উদারপন্থি নারীবাদ কি? উগ্র নারীবাদ কি? উদারপন্থি নারীবাদ ও উগ্র নারীবাদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা কর ।

উদারপন্থি নারীবাদ কি? উগ্র নারীবাদ কি? উদারপন্থি নারীবাদ ও উগ্র নারীবাদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা কর ।

উদারপন্থি নারীবাদ কি? উগ্র নারীবাদ কি? উদারপন্থি নারীবাদ ও উগ্র নারীবাদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা কর ।

উদারতাবাদ নামক রাজনৈতিক চিন্তাধারা থেকে উদারপন্থি নারীবাদ নামক তাত্ত্বিক চিন্তাধারার উদ্ভব ঘটেছে। উদারপন্থি নারীবাদের প্রবক্তাগণ হচ্ছেন মেরী ওলস্টোনক্রাফট, জন স্টুয়ার্ট মিল, হ্যারিয়েট টেইলর, বেটি ফ্রাইডান প্রমুখ। এদের মধ্যে প্রথম প্রবক্তা হলেন ব্রিটিশ উপযোগবাদী দার্শনিক জে.এস.মিল । তিনি ১৮৬৯ সালে তার প্রবন্ধ "The Subjection of Women" -এ নারীবাদ সম্পর্কে তার দর্শন ও চিন্তাধারা প্রকাশ করেন।

উদারপন্থি নারীবাদ কি :

উদারপন্থি নারীবাদ কি :

উদারপন্থি নারীবাদীরা সামাজিক ও কৃষ্টিগত ক্ষেত্রে জেন্ডার বৈষম্য দূরীকরণের পক্ষে মত দিয়েছেন। ব্রিটিশ উপযোগবাদী দার্শনিক জে.এস.মিল এই মতবাদের সমর্থন দেন। তাঁর প্রবন্ধ "The Subjection of Women" এ তিনি ১৮৬৯ সালে নারীবাদ সম্পর্কে তাঁর দর্শন ও চিন্তাধারা ব্যক্ত করেন। এই গ্রন্থে তিনি নারী-পুরুষের রাজনৈতিক ও আইনগত সমতার কথা ঘোষণা করেন। 

যুক্তির মাধ্যমে তিনি জোরালোভাবে নারীদের ভোটাধিকার দেওয়ার পক্ষে রায় দেন। উদারপন্থি নারীবাদীরা নারীর অধীনতায় বিশ্বাস করে না। তারা নারী-পুরুষ বৈষম্যের জন্য কতকগুলো উপাদানকে দায়ী করেন। এর মধ্যে রয়েছে কর্মস্থল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এবং গণমাধ্যমে নারীর বিরুদ্ধে বৈষম্য । তারা আইন প্রণয়ন এবং অন্যান্য গণতান্ত্রিক পন্থায় নারী

অধিকার এবং সমান সুযোগ সুবিধা প্রদানের পক্ষপাতী। তারা ইংল্যান্ডে নারী অধিকার রক্ষায় সে দেশে পাসকৃত Equal Pay Act, 1970, Sex Discrimination Act, 1975 এর পক্ষে সমর্থন দেন। তাদের ধারণা এসব আইন নারীর বিরুদ্ধে বৈষম্য দূর করতে সক্ষম হবে। তারা বর্তমান ব্যবস্থাধীনে সংস্কারের মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। "In this respect they are more moderate in their aims and methods than any radical and socialist feminists, who call for an overthrow of the existing system." 

আধুনিক উদারপন্থি নারীবাদী চিন্তাবিদদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বেটি ফ্রাইডান, নওমি উলফ ও মেরি ওলস্টোনক্রাফট । নওমি উলফ নারীদের সমান অধিকার ও সুযোগ সুবিধা দাবি করেন । তিনি সমাজের আমূল পরিবর্তনের পক্ষপাতী ছিলেন না। তাই তিনি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছেন । নারীবাদী লেখক বেটি ফ্রাইডানের মতে, নারীর অধস্তনের জন্য দায়ী শ্রম বিভাজন । 

তিনি মধ্যবিত্ত নারীদের অবস্থা বিশ্লেষণ করে বলেন যে, তারা স্বামী ও সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তিনি নারীর দুঃখকষ্টের জন্য তার মাতৃত্বের কার্যকেই দায়ী করেন। তিনি মনে করেন, নারীদের এ অবস্থা হতে বেরিয়ে আসতে হবে এবং শিক্ষা ও কর্মে নিযুক্ত হতে হবে। তবেই নারীরা পুরুষদের সমকক্ষতা অর্জন করতে পারবে।

আধুনিক নারীবাদী চিন্তাবিদদের মধ্যে মেরি ওলস্টোনক্রাফট অন্যতম। তিনি নারীদের মুক্তির জন্য ব্যাপক গবেষণা করেন। তাঁর রচিত 'A Vindication of the Rights of Women' গ্রন্থে তিনি নারীবাদী দর্শন আলোচনা করেন। ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে এ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। এ গ্রন্থে তিনি দেখিয়েছেন যে, নারী- পুরুষ বৈষম্যের মূল কারণ সমাজ। 

নারী শিক্ষার প্রতি তিনি ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁর মতে, শিক্ষার অভাবই নারীর হীনতা ও বন্দিত্বের জন্য দায়ী। এজন্য তিনি বলেন, “শিক্ষিত নারীরা গৃহস্থালির কাজ ও সন্তান পালনের দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করবে এবং তারা সমাজের কল্যাণে অবদান রাখবে।" তাঁর মতে শিক্ষাই জেন্ডার বৈষম্য দূর করে।

উদারপন্থি নারীবাদের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য :


প্রচলিত সমাজ কাঠামোর কোনোরূপ পরিবর্তন না করে পুরুষের ন্যায় নারীর সমান অধিকার অর্জনের আন্দোলন করাই হচ্ছে উদারপন্থি নারীবাদের উদ্দেশ্য। উদারপন্থি নারীবাদের তাত্ত্বিকদের বিভিন্ন নানা মতপার্থক্য থাকলেও অধিকাংশ উদারপন্থি নারীবাদের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিম্নরূপ :

১. নারীর সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা

২. নারীর সম্পত্তির অধিকার প্রতিষ্ঠা করা;

৩. নারীর পারিবারিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা;

৪. নারীর অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করা;

৫. নারীর রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং

৬. নারীর আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।

 

উদারপন্থি নারীবাদের বৈশিষ্ট্য :

উদারপন্থি নারীবাদ মূলত ফরাসি বিপ্লবের মহান বাণী সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতা দ্বারা এ মতবাদ প্রভাবিত হয়েছে, যা নারীর অধিকারকে অগ্রাধিকার দেয়। এ মতবাদ বিশ্লেষণ করলে নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো পাওয়া যায় :

১. অভিন্ন শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করার প্রতি গুরুত্বারোপ ।

২. নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য নারীর ভোটাধিকারের ব্যবস্থা করা।

৩. নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য নারী ও পুরুষের অর্থনৈতিক বৈষম্য কমানো।

৪. নারীর চিন্তার ও বাকস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করা।

৫. নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করা।

৬.  নারীর প্রতি সকল সহিংসতা (Violence) দূর করা।

৭. নারীর স্বকীয় সত্তা জাগিয়ে তার আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠা করা।

 

উদারপন্থি নারীবাদের সমালোচনা :

উদারপন্থি নারীবাদ কি? উগ্র নারীবাদ কি? উদারপন্থি নারীবাদ ও উগ্র নারীবাদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা কর ।

এ নারীবাদের কর্মসূচি, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং এর বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করলে এর কতকগুলো ত্রুটিবিচ্যুতি লক্ষ করা যায় । নিম্নে এগুলো তুলে ধরা হলো :

প্রথমত, এ নারীবাদ নারী-পুরুষ বৈষম্যের কারণ নিয়ে কথা বললেও নারী-পুরুষ বৈষম্য নিরসনে কার্যকর কোনো পন্থা অনুসরণ করে না ।

দ্বিতীয়ত, এ মতবাদ অর্থনৈতিক আদর্শ তথা পুঁজিবাদ, সমাজতান্ত্রিক ও ইসলামি অর্থব্যবস্থায় নারীকে কীভাবে অর্থনৈতিক মুক্তি সম্ভব তা স্পষ্ট করে বলেনি ।

তৃতীয়ত, এ মতবাদ বিভিন্ন রাষ্ট্রভেদে নারী আন্দোলন যে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে তা আলোকপাত করেনি।

 

উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, উদারপন্থি নারীবাদী আন্দোলন একটি প্রাতিষ্ঠানিক আন্দোলন। এ আন্দোলনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। এ আন্দোলনের পথ ধরেই নারীরা ধীরে ধীরে লিঙ্গ, আইনগত, রাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধা লাভের মাধ্যমে নিজের, পরিবারের, সমাজের এমনকি রাষ্ট্রেরও উন্নয়ন ঘটাচ্ছে এবং সেই সঙ্গে প্রতিটি ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমতা আনয়নের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ আন্দোলন আরও জোরদার করতে পারলে নারীর অধিকার শতভাগ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

 

উগ্র নারীবাদ কী? উগ্র নারীবাদ বিশ্লেষণ কর ।

উদারপন্থি নারীবাদ কি? উগ্র নারীবাদ কি? উদারপন্থি নারীবাদ ও উগ্র নারীবাদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা কর ।

নারী ও রাজনীতির তাত্ত্বিক ভিত্তি হচ্ছে নারীবাদ । নারীবাদ আন্দোলনের পক্ষে যুক্তি, তত্ত্ব ও শক্তি যোগায় । তবে নারীবাদ অভিন্ন কোনো মতবাদ বা তত্ত্ব নয় । কেননা নারীবাদী গবেষকদের মধ্যে মত ও পথের বিভিন্নতা রয়েছে। নারীবাদী সমালোচকগণ নারী ও সমাজকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছেন ও নারীবাদের তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ফলে তাদের মত ও পথের বিভিন্নতার কারণে নারীবাদের বিভিন্ন ধারা বা মতবাদ বা তত্ত্বের উদ্ভব ঘটেছে। এর মধ্যে উগ্র নারীবাদ অন্যতম। উগ্র নারীবাদ বিভিন্ন ধারায় বিকশিত হয়েছে।

উগ্র বা প্রগতি নারীবাদ :

৬০-এর দশকের শেষ থেকেই ক্রমে নারীবাদী আন্দোলনের মধ্যে কয়েকটি ধারা স্বতন্ত্ররূপ নিতে থাকে। নারীর পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে যারা 'নারী-পুরুষের জৈবিক সম্পর্কের ফল হিসেবে' মন্তব্য করেছেন, তাঁরাই পরে আমূল নারীবাদী (Radical Feminist) নামে পরিচিতি লাভ করেন। আমূল নারীবাদী প্রবক্তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন কেট মিলেট (Kete Millett), মেরিলিন ফ্রেন্স (Marilyn French), সুলামিথ ফায়ারস্টোন (Shulamith Firestone), মেরী ড্যালি (Mary Dely), এ্যান ওকলে (Ann Oakely) প্রমুখ। এই নারীবাদের মূল বক্তব্য হলো লৈঙ্গিক পীড়নের মাধ্যমে পুরুষ নারীকে শোষণ করে।

উদারপন্থি নারীবাদীদের মতে, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে নারীর সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রচলিত অসম ও বৈষম্যমূলক সমাজব্যবস্থা উচ্ছেদ করে একটি সুসম, সমতাপূর্ণ, সহযোগিতামূলক, ন্যায্যতাভিত্তিক আদর্শ সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলাই নারীবাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য । কিন্তু র‍্যাডিক্যাল বা প্রগতি নারীবাদী প্রবক্তারা প্রচলিত সমাজব্যবস্থা, বিশেষত বিদ্যমান সেক্স বা জেন্ডার ব্যবস্থা বহাল রাখার বিরোধিতা করেন। তাঁদের মতে, নারী নির্যাতনের মূল কারণ সেক্স বা জেন্ডার ব্যবস্থা ।


উগ্র বা প্রগতি নারীবাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য :

উদারপন্থি নারীবাদ কি? উগ্র নারীবাদ কি? উদারপন্থি নারীবাদ ও উগ্র নারীবাদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা কর ।

প্রগতি বা উগ্র নারীবাদ বিগত শতকের ষাটের দশকের একটি বৈপ্লবিক নারীবাদী আন্দোলন। এ মতবাদের মূল বিষয় হচ্ছে পুরুষ নারীকে শোষণ করে লিঙ্গগত নিপীড়নের মাধ্যমে। নিম্নে উগ্র নারীবাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ তুলে ধরা হলো :

১. উগ্র/প্রগতি নারীবাদের মূল আন্দোলন মূলত পুরুষতন্ত্রের মূলোৎপাটন করা।

২.এ নারীবাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে প্রগতিশীল আন্দোলনের মাধ্যমে নারী নিপীড়ন বন্ধ করা।

৩. পুরুষ কর্তৃক নারী নিপীড়ন বন্ধ করতে সচেতনতা সৃষ্টি করা ।

৪. নারী-পুরুষের অসম সমাজব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে একটি সমতাপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা ।

৫. প্রগতি নারীবাদ সমাজ বৈষম্যের জন্য লড়াই-সংগ্রামে বিশ্বাসী ।


প্রগতি নারীবাদের বৈশিষ্ট্য :

প্রগতি নারীবাদ সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রচলিত অসম ও বৈষম্যমূলক সমাজব্যবস্থার মূলোৎপাটনের মাধ্যমে নারীমুক্তির কথা বলে। প্রগতি নারীবাদী আন্দোলন বিশ্লেষণ করলে নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়:

১. প্রগতি নারীবাদীরা মনে করে লিঙ্গভিত্তিক শ্রমবিভাজন পুঁজিবাদকে সংরক্ষণ করে।

২. প্রগতি নারীবাদ নারীকে অধস্তন গণ্য করার মূল কারণ হিসেবে সেক্সকে চিহ্নিত করে।

৩. প্রগতি নারীবাদ মনে করে নারীর যৌন অধিকার বা প্রজনন প্রক্রিয়ার ওপর নারীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকা আবশ্যক ।

৪. প্রগতি নারীবাদ পুরুষতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে নারী-পুরুষের সমতাপূর্ণ একটি উভয় লিঙ্গভিত্তিক সমাজ গঠনে বিশ্বাসী।

৫. প্রগতি নারীবাদে জৈবিক মাতৃত্বের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পরিলক্ষিত হয়।

৬. প্রগতি নারীবাদ বিবাহ ব্যবস্থা তথা পরিবার প্রথার বিলুপ্তি দাবি করে।

৭. প্রগতি নারীবাদ উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নারীর সন্তান জন্মদানকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় ।

প্রগতি নারীবাদের সমালোচনা :

প্রগতি নারীবাদ একটি উগ্রপন্থি নারীবাদ হিসেবে পরিচিত। তাই নারীবাদী আন্দোলনের এ ধারা সম্পর্কে সমালোচনাও কম হয়নি। প্রগতি নারীবাদের বিরুদ্ধে যেসব সমালোচনা রয়েছে তা নিম্নে তুলে ধরা হলো:


প্রথমত, প্রগতি নারীবাদ নারীর জৈবিক মাতৃত্বে বিশ্বাসী নয় তারা সামাজিক মাতৃত্বে বিশ্বাসী। কিন্তু বাস্তবে সামাজিক মাতৃত্ব হয়তো কদাচিৎ দেখা যায়।

দ্বিতীয়ত, প্রগতি নারীবাদ যেসব যৌন স্বাধীনতা চায় তা পৃথিবীর সকল সক্ষম ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় সম্ভব নয়। ফলে এ আন্দোলন তার সর্বজনীন রূপ হারিয়েছে।

তৃতীয়ত, প্রগতি নারীবাদ সংস্কারে নয়, বিপ্লবে বিশ্বাসী। অর্থাৎ বৈপ্লবিক পন্থায় তারা লিঙ্গবৈষম্য দূর করতে চায়। কিন্তু বিপ্লব এর রূপরেখা প্রণয়নের কোনো সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই এ আন্দোলনে ।

চতুর্থত, প্রগতি' নারীবাদ পুরুষতান্ত্রিকতার ওপর যেভাবে লিপ্ত অধস্তনতার অন্য উপাদানের ওপর ততটা লিপ্ত নয় । অর্থাৎ নারী অধস্তনতার অন্যান্য কারণের যথাযথ ব্যাখ্যা করেননি।

পঞ্চমত, প্রগতি নারীবাদ বিবাহ ব্যবস্থা এবং পরিবার প্রথার বিলুপ্তি কামনা করে । কিন্তু বিদ্যমান সমাজ বাস্তবতায় এটি স্পষ্ট যে মানবসভ্যতা, যতদিন টিকে থাকবে বিবাহ ও পরিবার ব্যবস্থা ততোদিন অটুট থাকবে ।


উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, প্রগতি নারীবাদ বিভিন্ন ধারায় বিকশিত হয়েছে। প্রগতি নারীবাদের মতে, যেহেতু নারী অধীনতা জৈবিক, তাই নারীমুক্তির জন্য জৈবিক বিপ্লব জরুরি। রেডিক্যাল নারীবাদের অন্যতম লক্ষ্য পিতৃতন্ত্রের পতন এবং স্ত্রীর সমতা বিধান। এ নারীবাদ নারীমুক্তি প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী । প্রগতি নারীবাদ নারীমুক্তির জন্য উগ্রপন্থা গ্রহণে বিশ্বাসী হওয়ায় এ আন্দোলন ততটা জনপ্রিয়তা লাভ করেনি ।

Post a Comment

Previous Post Next Post