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদ আইন প্রণয়ন করা।

পরিশেষে বলা যায় যে, নারীবাদ নারীর প্রকৃত অধিকার প্রতিষ্ঠার এক বৈশ্বিক আন্দোলন। নারী-পুরুষ সমতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পরিচালিত এ আন্দোলন তার দীর্ঘ পথপরিক্রমায় যেসব কর্মসূচি গ্রহণ করেছে এবং বর্তমানে করছে তা পর্যালোচনা করলে নারীবাদের উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যসমূহ পাওয়া যায়।

নারীবাদের উদ্ভব ও বিকাশ : নিম্নে নারীবাদের উদ্ভব ও বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

১. মার্গারেট লুকাস রচিত ‘নারী ভাষণ' :

  নারী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত‍ মার্গারেট লুকাস ১৯৬২ সালে নারী ভাষণ' নামে একটি বই লেখেন। 'নারী ভাষণ' নামক বইটিতে তিনি  নারীর স্বাধীনতা ও অধিকার নিয়ে বিষদ আলোচনা করেছেন।

২. ফরাসি নারী পলেইন ডি. ল্যাবারের রচনা :

 সপ্তদশ শতাব্দীতে ফরাসি নারী পলেইন ডি. ল্যাবারে তাঁর লেখনীর মাধ্যমে নারীবাদী মতবাদ প্রকাশ করেন । তিনি বলেন, “পুরুষ কর্তৃক নারী সম্পর্কে যা কিছু লেখা হয়েছে তার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করতে হয় । কারণ এক্ষেত্রে একই সাথে অভিযুক্ত ও বিচারের আসনে আসীন” তাঁর এ লেখনীতে তৎকালীন নারীবাদীরা ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত হয় ।

৩. আমেরিকার স্বাধীনতা ঘোষণা :

 নারীবাদ বিকাশের ইতিহাসে আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে 'Declaration of Independence' 'এর মাধ্যমে আমেরিকায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কথা ঘোষিত হলেও কেবল শ্বেতাঙ্গ পুরুষরাই নাগরিক অধিকার পেয়েছিল। নারীদের কোনো অধিকার এখানে স্বীকৃতি পায়নি। তাই আমেরিকার 'Declaration of Independence' এই প্রণেতা ও পরবর্তীকালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এ্যাডামস (John Adams) কে তাঁর স্ত্রী Abigail Adams নতুন আইনে নারীর অধিকার রক্ষার কথা বলেছিলেন

৪. ইংল্যান্ডে প্রণীত নারীবাদী গ্রন্থ :

 ইংল্যান্ডের নারীবাদী গ্রন্থসমূহ নারী উন্নয়নের তথা নারীবাদী চিন্তাচেতনা বিকাশের ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রেখেছে। নারী অধিকারের পক্ষে মেরি ওলস্টোনক্রাফট ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডে 'A Vindication of the Right of Woman' গ্রন্থটি প্রণয়ন করেন। এতে তিনি নারী অধিকারের পক্ষে জোরালো যুক্তি দেন। এ বইটি নারীবাদী চিন্তা ও আন্দোলনের ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ ধারার সূচনা করেছিল ।

 

৫. Elizabeth cady Stanton-এর নেতৃত্বে প্রণীত গ্রন্থ :

 নারীবাদের উৎপত্তি ও বিকাশের ক্ষেত্রে বিভিন্ন নারীবাদীদের লেখনী গুৰুত্বপূৰ্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এসব নারীবাদীদের মধ্যে Elizabeth cady Stanton উল্লেখযোগ্য। Elizabeth cady Stanton এর নেতৃত্বে ১৮৪৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেনেকা ফলস শহরে Seneca Falls Declaration of sentiments Resolutions প্রণয়ন করা হয়। ১৮৪৮ সালে বিশ্বের ইতিহাসে এ সম্মেলন ছিল প্রথম নারী অধিকার বিষয়ক সম্মেলন।

 

৬. হ্যারিয়েট টেইলর মিলের লেখনী :

 হ্যারিয়েট টেইলর মিল ১৮৫১ সালে নারীবাদের ওপর 'On the Enfranchisement of woman.' প্রণয়ন করেন। এ গ্রন্থে তিনি নারী শিক্ষা উন্নয়নের প্রস্তাব করেন এবং নারীসমাজকে অধস্তনে পরিণত করে এমন সব আইনগত ও রাজনৈতিক নিয়মকানুনের পরিবর্তনের প্রস্তাব করেন। ১৮৫৮ সালে তাঁর মৃত্যুর পর তার স্বামী জন স্টুয়ার্ট মিল (John Stuart Mill) The Subjection of woman' রচনা করেন, যাতে টেইলরের মতামত প্রতিফলিত হয়েছে।

 

৭. আমেরিকা ও ইংল্যান্ডে ভোটাধিকারের দাবিতে আন্দোলন :

 আমেরিকা ও ইংল্যান্ডে উনিশ শতকের প্রথম দিকে নারীর ভোটাধিকারের দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৯০ সালে আমেরিকায় 'National American woman suffrage Association' প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৯৭ সালে ইংল্যান্ডে 'National American woman suffrage Association' গঠিত হয়। এ সময়ও নারীরা ভোটাধিকার পায়নি। অবশেষে ইংল্যান্ড, আমেরিকা ও জার্মানির নারীরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এবং ফ্রান্সের নারীরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভোটাধিকার পায়।

 

৮. ১৯৬০ এর দশকের নারীবাদী আন্দোলন :

 নারীবাদী আন্দোলনের নতুন যাত্রা শুরু হয় ১৯৬০ এর দশকের প্রথম দিক থেকে। আমেরিকার সাংবাদিক বেটি ফ্রাইডানের 'The Feminine Mystique' গ্রন্থটি ১৯৬০ সালে প্রকাশ পায়। এতে নারী আন্দোলনে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়। ১৯৬৪ সালে 'Civil Right Act' পাস হয়, যা দ্বারা ধর্ম, বর্ণ ও সেক্সের ভিত্তিতে চাকরি ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর হয় ।

৯. ভারতবর্ষে নারী আন্দোলন :

 উনবিংশ শতকের গোড়ার দিকে ভারতবর্ষে নারীর শোচনীয় অবস্থার বিরুদ্ধে এবং নারীর অধিকারে প্রথম সোচ্চার হন নারীবাদী পুরুষ রাজা রামমোহন রায় এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। উভয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ১৮২৯ সালে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংক সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করে আইন পাস করেন, যা ভারতবর্ষের নারীসমাজকে একটি অমানবিক সামাজিক কুসংস্কার থেকে চির মুক্ত করতে সক্ষম হয়। এখানেই ক্ষান্ত হননি; ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহের পক্ষে তীব্র আন্দোলন করেন এবং ১৮৬৭ সাল পর্যন্ত নিজে ৬০টি বিধবা বিবাহের আয়োজন করেন। বহু বিধবা বিবাহ তিনি নিজে উপস্থিত থেকে সম্পন্ন করেছেন। এমনকি তিনি নিজ পুত্রের সাথে বিধবার বিবাহ দিয়ে হিন্দুসমাজে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন । বাংলার প্রথম নারীবাদীরূপে খ্যাত সরলা দেবী চৌধুরী ১৯১০ সালে সর্বভারতীয় নারী সংগঠন 'ভারত স্ত্রী মহামণ্ডল' গড়ে তোলেন।

১০. স্বাধীন বাংলাদেশে নারীবাদী আন্দোলন :

 ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধেও নারীরা প্রশংসাযোগ্য অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। স্বাধীনতার পর সরকার ও এনজিওসমূহ নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ব্যাপক আগ্রহ দেখায়। বাংলাদেশের নারীদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার জন্য বিশ্বের এনজিওগুলো বহু কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বাংলাদেশে কিছু কিছু এনজিও নারীদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় আইনি সহায়তাসহ প্রয়োজনীয় যাবতীয় সহায়তা প্রদান করছে। এছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশে বহু নারী উন্নয়ন সংস্থা গড়ে উঠেছে যারা নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে আসছে।

 উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, দীর্ঘ পথপরিক্রমায় নারীরা তাদের বহুমুখী প্রচেষ্টায় নিজেদের আত্মোন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু তবুও তাদের মুক্তি পুরোপুরি মেলেনি। একবিংশ শতাব্দীর এই দ্বারপ্রান্তে পৃথিবীর বহুদেশে নারীরা আজ অবহেলিত ও লাঞ্ছিত হচ্ছে। তাই তাদের সংগ্রাম অবিরত চলছে এবং চলবে।

 

 নারীবাদী বিভিন্ন ধারা বা তত্ত্ব বর্ণনা কর।



নারী অধিকার তথা নারীমুক্তির আন্দোলনে যারা অবদান রেখেছেন তাদের নারীবাদী আখ্যায়িত করা হয় এবং নারীর প্রতি বৈষম্য শোষণের বাস্তবতা সম্পর্কে সচেতনতাকে বলা হয় নারীবাদ । নারীবাদ অবশ্যম্ভাবীরূপে একটি যুগোপযুগী দর্শন। নারী বিষয় সংক্রান্ত অধ্যয়ন ও গবেষণার তাত্ত্বিক ভিত্তি হলো নারীবাদ ঊনবিংশ শতাব্দী এবং বিংশ শতাব্দীতে নারীরা নিজ অধিকার ও মুক্তি তথা স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছে।

নারীবাদী বিভিন্ন ধারা বা তত্ত্ব : নারীবাদের একক কোনো ধারা নেই। কারণ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পণ্ডিত ও লেখক তাদের নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে নারীবাদকে বিশ্লেষণ করেছে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন ধারা বা তত্ত্ব ও মতবাদ। নিম্নে বিভিন্ন নারীবাদী তত্ত্ব বা ধারা সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো :

১. উদার নারীবাদ :

 উদার নারীবাদ উৎপত্তি লাভ করেছে মূলত উদারতাবাদ নামক রাজনৈতিক চিন্তাধারা থেকে। উদার নারীবাদী তত্ত্বে দুটি প্রধান ধারা লক্ষণীয়। যথা : ১. ক্লাসিক্যাল বা স্বাধীনতাকামী ও ২. কল্যাণমূলক বা সততামূলক নারীবাদ উদার নারীবাদীদের মতে, সমাজের কল্যাণে ন্যায়নীতি অনুসরণ করে নারীদেরকেও পুরুষের সমান সুযোগ দিতে হবে-- কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না। এর ফলে নারীরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পুরুষের সমানতালে সফলতা অর্জন করতে পারবে।

২. প্রগতি নারীবাদ :

 প্রগতি নারীবাদের বিভিন্ন ধারা উপধারা | রয়েছে। এসব ধারার অন্যতম দিক হলো : কলা, আধ্যাত্মিকতা, খাদ্য প্রতিবেশ, প্রজনন ও মাতৃত্ব, জেন্ডার ও যৌনতা প্রভৃতি । তাই একটি মাত্র সংজ্ঞায় বিভিন্ন ধারাকে সমন্বিত করা কঠিন; এ লক্ষ্যে বিশেষ কোনো দিকের ওপর গুরুত্ব দিয়ে মতবাদটি অনুধাবন করা যেতে পারে। তবে বিভিন্ন ধারার মধ্যে একটি অভিন্ন দিক হচ্ছে- সকল প্রগতি নারীবাদীই মনে করেন যে, নারী নিপীড়নই হচ্ছে নিপীড়নের সবচেয়ে মৌলিক রূপ।

৩. মার্কসীয় নারীবাদ :

 মার্কসবাদের আবির্ভাব ঘটে উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে। মার্কস-এঞ্জেলসই সর্বপ্রথম নারীর দাসত্বের ঐতিহাসিক ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ প্রদান করেন এবং একমাত্র শ্রেণি শোষণহীন সমাজেই যে নারীর পূর্ণ মুক্তি সম্ভব তা ব্যাখ্যা করেন ।

৪. সমাজতন্ত্রী নারীবাদ :

 সমাজতন্ত্রী নারীবাদকে মার্কসীয়, প্রগতি নারীবাদ ও মনোবিশ্লেষণ নারীবাদী চিন্তার সংমিশ্রণ বলে গণ্য করা হয়। মূলত মার্কসীয় নারীবাদের নারীসমাজের নিপীড়নের বিভিন্ন দিকের ব্যাখ্যার অপ্রতুলতা ও অসন্তুষ্টি থেকে সমাজতন্ত্রী নারীবাদের উদ্ভবের কারণ বলে মনে করা হয় । মার্কসবাদের শ্রমিক শ্রেণির ওপর বুর্জোয়া শ্রেণির শোষণ-নিপীড়নের ব্যাপারে যেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কিন্তু নারীবাদকে সে তুলনায় নয় । ক্লারা জেটকিনকে (Clara Zetkin) অনুসরণ করে অনেক সমাজতন্ত্রী নারীবাদী মনে করেন যে, সমাজের শ্রেণিগত বিভক্তি নারী নিপীড়নের একমাত্র কারণ নয়। কেননা সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে নারীরা শ্রমশক্তিতে পরিণত হয়েছে এবং তারা অর্থনৈতিকভাবে আত্মনির্ভরশীল। কিন্তু এ সত্ত্বেও তারা পুরুষতন্ত্রের অধীন এবং তারা ধারাবাহিকভাবে নিপীড়িত হচ্ছে। মার্কসীয় নারীবাদ এসব প্রশ্নের সদুত্তর দিতে অক্ষম। মূলত, কেবল শ্রেণি এবং শ্রেণি সম্পর্ক নারীসমাজের নিপীড়নের সকল দিক, এমনকি প্রধান দিকও তুলে ধরতে পারে না।

৫. পরিবেশ নারীবাদ :

 ফরাসি নারীবাদী ফ্রাসোয়া দ্যো এবোনে ১৯৭৪ সালে সর্বপ্রথম পরিবেশ নারীবাদ ব্যবহার করেন। এখানে নারী ও পরিবেশের সম্পর্কের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। নারী ও প্রকৃতি উভয়েই পুরুষতন্ত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত। নারীনির্যাতন ও প্রকৃতি নির্যাতনের মধ্যে প্রত্যক্ষ যোগসূত্র রয়েছে। তবে নারীকেই প্রকৃতির পালনকর্তা ও সংরক্ষক বলে মনে করা হয়। পরিবেশ নারীবাদের মতে, মানবজাতি যদি তার অস্তিত্ব বজায় রাখতে চায়, তাহলে নারী-পুরুষ ও প্রকৃতির মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই অবশ্য প্রকৃতির সঙ্গে নারীর সম্পর্ক লক্ষ করা যায়। পরিবেশ নারীবাদের মতে, নারীই পরিবেশের প্রধান সংরক্ষক। নারীই শুধু পরিবেশবান্ধব অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। পুরুষের তুলনায় নারী বাতাস, পানি, মাটি ও আগুনের ব্যাপারে তুলনামূলক বেশি সংবেদনশীল। পরিবার কল্যাণের জন্য নারী এসব সম্পদকে সুসমভাবে ব্যবহার করে। উন্নয়নের স্বার্থে তাই পরিবেশ ব্যবহারে নারীকে যুক্ত করা আবশ্যকীয়। তবে এজন্য নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। পরিবেশ নারীবাদীরাও নীতিমালা সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন। ক্যারেন জে ওয়ারেন, মারিয়া মিজ, বন্দ শিবা, ক্যারোলিন মার্চেন্ট পরিবেশ নারীবাদের অন্যতম।

৬. উত্তর-আধুনিক নারীবাদ :

 আধুনিক সময়ে নারীবাদী চিন্তায় উত্তর-আধুনিক নারীবাদীরা (Postmodern Feminism) এ বিশেষ স্থান দখল করে আছে। কিন্তু উত্তর-আধুনিক নারীবাদীদের সাথে নারীবাদের সম্পর্ক সহজ-সরল ও একরৈখিক নয়। কেননা এ ধারায় চিন্তাবিদরা অনেকেই নিজেদেরকে নারীবাদী বলতে ইচ্ছুক। আবার কেউ কেউ নারীবাদ কথাটির সাথেই একমত হতে পারেন না। উপরন্তু রয়েছে বৈচিত্র্য ও বহুমাত্রিকতা। উত্তর-আধুনিক নারীবাদকে আজও ফরাসি নারীবাদ বলে মনে করা হয়। কারণ এই চিন্তার উদ্ভাবকগণ জাতিগতভাবে ফ্রান্সের অধিবাসী। যদিও ১৯৫০ ও ১৯৬০ এর দশকে কতিপয় লেখক ‘উত্তর আধুনিক' কথাটি ব্যবহার করেছেন, কিন্তু ১৯৭ দশকের মধ্যভাগ ব্যতীত তা স্পষ্ট রূপলাভ করেনি। এ চিন্তার সাথে যারা জড়িত তারা হলেন, মিশেলস ফুকো, জ্যাক ডারিডা, জ্যাক লাকান, হেলেন সিক্‌সু, লুস ইরিগারে, জুলিয়া ক্রিস্টিতা প্রমুখ।

৭. সাংস্কৃতিক নারীবাদ :

 সাংস্কৃতিক নারীবাদের উদ্ভব হয়েছে চরমপন্থি নারীবাদী তত্ত্ব হতে। এ নারীবাদে নারীর সাংস্কৃতিকে প্রধান বলে মনে করা হয়। সাংস্কৃতিক নারীবাদ মতানুযায়ী নারী- পুরুষের সম্পর্ক ঐতিহাসিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে তৈরি হয়েছে। তাই এ সম্পর্ক পরিবর্তিত হতে পারে। নারী-পুরুষের পার্থক্য শারীরিক নয়, এ মত অনুযায়ী মনস্তত্ত্বই নারী অধস্তনতার মূল কারণ। একজন নারী যেভাবে নারী হয়ে ওঠে, পুরুষ যেভাবে পুরুষ- এ নারীবাদী সেই আচার-আচরণ, ব্যবহার, অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে সাংস্কৃতিক বিষয়াবলির ওপর জোর দেয়। এ নারীবাদে আছে মতাদর্শ আর সাংস্কৃতির প্রাধান্য। সাংস্কৃতিক নারীবাদ মনে করে শারীরিক কারণে নারী নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মগ্রহণ করে এবং সমাজে ও পরিবারে বিচরণ করে। যেমন- মাতৃত্ব, মমত্ববোধ, সহানুভূতি, সহনশীলতা, নমনীয়তা, নৈতিক যুক্তিবোধ, আধ্যাত্মবোধ, অপরের জন্য ভাবনা, প্রতিযোগিতাহীন দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি নারীর সহজাত প্রবণতা ।

৮. মনোসমীক্ষণ নারীবাদ :

 মনোসমীক্ষণের প্রবক্তা সিগমন্ড ফ্রয়েডের ধারণাকে পুঁজি করে মনোসমীক্ষণ নারীবাদের উৎপত্তি হয়েছে। নারী-পুরুষের শৈশব ও কৈশোর জীবনের ঘটনাবলির মধ্যে পুরুষ ও নারীর জৈবিক সম্পর্কের কারণ উদ্ঘাটন, নারী- পুরুষের জৈবিক গঠন, পারস্পরিক আবেগ, বিদ্বেষ, যৌন সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে সচেতন করে তোলে মনোসমীক্ষণে। মূলত মনোসমীক্ষকদের বিশ্লেষণে নারী-পুরুষ সম্পর্কের ইতিবাচক ও নেতিবাচক ধারণাই প্রকাশ পায়। তবে নারীবাদীরা নারী সম্পর্কিত ইতিবাচক ধারণাগুলোকে ব্যর্থ চেষ্টা করেন। নারীর শারীরিক তথা জৈবিক গঠনকে স্বাভাবিক বলে নারীবাদীরা মনে করেন। মনোসমীক্ষামূলক নারীবাদীদের মতে, শারীরিক গঠনের কারণে নারীরা পুরুষের অধীন, নিষ্ক্রিয় ও অক্ষমই নয়, নারী অধস্তনতার পেছনে অর্থনৈতিক, পুরুষতান্ত্রিক রাজনৈতিক ও মূল্যবোধ নিহিত রয়েছে

৯. অস্তিত্ববাদী নারীবাদ :

 অস্তিত্ববাদের মূলকথা হচ্ছে মানুষ নিজের বা আত্মঅস্তিত্বকে মুক্ত করতে চায় এজন্য তাকে অপরের সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত হতে হয় । অপরই মানুষের স্বাধীনতার পথের প্রধান প্রতিবন্ধক। নারী-পুরুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও আমরা এ সংঘাতের আবরণটি দেখতে পাই। পুরুষ নিজেকে আত্মভাবে এবং নারীকে ভাবে 'অপর'। পুরুষ নিজের বা ‘আত্ম অস্তিত্বের জন্য 'অপর' অর্থাৎ নারীকে পদানত করে রাখতে পছন্দ করে। নিজের স্বাধীনতাকে নির্বিঘ্ন করার জন্য 'অপর' অর্থাৎ নারীকে তার অধীনতা করে পাশে রাখে। এটি হচ্ছে আসলে পুরুষের প্রভুত্ব বিস্তারের একটি কৌশল । নারীকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পুরুষ নানা কল্পকথা সৃষ্টি করেছে । নারীকে সে বুদ্ধিহীন, অবিবেকী, রহস্যময় ও জটিল বলে আখ্যায়িত করে। নারীকে পুরুষ যেভাবে চিত্রিত করেছে, সেই রূপের দ্বারা আত্মস্থ হয়ে গেছে ।

উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, নারীবাদ একটি বহুমাত্রিক ধারণা। এর কোনো একক, নির্দিষ্ট বা সর্বজনগ্রাহ্য কোনো মতবাদ বা সংজ্ঞা আজও নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি । বিভিন্ন নারীবাদী গবেষকগণ বিভিন্ন চিন্তাধারা থেকে বিভিন্ন সময়ে নারীবাদকে ব্যাখ্যা করেছেন। যার ফলে বিভিন্ন ধারা, তত্ত্ব বা মতবাদের জন্ম হয়েছে। বস্তুত নারীবাদী চিন্তাচেতনা, মতাদর্শগত পার্থক্যের কারণে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও নারীবাদের এ বহুবিধ তত্ত্বের অবতারণা। তবে সকল নারীবাদী তত্ত্ব বা ধারাই নারীদের অধস্তন অবস্থার পরিবর্তনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

Post a Comment

Previous Post Next Post