মুদ্রা কি? বিভিন্ন প্রকার মুদ্রার বর্ণনা দাও। সংকীর্ণ ও বিস্তৃত মুদ্রার মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ কর। কালো টাকা কী?

 


মুদ্রার কি?

জার্মান অর্থনীতিবিদ G. F. Knapp তার 'The State Theory of Mone' বইতে অর্থকে আইনগতভাবে বিবেচনা করেন। তার চিন্তা পরবর্তী সময়ে Hauetrey, D. H. Robertson, G. D. H Cole, Seligman প্রমুখ অর্থনীতিবিদ সমর্থন করেন এবং তারা অর্থের আইনগত সংজ্ঞা প্রদান করেন।

মুদ্রার আইনগত সংজ্ঞা: 

সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য কোনো সম্পদকে অর্থ বলা যায়। সরকারের কাগজি নোট বা ধাতব মুদ্রা বস্তুর গ্রহণযোগ্যতা আছে। ফলে একমাত্র একে অর্থ বলা যায়। গ্রহণযোগ্যতা ছাড়া অর্থের অন্য বৈশিষ্ট্য তারা বিবেচনা করেনি। ফলে এ সংজ্ঞা বাস্তবে সমর্থনযোগ্য নয় । Knapp এবং তার অনুসারীদের মতে অর্থ বলতে শুধু বিহিত মুদ্রা বুঝায় । ঐতিহাসিকভাবে দেখা যায় বহু রাষ্ট্র বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মুদ্রা (Legal tender) প্রচলন করলেও সময় ব্যবধানে কার্যকরী মুদ্রা হিসেবে কাজ করেনি

জন.জি.রেনলেটের মতে, অর্থ হচ্ছে এমন একটি জিনিস যার ব্যয়ের যোগ্যতা আছে এবং লেনদেনের একক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

পরিশেষে বলা যায় যে, অর্থ বিনিময়ের সার্বজনীন মাধ্যম। | বর্তমান সময়ে অর্থের বিকল্প কোনো কিছু চিন্তাই করা যায় না। | আলোচ্য অংশে অর্থের আইনগত ভিত্তি ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

বিভিন্ন প্রকার মুদ্রার বর্ণনা দাও।

উত্তর আধুনিক সমাজে অর্থের ভূমিকা অনেক এবং সুদূরপ্রসারী। বর্তমান যুগে মুদ্ৰা বৃহদায়তন উৎপাদনের সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করে, আবার দ্রব্য ও সেবার দ্রুত বণ্টনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।

বিভিন্ন প্রকার মুদ্রা: মুদ্রাকে আকৃতি অনুযায়ী তিন ভাগে ভাগ করা যায় । যথ:

ক. দৈহিক আকৃতি,

খ. আইনগত স্বীকৃতি এবং

গ. প্রকৃতিগত আকৃতি ।


ক. দৈহিক আকৃতি অনুযায়ী অর্থের প্রকারভেদ:


১. ধাতব মুদ্রা: 

এক বা একাধিক ধাতু দ্বারা তৈরি মুদ্রাকে ধাতব মুদ্রা বলে। ধাতব মুদ্রা সাধারণত কম মূল্যমানের হয় । যেমন বাংলাদেশ সরকার ৫ টাকা, ২ টাকা, ১ টাকা, ৫০ পয়সা এবং ২৫ পয়সা ধাতব মুদ্রা ইস্যু করে। ছোটখাট লেনদেনের জন্য এরূপ ধাতব মুদ্রার ব্যবহার বেশি হয়। যেকোনো দেশের অর্থের মোট যোগানের অতি অল্প অংশ হলো এরূপ ধাতব মুদ্রা ।

২. কাগজি মুদ্রা:

টেকসই এবং উন্নতমানের কাগজে এরূপ মুদ্রা বা নোট ছাপানো হয়। ছোট থেকে বড় মূল্যমানের কাগজি নোট সাধারণত পরিলক্ষিত হয়। বড় মূল্যমানের কাগজি নোট কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছাপায়। আর ছোট মূল্যমানের নোট সাধারণত সরকারি দায়িত্বে ছাপানো হয়। যেমন- বাংলা টাকার কাগজি নোট সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় ইস্যু করে। অন্যদিকে ৫ টাকা থেকে ৫০০ টাকা মূল্যমানের কাগজি নোট বাংলাদেশ ব্যাংক প্রচলন করে। যেকোনো দেশে অর্থের মোট যোগানের সিংহভাগ হলো এ কাগজি মুদ্রা।

৩. ব্যাংক মুদ্রা: 

একে ব্যাংকের আমানতী মুদ্রাও বলে। সাধারণত বাণিজ্যিক এবং অপরাপর ব্যাংক গচ্ছিত চাহিদা আমানতের বিপরীতে চেক ইস্যু করে গ্রহণ করা তাদের দায়দেনা মিটাতে পারে। অর্থাৎ চাহিদা আমানতকে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এজন্য ব্যাংকের চাহিদা আমানত হলো এক ধরনের অর্থ। উন্নত দেশে এরূপ অর্থের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে লেনদেন হয় ।

৪. প্রামাণিক মুদ্রা: 

ধাতব মুদ্রার একটি অন্যতম ধরন হলো প্রামাণিক মুদ্রা। এ ধরনের মুদ্রার দৈহিক মান এবং অপরাপর ব্যাংকে ধাতব মূল্য সমান হয়। এজন্য একে পূর্ণ দৈহিক ধাতব মুদ্রাও বলা হয় । ভারতবর্ষে ১৮৩৫-৯৩ সময়সীমায় এরূপ মুদ্রা প্রচলিত ছিল ।

৫. প্রায় মুদ্রা:

ব্যাংকে জমা মেয়াদি আমানত, প্রাইজ বন্ড, সঞ্চয়পত্র, ট্রেজারি বিল ইত্যাদি চাহিদা আমানতের মতো সরাসরি লেনদেন কাজে ব্যবহার করা যায় না। তবে সামান্য খরচ করলে এদেরকে নগদ অর্থে রূপান্তর করে লেনদেনের জন্য ব্যবহার করা যায়। এজন্য এসব সম্পদকে প্রায় অর্থ বলা হয়ে থাকে ।

৬. প্রতীকী মুদ্রা:

প্রতীকী মুদ্রা হলো ধাতব মুদ্রার অন্য এক ধরন! এরূপ মুদ্রার দৈহিক মূল্য এর ধাতব মূল্যের চেয়ে বেশি হয়। যেমন বাংলাদেশে ৫ টাকা মূল্যমানের যে ধাতব মুদ্রা রয়েছে তার দৈহিক মূল্য এর ধাতব মূল্যের চেয়ে বেশি। অর্থাৎ ৫ টাকা মূল্যমানের একটি ধাতব মুদ্রা গলিয়ে ধাতুতে রূপান্তর করলে তার মান ৫ টাকায় কম হবে। এজন্য বেশিরভাগ দেশে যেসব ধাতব মুদ্রা আছে সেগুলো বেশিরভাগ প্রতীকী মুদ্ৰা ।


খ. আইনের দৃষ্টিতে মুদ্রার প্রকারভেদ: 

আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে মুদ্রা নিম্নোক্ত ধরনের হয়।

১. বিহীত মুদ্রা:

যে মুদ্রা সরকারি বিধিবিধানের বিপরীতে প্রচলন করা হয় এবং লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করতে জনগণ বাধ্য থাকে তাকে বিহীত মুদ্রা বলে। বাংলাদেশে ১ টাকা থেকে ১০০০ টাকার কাগজি নোট এবং বিভিন্ন মূল্যমানের ধাতব মুদ্রাকে বিহীত মুদ্রা বলা হয়। বিহীত মুদ্রা আবার দুই ধরনের হয় ।যথা:

ক. সসীম বিহীত মুদ্রা এবং

খ. অসীম বিহীত মুদ্রা।

২. ঐচ্ছিক মুদ্রা:

যে মুদ্রার বিপরীতে আইনের বৈধতা নেই তবে লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণযোগ্য তাকে ঐচ্ছিক মুদ্রা বলে। চেক, ব্যাংকের ড্রাফট, বিনিময় বিল, প্রমিসরি নোট ইত্যাদিকে ঐচ্ছিক মুদ্রা বলা হয়। কারণ দায়দেনা মিটানোর মাধ্যম হিসেবে এগুলো গ্রহণের জন্য কাউকে বাধ্য করা যায় না। অধ্যাপক D. H. Robertson বিহীত মুদ্রাকে সাধারণ মুদ্রা এবং ঐচ্ছিক মুদ্রাকে ব্যাংক মুদ্রা বলেন।

গ. প্রকৃতি অনুযায়ী অর্থের প্রকারভেদ: 

বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ জে. এম. কেইনস প্রকৃতিভেদে অর্থকে নিম্নোক্ত চার ভাগে ভাগ করেছেন :

১. প্রকৃত মুদ্রা যে মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে দেশে প্রচলন হয় বা প্রচলিত দেখা যায় তাকে প্রকৃত মুদ্রা বলে। এরূপ মুদ্রার মাধ্যমে দেশে লেনদেন হয়। অধ্যাপক এফ. বেনহাম একে কাে ইউনিট এবং অধ্যাপক E. A. G. Seligman একে প্রকৃত মুদ্রা বলেন। প্রকৃত মুদ্রাকে আবার কেইনস দুই শ্রেণিতে ভাগ করেন। যথা:

ক. পণ্য মুদ্রা এবং

খ. প্রতিনিধিত্বমূলক মুদ্রা।

কোনো বিশেষ পণ্যকে মুদ্রা হিসেবে পছন্দ করলে তাকে পণ্য মুদ্রা বলে। অন্যদিকে ধাতব মুদ্রা অথবা রূপান্তরযোগ্য কাগজি নোট হলো প্রতিনিধিত্বমূলক মুদ্রা।

২. হিসাবি মুদ্রা: 

দেনাপাওনা, মূল্য এবং সাধারণ ক্রয়ক্ষমতা যে মুদ্রার মাধ্যমে প্রকাশ হয় তাকে হিসাবি মুদ্রা বলে। এ ধরনের মুদ্রার সাহায্যে বিভিন্ন লেনদেনের হিসাব দেশে প্রচলিত রয়েছে। 

৩. আদিষ্ট মুদ্রা:

যে মুদ্রার নিজের কোনো মূল্য নেই অথচ সরকারি বিধিবিধানের কারণে মানুষ লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করতে বাধ্য হয় তাকে আদিষ্ট মুদ্রা বলে। যেমন বাংলাদেশে বেশি মূল্যমানের কাগজি নোটের উপরে লেখা থাকে: চাহিবামাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে। এরূপ কাগজি নোটের নিজের কোনো মূল্য নেই। কিন্তু আইনগত স্বীকৃতি থাকায় এরূপ নোট বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে দেশে প্রচলিত রয়েছে। 

৪. শক্তিশালী মুদ্রা:

শক্তিশালী মুদ্রা বলতে জনগণের হাতে রাখা কারেন্সি। এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা অপরাপর ব্যাংকের রিজার্ভের সমষ্টি বুঝায়। পরিশেষে বলা যায় যে, অর্থের প্রকারভেদ প্রধানত তিন প্রকার আর এ তিন ধরনের অর্থ আবার কয়েক প্রকার অংশে দেখানো হয়েছে।

 

সংকীর্ণ ও বিস্তৃত মুদ্রার মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ কর।

মুদ্রার কি? বিভিন্ন প্রকার মুদ্রার বর্ণনা দাও। সংকীর্ণ ও বিস্তৃত মুদ্রার মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ কর। মুদ্রা ও প্রায় মুদ্রার মধ্যে পার্থক্য লেখ। কালো টাকা কী?

উত্তর মেয়াদি আমানত যেকোনো সময় লেনদেন কাজে ব্যবহার করা যায় না। এ আমানত বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। মেয়াদি হিসাবে রাখা অর্থের তারল্য নগদ অর্থ বা চলতি হিসাবে রাখা অর্থের তারল্যের চেয়ে কম।

সংকীর্ণ ও বিস্তৃত মুদ্রার মধ্যে পার্থক্য:

মেয়াদি হিসাবে অর্থকে নগদ অর্থে বা চলতি হিসেবে রূপান্তর করতে সময় লাগে । এজন্য কিছু আর্থিক ব্যয় পড়ে ।সংকীর্ণ মুদ্রার তারল্য বিস্তৃত মুদ্রার তারল্যের চেয়ে বেশি। এজন্য প্রতিষ্ঠানিক এবং কার্যগত দিক থেকে সংকীর্ণ অর্থের ধারণা বেশি জনপ্রিয়। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল ক. সংকীর্ণ এবং খ. বিস্তৃত অর্থে মুদ্ৰা সরবরাহের সংজ্ঞা প্রকাশ করে। তফশিলী ব্যাংকে জমাকৃত চাহিদা আমানতের সমষ্টি বুঝায় ।

M = Cu + DD

যেখানে M1 = সংকীর্ণ মুদ্রা,

Cu = জনগণের কাছে রক্ষিত অর্থ এবং

DD = ব্যাংকের চাহিদা আমানত ৷

১. তারল্যের মাত্রাভেদে সংকীর্ণ এবং বিস্তৃত অর্থের মধ্যে পার্থক্য টানা যায়। বিস্তৃত অর্থ সংকীর্ণ অর্থ এবং মেয়াদি আমানত যোগফল। জনগণ মেয়াদি আমানত যেকোনো সময়ে লেনদেনের কাজে ব্যবহার করতে পারে না। কারণ এ আমানত বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। ধরি, কোনো লোক একটি টেলিভিশন ক্রয় করতে চায়।

তাকে প্রথমে মেয়াদি আমানত চলতি হিসেবে অথবা নগদ অর্থে রূপান্তর করতে হবে। কারণ মেয়াদি আমানতের তারল্য নগদ অর্থ বা চলতি হিসাবে জমা অর্থের তারল্যের চেয়ে কম । মেয়াদি হিসাবের অর্থকে নগদ অর্থ বা চলতি হিসাবে রূপান্তর করতে সময় লাগে। এজন্য কিছু আর্থিক ব্যয় পড়ে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বাংলাদেশে কোনো মেয়াদি হিসেবে জমার অর্থ অসময়ে নগদ অর্থে রূপান্তর করতে হলে আমানতকারীকে কিছু সুদ ছেড়ে দিতে হয় ।

২. সময় এবং ব্যয়ের কথা চিন্তা করলে বলা যায়, সংকীর্ণ অর্থের তারল্য বিস্তৃত অর্থের তারল্যের চেয়ে বেশি। ফলে প্রাতিষ্ঠানিক এবং কার্যগত দিক থেকে সংকীর্ণ অর্থের ধারণা বেশি জনপ্রিয়।

৩. প্রমুখ অর্থনীতিবিদের গবেষণা থেকে দেখা যায়, সংকীর্ণ অর্থের চেয়ে বিস্তৃত অর্থ জাতীয় আয়ের সাথে বেশি জড়িত। সুতরাং মুদ্রানীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিস্তৃত অর্থের ধারণা সংকীর্ণ ধারণার চেয়ে বেশি পছন্দ করা উচিত। 


পরিশেষে বলা যায় যে, সংকীর্ণ মুদ্রার চেয়ে বিস্তৃত মুদ্রা জাতীয় আয়ের সাথে বেশি জড়িত। আর্থিক নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে তাই ব্যাপক মুদ্রার ধারণা সংকীর্ণ মুদ্রার চেয়ে বেশি পছন্দ করা উচিত। সংকীর্ণ ও বিস্তৃত মুদ্রার মধ্যে আলোচ্য পার্থক্যগুলো পরিলক্ষিত হয়।

মুদ্রা ও প্রায় মুদ্রার মধ্যে পার্থক্য লেখ ।

কিছু সম্পদ আছে যাদের মধ্যে অর্থের কিছু গুণাগুণ আছে। এদেরকে প্রায় অর্থ বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ, বাণিজ্যিক ব্যাংকের মেয়াদি আমানত, স্বল্পমেয়াদি সরকারি ঋণপত্র, সঞ্চয়ী এবং ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের আমানতি দায় ইত্যাদির কথা বলা যায় ।

 

অর্থ এবং প্রায় অর্থের মধ্যে পার্থক্য: 

মিউচ্যুয়াল সঞ্চয়ী ব্যাংক, ক্রেডিট ইউনিয়ন এবং অপরাপর অব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঞ্চয়ী আমানত ও প্রায় অর্থের আওতায় আসে। এসব আমানত অনেকটা তরল। এদেরকে স্বল্প ব্যয়ে নগদ অর্থে রূপান্তর করা যায়। এ সম্পদ সুদ অর্জন করে। ফলে এরা মূল্যের সংরক্ষক হিসেবে কাজ করে। সুতরাং প্রায় অর্থ বলতে এমন সব সম্পদ বুঝায় যেগুলো মোটামুটি তরল এবং সুদ অর্জন করে অথচ নগদ অর্থের বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে।

অর্থ বলতে কারেন্সি এবং চাহিদা আমানতের যোগফল বুঝায়। লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করলে অর্থের যোগান বলতে এ দুই উপাদানের যোগফল বুঝায়। কিন্তু অর্থ শুধু বিনিময়ের মাধ্যম নয়। এটি মূল্যের সংরক্ষক হিসেবেও কাজ করে। এ কাজ করলে প্রায় অর্থের উদ্ভব হয়। এ দুই ধারণার মধ্যে নিম্নোক্ত, পার্থক্য টানা যায়:

i. বিভিন্ন সম্পদের মধ্যে কারেন্সি এবং চাহিদা আমানত হলো সবচেয়ে তরল সম্পদ। প্রায় অর্থের তারল্য কম ।

ii. নগদ অর্থ বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে সরাসরি কাজ করে। কিন্তু প্রায় অর্থ পরোক্ষভাবে কাজ করে ।

iii. প্রায় অর্থ নগদ অর্থে ব্যয় করতে কিছু ব্যয় হয় । অর্থাৎ লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে প্রায় অর্থ ব্যবহারের কিছু ব্যয় আছে। নগদ

অর্থের বেলায় মালিককে এরূপ ব্যয় করতে হয় না ।

iv. প্রায় অর্থ সুদ অর্জন করতে পারে। নগদ অর্থের বেলায় এরূপ সুযোগ নেই ।

পরিশেষে বলা যায় যে, বিস্তৃত অর্থ বিবেচনা করলে অর্থের সংজ্ঞায় প্রায় অর্থ অন্তর্ভুক্ত হয়। তাই এ দুই উপাদানের মধ্যে ধারণাগত পার্থক্য আছে।

কালো টাকা কী?

মুদ্রার কি? বিভিন্ন প্রকার মুদ্রার বর্ণনা দাও। সংকীর্ণ ও বিস্তৃত মুদ্রার মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ কর। মুদ্রা ও প্রায় মুদ্রার মধ্যে পার্থক্য লেখ। কালো টাকা কী?

কোনো দেশে কাগজি নোট অথবা ধাতব মুদ্রা লেনদেনের মাধ্যম এবং মূল্যের সংরক্ষক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এ মুদ্রার যে অংশ লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার না হয়ে লুক্কায়িত মজুতের আকারে থাকে তাকে কালো মুদ্রা বা টাকা বলা হয় ।

কালো টাকা: 

এককথায় কোনো ব্যক্তি তার কাছে থাকা টাকার যে অংশ অর্থনৈতিকভাবে মজুত রাখে অথবা কোনো অবৈধ কাজ কারবারে বিনিয়োগ করে তখন ঐ অংশকে কালো টাকা বলা হয়।

সাধারণত কর এড়ানো অথবা ফাঁকি দেওয়ার জন্য ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠান অনেক সময় উপার্জিত আয়ের একাংশ এর কর্তৃপক্ষের কাজে ঘোষণা নাও দিতে পারে। এভাবে লুকিয়ে রাখা অথবা অঘোষিত আয় হলো কালো টাকা যা আইনত অবৈধ। কালো টাকা যেভাবে সৃষ্টি হয়:

১. উৎকোচ অথবা ঘুষ গ্রহণ ।

২. রপ্তানি মূল্য কম দেখানো এবং আমদানি মূল্য বেশি দেখানো ।

 ৩. মাদকদ্রব্য উৎপাদন ও বিক্রি থেকে অর্জিত টাকা ।

৪. চোরাকারবার থেকে অর্জিত অর্থ চোরাচালানকারী গুপ্তভাবে সংরক্ষণ করে ।

৫. গোপন ব্যবসা বাণিজ্য থেকে অর্জিত অর্থ বা আয় করের আওতায় আসে না ।

৬. মুদ্রার কালোবাজারি থেকে অর্জিত অতিরিক্ত টাকা ।

পরিশেষে বলা যায় যে, কালো টাকা হলো অপ্রদর্শিত আয়ের অংশ । কালো টাকা বিভিন্নভাবে সৃষ্টি হয় যার মধ্যে আলোচ্য বিষয়গুলো প্রধান ।

Post a Comment

Previous Post Next Post