অটোমান কারা? অটোমানদের উত্থানে ওসমানের কৃতিত্ব আলোচনা কর।

অটোমান কারা? অটোমানদের উত্থানে ওসমানের কৃতিত্ব আলোচনা কর।


অটোমান কারা? অটোমানদের উত্থানে ওসমানের কৃতিত্ব আলোচনা কর।

সমগ্র মুসলিম বিশ্বের খিলাফত একসময় আরবদের হাতে ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তা খিলাফত উমাইয়া, আব্বাসিদের হাত ঘুরে শেষ পর্যন্ত অনারব তুর্কিদের হাতে গিয়ে পড়ে। দুর্ধর্ষ তুর্কিরা মুসলিম হওয়ার পর অসীম ক্ষমতাধর ওঠে । মোঙ্গলদের সঙ্গে যুদ্ধে পর্যুদস্ত হলেও ১২৯৯ খ্রিস্টাব্দে অটোমান তুর্কিরা এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপ জুড়ে মুসলমানদের জন্য আর একটি বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তুর্কিদের নেতা সোলায়মানের পৌত্র ওসমানের নামানুসারে হয়ে এ সাম্রাজ্যের নামকরণ করা হয় অটোমান সালতানাত ।

১. অটোমানদের পরিচয় :

ওসমানের পিতামহ সোলায়মান মধ্য এশিয়ার মাহান নামক স্থানের একজন ক্ষুদ্র জমিদার ছিলেন। তিনি স্বয়ং তুর্কিদের ওঘুজ শাখার সদস্য ছিলেন। মোঙ্গল আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়ে সোলায়মান আবাসভূমি পরিত্যাগ করে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ আশ্রয় লাভের জন্য এশিয়া মাইনর অভিমুখে গমন করেন ।

বার্নার্ড লুইস বলেন যে, অটোমান তুর্কিদের সরকারি কাগজপত্রে তুর্কি নাম পাওয়া যায় না। তুর্কি বলতে অটোমান তুর্কিগণ আনাতোলিয়ার অসভ্য গ্রাম্য কৃষকদিগকে বা বর্বর তুর্কমানদিগকে বুঝাত।

অটোমানদের আদি বাসস্থান ছিল গোবি মরুভূমি ও ওরাল পর্বতমালার মধ্যবর্তী স্থানে। প্রাচীন কিংবদন্তি অনুসারে তারা এক ধূসর বর্ণ নেকড়ের পরিচালনায় ষষ্ঠ শতকে এ আবাসস্থল ত্যাগ করে। এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। আরবদের শাসনকালে তাদের ভাগ্য প্রসন্ন হয় এবং আরব সাম্রাজ্যে প্রবেশ করে তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। 

তুর্কিরা আরবদের সেনাবাহিনীতে যোগদান করে নিজেদের বীরত্বের পরিচয় দেন । ওঘুজ তুর্কিদের নেতা সোলায়মান নিজ যোগ্যতাবলে এশিয়া মাইনরে নিজ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা করেন। পরবর্তীতে তার পৌত্র ওসমান তুর্কি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে ১২৯৯ খ্রিস্টাব্দে এ সাম্রাজ্যের নামকরণ করেন অটোমান সালতানাত।

২. অটোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা:

অটোমান কারা? অটোমানদের উত্থানে ওসমানের কৃতিত্ব আলোচনা কর।

তুর্কিদের মাহান' নামক স্থানের জমিদার সোলায়মান মোঙ্গলদের দ্বারা বিতাড়িত হয়ে চার হাজার অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে এশিয়া মাইনরের দিকে গমন করেন। সোলায়মান তার সেনাবাহিনী নিয়ে আর্মেনিয়া প্রবেশ করে আরজরুম নামক স্থানে কয়েক বছর অবস্থানের পর পুনরায় খোরাসান প্রত্যাবর্তনের পথে ইউফ্রেটিস নদী অতিক্রম করার সময় স্রোতের বেগে পানিতে ডুবে প্রাণ হারান। গুনদুগদ ও সুনগুর তেকিন নামক সোলায়মানের দুই পুত্র অধিকাংশ তুর্কিদের নিয়ে পুনরায় মধ্য এশিয়ায় প্রত্যাবর্তন করেন ।

সোলায়মানের পুত্র তুঘরুল ও দুনদার ৪২০টি পরিবার নিয়ে ইউফ্রেটিসের অববাহিকায় কিছুকাল বসবাস করেন। কিন্তু মোঙ্গলদের আক্রমণের ফলে পুনরায়, আশ্রয়চ্যুত হয়ে আনাতোলিয়ার দিকে গমন করেন। পথিমধ্যে তুঘরুল তার অনুচরদের নিয়ে রুমের সেলজুক সুলতান আলাউদ্দিনের সাথে মোঙ্গলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হন। যুদ্ধে তারা মোঙ্গলদের পরাজিত ও বিতাড়িত করে সুলতান আলাউদ্দিনকে পরাজয়ের গ্লানি হতে রক্ষা করেন ।

সুলতান আলাউদ্দিন যুদ্ধে জয়লাভ করে তুঘরুলের প্রতি প্রীত হয়ে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তাকে রাজ্যের মধ্যে জায়গির হিসেবে একটি জেলা দান করেন । এর কিছুদিনের মধ্যেই ব্রুসার নিকটবর্তী রণক্ষেত্রে তুরুল গ্রিক ও মোঙ্গল বাহিনীকে পুনরায় পরাজিত করায় সুলতান আলাউদ্দিন প্রীত হয়ে তুঘরুলকে এসক ই শহর' নামক জেলাটিও প্রদান করেন। তুঘরুল সুগুতকে তার রাজধানী হিসেবে ব্যবহার করে অর্ধস্বাধীন সুলতান হিসেবে জীবিত ছিলেন। তুঘরুলের রাজধানী সুগুতই পরবর্তীকালে বিশাল অটোমান সাম্রাজ্যের ধাত্রীর আসন লাভ করে।

অটোমানদের উত্থানে ওসমানের কৃতিত্ব:

তুঘরুলের মৃত্যুর পর ১২৮৮ খ্রিস্টাব্দে পুত্র ওসমান দলপতি ও রাজ্যের শাসক নিযুক্ত হন। ওসমান নিজে সুলতান উপাধি গ্রহণ করেননি। তুঘরুল সেলজুকদের করদ মিত্র রাজা ছিলেন। কিন্তু ওসমান সেলজুকদের পতনের সময় নিজেকে স্বাধীন বলে ঘোষণা করেন এবং কর দেওয়া বন্ধ করে দেন । তিনি দীর্ঘ ৩৮ বছর রাজত্ব করেন এবং সব শত্রুকে কোণঠাসা করে রাজ্যসীমা বৃদ্ধি করেন । তার রাজত্বকালে ক্ষুদ্র সুগুত রাজ্য বৃদ্ধি পেয়ে দৈর্ঘ্য ১২০ মাইল ও প্রস্থ ৬০ মাইলসহ আয়তনে ৬০০০ বর্গমাইল বর্ধিত হয় ।

ওসমান ১৩০২ খ্রিস্টাব্দে গ্রিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে তাদের পরাজিত করেন। তিনি প্রথমে ছোট ছোট জমিদার ও জেলাগুলো জয় করে রাজ্যবিস্তার শুরু করেন । ওসমান নিজেকে স্বাধীন নরপতি হিসেবে ঘোষণা করে কেবল খ্রিস্টান শক্তির বিরুদ্ধেই সামরিক অভিযান পরিচালনা করেন । তার রাজ্যবিস্তারনীতি হতে জানা যায় তিনি ধর্মপ্রচারের পক্ষপাতী ছিলেন। ওসমান একটি নর রাষ্ট্র ও নতুন জাতি প্রতিষ্ঠা করে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন ।

ঐতিহাসিক গিবন বলেন, ওসমানের রাজ্যে মুসলমান ব্যতিরেকেও গ্রিক জাতি বসবাস করতো। তারা পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এবং অন্য তুর্কি জাতি হতে পৃথক একটি জাতির সৃষ্টি করে। তারা নিজেদের অটোমান বলত । ওসমান এভাবে যে রাষ্ট্র ও জাতীয় প্রতিষ্ঠা করেন তা পরবর্তীকালে বিশ্ব শক্তির মর্যাদা লাভ করে।

ওসমানের মৃত্যুর পূর্বে অটোমান তুর্কিগণ এসক ই শহর, ইনুনু, বিলেজিক ও জেনি শহর প্রভৃতি ক্ষুদ্র শহর জয় করে। জেনি শহরকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে ওসমানের গাজি বাহিনী পশ্চিমে শাখরিয়া নদী, দক্ষিণে এসক ই শহর ও কারামানিয়া আমিরাত, পশ্চিম-উত্তরে উলুদাগ পর্বত ও মারমারা সাগর পর্যন্ত রাজ্য বিস্তার করে।

ওসমানের ব্যক্তি উন্নত চরিত্র এবং সাংগঠনিক দক্ষতা অটোমানদের ঐক্যবদ্ধ জাতিতে পরিণত করে। তার অনুচরবর্গ তার প্রতি সর্বত অনুগত ছিল । ফলে অল্প সময়ে অটোমান তুর্কিরা বিশাল অটোমান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিল।

উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আব্বাসিদের পতনের পর মুসলিম বিশ্ব খিলাফত শূন্য হয়ে পড়ে। আর তখন ওঘুজ তুর্কিদের নেতা ওসমান স্বীয় যোগ্যতা ও দক্ষতাবলে ১২৯৯ খ্রিস্টাব্দে অটোমান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে খিলাফতের শূন্যতা পূরণ করেন। ওসমানের দক্ষতা ও যোগ্যতার কারণে তাকে অটোমান সালতানাতের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় । ওসমান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত অটোমান সাম্রাজ্য ১২৯৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু করে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত টিকে ছিল।

ওসমানের রাজত্বকাল : নিম্নে ওসমানের রাজত্বকাল আলোচনা করা হলো :

১. জন্ম ও পরিচয় :

পিতা তুমরুল সুগুতে অবস্থানকালে ওসমান ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তুঘরুলের তিন পুত্রের মধ্যে ওসমান দ্বিতীয় ছিলেন।

২. বাল্যকাল ও বিবাহ :

ওসমান বাল্যকালে পিতা তুঘরুলের অধীনে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। তিনি মাত্র ১৬ বছর বয়সে কারামানিয়ার শেখ ইদেব আলি নামক এক প্রতিষ্ঠিত ও প্রভাবশালী দরবেশের সুন্দরী কন্যা মাল খাতুনের প্রেমে পড়েন। কিন্তু তুমরুল যেহেতু তখন সামান্য একজন জমিদার ছাড়া কিছু ছিলেন না। তাই দরবেশ ইদেব আলি ওসমানের সাথে স্বীয় কন্যার বিবাহ দিতে প্রথম অস্বীকার করেন। কিন্তু পরবর্তীতে উক্ত বিবাহে সম্মতি প্রদান করেন। সেই বিবাহের ফলে এক মহান পরিবারের সাথে ওসমানের পরিবারের আত্মীয়তার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা হয়।

৩. সাম্রাজ্য লাভ : 

তুঘরুলের মৃত্যুর পর ১২৮৮ খ্রিস্টাব্দে ওসমান দলপতি ও রাজ্যের শাসক নিযুক্ত হন।

৪. স্বাধীন সাম্রাজ্যের ঘোষণা:

ওসমান নিজে সুলতান উপাধি গ্রহণ করেননি। তুঘরুল সেলজুকদের করদ মিত্র রাজা ছিলেন। কিন্তু ওসমান সেলজুকদের পতনের সময় নিজেকে স্বাধীন বলে ঘোষণা করেন ও কর দেওয়া বন্ধ করে দেন।

 ৫. সাম্রাজ্য বিস্তার :

ওসমান দীর্ঘ ৩৮ বছর রাজত্বকালে সব শত্রুকে কোণঠাসা করে রাজ্যসীমা বৃদ্ধি করেন । তার রাজত্বকালে ক্ষুদ্র সুগুত রাজ্য বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়ে দৈর্ঘ্যে ১২০ মাইল ও প্রস্থ ৬০ মাইলসহ ৬ হাজার বর্গমাইল বর্ধিত হয় । তার মৃত্যুর পূর্বে ব্রুসা শহরও তার রাজ্যভুক্ত হয় । তিনি সুগুতের পার্শ্ববর্তী ছোট ছোট জমিদারদের পরাস্ত করে তার চতুর্দিকে রাজ্যবিস্তার করেন।

৬. ইসলাম ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা:

ওসমান প্রথমে ছোট ছোট জমিদার ও জেলাগুলো জয় করে রাজ্যবিস্তার শুরু করেন। তিনি মুসলিম গাজি রাজ্যগুলো জয়ের চেষ্টা করেননি। নিজেকে স্বাধীন নরপতি হিসেবে ঘোষণা করে ওসমান কেবল খ্রিস্টান শক্তির বিরুদ্ধেই তার সামরিক অভিযানগুলো পরিচালনা করেন । তার রাজ্যবিস্তার নীতি হতে জানা যায় যে, তিনি ধর্মপ্রচারের পক্ষপাতী ছিলেন। বিজিত অঞ্চলের খ্রিস্টানগণ গ্রিক সম্রাটকে তাদের রক্ষাকর্তা মনে করতো। কিন্তু সম্রাট তাদের রক্ষার দায়িত্ব পরিত্যাগ করলে তারা স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করে। ওসমানের মন্ত্রী ছিলেন তার শ্বশুর শেখ ইদেব আলি। সেই সাধকের মহান চরিত্র ও আকর্ষণীয় প্রভাবও খ্রিস্টানদের ইসলাম ধর্মের প্রতি আকর্ষণ করতো।

৭. গ্রিকদের দমন :

ওসমান চৌদ্দ শতকের প্রথমদিকে গ্রিকদের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। তিনি নিকোমোডিয়ার নিকটবর্তী বাফুন নামক যুদ্ধক্ষেত্রে ৪ হাজার অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে গ্রিক বাহিনীকে বিপর্যস্ত করায় সম্রাট মাইকেল প্যালিওলোগাস ক্ষিপ্ত হয়ে স্বয়ং এশিয়া মাইনরে আগমন করেন। ভাড়াটিয়া স্লাভবাহিনীর বেতন বকেয়া পড়ায় সম্রাটকে সাহায্য দানে তারা বিরত থাকে। ফলে ১৩০২ খ্রিস্টাব্দে অন্যান্য গ্রিক সৈন্য ওসমানের হাতে পরাজিত হলে সম্রাট এশিয়া ভূখণ্ডে তার রাজ্য পুনরুদ্ধারের আশা ত্যাগ করে রাজধানী প্রত্যাবর্তন করেন ।

৮. অটোমান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা :

ওসমান একটি নব রাষ্ট্র ও নব জাতির প্রতিষ্ঠা করে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। ঐতিহাসিক গিবন বলেন, ওসমানের রাজ্যে মুসলমান ব্যতিরেকেও গ্রিক ও স্লাভ জাতি বসবাস করতো। তারা পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এবং অন্য তুর্কি জাতি হতে পৃথক একটি জাতির সৃষ্টি করে। তারা নিজেদের অটোমান বলত। আর তাদের অপেক্ষা নিম্নমানের লোকদের তারা তুর্কি বলত । ওসমান প্রতিষ্ঠিত নব রাষ্ট্র ও জাতি পরবর্তীকালে বিশ্ব শক্তির মর্যাদা লাভ করে। এ বংশের ৩৭ জন শাসক ১৯২৪ সাল পর্যন্ত শাসন করে।

৯. দক্ষ সংগঠক ও বিচক্ষণ সেনানায়ক :

একটি নব রাষ্ট্র ও নব জাতির স্রষ্টা ওসমান একজন সাহসী ও সুদক্ষ সংগঠক এবং বিচক্ষণ সেনানায়ক ছিলেন । তিনি স্বয়ং কোনো বড় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি, কিন্তু অটোমান জাতিকে সংগঠিত করে বিজয়ের পথ প্রশস্ত করেন । তিনি ছিলেন দৃঢ়চেতা ও দৃঢ়সংকল্প বোধসম্পন্ন শাসক। তিনি ধীরস্থিরভাবে নীতি প্রণয়ন করতেন এবং তা সফলভাবে কার্যকর করতেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ ইদেব আলি তাকে অকৃত্রিম সহযোগিতা দান করেন ।

১০. জনদরদি শাসক :

অটোমান কারা? অটোমানদের উত্থানে ওসমানের কৃতিত্ব আলোচনা কর।

ওসমান ছিলেন একজন সিদ্ধপুরুষ। জাতিধর্মনির্বিশেষে তিনি সকল প্রজাদের প্রতি উদার মনোভাবাপন্ন ছিলেন । তাই প্রজা সাধারণ ওসমানকে অকুণ্ঠ সমর্থন করতো।

১১. সহজসরল ও অনাড়ম্বর জীবনযাপন:

ওসমান সহজসরল ও অনাড়ম্বর জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। তিনি ধনরত্ন সঞ্চয় করতেন না এবং লুটের মাল সৈনিক ও গরিবদুঃখীর মধ্যে বণ্টন করে সবার সহানুভূতি লাভ করেছিলেন।

১২. দয়ালু শাসক:

ওসমান ছিলেন সত্যিকার দয়ালু শাসক। তার আদর্শের বিষয় অটোমান আমলে রূপকথায় পরিণত হয়। নতুন সুলতানদের অভিষেক অনুষ্ঠানে ওসমানের ধারালো তরবারি নব্য সুলতানের হাতে তুলে দেওয়ার সময় বলা হতো, "May he be as good as Uthman."

১৩. দৃঢ়চেতা শাসক :

ওসমান ছিলেন একজন দৃঢ়চেতা নরপতি। তিনি তার সংকল্প পূরণের ক্ষেত্রে কোনো বাধা মানতেন না । একবার তিনি এক প্রতিবেশী রাজ্য আক্রমণের জন্য তার পরিষদের নিকট প্রস্তাব পেশ করেন। এতে তার চাচা দুনদার বিরোধিতা করেন। ওসমান ক্ষিপ্ত হয়ে দরবারেই বন্দুকের সাহায্যে সেই চাচাকে হত্যা করেন। যুগের দাঁড়িপাল্লায় ওসমানের সেই হত্যাকাণ্ডকে বিচার করে দেখলে ওসমানকে নিষ্ঠুর বলা যায় না। কারণ দয়া ও মহানুভবতার উদাহরণও তার জীবনে কম ছিল না ।

১৪. মৃত্যু :

ওসমান দীর্ঘ ৩৮ বছর রাজত্ব পরিচালনার পর ১৩২৬ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন ।


উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, ওসমান ছিলেন মুসলিম বিশ্বের নতুন সালতানাত অটোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি নিজ যোগ্যতাবলে একেবারে শূন্য অবস্থা থেকে বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন যা ১৯২৪ সাল পর্যন্ত টিকে ছিল। তিনি দীর্ঘ ৩৮ বছর ক্ষমতায় থেকে সর্বক্ষেত্রে নিজ যোগ্যতার পরিচয় প্রদান করেছেন। মৃত্যুকালে তিনি তার পুত্র ওরখানকে পরবর্তী উত্তরাধিকার নিযুক্ত করে সুশৃঙ্খলভাবে রাজ্য পরিচালনার জন্য দীর্ঘ উপদেশ দিয়ে যান ।

 


Post a Comment

Previous Post Next Post