আইনসভার গঠন আলোচনা কর।

 

আইনসভার গঠন আলোচনা কর।

আইনসভার গঠন আলোচনা কর। 


 সরকারের তিনটি বিভাগ রয়েছে। যথা: আইন, শাসন ও বিচার বিভাগ। এর মধ্যে আইনসভা সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। তাই এর গঠন সম্পর্কে সরকারকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে হবে। আইনসভা দুধরনের হতে পারে। আইনসভা একটি বা দুটি কক্ষ নিয়ে গঠিত হতে পারে। একটি মাত্র কক্ষ নিয়ে গঠিত আইনসভাকে এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা বলে এবং দুটি কক্ষ নিয়ে গঠিত আইনসভাকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা বলে।


আইনসভার গঠন: নিম্নে আইনসভার কক্ষভিত্তিক গঠন প্রক্রিয়া আলোচনা করা হলো:


১. এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা:

একটি রাষ্ট্রের আইনসভা যখন একটি মাত্র কক্ষ বা পরিষদ নিয়ে গঠিত হয়, তখন তাকে এককক্ষবিশিষ্ট আইন সভা বলে। এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা অধিকাংশ দেশে সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সংগঠিত হয় এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার প্রধান প্রবক্তা বেঞ্জামিন ফ্রাংকলিন। ১৭৮৭ সালে ফিলাডেলফিয়া সম্মেলনে আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান প্রণয়নকালে তিনি এককক্ষের ওপর জোর যুক্তি প্রদর্শন করেন। তার প্রভাবেই স্বীয় অঙ্গরাষ্ট্র পেনসিলভানিয়াতে এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠিত হয়। জেরেমি বেদাম প্রায় সে সময়ই ব্রিটেনে এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা গঠনে জোরালো মতামত প্রদান করেন। রুশোও এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভাকে সমর্থন করেন। তার মতে প্রতিনিধিত্বশীল সংস্থা এক ছাড়া দ্বিতীয় হতে পারে না। 


২. দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা:

আইনসভা যখন দুটি কক্ষ নিয়ে গঠিত হয়। তখন তাকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা বলে। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে, আংশিক মনোনয়নের ভিত্তিতে কিংবা উত্তরাধিকারের ভিত্তিতে গঠিত হয়। বর্তমান পৃথিবীতে অধিকাংশ দেশেই আইনসভা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট দ্বিকক্ষ থাকলে প্রতিটি বিষয়ের পুনরায় বিচারবিশ্লেষণের সুযোগ পাওয়া যায়। এতে খসড়া আইনের কোনো দোষত্রুটি থাকলে তা সহজে ধরা পড়ে এবং সংশোধন করা যায়। উচ্চপরিষদ নিম্নপরিষদের অত্যাচার থেকে জনসাধারণের ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষা করে। R. G. Gettell-এর অভিমত হলো যে, উচ্চকক্ষ স্বৈরাচার প্রতিরোধ করে এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষা করে।, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা দুটি কক্ষের সমন্বয়ে গঠিত। যথা:

ক. নিম্নকক্ষ :

বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই নিম্নকক্ষ প্রতিনিধিত্বমূলক। মতেই জনপ্রতিনিধিত্বমূলক হওয়ার জন্য নিম্নকক্ষ আইনসভা উচ্চকক্ষ রাসরি অপেক্ষা তুলনামূলক অধিক ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অধিকারী। তনিধি সরকারের ওপর নিম্নকক্ষের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা অতি ব্যাপক। একে জনপ্রিয় কক্ষও বলা হয়ে থাকে। নিম্নকক্ষ জনগণের প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত হওয়ার পর এবং নির্দিষ্ট কাল অতিক্রান্ত হওয়ার আগে জনমতের পরিবর্তন ঘটতে পারে। তখন এটি আর প্রতিনিধিত্ব করে আইন, না। কারণ জনমতের সঙ্গে এর সামঞ্জস্যের অভাব ঘটে। নিম্নকক্ষ একটি আকস্মিক আবেগে অবিবেচনা প্রসূত হঠকারী ও জাতীয় স্বার্থের গুরুত্ব পরিপন্থি আইন প্রণীত হতে পারে। এ ব্যবস্থায় পুনর্বিবেচনার কোনো এটি বা সুযোগ থাকে না। তাই জনবিরোধী আইন রচিত হওয়ার সুযোগ গঠিত থেকেই যায়। জনপ্রতিনিধিত্বমূলক হওয়ায় নিম্নকক্ষ আইনসভার নিয়ে উচ্চকক্ষ অপেক্ষা তুলনামূলক অধিক ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অধিকারী। সরকারের ওপর নিম্নকক্ষের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা অতি ব্যাপক।

খ. উচ্চকক্ষ :

যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় উচ্চকক্ষের অস্তিত্বকে অপরিহার্য বলে বিবেচনা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রীয় জাতীয় স্বার্থের যখন সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে গঠনকারী অঙ্গরাজ্যগুলোর স্বতন্ত্র স্বার্থে সহাবস্থান পরিলক্ষিত হয়। অঙ্গরাজ্যগুলোর স্বতন্ত্র স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য সভা থাকে উচ্চপরিষদ। যুক্তরাষ্ট্রীয় আইনসভার উচ্চপরিষদ গঠিত হয় অঙ্গরাজ্যগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য লিন। দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় আইনসভার উচ্চকক্ষ অজা অষ্ট্রের রাজ্যগুলোর সমসংখ্যক প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত হয়। শাসন বিভাগ দর্শন উচ্চকক্ষের সাহায্যে নিম্নকক্ষের স্বৈরাচার থেকে শাসন বিভাগকে য়াতে রক্ষা করে। অধ্যাপক গেটেল (Gettell) প্রমুখ চিন্তাবিদদের য়সে অভিমত হলো আইনসভা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট হলে, কক্ষদুইটি পরস্পরের তামত ক্ষমতা ও কাজের সীমা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। 

তার ফলে শাসন বিভাগ  স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। আবার উচ্চকক্ষের আলোচনায় না। জনগণের সামগ্রিক কল্যাণের পরিবর্তে বিত্তবান শ্রেণির স্বার্থরক্ষার আগ্রহ বেশি প্রকাশ পায়। তাই উচ্চকক্ষকে প্রতিক্রিয়াশীল শ্রেণিস্বার্থ শিষ্ট সংরক্ষণ দুর্গ হিসেবে সমালোচনা করা হয়। অনেক সময় উচ্চকক্ষের গঠন অগণতান্ত্রিক। গণতন্ত্রের আদর্শ অনুসারে আইনসভা তার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হবে। কিন্তু কও উচ্চকক্ষে সাধারণত বিত্তবান, মনোনীত ও রক্ষণশীলদের নিয়ে গঠিত হয়। ইংল্যান্ডের লর্ডসভার সদস্যগণ উত্তরাধিকার সূত্রে পদ নিয়ে লাভ করেন। আর ভারতবর্ষের মতো সংসদীয় শাসনে দলীয় ল। মন্ত্রিসভার সমর্থনপুষ্ট ব্যক্তিগণ মনোনীত হওয়ার সুযোগ পান। শক। ফরাসি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আবে সিয়ে (Abbe Sieye's) বলেছেন, "If the second chamber agrees with the first, iti super fluous; if it disagrees it is pernicious." অর্থাৎ, ভাগ উচ্চপরিষদ নিম্ন পরিষদের সাথে একমত হলে তা বাহুল্য মাত্র, তা আর উচ্চপরিষদ যদি নিম্নপরিষদের সাথে একমত না হয়, তবে আজাদ তা অনিষ্টকর। উচ্চকক্ষের সদস্যরা নিম্ন লিখিতভাবে উচ্চকক্ষের সদস্য নির্বাচিত হন।


১. উত্তরাধিকার সূত্রে: 

কোনো কোনো দেশে উচ্চপরিষদ উত্তরাধিকার সূত্রে গঠিত হয়। যেমন: ব্রিটেনের লর্ডসভা সেখানে প্রত্যেক লর্ডের মৃত্যুর পর লর্ডের জ্যেষ্ঠপুত্র এ সভার সদস্য হন।


২. মনোনয়ন : 

কোনো কোনো দেশে উচ্চকক্ষ মনোনীত সদস্য কর্তৃক গঠিত। কানাডার সিনেট আজীবন মনোনীত সদস্য দ্বারা গঠিত।


৩. প্রত্যেক্ষ নির্বাচন: 

কোনো কোনো রাষ্ট্রে উচ্চকক্ষের সদস্য প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত। যেমন- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট।


৪. পরোক্ষ নির্বাচন: 

কোনো কোনো দেশে তা পরোক্ষ নির্বাচনের দ্বারা গঠিত হয়। যেমন- ফ্রান্সের উচ্চকক্ষ।


উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বিশ্বের প্রতিটি দেশের সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে আইনসভা অন্যতম। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের আইনসভা বিভিন্ন ধরনের। কোনো দেশে এককক্ষবিশিষ্ট আবার কোনো দেশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট। তবে আইনসভা যেমনই হোক আইনসভার প্রধান কাজ হবে যথাযথভাবে আইন প্রণয়ন করা। একটি রাষ্ট্রে আইনসভা তার কার্যাবলির মাধ্যমে নিজস্ব স্থান তৈরি করে যা তাকে চরম মর্যাদার আসনে আসীন করেছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post