আইনসভার ক্ষমতা ও কার্যাবলি বিশ্লেষণ কর।

আইনসভার ক্ষমতা ও কার্যাবলি বিশ্লেষণ কর।


আইনসভার ক্ষমতা ও কার্যাবলি বিশ্লেষণ কর।

জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রে সরকারের কার্যক্রম নির্ধারণ ও প্রত্যাথিক নক্ষত্রে আইন বিভাগের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাছাড়া প্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় আইন বিভাগকে অন্যান্য বিভাগ থেকে অধিক শক্তিশালী মনে করা হয়। বিভিন্ন দেশের আইনসভা বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করে থাকে। সরকারের সংগঠন ও প্রকৃতির বিভিন্নতার কারণে আইনসভার কাজের ভিন্নতা দেখা যায়। আইনসভাকে "জাতীয় মন্ত্রাভার জাতির দর্পণ বলেও অভিহিত করা হয়।

 আইনসভার ক্ষমতা ও কার্যাবলি:

১. আইন প্রণয়ন: 

আইন সভার গুরুত্বপূর্ণ কাজ আইন প্রণয়ন করা। আইন প্রণয়নের আগে খসড়া আইন প্রস্তুত করে এই খসড়া আইনের ওপর আলাপ-আলোচনা হয়ে থাকে গণপরিষদে। আইনসভা প্রণীত আইন দ্বারা শাসন কর্তৃপক্ষ শাসনকার্য পরিচালনা করে এবং বিচার বিভাগ বিচারকার্য করে থাকে। সংবিধানের আওতার মধ্যে থেকে আইন প্রণয়নসংক্রান্ত কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে।


২. নিয়োগসংক্রান্ত কার্যাবলি: 

আইনসভা অনেক সময় উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারীদের নিয়োগ দান করে, সন্ধি বা চুক্তি অনুমোদন করে, যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং আরও কিছু শাসন বিভাগীয় কার্যসম্পাদন করে থাকে। আইনসভা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় শাসন বিভাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ বিস্তার করতে পারে। পার্লামেন্টারি ব্যবস্থায় শাসন বিভাগ সম্পূর্ণ দায়ী থাকে। প্রত্যেক দেশের আইনসভাই কিছু কিছু শাসন বিভাগীয় কাজ সম্পাদন করে থাকে।


৩. আইন সংশোধন : 

আইনসভা দেশের মৌলিক আইন অর্থাৎ সংবিধান প্রণয়ন ও সংশোধন করে। কোনো দেশের আইনসভা সংবিধান রচনার গুরুদায়িত্ব পালন করে। আবার এটি সংবিধান সংশোধনের কাজও করে থাকে। বাংলাদেশের আইনসভা ১৯৭২ সালে প্রণয়ন করা হয়েছিল। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট আইন তৈরি করতে পারে, সংশোধন করতে পারে এবং বাতিল করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে কংগ্রেস, সংবিধান পরিবর্তনের প্রস্তাব উপস্থাপন করতে পারে। সংবিধান রচনা ও সংশোধন করা আইনসভার অন্যতম কাজ।


৪. বাস্তবসম্মত আইন প্রণয়ন: 

আইনসভার প্রধান কাজ আইন প্রণয়ন করা। কিন্তু তা এত সহজ ব্যাপার নয়। এজন্য অনেক আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন। আইনের উদ্দেশ্যে ও নীতি সম্পর্কে আলোচনার সুযোগ আইনসভার সদস্যরা পান। এভাবে আলোচনা ও বির্তকের ফলে সুস্থ ও উন্নতমানের আইন ও শাসনসংক্রান্ত নীতি প্রণীত হয়। জন স্টুয়ার্ট মিল (J. S. Mill)-এর মতেআলোচনামূলক কার্যাবলির আলোকে আইন পরিষদকে দেশের রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র ও নেতৃত্বের আসর বলেও আখ্যায়িত করা হয়।


৫. বিচারসংক্রান্ত কাজ: 

কোনো কোনো রাষ্ট্র আইনসভা বিচারসংক্রান্ত কিছু কাজ করে। আইনসভা নির্বাচনসংক্রান্ত বিবাদের নিষ্পত্তি করে। আইনসভায় প্রামাণিত হলে রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগ করতে বিহারে অভিেেনর প্রাম্যপতা আপিলসংক্রান্ত বিচারের সর্বোকরতে হয়। ব্রিটেনের লর্ডসভা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকি সর্বোচ্চ আদালত হিসেবে কাজ করে। বিচারের ক্ষমতা আইনসভার ওপর ন্যস্ত। আইনসভা বিচারমূলক কাজ করে। কিছু কিছু অঙ্গরাজ্যে বিচারকগণ জনসাধারণের দ্বারা নির্বাচিত হন।

 

৬. জনগণের প্রতিনিধি: 

আইনসভার সদস্যগণ জনগণের প্রতিনিধি এবং দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে তারা নির্বাচিত হন। সদস্যগণ তাদের নিজ নিজ এলাকার অভাব অভিযোগ সম্পর্কে আইনসভায় আলোচনা করেন এবং প্রতিকারের ব্যবস্থা করেন। আইনসভার অন্যতম কাজ হলো জনগণের অভাব অভিযোগ ও তুলে ব্যবস্থা আশা- আকাঙ্ক্ষা সরকারের কাছে তুলে ধরে প্রতিকারের ব্যব legislatures that organ of the goverment intended most immediately to be the voice of the people." অর্থাৎ, আইনসভা সরকারের সেই বিভাগ যা জনগণের কন্ঠস্বর হিসেবে ঐকান্তিক কাজ করবে বলে প্রত্যাশা করা হয়।


৭. শাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ: 

কোনো কোনো দেশের আইনসভা শাসন বিভাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। আইনসভা বিভিন্ন উপায়ে শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে। আইনসভা প্রশ্ন জিজ্ঞাগা, অনাস্থা প্রস্তাব, নিন্দাসূচক প্রস্তাবের মাধ্যমে শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে।


৮. রাজনৈতিক অংশগ্রহণে সহায়তা: 

আইনসভায় নির্বাচন জনগণকে রাজনৈতিক অংশগ্রহণের কাজে উদ্বুদ্ধকরণের একটি অন্যতম হাতিয়ার আর এই রাজনৈতিক কাজে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জনগণ তাদের রাজনৈতিক অধিকার যথাযথভাবে ভোগ করার সুযোগ পায়।


৯. সরকার গঠন: 

সাধারণত আইনসভাই প্রত্যেক দেশে সরকার গঠন করে। বিশেষ করে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত দেশগুলোকে আইনসভার নিম্নকক্ষই কার্যত মন্ত্রিসভা গঠন করে থাকে। আর মন্ত্রিসভাই হলো প্রকৃত সরকার। ফ্রান্সে আইনসভার উভয় কক্ষ যৌথভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করে। মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারে আইনসভা কার্যত মন্ত্রিসভা গঠন করে।


১০. নির্বাচনসংক্রান্ত: 

আইনসভাকে নির্বাচনমূলক কাজও করতে হয়। ভারতীয় সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ব্যাপারে পার্লামেন্ট এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সিনেটেরও অনুরূপ ক্ষমতা রয়েছে।


১১. রাজনৈতিক নিয়োগ: 

আইনসভা ভবিষ্যতের রাজনৈতিক নেতা এবং প্রশিক্ষক নিয়োগে সাহায্যে করে। আইনসভার সদস্য হিসেবে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে কোনো ব্যাক্তি যে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক নৈপুণ্য অর্জন করেন সেটাই তাকে ভবিষ্যৎ কোনো উচ্চ প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক পদ লাভে সাহায্যে করে।


উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, গণতান্ত্রিক শাসিনার আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়নি। সরকারের অন্যান্য বিভাগ থেকে এ বিভাগের গুরুত্ব অত্যধিক। একমতা দেখের মেরুদন্ড হলো আইন। বর্তমানে আইনসভার অস্বীকার করা যায় না। আইনসভার প্রতিনিধিগণ সরাসরি জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হওয়ায়, তারা জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধি হিসেবে তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে।


 

Post a Comment

Previous Post Next Post