খলিফা হযরত ওমর (রা.)-এর প্রশাসনিক সংস্কারসমূহ মূল্যায়ন কর।


খলিফা হযরত ওমর (রা.)-এর প্রশাসনিক সংস্কারসমূহ মূল্যায়ন কর।

খলিফা হযরত ওমর (রা.)-এর প্রশাসনিক সংস্কারসমূহ মূল্যায়ন কর।

হযরত ওমর (রা.) ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা । তিনি মুসলিম প্রশাসনের ক্রমবিকাশে অনবদ্য অবদান রেখেছেন। মুসলিম প্রশাসনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন মৌলিক উদ্ভাবনকারী। বিজেতা, শাসক, সংস্কারক, রাজনীতিক ও সংগঠক হিসেবে তিনি মুসলিম প্রশাসনের সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ডের দ্বারা একে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি মুসলিম সাম্রাজ্যকে ইসলামের মূলমন্ত্র সাম্য ও গণতন্ত্রের ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। প্রশাসনিক কাঠামোর সুদৃঢ়ীকরণের জন্য তাঁকে Administrative Genius বলা হতো ।

খলিফা হযরত ওমর (রা.)-এর প্রশাসনিক সংস্কারসমূহ :

হযরত ওমর (রা.) ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম খিলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ৬৩৪-৬৪৪ খ্রিস্টাব্দে দীর্ঘ প্রায় দশ বছর তিনি শাসনব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কার সাধন করেন যা মুসলিম প্রশাসনকে সুদৃঢ় ও সুসংবদ্ধভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করে এবং ইসলামী রাষ্ট্রের বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করে। নিম্নে হযরত ওমর (রা.)-এর প্রশাসনিক সংস্কারগুলো তুলে ধরা হলো :

১. বায়তুলমাল : 

হযরত ওমর (রা.) তাঁর রাজ্যের পরিধি বেড়ে গেলে রাজ্যের সব খাত থেকে আগত রাজস্ব সংরক্ষণ করার জন্য ওয়ালিদ বিন হিশামের পরামর্শক্রমে বায়তুলমাল গঠন করেন। মদিনায় সর্বপ্রথম খলিফা হযরত ওমর (রা.) বায়তুলমাল প্রতিষ্ঠা করেন ।

২. গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা : 

খলিফা হযরত ওমর (রা.) ছিলেন একজন গণতান্ত্রিক শাসক। তাঁর নিকট আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান ছিল। একতা, সাম্য ও সব নাগরিকের সমান অধিকার ছিল তাঁর সরকারের প্রধান বৈশিষ্ট্য। মওলানা মুহম্মদ আলি বলেন, হযরত ওমর (রা.)-এর সময় গণতন্ত্রের আদর্শ যতদূর বহন করা হয়েছিল; সে আদর্শ অর্জন করতে বিশ্বের আরও সময় লাগবে। 

৩. সামরিক বিভাগ : 

খলিফা ওমর (রা.) যুদ্ধ প্রস্তুতির জন্য একটি সুশৃঙ্খল ও সুসংগঠিত মুসলিম সামরিক বাহিনী গঠন করেন। তিনি সাম্রাজ্যকে ৯টি জুনদ বা সামরিক জেলায় বিভক্ত করেন। এসব স্থানে সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করেন। প্রত্যেক ঘাঁটিতে ৪০০ অশ্বারোহী সৈন্য মোতায়েন থাকত ।

৪. দিওয়ান আল খারাজ :

হযরত ওমর (রা.) রাজস্বের আয়ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণের জন্য দিওয়ান আল খারাজ নামে একটি সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করেন। প্রশাসনিক সুবিধার জন্য দিওয়ানকে আয় ও ব্যয়ের খাত- এ দুভাগে ভাগ করেন । 

৫. বিচার বিভাগ : 

হযরত ওমর (রা.)-এর সময় প্রশাসনিক কাঠামোর দুটি পৃথক বিভাগ ছিল। এদের মধ্যে বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করে স্বাধীন বিচার বিভাগ গঠন করা হয়। হযরত ওমর (রা.) ছিলেন বিচার বিভাগের সর্বময় কর্তা । তাঁর বিচার বিভাগে আইনের চোখে সবাই সমান ছিল ।

৬. পুলিশ বিভাগ : 

খলিফা হযরত ওমর (রা.) জনসাধারণের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা এবং অপরাধমূলক তৎপরতা দমনের জন্য সর্বপ্রথম খিলাফতে একটি পুলিশ বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া তিনি রাতে নগর পাহারার জন্য সাহিব আল শুরতা নামক একটি পৃথক বাহিনী গঠন করেন।

খলিফা হযরত ওমর (রা.)-এর প্রশাসনিক সংস্কারসমূহ মূল্যায়ন কর।

৭. গুপ্তচর বাহিনী : 

খলিফা হযরত ওমর (রা.) শাসনব্যবস্থাকে দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য গুপ্তচর বাহিনী গঠন করেন। প্রাদেশিক শাসন সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করার জন্য তিনি গুপ্তচর নিযুক্ত করেন এবং তার মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের ওপর সরাসরি দৃষ্টি রাখেন।

৮. ভাতা প্রদান ও তালিকা প্রণয়ন:

হযরত ওমর (রা.) মুসলমানদের ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করেন। প্রয়োজনীয় খরচ মেটানোর পর যে উদ্বৃত্ত অর্থ থাকত তা তিনি জনগণের কল্যাণের জন্য দরিদ্রদের মধ্যে প্রদান করতেন। এ লক্ষ্যে আদমশুমারি করে ভাতা প্রদানের তালিকা প্রণয়ন করা হয় । এ তালিকায় দাসদাসীরাও ছিল।

৯. রাজস্ব প্রশাসন : 

হযরত মুহম্মদ (সা.) ইসলামের রাজস্ব ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করে গিয়েছেন। হযরত ওমর (রা.) এক্ষেত্রে কোনো সংস্কার ছাড়া মহানবি (সা.)-এর রাজস্ব ব্যবস্থাকে অনুরূপ রাখেন। তবে তাঁর সময় অশ্বের ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় হযরত ওমর (রা.) অশ্বের ওপর জাকাত ধার্য করেন। 

১০. মজলিস উস শুরা :

 হযরত ওমর (রা.) বিশ্বাস করতেন যে পরামর্শ ছাড়া কোনো খিলাফত চলতে পারে না। ফলে তিনি জনসাধারণের পরামর্শ নিয়ে শাসনকার্য পরিচালনার জন্য একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেন। এটি ইসলামে মজলিস উস শুরা নামে খ্যাত ছিল।

১১. প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা : 

খলিফা ওমর (রা.) তাঁর শাসনের প্রশাসনিক কাঠামোকে সুষ্ঠু ও কার্যকরী করার লক্ষ্যে সমগ্র আরব ও বিজিত রাজ্যকে ১৪টি প্রদেশে বিভক্ত করেন । প্রদেশগুলোকে আবার কতগুলো জেলা বা মহকুমায় ভাগ করা হয়। এসব প্রদেশের শাসনকর্তাকে ওয়ালি এবং জেলার শাসনকর্তাকে আমিন বলা হতো।

১২. ভূমিসংস্কার : 

হযরত ওমর (রা.)-এর সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ডের অন্যতম সংস্কার ছিল ভূমিসংস্কার । তিনি ভূমি জরিপ ব্যবস্থা প্রণয়ন করেন । এছাড়া তিনি প্রাচীন যুগের শোষণমূলক ভূমিস্বত্ব ও জমিদারি প্রথার উচ্ছেদ করেন । তিনি পারস্য ও রোম বিজয়ের পর অনাবাদি জমি গরিবদের মধ্যে ভাগ করে দেন। এভাবে তিনি বিপ্লবাত্মক সংস্কারের মধ্য দিয়ে কৃষক সাম্রাজের প্রভূত কল্যাণ সাধন করেন ।

১৩. মুদ্রা সংস্কার :

 হযরত ওমর (রা.)-এর খিলাফতে মুসলিম সাম্রাজ্যে বিভিন্ন প্রকার মুদ্রার অনুপ্রবেশ ঘটে। সেসময় ২০ করাত, ১২ করাত ও ১০ করাত- এ তিনটি মুদ্রা অসুবিধা সৃষ্টি করতো। ফলে খলিফা এ সমস্যার সমাধান করে দিনার ও দিরহামের মধ্যে ১ঃ১০ এ অনুপাত নির্ধারণ করে দেন।

উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, হযরত ওমর (রা.)-এর শাসনব্যবস্থা ছিল মানবজাতির ইতিহাসের সর্বোত্তম জনকল্যাণমূলক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। তিনি ছিলেন সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক। বিজেতা, শাসক, সংস্কারক হিসেবে তিনি ইসলামের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন তাঁর প্রশাসনিক সংস্কারের প্রশংসা করে ঐতিহাসিক আমির আলি বলেছেন, ত্রিশ বছরের খিলাফত আমলে ওমরের প্রণীত নীতিমালাই তাঁর জীবনে এমনকি তারপরেও বলবৎ থাকে।

খলিফা হযরত ওমর (রা.) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত দিওয়ানের কর্মকাণ্ড : 

খলিফা হযরত ওমর (রা.) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত দিওয়ানের কর্মকান্ড নিম্নে আলোচনা করা হলো :

খলিফা হযরত ওমর (রা.)-এর প্রশাসনিক সংস্কারসমূহ মূল্যায়ন কর।

১. রাষ্ট্রীয় আয়ের হিসাব সংরক্ষণ : 

দিওয়ানের কর্মকাণ্ডের মধ্যে অন্যতম হলো রাষ্ট্রীয় আয়ের হিসাব সংরক্ষণ করা। জনগণের ওপর ধার্যকৃত বিভিন্ন কর হতে আগত অর্থ রাষ্ট্রের আয় হিসেবে সংরক্ষণ করা হতো। এসব কর রাষ্ট্রীয়ভাবে আদায় করে এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য দিওয়ান স্থাপন করা হয় ।

২. দিওয়ানের আয়ের খাতসমূহ : নিম্নে 'দিওয়ানের আয়ের খাতসমূহ আলোচনা করা হলো :

ক. জাকাত : 

জাকাত মুসলমানদের ওপর ধার্যকৃত ধর্মীয় কর। মহানবি (সা.)-এর ন্যায় ওমর (রা.)ও মুসলমানদের নিকট থেকে জাকাত আদায় করতেন। সকল সামর্থ্যবান মুসলমানের ওপর জাকাত ফরজ ছিল। সঞ্চিত অর্থ এবং স্বর্ণরৌপ্যের নিসাব ২.৫% হারে জাকাত দেওয়া ফরজ ছিল। এছাড়া তার সময় ঘোড়ার ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় তিনি ঘোড়ার ওপরও জাকাত ধার্য করেন । দিওয়ান এ জাকাত সংগ্রহ করতো ।

খ. জিজিয়া : 

জিজিয়া হলো অমুসলমানদের নিরাপত্তা কর। অমুসলিমদের সেনাবাহিনী থেকে বিরত থাকা, তাদের জানমাল ও ধর্মের নিরাপত্তার বিনিময়ে তাদের জিজিয়া কর প্রদান করতে হতো। হযরত ওমর (রা.) প্রত্যেক সামর্থ্যবান অমুসলিমদের মধ্যে ধনীদের ওপর চার দিনার, মধ্যবিত্তের ওপর দুই দিনার এবং দরিদ্রদের ওপর এক দিনার হারে জিজিয়া ধার্য করেন । 

গ. খারাজ : 

খারাজ বা ভূমির ছিল রাজস্ব খাতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস। অমুসলিম জিম্মি কৃষি প্রজাদের ওপর এ কর ধার্য করা হতো। খলিফা ওমর (রা.)-এর আমলে খারাজের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় উক্ত বিভাগের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। ওমর (রা.) জমির প্রকৃতি ও উর্বরতার ওপর লক্ষ রেখে অমুসলমান কৃষকদের নিকট থেকে জমির উৎপন্ন শস্যের এক- দ্বিতীয়াংশ থেকে এক-পঞ্চমাংশ খারাজ এবং মুসলমানদের নিকট থেকে এক-দশমাংশ খারাজ সংগ্রহ করেন।

ঘ. গনিমত :

 যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাপ্ত ধনসম্পদের পরিমাণকে গনিমত বলা হয়। শরিয়ত অনুযায়ী যুদ্ধে প্রাপ্ত সম্পদের৪/৫  অংশ যুদ্ধে  অংশগ্রহণকারী সৈনিকদের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হতো। বাকি ১/৫ অংশ বায়তুলমালে জমা দেওয়া হতো। এ ১/৫ অংশকে বলা হতো 'খুমুস'। হযরত ওমর (রা.), ঘুমসের অর্থ সামরিক প্রয়োজনে ব্যয় করতেন।

ঙ. উশুর : 

হযরত ওমর (রা.) উশুর বা বাণিজ্য শুল্ক নামে এক প্রকার নতুন কর ধার্য করেন। এটি মুসলমান, জিম্মি এবং বিদেশি বণিকদের ওপর ধার্য হতো। ২০০ দিরহামের কম মূল্যের মালের ওপর উশুর ধার্য হতো না। মুসলমান বণিকদের ওপর ২%, জিম্মি বা অমুসলিম বণিকদের ওপর ৫% এবং বিদেশি বণিকদের ওপর শতকরা ১০% হারে উশুর ধার্য ছিল। এ নতুন কর ধার্যের ফলে রাষ্ট্রের আয় যথেষ্ট বৃদ্ধি পায় ।

চ. উশর : 

উশর ছিল মুসলমান কৃষক প্রজাদের ওপর ধার্য ভূমিকর । এটি দুভাবে আদায় করা হতো। ক. প্রাকৃতিকভাবে বা বৃষ্টির পানি দ্বারা ভূমি চাষ করা হলে এসব জমিতে উশর ছিল। ১০ ভাগের ১ ভাগ  খ. সেচ ব্যবস্থা বা অন্য উৎস থেকে পানি ব্যবহার করে জমি চাষাবাদ করা হলে উক্ত ভূমির উশর পরিমাণ ছিল ২০ ভাগের ১ ভাগ ৷

ছ. আল ফাই :

 মুসলিম রাষ্ট্রের আয়ের উৎস ছিল ওয়াকফ সম্পত্তি। এ ওয়াকফ সম্পত্তি হতে যে আয় হতো তাকে বলা হতো আল ফাই । বিজিত অঞ্চলে কিছু জমি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন করা হতো। খলিফা এর রক্ষণাবেক্ষণ করতেন। এছাড়া মালিকবিহীন জমি রাষ্ট্রীয়করণ করা হতো। এ খাতের আয় অনির্দিষ্ট ছিল । এ থেকে প্রাপ্ত আয়ের হিসাব বায়তুলমালের দিওয়ান বিভাগে সংরক্ষণ করতো ।

জ. আল হিমা :

আল হিমা হলো পশুচারণ ক্ষেত্র। ওমর (রা.) পশুচারণ ক্ষেত্র হিসেবে বিশাল এলাকা নির্দিষ্ট করে রাখেন। তার সময় উক্ত পশুচারণ ক্ষেত্রে সরকারি পশুর পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার। এখান থেকেই প্রচুর রাজস্ব আদায় হয়ে দিওয়ানে জমা হতো ।

৩. দিওয়ানের রাষ্ট্রীয় ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণ :

 দিওয়ান জনগণের নিকট থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তা সুষ্ঠুভাবে জনগণের মাঝে বণ্টন করতেন এবং এ ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণ করতো। 

৪. দিওয়ানের ব্যয়ের খাতসমূহ : নিম্নে দিওয়ানের ব্যয়ের খাতসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

ক. সামরিক খাতে ব্যয় :

 দিওয়ানের অন্যতম কাজ ছিল সামরিক খাতের ব্যয় নির্বাহ করা। সৈন্যদের অস্ত্র ক্রয়, বেতন-ভাতা প্রদান, সৈন্যদের পোশাক পরিচ্ছদ সংগ্রহ, সৈন্যদের রাজস্ব সংগ্রহ প্রভৃতি কাজের জন্য সামরিক খাতে ব্যয় করা হতো।

খ. বেসামরিক খাতে ব্যয় : 

ওমর (রা.)-এর দিওয়ানের ব্যয়ের অন্যতম একটি খাত ছিল বেসামরিক খাতে ব্যয়। সাম্রাজ্যের বেসামরিক কর্মচারীদের বেতন প্রদান, বিভিন্ন দপ্তরের ব্যয়ভার নির্বাহ প্রভৃতি বেসামরিক খাতের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

গ. গরিব দুঃখীদের জন্য ব্যয় : রাজকোষের অর্থ থেকে দিওয়ান গরিব দুঃখীর অভাব মোচনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধরনের ব্যয় নির্বাহ করতো।

ঘ. রাজস্ব আদায়কারীর জন্য ব্যয় : রাজস্ব আদায়কারীদের বেতন ভাতা প্রদানের জন্য দিওয়ান রাজস্বের আয় থেকে অর্থ ব্যয় করতো ।

ঙ. অনাথ ও বেওয়ারিশ শিশুর তত্ত্বাবধানে ব্যয় : ওমর (রা.)  দিওয়ানের অর্থ অনাথ ও বেওয়ারিশ শিশুর তত্ত্বাবধান ও লালনপালনে  বার করতেন।

চ. ভাতা প্রদান : দিওয়ানের আরেকটি অন্যতম কার্যাবলি ছিল  মুসলমানদের নিয়মিত ভাতা প্রদান। সামরিক ও বেসরকারি বায় নির্বাহের পর রাষ্ট্রীয় আয়ের যে উদ্বৃত্ত অর্থ জমা হতো তা থেকে জনগণের কল্যাণে ওমর (রা.) ভাতা প্রদান করতেন।

ছ. জনহিতকর কার্যাবলি : ওমর (রা.)-এর দিওয়ানের অন্যতম কর্মকান্ড ছিল জনহিতকর কার্যাবলি সম্পাদন। নাজরাতই নাফিয়ার তত্ত্বাবধানে ওমর (রা.) তাঁর শাসনকালে ৪,০০০ নতুন মসজিদ, অসংখ্য দুর্গ ও সেনানিবাস, সরকারি কার্যালয়, রাস্তাঘাট, বিদ্যালয়, হাসপাতাল ইত্যাদি নির্মাণ করেন।

জ. আধুনিক কল্যাণরাষ্ট্রের আভাস : নাগরিক জীবনের সার্বিক অবস্থায় কল্যাণ আনয়নের জন্য যে রাষ্ট্র কাজ করে তাকে কল্যাণরাষ্ট্র বলা হয়। জনগণের সেবা কল্যাণরাষ্ট্রের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য। নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তির সংরক্ষণ এবং আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও নৈতিক দিকের কল্যাণসাধন করাই কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের অন্যতম লক্ষ্য। ওমর (রা.) তাঁর খিলাফতকালে দিওয়ান নামক সচিবালয়টি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দিওয়ানের কর্মকাণ্ডের দ্বারা জনগণের সার্বিক কল্যাণসাধনের চেষ্টা করেন যা আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্রের সাথে তুলনাযোগ্য। সুতরাং যথার্থই বলা যায় দিওয়ানের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্রের আভাস পাওয়া যায় ।

উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, হযরত ওমর (রা.) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত দিওয়ান ব্যবস্থা মুসলিম শাসনব্যবস্থার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। দিওয়ানের অর্থ বণ্টনের মাধ্যমে সমাজের বৈষম্য দূরীভূত হয়ে ভ্রাতৃত্বের ভিত্তিতে সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ছিল আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারক ও বাহক। হযরত ওমর (রা.)-এর দিওয়ান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রজারঞ্জক শাসক হিসেবে তিনি ইসলামের দৃষ্টিতে চির অম্লান হয়ে রয়েছেন।

 





Post a Comment

Previous Post Next Post