ওরখানের পরিচয় দাও। অটোমান সাম্রাজ্য সুদৃঢ়ীকরণে তার অবদান মূল্যায়ন কর ।

ওরখানের পরিচয় দাও।  অটোমান সাম্রাজ্য সুদৃঢ়ীকরণে তার অবদান মূল্যায়ন কর ।

ওরখানের পরিচয় দাও।  অটোমান সাম্রাজ্য সুদৃঢ়ীকরণে তার অবদান মূল্যায়ন কর ।

অটোমান সাম্রাজ্যের প্রথম শাসক ওসমানের মৃত্যুর পর তার মনোনয়ন অনুযায়ী পুত্র ওরখান অটোমান শাসক নিযুক্ত হন। ওরখান শাসক নিযুক্ত হয়ে পিতার সামান্য জায়গিরকে বিশাল সাম্রাজ্যে রূপান্তরিত করেন। যা পরবর্তীতে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত বিশ্বে অটোমান সালতানাত হিসেবে সুপরিচিতি লাভ করে। অটোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ওসমান হলেও ওরখানের হাতে পরবর্তীতে শক্তিশালী সেনাবাহিনীর মাধ্যমে অটোমান সাম্রাজ্য সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা লাভ করে । তাই সুলতান ওরখানকে অটোমান সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয় ।

ওরখানের পরিচয়: নিম্নে ওরখানের পরিচয় তুলে ধরা হলো:

১. জন্ম ও পরিচয়: 

পিতা তুঘরুল সুগুতে অবস্থান করা কালে ওসমান ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দে সেখানে জন্মগ্রহণ করেন। ওসমান তুমবুলের তিন পুত্রের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন।

২. বাল্যকাল ও বিবাহ:

ওসমান বাল্যকালে পিতা তুমরুলের অধীনে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। তিনি মাত্র ১৬ বছর বয়সে কারামানিয়ার শেখ ইদেব আলি নামক এক প্রতিষ্ঠিত ও প্রভাবশালী দরবেশের সুন্দরী কন্যা মাল খাতুনের প্রেমে পড়েন। কিন্তু তুঘল যেহেতু তখন সামান্য একজন জমিদার ছাড়া কিছু ছিলেন না, তাই দরবেশ ইদের আলি ওসমানের সাথে স্বীয় কন্যার বিবাহ দিতে প্রথম অস্বীকার করেন। কিন্তু পরবর্তীতে উক্ত বিবাহে সম্মতি প্রদান করেন। সেই বিবারের ফলে এক মহান পরিবারের সাথে ওসমানের পরিবারের আত্মীয়তার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা হয়।

৩. সাম্রাজ্য লাভ: 

তুমরুলের মৃত্যুর পর ১২৮৮ খ্রিস্টাব্দে ওসমান দলপতি ও রাজ্যের শাসক নিযুক্ত হন।

৪. স্বাধীন সাম্রাজ্যের ঘোষণা: 

ওসমান নিজে সুলতান উপাধি গ্রহণ করেননি। তুঘরুল সেলজুকদের করদ মিত্র রাজ ছিলেন। কিন্তু ওসমান সেলজুকদের পতনের সময় নিজেকে স্বাধীন বলে ঘোষণা করেন ও কর দেওয়া বন্ধ করে দেন।

অটোমান সাম্রাজ্য সুদৃঢ়ীকরণে ওরখানের অবদান: নিম্নে অটোমান সাম্রাজ্য সুদৃঢ়ীকরণে ওরখানের অবদান মূল্যায়ন করা হলো:

১. জেনিসারি বাহিনী গঠন:

সুলতান ওরখানের শাসনামলের সর্বাধিক স্মরণীয় ঘটনা হচ্ছে বিশ্ববিখ্যাত জেনিসারি বাহিনী গঠন। সোলায়মান সেকেন্দার আলি নামক জনৈক সেনা অফিসারের নতুন সেনাবাহিনী গঠনের প্রস্তাবের সাথে তিনি ঐকমত্য পোষণ করেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী জেনিসারি বাহিনী গঠন করা হয়। বিজিত খ্রিস্টান অঞ্চল হতে অল্পবয় খ্রিস্টান বালকদের সংগ্রহ করে রাজধানীতে আনা হতো এবং সেখানে তাদের কালিমা পড়িয়ে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত কর হতো । 

উক্ত বালকদের উপযুক্ত শিক্ষা দান করে বিখ্যাত দরবেশ হাজি বেকতাস সম্মুখে তার নামকরণ করে দেওয়ার জন্য উপস্থিত করা হয়। দরবেশ উক্ত বালকদের মাথায় স্নেহময় হাত বুলিয়ে সুলতানকে উদ্দেশ্য করে বলেন আপনি যে সেনাদল গঠন করেছেন তাকে জেনিসারি' বলা হবে। জেনিসারি বাহিনীর চরিত্র ও মনোবল গঠনে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা হয়।

আল্লাহর ওপর অকুণ্ঠ বিশ্বাস, ধর্মের প্রতি চরম আকর্ষণে মৃত্যুর প্রতি তীব্র অবহেলা, ধর্মের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা এবং সুলতানের আদেশ পালনের দীক্ষা প্রদান করা হতো। তারা কঠোর নিয়মানুবর্তিতা, দুঃখকষ্ট, ক্ষুৎপিপাসা ও বাধাবিপত্তিতে চরম ধৈর্যধারণের শিক্ষা লাভ করে। বাংকার ছিল তাদের বাসস্থান, যুদ্ধ ছিল তাদের একমাত্র পেশা এবং ইসলাম ছিল তাদের একমাত্র ধর্ম। তাদের বিশেষ সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হতো এবং উচ্চ বেতন ও দ্রুত পদোন্নতি প্রদান করা হতো। ফলে ইচ্ছাকৃতভাবে ও বহু খ্রিস্টান কিশোর জেনিসারি বাহিনীতে যোগদান করতো ।

২. আজেব বা অনিয়মিত পদাতিক বাহিনী গঠন:

দ্রুত সৈন্যের চাহিদা মিটানোর জন্য ওরখান আজেব বা অনিয়মিত পদাতিক বাহিনী গঠন করেন করেন। বেতনের পরিবর্তে তাদের বিজিত খ্রিস্টান অঞ্চলে জায়গির দেওয়া হতো। তারা তাদের জায়গিরের রাস্তাঘাট সংস্কার ও উন্নয়নমূলক কাজের জন্য দায়ী থাকত। প্রয়োজনের সময় তারা পদাতিক সৈনা বাহিনী নিয়ে সুলতানকে সাহায্য করতো। আলাউদ্দিনের পরামর্শে সুলতান ওরখান সৈন্যবাহিনীর জন্য এভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জায়গিরে বিভিক্ত করেন। একজনের মৃত্যুর পর উক্ত জায়গির যোগ্যতানুযায়ী অন্য সৈনিককে দেওয়া হতো ।

৩. স্থায়ী পদাতিক বাহিনী গঠন:

সুলতান ওরখানের শাসনামলে স্থায়ী অশ্বারোহী বাহিনীও গঠন করা হয়। সেই বাহিনীকে চারটি স্তরে ভাগ করা হয় । সেগুলো হচ্ছে তুর্কি সিপাহি, সিলাহদার, আউলুকেপজি ও ঘোড়িবা বা বিদেশি অশ্ব। যুদ্ধকালে সেই সৈন্যবাহিনী সুলতানের দক্ষিণে ও বামে স্থান গ্রহণ করতো এবং রাত্রিতে সুলতানের তাঁবুর চতুর্দিকে পাহারা দিত । অশ্বারোহী বাহিনী প্রকারান্তরে সুলতানের দেহরক্ষীর কাজ করতো ।

৪. রাজ্যবিস্তার:

ওরখান উত্তরাধিকার সূত্রে সামান্য একটি জমিদারি লাভ করেছিলেন । সেই জমিদারি বৃদ্ধি করে কেবল এশিয়াতেই সীমাবদ্ধ রাখেননি; বরং প্রতিভা ও রণকৌশলে ইউরোপের অংশ জয় করতেও তিনি সমর্থ হন । প্রথম ইউরোপে অটোমান পতাকা উত্তোলন করেন এবং গ্রিক রাজধানী কনস্টান্টিনোপলের সীমান্তে অটোমান সেনাবাহিনী মোতায়েন করে গ্রিকদের মনে ভীতির সঞ্চার করেন। গ্রিকদের সাথে তার সম্পর্ক একই সাথে তিক্ত ও মধুর ছিল । 

তিনি এশিয়া হতে গ্রিকদের বিতাড়িত করেন এবং বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে গ্রিক সম্রাট কন্টাকুয়েনের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে তার সাহায্যে অটোমান সৈন্যবাহিনীকে পুনঃপুন ইউরোপে প্রেরণ করেন। অটোমানগণ সেখানে গ্রিক ও জারের বিরুদ্ধে লড়াই করে নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন হয় এবং ইউরোপীয় রাজন্যবর্গের দূর্বলতার অনুসন্ধান পায় । গ্যালিপোলি এবং জিমপে অধিকারের মাধ্যমে তিনি ইউরোপে রাজ্যবিস্তার করেন। ওরখান একে একে নাইসিয়া, ব্রুসা, নিকোমোডিয়া, কারাসাই প্রভৃতি অঞ্চল বিজয়ের মাধ্যমে তার সাম্রাজ্য মারমোরা এবং হেলেসপন্ট সীমানা পর্যন্ত বর্ধিত করেন।

৫. শিক্ষা-সংস্কৃতি ও ধর্মের পৃষ্ঠপোষকত:

ওরখানের শাসনকালে ব্রুসা, নাইসিয়া, নিকোমোডিয়া, সুগুত প্রভৃতি শহর ব্যবসা বাণিজ্য ও শিক্ষা সংস্কৃতির কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়। তিনি ধর্মীয় শিক্ষকদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। এশিয়ার অন্যান্য মুসলিম রাজ্য হতে পণ্ডিতগণ ওরখানের রাজধানী ব্রুসাতে গমন করে সুলতানের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে। তার সহনশীল আদর্শের জন্য বহু গ্রিক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। কিন্তু ধর্মান্তরিতকরণে কোনোদিন বলপ্রয়োগ করেননি। তিনি অপর ধর্মের প্রতি খুব সহনশীল ছিলেন এবং জিজিয়ার পরিবর্তে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের নির্বিবাদে তার রাজ্যে বসবাসের সুযোগ দেন ।

৬. মৃত্যু:

সুলতান ওরখান যোদ্ধা হিসেবে দুর্ধর্ষ ছিলেন। কিন্তু একদা অশ্বারোহণ ক্রীড়ার সময় অশ্ব হতে ভূপতিত হয়ে ১৩৫৮ খ্রিস্টাব্দে আহত হন । এর একবছর পর ১৩৫৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন ।


উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সুলতান ওরখান ছিলেন একজন যোগ্য ও দক্ষ প্রশাসক। তিনি নিজ যোগ্যতাবলে সামান্য জায়গির থেকে তার সাম্রাজ্যকে এশিয়া ও ইউরোপের বিশাল অঞ্চলে বিস্তৃত করে ইতিহাসে অটোমানদের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছেন। সুলতান ওরখান জেনিসারি বাহিনী গঠনের মাধমে শাক্তিশালী সামরিকবাহিনী গঠন করতে সক্ষম হন । তার এ শক্তিশালী সামরিকবাহিনী অটোমানদের ইতিহাসে তাকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে।

সামরিক সংগঠনের বিশেষ উল্লেখপূর্বক ওরখানের শাসনামলের একটি বিবরণঃ

ওসমানের মৃত্যুর পর তার দ্বিতীয় পুত্র ওরখান পিতার মনোনয়ন অনুসারে ১৩২৬ খ্রিস্টাব্দে অটোমান রাজ্যের অধীশ্বর নিযুক্ত হন । তিনি পিতা কর্তৃক সামরিক ও প্রশাসনিক বিষয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। তিনি সুগুত হতে বুসায় রাজধানী স্থানান্তর করে সুলতান উপাধি লাভ করেন। ওরখান অটোমান সাম্রাজ্যের বিস্তারে মনোনিবেশ করেন আর এজন্য তিনি সর্বপ্রথম সেনাবাহিনীর সংস্কারে হাতে দেন ।  তিনি বিশাল জেনিসারি বাহিনী গঠন করে অটোমান সাম্রাজ্যকে সুদৃঢ় করেন।

সামরিক সংগঠনের বিশেষ উল্লেখপূর্বক ওরখানের শাসনামল:

তুঘরুল ও ওসমানের শাসনামলে অটোমান নিয়মিত সৈন্য ছিল না । সুলতান ওরখান অটোমান সাম্রাজ্যের বিস্তৃতির জন্য নিয়মিত সেনাবাহিনী গঠনে সামরিক সংস্কারে মনোনিবেশ করেন । নিম্নে তার সামরিক সংগঠনের বিশেষ উল্লেখপূর্বক শাসনামল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

১. জেনিসারি বাহিনী গঠন:

সুলতান ওরখানের শাসনামলের সর্বাধিক স্মরণীয় ঘটনা হচ্ছে বিশ্ববিখ্যাত জেনিসারি বাহিনী গঠন । সোলায়মান সেকান্দার আলি নামক জনৈক সেনা অফিসারের নতুন সেনাবাহিনী গঠনের প্রস্তাবের সাথে তিনি ঐকমত্তা পোষণ করেন । পরিকল্পনা অনুযায়ী জেনিসারি বাহিনী গঠন করা হয় । বিজিত খ্রিস্টান অঞ্চল হতে অল্পবয়স্ক খ্রিস্টান বালকদের সংগ্রহ করে রাজনীতিতে আনা হতো এবং সেখানে তাদের কালিমা পড়িয়ে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করা হতো। উক্ত বালকদের দরবেশ হাজি বেকতাস 'জেনিসারি' নামে নামকরণ করেন। 

জেনিসারি বাহিনীর চরিত্র ও মনোবল গঠনে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা হতো।  আল্লাহর ওপর অকুণ্ঠ বিশ্বাস, ধর্মের প্রতি চরম আকর্ষণ, মৃত্যুর প্রতি তীব্র অবহেলা, ধর্মের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা এবং সুলতানের আদেশ পালনের দীক্ষা প্রদান করা হতো। তারা কঠোর নিয়মানুবর্তিতা, দুঃখকষ্ট, ক্ষুৎপিপাসা ও বাধাবিপত্তিতে চরম ধৈর্যধারণের শিক্ষা লাভ করে।  বাংকার ছিল তাদের বাসস্থান, যুদ্ধ ছিল তাদের একমাত্র পেশা এবং ইসলাম ছিল তাদের একমাত্র ধর্ম। তাদের বিশেষ সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হতো এবং উচ্চ বেতন ও দ্রুত পদোন্নতি প্রদান করা হতো। ফলে ইচ্ছাকৃতভাবেও বহু খ্রিস্টান কিশোর জেনিসারি বাহিনীতে যোগদান করতো ।

২. আজেব বা অনিয়মিত পদাতিক বাহিনী:

দ্রুত সৈন্যের চাহিদা মিটানোর জন্য ওরখান আজেব বা অনিয়মিত পদাতিক বাহিনী গঠন করেন। বেতনের পরিবর্তে তাদের বিজিত খ্রিস্টান অঞ্চলে জায়গির দেওয়া হতো। আলাউদ্দিনের পরামর্শে সুলতান ওরখান সৈন্যবাহিনীর জন্য এভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জায়গির বিভক্ত করেন। একজনের মৃত্যুর পর উক্ত জায়গির যোগ্যতানুযায়ী অন্য সৈনিককে দেওয়া হতো ।

৩. স্থায়ী পদাতিক বাহিনী:

সুলতান ওরখানের শাসনামলে স্থায়ী এবং অস্থায়ী অশ্বারোহী বাহিনীও গঠন করা হয়। স্থায়ী বাহিনীকে চারটি স্তরে ভাগ করা হয়। সেগুলো হচ্ছে তুর্কি সিপাহি, সিলাহদার, আউলুকেপজি ও ঘোড়িবা বা বিদেশি অশ্ব। যুদ্ধকালে সেই সৈন্যবাহিনী সুলতানের দক্ষিণে ও বামে স্থান গ্রহণ করতো ও রাত্রিতে সুলতানের তাঁবুর চতুর্দিকে পাহারা দিত।

৪. মুসলিমান নামক অশ্বারোহী বাহিনী:

মুসলিমান নামক আর একটি অশ্বারোহী বাহিনী গঠন করেও আলাউদ্দিন সৈন্যবাহিনী শক্তিশালী করেন। তাদের জায়গির দেওয়া হতো ।

৫. জিয়ামত ও তিমারস নামক সৈন্যবাহিনী:

 সুলতান ওরখানের শাসনামলে জিয়ামত ও তিমারস নামে আরও দুটি সৈন্যবাহিনী গঠন করা হয়। তারা সর্বদা সুলতানকে সৈন্য সরবরাহ করে সহায়তা প্রদান করতো।

৬. সেনাবাহিনী পরিচালনা:

দক্ষ সেনাপতি দ্বারা প্রতিটি সেনাদলকে পরিচালিত করা হতো। ইভরিনোস বে নামক কারামানিয়ার এক গ্রিক অধিনায়ককে ইউরোপীয় সীমান্তের সিপাহিদের সৈন্যপত্য প্রদান করা হয়। কোসি মিখাল নামক অধিনায়ককে স্কাউটদের সৈন্যপত্য প্রদান করা হয়। সর্বপ্রথম ওরখানের জ্যেষ্ঠ পুত্র সোলায়মানকে ইউরোপীয় এলাকার প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করা হয় ।

৭. রাজ্যবিস্তার:

ওরখান উত্তরাধিকার সূত্রে একটি ক্ষুদ্র জমিদারি মাত্র লাভ করেন। সেই জমিদারি বাড়িয়ে তিনি কেবল এশিয়াতেই সীমাবদ্ধ রাখেননি; বরং প্রতিভা ও রণকৌশলে ইউরোপের অংশ জয় করতেও তিনি সমর্থ হন। তিনিই প্রথম ইউরোপে অটোমান পতাকা উত্তোলন করেন এবং গ্রিক রাজধানী কনস্টান্টিনোপলের সীমান্তে অটোমান বাহিনী মোতয়েন করে গ্রিকদের সাথে তার সম্পর্ক তিক্ত ও মধুর দুই ধরনেরই ছিল।

তিনি এশিয়া হতে গ্রিকদের বিতাড়িত করেন এবং বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে গ্রিক সম্রাট কন্টাকুয়েনের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে তার সাহায্যে অটোমান সৈন্যবাহিনীকে পুনঃপুন ইউরোপে প্রেরণ করেন। অটোমানগণ যেখানে গ্রিক ও জারের বিরুদ্ধে লড়াই করে নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন হয় এবং ইউরোপীয় রাজন্যবর্গের দুর্বলতার অনুসন্ধান পায়। গ্যালিপোলি এবং জিমপে অধিকারের মাধ্যমে ওরখান ইউরোপে রাজ্যবিস্তার করেন।

৮. অটোমান সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা:

 সুলতান ওরখান ছিলেন ধীরস্থির ও সুস্থ নীতির শাসক । অটোমান জাতিকে প্রকৃতপক্ষে একটি জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। তার সময়েই ওসমানের জায়গির একটি প্রকৃত রাজ্যের মর্যাদা লাভ করে। তিনি স্বয়ং সুলতান উপাধি গ্রহণ করেন এবং নিজ নামে মুদ্রাঙ্কন করেন।

৯. শিক্ষা-সংস্কৃতি ও ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা:

সুলতান ওরখানের শাসনকালে ব্রুসা, নাইসিয়া, নিকোমোডিয়া, সুগুত প্রভৃতি শহর ব্যবসা বাণিজ্য ও শিক্ষা সংস্কৃতির কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়। তিনি ধর্মীয় শিক্ষকদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। এশিয়ার অন্যান্য মুসলিম রাজ্য হতে পণ্ডিতগণ ওরখানের রাজধানী ব্রুসাতে গমন করে সুলতানের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে। 

তার সহনশীল আদর্শের জন্য বহু গ্রিক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। কিন্তু ধর্মান্তরিতকরণে কোনোদিন বলপ্রয়োগ করেননি। তিনি অপর ধর্মের প্রতি খুব সহনশীল ছিলেন এবং জিজিয়ার পরিবর্তে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের নির্বিবাদে তার রাজ্যে বসবাসের সুযোগ দেন।

 ১০. মৃত্যু:

সুলতান ওরখান যোদ্ধা হিসেবে দুর্ধর্ষ ছিলেন। কিন্তু একদা অশ্বারোহণ ক্রীড়ার সময় অশ্ব হতে ভূপতিত হয়ে ১৩৫৮ খ্রিস্টাব্দে আহত হন। এর একবছর পর ১৩৫৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।


উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, সুলতান ওরখান ছিলেন অটোমান সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ছিলেন একজন দুর্ধর্ষ যোদ্ধা ও সমরবিজেতা শাসক । তিনি ওসমানের সামান্য জায়গিরকে বিশাল সেনাবাহিনী গঠনের মাধ্যমে এশিয়া মাইনরসহ গ্রিক অঞ্চলে বিস্তার ঘটান। সুলতান ওরখানের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হলো তার অনুগত জেনিসারি বাহিনী গঠন, যারা পরবর্তীতে অটোমান সালতানাতের বিস্তৃতিতে বিরাট অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছিল।

ওরখানের রাজ্যবিস্তার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ


সুলতান ওরখান অটোমান সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ইতিহাস খ্যাত হয়ে আছেন। তিনি ক্ষমতা লাভ করে সামরিক সংস্কারের মাধ্যমে শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী গঠন করে সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ঘটান। ওরখানের সময়ে অটোমান সাম্রাজ্য এশিয়ার পাশাপাশি ইউরোপেও বিস্তৃতি লাভ করে । সুলতান ওরখানের সাম্রাজ্য বিস্তারের ফলে অটোমান সাম্রাজ্য একটি স্থায়ী রূপলাভ করে । এজন্য সুলতান ওরখানকে অটোমান সাম্রাজ্যের প্রকৃত বিজেতার আসনে আসীন করা হয় ।


ওরখানের রাজ্যবিস্তার: নিয়ে ওরখানের রাজ্যবিস্তার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

১. নাইসিয়া অধিকার:

সৈন্যবাহিনী সংস্কারের পর সুলতান ওরখান রাজ্যবিস্তারে মনোনিবেশ করেন। তিনি এশিয়া মাইনরে অবস্থিত গ্রিক শাসিত এলাকাগুলো জয়ের জন্য অগ্রসর হন। এতে গ্রিক নরপতি অ্যান্ড্রনিকাস বিশাল গ্রিক সৈন্যদল নিয়ে সুলতানকে বাধা দান করতে অগ্রসর হন। নিকোমোডিয়ার উত্তর দিকে প্যালিকানন নামক স্থানে উভয়পক্ষে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ওরখান ১৩২৭ খ্রিস্টাব্দে গ্রিকদের পরাজিত করে নাইসিয়া দখল করেন। গ্রিক নরপতি স্বয়ং আহত হয়ে বসফরাস হয়ে কনস্টান্টিনোপল পলায়ন করেন।

২. নিকোমোডিয়া জয়:

নাইসিয়ার যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর গ্রিকগণ এশিয়া মাইনরের উপনিবেশের আশা ত্যাগ করে। গ্রিকগণ নিকোমোডিয়াকে কোনো সাহায্য করতে না পারায় তার কিছুদিন পর ওরখানের নিকট আত্মসমর্পণ করে। ব্রুসা, নাইসিয়া, নিকোমোডিয়া প্রভৃতি শহর একরূপ শর্তে আত্মসমর্পণ করে এবং গ্রিক নাগরিকদের অধিকাংশই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে।

৩. কারাসাই আমিরাত দখল:

গ্রিকদের বিতাড়িত করে ওরখান আঙ্গোরার দিকে গমন না করে কারাসি আমিরাত দখলের জন্য অগ্রসর হন। গৃহবিবাদের কারণে কারাসি বিজয় করা খুব সহজ হয়। সেখানকার আমির ওরখানের সেনাদল দ্বারা বিতাড়িত হলে কারাসি ওসামানি সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। অন্যান্য আমিরাতও অটোমানদের নিকট আত্মসমর্পণ করে কারাসির ভাগ্য বরণ করে । এভাবে ওরখানের সাম্রাজ্য মারমারা এবং হেলেসপন্ট সীমানা পর্যন্ত বর্ধিত হয় ।

৪. কন্টাকুয়েনের আহ্বানে কনস্টান্টিনোপল অভিযান:

এশিয়া মাইনর হতে গ্রিকদের বিতাড়নের পর কিছুদিন কনস্টান্টিনোপলের সাথে ওরখানের সম্পর্ক ভালো ছিল। কিন্তু ইউরোপীয় ভূখণ্ডে অটোমানদের অবতরণের এক সুবর্ণ সুযোগ আসে। ১৩৩৮ খ্রিস্টাব্দে গ্রিক সম্রাট অ্যান্ড্রুনিকাস প্যালিওলোগাসের মৃত্যুর সময় নাবালক পুত্র জন প্যালিওলোগাসের অভিভাবক হিসেবে রাজমাতা সম্রাজ্ঞী অ্যানা ও মন্ত্রী কন্টাকুয়েনকে মনোনীত করে যান। কিন্তু কন্টাকুয়েন বিশ্বাসঘাতকতা করে ১৩৫৩ খ্রিস্টাব্দে নিজেকে সম্রাট বলে ঘোষণা করলে সম্রাজ্ঞী অ্যানার সাথে তার গৃহবিবাদ বাধে। সেই গৃহবিবাদে সম্রাজ্ঞী এবং স্বঘোষিত সম্রাট উভয়ই সুলতান ওরখানের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করে।

সম্রাট ওরখানের নিকট ৬ হাজার তুর্কি সৈন্যের বিনিময়ে নিজ কন্যা থিওডোরার বিবাহ দানের প্রস্তাব দেওয়ায় সুলতান সেই প্রস্তাব মঞ্জুর করেন । স্বঘোষিত সম্রাট কন্টাকুয়েনের আহ্বানে ওরখান সম্রাট কন্টাকুয়েন সেই সৈন্যের সাহায্যে কনস্টান্টিনোপল অবরোধ করে সেখানে প্রবেশ করেন। সম্রাজ্ঞী উপায়ান্তর না দেখে সম্রাট কন্টাকুয়েনের সাথে সন্ধি করেন। কন্টাকুয়েন তার অপর কন্যার সাথে ১৬ বছর বয়স্ক জন প্যালিওলোগাসের বিবাহ দিয়ে সম্পর্কে উন্নতি সাধন করেন। এরপর ৬ হাজার তুর্কি সৈন্য এশিয়ায় প্রত্যাবর্তন করে ।

৫. সার্বিয়ানদের বিরুদ্ধে অভিযান প্রেরণ:

১৩৪৯ খ্রিস্টাব্দে সার্বিয়ানগণ স্টিফেন দুশানের নেতৃত্বে স্যালোনিকা আক্রমণ করে ও কনস্টান্টিনোপল আক্রমণের ভয় দেখায়। এতে ভীত হয়ে শ্বশুর-জামাই মিলিতভাবে সুলতান ওরখানের নিকট সাহায্যের আবেদন করে। সুলতান তৎক্ষণাৎ ২০ হাজার সৈন্য তাদের সাহায্যে প্রেরণ করেন। যুদ্ধে সার্বিয়ান শক্তি পরাজিত হয়ে প্রত্যাবর্তন করে।

৬. কন্টাকুয়েনের সাহায্যে পুনরায় সৈন্য প্রেরণ:

 ১৩৫৩ খ্রিস্টাব্দে কন্টাকুয়েন ও জন প্যালিওলোগাসের মধ্যে পুনরায় বিরোধ বাধে৷ জন ইতিমধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক হন এবং সমগ্র ক্ষমতা লাভের চেষ্টা করতে থাকেন। এতে কন্টাকুয়েন পুনরায় সুলতানের নিকট সৈন্য সাহায্য প্রার্থনা করলে সুলতান পুত্র সোলায়মানের নেতৃত্বে ২০ হাজার সৈন্য পুনরায় ইউরোপে প্রেরণ করেন । তাদের সাহায্যে কন্টাকুয়েন জয়ী হন।

৭. জিমপে দখল:

সুলতান ওরখানের বাহিনী কন্টাকুয়েনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইউরোপে গমন করে তার বিজয়ে অবদান রাখেন । কন্টাকুয়েনকে সাহায্য করার পর সম্রাটের বিরোধিতা সত্ত্বেও সুলতানের বাহিনী জিমপে দখল করে সেখানে স্থায়ী শাসন প্রতিষ্ঠা করে।

৮. গ্যালিপোলি দুর্গ জয়:

জিমপে দুর্গ দখলের কিছুদিন পর এক প্রবল ভূমিকম্পে হেলেসপেন্টের ইউরোপীয় এলাকার গ্যালিপোলি দুর্গের প্রাচীন বিধ্বস্ত হওয়ায় তুর্কি সৈন্যগণ এটিকে আল্লাহ প্রদত্ত সুযোগ মনে করে সম্রাট কন্টাকুয়েনের আপত্তি সত্ত্বেও গ্যালিপোলি দখল করেন। এটি কনস্টান্টিনোপল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং গ্রিকগণ বিশ্বাসঘাতক বলে কন্টাকুয়েনের পক্ষ ত্যাগ করে। 

সম্রাটের সার্বিয়া ও বুলগেরিয়ার জারের নিকট সাহায্যের আবেদনও বিফল হয়। ফলে সম্রাট তার পুত্র ম্যাথুর পক্ষে সিংহাসন ত্যাগ করেন। কিন্তু গ্রিক যাজকগণ ম্যাথুকে রাজমুকুট পরাতে অস্বীকার করার জন্য প্যালিওলোগাসকে ডেকে পুনরায় রাজমুকুট পরান ।

৯. ওরখানের অটোমান সাম্রাজ্যের একক অধিপতি হওয়া:

ওরখানের উত্তরাধিকার সূত্রে ক্ষুদ্র একটি জমিদারি লাভ করেন সেই জমিদারি বৃদ্ধি করে তিনি কেবল এশিয়ায়ই সীমাবদ্ধ রাখেনি; বরং প্রতিভা ও রণকৌশলে ইউরোপের অংশ জয় করতেও তিনি সমর্থ হন। তিনিই প্রথম ইউরোপে অটোমান পতাকা উত্তোলন করেন এবং গ্রিক রাজধানী কনস্টান্টিনোপলের সীমান্তে অটোমান বাহিনী মোতায়েন করে গ্রিকদের মনে স্থায়ী ভীতির সঞ্চার করেন ।

উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সুলতান ওরখান ছিলেন অটোমান সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠা । তিনি ছিলেন একজন দক্ষ রণকুশলী এবং দৃঢ়চেতা শাসক। তার অপরিসীম দক্ষতা ও অক্লান্ত প্রচেষ্টায় অটোমান সাম্রাজ্য একটি দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি অটোমান সাম্রাজ্যকে ক্ষুদ্র জমিদারি থেকে নিয়ে এশিয়া ও ইউরোপে বিস্তৃতি ঘটিয়ে বিশাল সাম্রাজ্যে রূপান্তরিত করেন। সুলতান ওরখানের সাম্রাজ্য বিস্তারের কারণে তিনি ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন ।

জেনিসারি বাহিনী সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ


জেনিসারি বাহিনী সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ

সুলতান ওরখানকে অটোমান সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয় । কারণ তিনি নিজ বিচক্ষণতা, বুদ্ধিমত্তা, সাহসিকতা ও যোগ্যতার দ্বারা ওসমানের সামান্য জায়গির থেকে এশিয়া ও ইউরোপে বিস্তৃত বিশাল অটোমান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তার এ বিশাল সাম্রাজ্যের বিস্তৃতির পিছনে ছিল পরিকল্পিত সামরিক সংস্কার। সুলতান ওরখানের সামরিক সংস্কারের মধ্যে অন্যতম ছিল ইতিহাস বিখ্যাত জেনিসারি বাহিনী গঠন, যা ইতিহাসে ওরাখানকে স্বরণীয় করে রেখেছে।

জেনিসারি বাহিনী: নিম্নে সুলতান ওরখানের সময়ে গঠিত জেনিসারি বাহিনী সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

১. সৈন্য নিয়োগ:

তুঘরুল ও ওসমানের শাসনকালে অটোমানদের কোনো নিয়মিত সৈন্য ছিল না। জিহাদের সময় তারা স্বেচ্ছাসেবক সংগ্রহ করে যুদ্ধ করতেন এবং জিহাদ শেষে তা ভেঙে দিতেন। স্থায়ী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পক্ষে তা ক্ষতিকর ছিল বলে আলাউদ্দিন স্থায়ী সৈন্যবাহিনী গঠনের উদ্দেশ্যে সামরিক সংস্কার করেন। ওরখানের শাসনকালে সর্বাধিক স্মরণীয় ঘটনা হচ্ছে বিশ্ববিখ্যাত জেনিসারি বাহিনী। 

সোলায়মান সেকান্দার আলি নামক জনৈক অফিসার এক নতুন সৈন্যবাহিনী গঠনের প্রস্তাব দিলে ওরখান তাদের পরিকল্পনা অনুমোদন করেন। সেই পরিকল্পনা অনুসারে জেনিসারি বাহিনী গঠন করা হয়। বিজিত খ্রিস্টান অঞ্চল হতে অল্পবয়স্ক খ্রিস্টান বালকদের উপযুক্ত শিক্ষাদান করে বিখ্যাত দরবেশ হাজি বেকতাসের সম্মুখে তার নামকরণ করে দেওয়ার জন্য উপস্থিত করা হয়। দরবেশ সাহেব উক্ত বালকদের মাথায় স্নেহময় হাত বুলিয়ে সুলতানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি যে সৈন্যদল গঠন করেছেন তাকে 'জেনিসারি' বলা হবে। 

তাদের মুখমণ্ডল হবে গৌরবোজ্জ্বল, তাদের দক্ষিণ বাহু হবে শক্তিশালী, তাদের তরবারি হবে ক্ষুরধার এবং তির হবে তীক্ষ্ণধার তারা রণাঙ্গনে অজেয় হবে এবং বিজয় ছাড়া কোনো সমরাঙ্গন হতে প্রত্যাবর্তন করবে না। সেই হতেই জেনিসারি বাহিনীর জন্ম হয় এবং সুলতান মুরাদের শাসনকালে তা আরও উন্নতি লাভ করে ।

২. প্রশিক্ষণ:

জেনিসারি বাহিনীর চরিত্র ও মনোবল গঠনে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। আল্লাহর ওপর অকুণ্ঠ বিশ্বাস, ধর্মের প্রতি চরম আকর্ষণ, মৃত্যুর প্রতি তীব্র অবহেলা, ধর্মের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা এবং সুলতানের আদেশ পালন ছিল তাদের প্রধান শিক্ষা। তারা কঠোর নিয়মানুবর্তিতা, দুঃখকষ্ট, ক্ষুৎপিপাসা ও বাধাবিপত্তিতে চরম ধৈর্য ধারণের অভ্যাস গড়ে তোলে । বাংকার ছিল তাদের বাসস্থান, যুদ্ধ ছিল তাদের একমাত্র পেশা এবং ইসলাম ছিল তাদের একমাত্র ধর্ম ।

৩. প্রদত্ত সুযোগ সুবিধা:

জেনিসারি বাহিনীকে বিশেষ সুযোগ সুবিধা প্রদান এবং উচ্চ বেতন ও দ্রুত পদোন্নতি প্রদান করা হতো। ফলে ইচ্ছাকৃতভাবেও বহু খ্রিস্টান কিশোর জেনিসারি বাহিনীতে যোগদান করতো। তাছাড়া ডেভশিরমে প্রথায় সংগৃহীত ইউরোপীয় খ্রিস্টান বালকদের সামরিক ও বেসামরিক কাজে লাগান হতো।  

তাদের কিছু অংশকে জেনিসারি বাহিনীতে নিয়োগ করা হতো। এটি ব্যতীত ইউরোপের যুদ্ধগুলো থেকে যুদ্ধবন্দি হিসেবে প্রাপ্ত খ্রিস্টান বালকদের প্রথা অনুসারে সুলতান এক-পঞ্চমাংশ পেতেন। সেই অংশকে সুলতান উপযুক্ত শিক্ষা দান করে জেনিসারি বাহিনীতে নিয়োগ করতেন। বয়ঃক্রমকালে সেই তার আত্মীয়স্বজনকে ভুলে যেত এবং অটোমান সাম্রাজ্যের গৌরববর্ধনে আত্মোৎসর্গ করতো।

 ৪. সৈন্য সংখ্যা:

সুলতান ওরখানের সময় গঠিত জেনিসারি বাহিনীর অস্তিত্ব ১৮২৬ সাল পর্যন্ত টিকে ছিল । এ দীর্ঘ সময়ে বিভিন্ন শাসক জেনিসারি বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা কমবেশি করেছিল। তাই এ বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম ছিল। তাদের সৈন্য সংখ্যা কখনও ৪০ হাজার, কখনও ৬০ হাজার, কখনও ৮০ হাজার আবার কখনও এর চেয়ে কমবেশি ছিল।

৫. বীরত্বঃ  

অটোমান সুলতানগণ জেনিসারি বাহিনীকে ৮ বছর ধরে উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান করতেন। সেই সাথে তাদের ব্যাপক সুযোগ সুবিধা প্রদান করতো। ফলে জেনিসারি বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে সর্বদা সাহসিকতার পরিচয় দিত। তারা অটোমানদের পক্ষে সব যুদ্ধে জয়লাভ করে সাম্রাজ্যের বিশাল বিস্তৃতি আনয়ন করে। তারা ক্রুসেড কনস্টান্টিনোপলসহ সব যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে অটোমান সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ঘটান । জেনেসারি বাহিনী একমাত্র মোঙ্গলদের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়।

৬. বিদ্রোহ:

জেনিসারি বাহিনী অটোমান সাম্রাজ্যের প্রতি অনুগত থেকে সাম্রাজ্যের বিস্তারে বিরাট ভূমিকা রাখেন । আবার বিভিন্ন সময়ে নানা স্বার্থের দ্বন্দ্বে তারা অটোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহও করে বসে। সুলতান সোলায়মান রোডস দ্বীপ জয়ের পর দুই বছর ধরে সাম্রাজ্যকে সুশৃঙ্খল ও স্থায়ী ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রশাসনিক বিষয়ে সংস্কার সাধন করেন। 

জেনিসারি বাহিনী যুদ্ধ ছাড়া দুই বছর অবসর থাকায় বিরক্ত হয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং প্রধানমন্ত্রী ইব্রাহিমসহ অন্যান্য অফিসারের বাড়িঘর লুণ্ঠন করে। সুলতান কঠোর হাতে সেই বিদ্রোহ দমন করেন এবং নেতৃবৃন্দকে হত্যা করেন । তবে জেনিসারি বাহিনীকে শান্ত রাখার জন্য সুলতান অচিরেই হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে যুদ্ধের আয়োজন করেন ।

৭. ধ্বংসসাধন:

জেনিসারি বাহিনী কালক্রমে শক্তিশালী হয়ে ওঠে অটোমান সুলতানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় । একপর্যায়ে তারা অদমনীয় হয়ে ওঠে। অটোমান সুলতানগণ সর্বদা জেনিসারি বাহিনীর ভয়ে ভীত থাকতেন। কালক্রমে তারা ভয়ানক অবাধ্য হয়ে দাঁড়ালে সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ গোলন্দাজ বাহিনী কর্তৃক জেনিসারি বাহিনীর ব্যারাকসহ তাদের ধ্বংস সাধন করেন ।


উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সুলতান ওরখান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত জেনিসারি বাহিনী ছিল অটোমান সাম্রাজ্যের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। এ বাহিনী তাদের কঠোর শ্রম ও নিয়মানুবর্তিতার দ্বারা অটোমান সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি এশিয়া ও ইউরোপে ছড়িয়ে দেন। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের অদমনীয় মনোভাবের কারণে তারা অটোমান সুলতানদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে । ফলে নিজ সাম্রাজ্য রক্ষার জন্য অটোমানরা পরবর্তীতে তাদের দমন করতে বাধ্য হয় ।

সুলতান ওরখানের আমলের সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসন: 

সুলতান ওরখান উত্তরাধিকার সূত্রে একটি ক্ষুদ্র জমিদারি লাভ করেন । তিনি তার সাম্রাজ্যের সীমানা কেবল এশিয়াতেই সীমাবদ্ধ রাখেননি; বরং প্রতিভা ও রণকৌশলে ইউরোপের অংশ জয়েও তিনি সমর্থ হন । সুলতান ওরখান সর্বপ্রথম সামরিক বাহিনীতে ব্যাপক সংস্কার সাধন করে রাজ্যজয়ে মনস্থির করেন। রাজ্যজয়ের পাশাপাশি তিনি বেসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থায়ও ব্যাপক সংস্কার সাধন করেন ।  ওরখানের কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে অটোমানদের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয় ।

সুলতান ওরখানের আমলের সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসন: নিম্নে সুলতান ওরখানের আমলের সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসন আলোচনা করা হলো :

ওরখানের সামরিক প্রশাসন:

তুঘরুল ও ওসমানের শাসনামলে অটোমানদের কোনো নিয়মিত সৈন্য ছিল না। সুলতান ওরখান অটোমান সাম্রাজ্যের বিস্তৃতির জন্য নিয়মিত সেনাবাহিনী গঠনে সামরিক সংস্কারে মনোনিবেশ করেন। নিম্নে তার সামরিক প্রশাসন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

১. জেনিসারি বাহিনী গঠন:

সুলতান ওরখানের শাসনামলের সর্বাধিক স্মরণীয় ঘটনা হচ্ছে বিশ্ববিখ্যাত জেনিসারি বাহিনী গঠন। সোলায়মান সেকেন্দার আলি নামক জনৈক সেনা অফিসারের নতুন সেনাবাহিনী গঠনের প্রস্তারের সাথে তিনি ঐকমত্য পোষণ করেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী জেনিসারি বাহিনী গঠন করা হয় ৷ বিজিত খ্রিস্টান অঞ্চল থেকে অল্পবয়স্ক খ্রিস্টান বালকদের সংগ্রহ করে রাজধানীতে আনা হতো এবং সেখানে তাদের কালিমা পড়িয়ে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করা হতো। 

উক্ত বালকদের উপযুক্ত শিক্ষা দান করে বিখ্যাত দরবেশ হাজি বেকতাসের সম্মুখে তার নামকরণ করে দেওয়ার জন্য উপস্থিত করা হয়। দরবেশ উক্ত বালকদের মাথায় স্নেহময় হাত বুলিয়ে সুলতানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি যে সেনাদল গঠন করেছেন তাকে জেনিসারি বলা হবে । জেনিসারি বাহিনীর চরিত্র ও মনোবল গঠনে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা হয় । 

আল্লাহর ওপর অকুণ্ঠ বিশ্বাস, ধর্মের প্রতি চরম আকর্ষণ, মৃত্যুর প্রতি তীব্র অবহেলা, ধর্মের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা এবং সুলতানের আদেশ পালনের দীক্ষা প্রদান করা হতো। বাংকার ছিল তাদের বাসস্থান, যুদ্ধ ছিল তাদের একমাত্র পেশা। এবং ইসলাম ছিল তাদের একমাত্র ধর্ম। তাদের বিশেষ সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হতো এবং উচ্চ বেতন ও দ্রুত পদোন্নতি প্রদান করা হতো। ফলে ইচ্ছাকৃতভাবেও বহু খ্রিস্টান কিশোর জেনিসারি বাহিনীতে যোগদান করতো ।

২. আজেব বা অনিয়মিত পদাতিক বাহিনী:

দ্রুত সৈন্যের চাহিদা মিটানোর জন্য ওরখান আজেব বা অনিয়মিত পদাতিক বাহিনী গঠন করেন। বেতনের পরিবর্তে তাদের বিজিত খ্রিস্টান অঞ্চলের জায়গির দেওয়া হতো। তারা তাদের জায়গিরের রাস্তাঘাট সংস্কার ও উন্নয়নমূলক কাজের জন্য দায়ী থাকত। আলাউদ্দিনের পরামর্শে সুলতান ওরখান সৈন্যবাহিনীর জন্য এভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জায়গিরে বিভক্ত করেন। একজনের মৃত্যুর পর উক্ত জায়গির যোগ্যতানুযায়ী অন্য সৈনিককে দেওয়া হতো।

 ৩. স্থায়ী পদাতিক বাহিনী:

সুলতান ওরখানের শাসনামলে স্থায়ী অশ্বারোহী বাহিনীও গঠন করা হয়। সেই বাহিনীতে চারটি স্তরে ভাগ করা হয়। সেগুলো হচ্ছে তুর্কি সিপাহি, সিলাহদার, আউলুকেপজি ও ঘোড়িবা বা বিদেশি অশ্ব। যুদ্ধকাপে সেই সৈন্যবাহিনী সুলতানের দক্ষিণে ও বামে স্থান গ্রহণ করতো ও রাতে সুলতানের তাঁবুর চতুর্দিকে পাহারা দিত। অশ্বারোহী বাহিনী প্রকারান্তরে সুলতানের দেহরক্ষীর কাজ করতো। তাছাড়া স্কাউট অশ্ব বা আখিনজি নামে অস্থায়ী এক অশ্বারোহী বাহিনীও গঠন করা হয়।

৪. মুসলিমান নামক অশ্বারোহী বাহিনী:

মুসলিমান নামক আর একটি অশ্বারোহী বাহিনী গঠন করেও আলাউদ্দিন সৈন্যবাহিনী শক্তিশালী করেন। তাদের জায়গির দেওয়া হতো।  তারা নিষ্কর জায়গির ভোগ করতো।

৫. জিয়ামত ও তিমারস নামক সৈন্যবাহিনী:

সুলতান ওরখানের শাসনামলে জিয়ামত ও তিমারস নামে আরও দুটি সৈন্যবাহিনী গঠন করা হয়। তারা সর্বদা সুলতানকে সৈন্য সরবরাহ করে সহায়তা প্রদান করতো।

৬. সেনাবাহিনী পরিচালনা:

দক্ষ সেনাপতি দ্বারা প্রতিটি সেনাদলকে পরিচালিত করা হতো। ইভরিনোস বে নামক কারামির এক গ্রিক অধিনায়ককে ইউরোপীয় সীমান্তের এবং কোসি মিখাল নামক অধিনায়ককে স্কাউটদের সৈন্যপত্য প্রদান করা হয়। সর্বপ্রথম ওরখানের জ্যেষ্ঠ পুত্র সোলায়মানকে ইউরোপীয় এলাকার প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করা হয় ।

ওরখানের বেসামরিক প্রশাসন:


 নিম্নে সুলতান ওরখানের বেসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

১. সুলতান:

ওরখানের বেসামরিক প্রশাসনের সর্বোচ্চ আসনে আসীন ছিলেন সুলতান নিজে। সুলতান ছিলেন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তার নির্দেশে সাম্রাজ্য পরিচালিত হতো। সব বিষয়ে সুলতান একক সিদ্ধান্ত প্রদান করতেন ।

২. মন্ত্রণালয়:

সুলতান ওরখানের বেসামরিক প্রশাসনে সুলতানের পরে অবস্থান ছিল মন্ত্রণালয়ের। তিনি শাসনভার পরিচালনার জন্য বিভিন্ন বিভাগ সৃষ্টি করে একজন মন্ত্রীকে দায়িত্ব প্রদান করতেন। ঐ ব্যক্তি সেই বিভাগটি সুন্দরভাবে পরিচালনা করতো। মন্ত্রীগণ তাদের কাজের জন্য সুলতানের নিকট জবাবদিহিতা করতে বাধ্য থাকত ।

৩. প্রাদেশিক শাসক:

সুলতান ওরখান তার বিশাল সাম্রাজ্যের শাসন সুবিধার জন্য সাম্রাজ্যকে কয়েকটি প্রদেশে বিভক্ত করেন। উক্ত প্রদেশগুলোর শাসন পরিচালনার জন্য তিনি প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ দিতেন। উক্ত শাসনকর্তা প্রদেশের সব ব্যাপারে দায়বদ্ধ থাকত। প্রদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ যাবতীয় প্রশাসন ব্যবস্থা পরিচালনা তার দায়িত্বে থাকত ।

৪. বিচারব্যবস্থা:

সুলতান ওরখান ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী বিচারব্যবস্থা গড়ে তোলেন। তার বিচারব্যবস্থার কেন্দ্রে অবস্থান করতো কাজি উল কুজ্জাত বা প্রধান কাজি। আর তাকে সহায়তা করার জন্য অন্যান্য কাজিগণও কাজ করতো। একইভাবে তিনি সব প্রদেশে প্রাদেশিক বিচারব্যবস্থা গড়ে তোলেন ।

৫. অর্থ প্রশাসন:

সুলতান ওরখানের শাসনামলে শক্তিশালী অর্থ প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল । অর্থ প্রশাসনের কেন্দ্রে থাকত কেন্দ্রীয় অর্থ বিভাগ। যেখানে সব আয়ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষিত থাকত। এটি সরকারি কোষাগার হিসেবে ব্যবহৃত হতো প্রদেশগুলোতেও অর্থ প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। ওরখান অমুসলিমদের জন্য জিজিয়া কর মওকুফ করে দেন। এছাড়া জাকাতসহ অন্যান্য কর ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। এভাবে সুলতান ওরখানের শাসনামলে শক্তিশালী অর্থ প্রশাসন গড়ে উঠেছিল। 

৭. অন্যান্য প্রশাসন:

সুলতান ওরখান সুষ্ঠুভাবে সাম্রাজ্য পরিচালনার জন্য অন্যান্য বিভাগ চালুর মাধ্যমে কিছু শক্তিশালী প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। যেমন- ডাকবিভাগ, রাসায়েল বিভাগ, সংস্কৃতি বিভাগ, শিক্ষা বিভাগ ইত্যাদি । 


উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সুলতান ওরখান ছিলেন একজন সমরবিজেতা ও দক্ষ প্রশাসক । তিনি নিজ যোগ্যতা ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে শক্তিশালী সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলে অটোমান সাম্রাজ্যের স্থিতি আনয়ন করেন। অটোমান সাম্রাজ্যের প্রসার ও স্থিতি আনায়নের জন্য সুলতান ওরখানকে অটোমান সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। তার সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা পরবর্তী সময়ে অটোমান সাম্রাজ্যে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে ।

 


Post a Comment

Previous Post Next Post