রিদ্দা যুদ্ধ বলতে কী বুঝ? রিদ্দা যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল বর্ণনা কর ।

 

রিদ্দা যুদ্ধ বলতে কী বুঝ? রিদ্দা যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল বর্ণনা কর ।

রিদ্দা যুদ্ধ বলতে কী বুঝ?  রিদ্দা যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল বর্ণনা কর ।

মুহম্মদ (সা.)-এর ওফাতের পর হেজাজ ছাড়া প্রায় সমগ্র আরবদেশে ইসলাম ধর্ম ও নবপ্রতিষ্ঠিত মুসলিম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড বিক্ষোভ ও বিদ্রোহ শুরু হয়। ইসলাম ধর্মের সাথে যোগসূত্র ছিন্ন করে এই গোত্রপতিরা নিজেদের নবি বলে দাবি করে। সমগ্র আরবে চরম বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। এ বিশৃঙ্খলা দমন ও ইসলামি রাষ্ট্রের সংহতি রক্ষার স্বার্থে খলিফা হযরত আবু বকর (রা.) ধর্মত্যাগী ও ভণ্ড নবিদের বিরুদ্ধে রিদ্দা যুদ্ধ পরিচালনা করেন। এ যুদ্ধের মাধ্যমে তিনি ইসলামি রাষ্ট্রকে পুনর্জীবিত করে তোলেন ।

রিদ্দা যুদ্ধ :

রিদ্দা আরবি শব্দ।-এর অর্থ প্রত্যাবর্তন বা ফিরে যাওয়া। মহানবি (সা.)-এর ওফাতের পর হযরত আবু বকর (রা.)-এর খিলাফতকালে সমগ্র আরবে স্বধর্মত্যাগী ও ভণ্ড নবিরা আন্দোলন শুরু করে। হযরত আবু বকর (রা.) স্বধর্মত্যাগী ও ভণ্ড নবিদের দমনের লক্ষ্যে তাদের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ পরিচালনা করেন তা ইসলামের ইতিহাসে রিদ্দা যুদ্ধ নামে পরিচিত। এসময় বিভিন্ন ধর্মের স্থানীয় গোত্রের লোকজন ইসলাম ধর্ম বর্জন করে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। ইতিহাসে এ আন্দোলনকে স্বধর্মত্যাগী আন্দোলন বলা হয় ।

রিদ্দা যুদ্ধের কারণ : রিদ্দা যুদ্দের পিছনে কতিপয় কারণ ছিল  সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো :


১. ইসলামি জ্ঞানের অভাব :

মহানবি (সা.)-এর নবুয়ত লাভের পর তিনি অমুসলিমদের সাথে যুদ্ধ বিগ্রহে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। ফলে শেষ পর্যন্ত বিধর্মীদের ইসলাম ধর্ম কবুল করাতে পারলেও যোগাযোগ সমস্যা, প্রচারকার্যের অভাব, সময়ের সংকীর্ণতা প্রভৃতি কারণে ইহুদি ও খ্রিস্টানদের ইসলামি জ্ঞান বৃদ্ধি পায়নি। ইসলামকে সঠিকভাবে উপলব্ধি না করা ও ইসলামি জ্ঞানের যথাযথ অভাবে তারা সুযোগ পেয়ে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে ।

২. নৈতিক অনুশাসনের বিরোধিতা :

যাযাবর জীবনযাপনে অভ্যস্ত স্বাধীনচেতা আরববাসীরা ইসলামের নৈতিক শাসন ও মার্জিত জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত ছিল না। ব্যভিচার ও মদ্যপানে লিপ্ত আরব গোত্রের লোকেরা মহানবি (সা.)-এর জীবদ্দশায় নিজেদের সংযত রাখলেও তাঁর মৃত্যুর পর তারা পূর্বের অসংযত ও বেহায়াপনার জীবনযাপনে ফিরে যায়।

৩. নবুয়ত নিয়ে ব্যবসা :

মহানবি (সা.)-এর তিরোধানের পর কিছুসংখ্যক ধূর্ত, স্বার্থান্বেষী, ভণ্ড আরব গোত্রপতি মনে করল নবুয়ত অনেক লাভজনক একটি ব্যবসা। এ লক্ষ্যে তারা তাদের অসৎ স্বার্থসিদ্ধির জন্য নিজেদের নবি বলে দাবি করতে থাকে । তারা আরবদের মাঝে মিথ্যা প্রচারণা চালাতে থাকে এবং মুসলমানদের উত্তেজিত করে তোলে। 

৪. ইসলাম ধর্মের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাসের অভাব :

আরব গোত্রপতিদের ইসলাম ধর্মের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাসের অভাব তাদেরকে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে নেয়। ফলে মহানবি (সা.)-এর ওফাতের সাথে সাথে তারা ইসলাম ধর্ম পরিত্যাগ করে ও বিদ্রোহীদের দলে প্রবেশ করে।

৫. ইসলামি সংস্কৃতির বিরোধিতা :

প্রাক ইসলামি যুগের কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজব্যবস্থা, আচার ও আচরণ মূল্যেবোধের সমাপ্তি ঘটে ইসলামের আলোকিত পরশ পেয়ে। ইসলামের মার্জিত ও নৈতিক ব্যাপারগুলোর ছোঁয়ায় প্রাক ইসলামি যুগের ঘৃণ্য সমাজ ও সংস্কৃতির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে, যা আরব গোত্রপতিরা সহজে মেনে নিতে পারেনি। ফলে মহানবি (সা.)- এর ওফাতের পর তারা ইসলামের বিরুদ্ধাচরণ করে।

৬. জাকাত প্রদানে অস্বীকৃতি :

বিভিন্ন আরব গোত্রদ্বয় তাদের সম্পদ থেকে দরিদ্রদের শতকরা আড়াই ভাগ জাকাত প্রদানে অস্বীকৃতি রিদ্দা যুদ্ধের অন্যতম কারণ।

৭. ইহুদি ও খ্রিস্টানদের শত্রুতা :

 মহানবি (সা.)-এর জীবদ্দশায়, ইহুদি ও খ্রিস্টানরা তাঁর আনুগত্য করলেও মহানবি (সা.)-এর মৃত্যুর পর তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। শত্রুতা করে তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের সমর্থন করতে থাকে।

৮. গোত্রীয় শাসনে অভ্যস্ততা :

 আরবের স্বার্থান্বেষী শ্রেণি গোত্রীয় শাসনে সর্বকাল অভ্যস্ত ছিল। মহানবি (সা.)-এর শাসনকালে তিনি ইসলামি রীতিনীতির পূর্ণ বাস্তবায়ন করে কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু আরবের ভণ্ড নবি, ধর্মত্যাগী আন্দোলনকারীরা গোত্রীয় ব্যবস্থা পরিত্যাগ করে কেন্দ্রীয় শাসনের কর্তৃত্ব মেনে নিতে রাজি ছিল না। ফলে তারা কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধিতা করে হযরত আবু বকর (রা.)-এর খিলাফতকালে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।

রিদ্দা যুদ্ধের ফলাফল : নিম্নে রিদ্দা যুদ্ধের ফলাফলআলোচনা করা হলো :

১. ইসলাম সুদৃঢ়ীকরণ :

রিদ্দা যুদ্ধে জয়লাভ না করলে পরবর্তীকালে ইসলাম বহির্জগতে যে বিস্তার লাভ করেছিল তা সম্ভব হত না। রিদ্দা যুদ্ধে জয়লাভে ইসলামের অস্তিত্ব রক্ষা পায় এবং আরবের বুকে ইসলামি ব্যবস্থা সুদৃঢ় হয় ।

২. ইসলাম ও ইসলামি রাষ্ট্র রক্ষা :

 ধর্মত্যাগী ও ভণ্ড নবিরা ইসলাম সম্পর্কে যে বিদ্রোহ শুরু করেছিল তা কঠোর হস্তে দমন করার ফলে ইসলাম ও ইসলামি রাষ্ট্র সর্বপ্রকার বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা থেকে রক্ষা পায় ।

৩. ভণ্ড নবিদের দমন :

হযরত আবু বকর (রা.) রিদ্দা যুদ্ধের মাধ্যমে ভণ্ড নবিদের দমন করেন। তোলায়হা, সাজাহ, মুসায়লামা নামক ভণ্ড নবিদের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে তিনি তাদের সমুচিত শিক্ষাদান করেন এবং ফিত্না থেকে ইসলাম ধর্মকে রক্ষা করেন ।

৪. আল্লাহর একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা :

ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকে আরবদের মাঝে বহু ঈশ্বরবাদের আরাধনা চলছিল। বিনা যুদ্ধে জয়পাতের মাধ্যমে মূর্তি পূজার বহু ঈশ্বরবাদের ওপর আল্লাহর একত্ববাদ প্রতিষ্ঠিত হয় ।

৫. সামরিক নেতাদের বীরত্বের প্রকাশ : 

রিদা যুদ্ধের ফলে বিভিন্ন সামরিক নেতাদের বীরত্বের প্রকাশ ঘটে। সাইবার উপাধিপ্রাপ্ত খালিদ বিন ওয়ালিদ এ যুদ্ধে সবচেয়ে সাহসিকতাপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এছাড়া যুদ্ধে ইকরামা বিন আবু জাহেল, সুরাহবিল প্রমুখ সামরিক নেতার বীরত্বপূর্ণ তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়।

৬. ইসলামের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি :

রিদ্দা যুদ্ধের মাধ্যমে জাকাত দানে অস্বীকারকারীদের জাকাত দিতে বাধ্য করা হলে ইসলামের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটে। ধনীদের অতিরিক্ত সম্পদ দরিদ্ররা ভোগ করতে পারে। ফলে ধনী গরিব বৈষম্য হ্রাস পায়।

৭. বহির্বিশ্বে ইসলামের সম্প্রসারণ :

রিদ্দা যুদ্ধে জয়লাভের ফলে ইসলামের বাণী বহির্বিশ্বে প্রচারণা করার পথে কোনো বাধা রইল না। অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা বজায় থাকলে মুসলমানরা বহির্বিশ্বে কখনোই ইসলামের সম্প্রসারণ ঘটাতে সফলতা লাভ করতে পারত না ।

৮. পৌত্তলিকতার বিলোপসাধন :

রিদ্দা যুদ্ধে জয়লাভের ফলে আরবে যে কুসংস্কার ও পৌত্তলিকতা বিরাজ করছিল তার পুরোপুরি বিলুপ্ত ঘটে। ফলে সমগ্র আরবে ইসলাম ধর্ম বিস্তৃত লাভ করে।

৯. ধর্মীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা :

 রিদ্দা যুদ্ধে জয়লাভের পর মুসলমানদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। তাদের সর্বপ্রকার মানসিক দুর্বলতা দূরীভূত হয়ে ধর্মীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা পায় । ১০. পারসিক ও রোমানদের দমন : রিদ্দা যুদ্ধে জয়লাভ করে মুসলমানরা যুদ্ধে উসকানিদাতা পারসিক ও রোমানদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক অভিযান পরিচালনা করে তাদের দমন করেন।


উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, রিদ্দা যুদ্ধে জয়লাভ করে ইসলামকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা । রিদ্দা যুদ্ধে জয়লাভ মুসলমানদের বিশ্বজয়ে অনুপ্রাণিত করে। হযরত আবু বকর (রা.) ইসলামের সংকটপূর্ণ মুহূর্তে আন্দোলনকারীদের দমন করার মাধ্যমে যে অসামান্য দূরদর্শিতার পরিচয় দেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তাই ঐতিহাসিক মুর যথার্থই বলেন, হযরত আবু বকর (রা.)-এর জন্যই ইসলাম বেদুইন ধর্মের সাথে মিশে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি বা অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়নি।

রিদ্দা যুদ্ধের ঘটনাবলি : 

মুহম্মদ (সা.)-এর ওফাতের পর হেজাজ ছাড়া প্রায় সমগ্র আরবদেশে ইসলাম ধর্ম ও নবপ্রতিষ্ঠিত মুসলিম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রচন্ড বিক্ষোভ ও বিদ্রোহ শুরু হয়। ইসলাম ধর্মের সাথে যোগসূত্র ছিন্ন করে গোত্রপতিরা নিজেদের নবি বলে দাবি করে। এতে সমগ্র আরবে চরম বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। বিশৃঙ্খলা দমন ও ইসলামি রাষ্ট্রের সংহতি রক্ষার স্বার্থে খলিফা হযরত আবু বকর (রা.) ধর্মত্যাগী ও ভণ্ড নবিদের বিরুদ্ধে রিদ্দা যুদ্ধ পরিচালনা করেন। এ যুদ্ধের মাধ্যমে তিনি ইসলামি রাষ্ট্রকে পুনর্জীবিত করে তোলেন। এজন্যই ঐতিহাসিক P. K. Hitti বলেন, হযরত আবু বকর (রা.)-এর স্বল্পকাল স্থায়ী খিলাফতের অধিকাংশ সময় তথাকথিত রিদ্দা যুদ্ধে পরিপূর্ণ ছিল।" [Ref: History of the Arabs]

আরবের বিভিন্ন গোত্রগুলোর বিদ্রোহ ছিল ইসলামের প্রতি এক বিরাট হুমকিস্বরূপ। এ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক মুর বলেছেন, "The Arabs throughout the peninsula were replacing into apostasy." আরবদের বিদ্রোহী গোত্রগুলোকে দমন করার লক্ষ্যে আবু বকর (রা.) রিদ্দা যুদ্ধ পরিচালনা করেন। নিম্নে রিদ্দা যুদ্ধের ঘটনাবলি আলোচনা করা হলো :

১. সেনাবাহিনী বিভক্তিকরণ :

আরবের আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার জন্য আবু বকর (রা.) সেনাবাহিনীকে ১১টি ভাগে বিভক্ত করেন। তিনি প্রতিটি সেনাদলকে একজন সাহসী ও অভিজ্ঞ সেনাপতির অধীনে ন্যস্ত করেন এবং তাদের আরবের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্রোহ দমন করতে প্রেরণ করেন। এসব দল অত্যন্ত দক্ষতা ও দৃঢ়তার সাথে স্বধর্মত্যাগীদের সমূলে দমন করেন ।

 ২. রাবাজা ও ধুলকাশায় অভিযান :

ধর্মত্যাগী ও ভণ্ড নবিদের আন্দোলন যখন সমগ্র আরব সমাজে ছড়িয়ে পড়ে তখন আবু বকর (রা.) বিচলিত হয়ে পড়েন। বিশেষ করে এসময় সেনাপতি ওসামার অনুপস্থিতিতে মদিনার নিরাপত্তাকে আরও অরক্ষিত করে ফেলে। ফলে পরিস্থিতি আরও প্রতিকূলে চলে যায়। এরকম অবস্থায় হযরত আবু বকর (রা.) মদিনা নগরীকে রক্ষা করার লক্ষ্যে আলি (রা.), তালহা (রা.), জুবায়ের (রা.)-এর সহায়তায় ভণ্ড নবিদের দমনের জন্য প্রথমে রাবাজা ও ধুলকাশায় আকস্মিক আক্রমণ করেন। রাবাজা ও ধুলকাশায় আবস ও জুরিয়ান গোত্রের লোকেরা ভণ্ড নবি তোলায়হা কর্তৃক উৎসাহিত হয়ে মুসলিম ধর্মভীরুদের হত্যা করে এবং ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করার জন্য বাধ্য করে। এজন্য খলিফা তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে অনেককেই বন্দি ও নিহত করেন। বাকি সদস্যরা ভণ্ড নবি তোলায়হার সাথে মিলিত হয়।

৩. ভণ্ড নবি আসাদ আনসিকে দমন :

ভণ্ড নবিদের মধ্যে আসাদ আনসি ছিল শীর্ষে। সে দশম হিজরিতে নবুয়ত দাবি করে এবং ইয়েমেন ও নাজরান দখল করে নেয়। সে একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠন করে তাদের নিয়ে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করে। রাসুল (সা.)-এর ইন্তেকালের কিছুদিন পূর্বে অসাদ তার এক আত্মীয় ফিরোজ দায়লামি কর্তৃক নিহত হয়। তার মৃত্যুর পরও তার অনুসারীরা বিদ্রোহ অব্যাহত রাখে। আবু বকর (রা.)-এর সেনাবাহিনী তাদের পরাজিত করে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করে।

৪. ভক্ত নবি তোলায়হার বিরুদ্ধে যুদ্ধ :

ভণ্ড নবি তোলায়হাকে দমন করার জন্য আবু বকর (রা.) খালিদ বিন ওয়ালিদকে প্রেরণ করেন। খালিদ ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের শেষের দিকে মুসলিম বাহিনী নিয়ে বুজাখার নামক স্থানে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে আসাদ গোত্রের এ ভণ্ড নবিকে যুদ্ধে পরাজিত করেন । মুসলিম বাহিনীর নিকট পরাজিত হয়ে তোলায়হা স্ত্রীসহ পালিয়ে সিরিয়া গমন করে। পরবর্তীতে মদিনায় এসে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সে নিজেকে সংশোধন করলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়।

৫. তামিম ও ইয়ারবু গোত্রকে দমন :

তামিম ও ইয়ারবু গোত্রের শাসকগণ তোলায়হার সাথে যোগ দিয়ে জাকাত বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলে । তোলায়হাকে দমন করে খালিদ তামিম ও ইয়ারবু গোত্রের বিরুদ্ধে অভিযান চালান ও তাদের পরাজিত করেন। তামিম আত্মসমর্পণ করেন এবং তারা সকলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।

৬. ভণ্ড নবি মুসায়লামার বিরুদ্ধে অভিযান :

ভণ্ড নবিদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিলেন মুসায়লামা। মধ্য আরবের ইয়ামামা নামক স্থানে বনু হানিফা গোত্রে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাকে দমন করার জন্য প্রথমে ইকরামা বিন আবু জাহেল ও সুরাহবিলকে প্রেরণ করলে তারা মুসায়লামাকে দমনে ব্যর্থ হয় । পরবর্তীতে ৬৩৩ খ্রিস্টাব্দে ইকরামা, সুরাহবিল ও খালিদের ত্রিশক্তি বাহিনীর নিকট মুসায়লামা পরাজিত ও নিহত হন। এ যুদ্ধে বিদ্রোহীদের ৪০ হাজার সৈন্যের মধ্যে ১০ হাজার সৈন্য এবং মুসলমানদের ২০০০ সৈন্য নিহত হয়। যুদ্ধে প্রায় ৩০০ জন হাফেজে কোরআন শাহাদাতবরণ করেন। একে ঐতিহাসিক তাবারি মৃত্যুর বাগান (Garden of Death) বলে উল্লেখ করেছেন ।

৭. ভণ্ড নবি সাজাহর বিরুদ্ধে অভিযান :

সাজাহর পূর্ব পুরুষগণ ইয়ারবু গোত্রের ছিল। সে ছিল একমাত্র মহিলা ভণ্ড নবি। নবুয়তকে লাভজনক মনে করে সে নিজেকে নবি বলে দাবি করে। ইয়ারবু গোত্রের দলপতি মালিক বিন লুবিয়ার তাকে সমর্থন করে। খালিদ বিন ওয়ালিদ ইয়ারবু গোত্রপতিকে হত্যা করে। পরবর্তীতে সাজাহ ভণ্ড নবি মুসায়লামাকে বিয়ে করেন। মুসায়লামার পতনের পর সাজাহ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন ।

৮. অন্যান্য বিদ্রোহীকে দমন :

পূর্ববর্তী বিদ্রোহীদের দমন করে খলিফা আরবের দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে নজর দেন। বাহরাইনের বিদ্রোহী গোত্র বনু বকর, হাজরামাউতের কিন্দা গোত্র এবং ইয়েমেন ও ওমানের অন্যান্য স্থানের বিদ্রোহীদের দমন করার মাধ্যমে রিদ্দা যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।


উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, হযরত আবু বকর (রা.)-এর রাজত্বের অন্যতম উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা হলো স্বধর্মত্যাগী ও ভণ্ড নবিদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে রিদ্দা যুদ্ধ পরিচালনা ও কৃতিত্বের সাথে মুসলমানদের বিজয় আনয়ন। হযরত আবু বকর (রা.) অত্যন্ত দক্ষতা ও কৃতিত্বের সাথে রিদ্দা যুদ্ধ পরিচালনা করে ইসলামি রাষ্ট্র ও ধর্মকে রক্ষা করেন। রিদ্দা যুদ্ধে জয় মুসলমানদের বিশ্বজয়ে অনুপ্রাণিত করে। ঐতিহাসিক মুর যথার্থই বলেন, তাঁর (আবু বকর (রা.)) জন্যই ইসলাম বেদুইন ধর্মের সাথে মিশে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি বা অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়নি।

হাজ্জাজবিন ইউসুফ কে ছিলেন? 


Post a Comment

Previous Post Next Post