বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ :
জলবায়ু পরিবর্তন সারা বিশ্বে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়।প্রকৃতি বা পরিবেশের অনেক উপাদানই সীমিত। অপরপক্ষে বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে আধুনিক নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে পরিবেশের উপর প্রতিনিয়ত পড়ছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। তদুপরি, বিশ্বে জনসংখ্যার ঊর্ধ্বগতি প্রতিনিয়ত প্রকৃতির বা পরিবেশের বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহারের মাধ্যমে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে। পরিবেশের ব্যাপক ধ্বংস সাধনের জন্যই বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে এবং দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা।বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি দেশ বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবসমূহ:
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নাম বিশ্বের বেশির ভাগ গবেষণা সংস্থার তালিকায় অনেক আগেই উঠেছে। বিশ্বব্যাংক বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব নিয়ে “টার্ন ডাউন দ্য হিট: ক্লাইমেট এক্সট্রিম রিজিওনাল ইমপ্যাক্ট অ্যান্ড কেস ফর রেজিলিয়ান্স' শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ হচ্ছে সবচেয়ে দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চল বা হটস্পট। জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের উপর বিরূপ প্রভাবসমূহ নিম্নরূপ :
১. বন্যা এলাকা বাড়বে ২৯ শতাংশ:
প্রতিবেদনের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, প্রতি তিন থেকে পাঁচ বছর পর পর বাংলাদেশের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা বন্যায় ডুবে যাবে। এতে ফসলের ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি গরিব মানুষের ঘরবাড়ি বিনষ্ট হবে। তাপমাত্রা আড়াই ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে বন্যায় প্লাবিত এলাকার পরিমাণ ২৯ শতাংশ বাড়বে। বন্যার সময় আগের চেয়ে বেশি উচ্চতা নিয়ে পানি প্রবাহিত হবে। এতে প্রধান ফসল বোরো ও আমনের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
২. ঘূর্ণিঝড়:
প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন এখন আর কোনো দূর অতীতের বিষয় নয়। এর প্রভাব ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। দেশের উপকূলীয় এলাকায় শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আগের চেয়ে ঘন ঘন আঘাত হানছে। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে বাংলাদেশের ৩৪ লাখ ৫০ হাজার মানুষের ঘরবাড়ি ডুবে যায়। ওই ঝড়ে ক্ষতির পরিমাণ ছিল ১৬০ কোটি ডলার বা ১২ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা (১ ডলার =৭৮ টাকা হিসাবে)। ২০৫০ সালের মধ্যে এ ধরনের ঘূর্ণিঝড় আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে তিন মিটার উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস নিয়ে উপকূলে আঘাত হানবে। এতে ৯০ লাখ মানুষের বাড়িঘর ডুবে যেতে পারে ।
৩. উপকূলের ৪০ শতাংশ ফসলি জমি হারিয়ে যাবে:
২০৮০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উপকূলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৬৫ সেন্টিমিটার বাড়লে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৪০ শতাংশ ফসলি জমি হারিয়ে যাবে। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরে ৮০ হাজার টন ধানের উৎপাদন কম হয়েছিল। এর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ১৭০ কোটি ডলার বা ১৩ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। উপকূলীয় এলাকায় ইতোমধ্যেই লবণাক্ততা বাড়ার কারণে দুই কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানি লবণাক্ত হয়ে উঠবে। এর ফলে ওই এলাকাগুলোতে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দেবে।
৪. তাপদাহ ও খরার পরিমাণ বাড়বে:
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে তাপদাহের পরিমাণ বাড়বে। মৌসুমি বৃষ্টিপাত কমে আসবে। আবার অল্প সময়ে অনেক বৃষ্টি হবে। এতে দেশে ঘন ঘন খরা দেখা দিবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী দিনগুলোতে দেশের দক্ষিণ- পশ্চিমাঞ্চলে খরার পরিমাণ বাড়বে। এতে বৃষ্টিনির্ভর ফসলের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ধরনের খরা নিয়মিত হতে পারে।
৫. কৃষি উৎপাদন হ্রাস:
IPCC এর সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী বৈশ্বিক উষ্ণতা একই হারে বৃদ্ধি পেতে থাকলে দেশের নিম্ন উপকূলীয় অঞ্চল সমূদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে, ১০ শতাংশ ধানের জমি ও ৩০ শতাংশ গমের জমি বিনষ্ট হবে। ফলে, দেশে কৃষি উৎপাদনের উপর পড়বে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ।
৬. জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য ধ্বংস:
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের বৃক্ষ ও প্রাণীর উপর বিরাট প্রভাব পড়বে। ফলে সুন্দরবনের বিভিন্ন বৃক্ষসহ বিভিন্ন প্রজাতির কিছু প্রাণীর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। অন্যদিকে আমাদের দেশের গৌরব পৃথিবীর বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার তলিয়ে যাবে। যা হবে দেশের পর্যটনের জন্য হুমকিস্বরূপ ।
৭. মৎস্য ও বনজ সম্পদ ধ্বংস:
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধিসহ পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাবে। ফলে সামুদ্রিক মাছ ও উপকূলীয় বনজ সম্পদের জন্য একটি বৈরী পরিবেশ সৃষ্টি হবে।
৮. পানি সমস্যা:
জলবায়ু পরিবর্তন তথা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। বিভিন্ন নদ-নদী গেছে শুকিয়ে। আর কিছু কিছু নদ-নদীতে পানি প্রবাহ থাকলেও তা যথার্থ নয়। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের ধারা অব্যাহত থাকলে দেশে খাবার পানি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পানি সংকট সৃষ্টি হবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
৯. রোগ-ব্যাধি বৃদ্ধি:
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশে গ্রীষ্মকালীন রোগ, যেমন- কলেরা, হেপাটাইটিস বি. মেনিনজাইটিস, পোলিও ইত্যাদি বৃদ্ধি পাবে। সূর্যের আল্ট্রাভায়লেট রশ্মির জন্য চর্মরোগ ও চোখের ছানি পড়া বৃদ্ধি পাবে। দেশে পানি স্বল্পতা ও খাদ্য শস্যে তেজস্ক্রিয়তার জন্য অপুষ্টি দেখা দিতে পারে। ফলে শিশুরা অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগবে। সুতরাং দেশের স্বাস্থ্য সমস্যা ব্যাপক আকার ধারণ করবে ।
১০. কম বৃষ্টিপাত অঞ্চল মরুকরণ হওয়ার সম্ভাবনা:
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে বেশি বৃষ্টিপ্রবণ এলাকায় বৃষ্টি বেশি হবে এবং কম বৃষ্টি প্রবণ এলাকাসমূহে কম বৃষ্টি হবে। ফলে সে সমস্ত এলাকা মরুকরণের সম্ভাবনা থাকবে ।
১১. নদ-নদীর প্রবাহ পরিবর্তন:
জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে অনেক নদ-নদী শুকিয়ে
যাবে এবং পরবর্তীতে এগুলোর গতিপথ পরিবর্তিত হবে। নদী শুকিয়ে গেলে নৌ-চলাচল সহ
দেশের কৃষি সেচ ব্যবস্থা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেসমূহ:
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশ ডুবে না যাক তবে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হবে-এর সঙ্গে কেউ দ্বিমত প্রকাশ করেননি। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিসহ পরিবেশকে ভারসাম্যহীনতার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারের যা যা করা প্রয়োজন নিম্নে তা আলোচনা করা হলো:
১. বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণ হ্রাসকরণের জন্য আন্দোলনের সূচনা
করা;
২. বিভিন্ন সহযোগী দেশ ও সংস্থা নিয়ে উন্নত বিশ্ব এবং যেসব দেশ
জীবাশ্ম জ্বালানি ও গ্রিনহাউস গ্যাস অধিক হারে নির্গমন করে তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ
করা;
৩. পরিবেশবাদী আন্দোলন পরিচালনা করা;
৪. দেশে বনায়নের পরিমাণ বৃদ্ধি করা এবং বিশ্বব্যাপী বনায়ন ও
পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে কাজ করা;
৫. দেশের কার্বন নির্গমনের হার কমানো;
৬. প্রয়োজন হলে আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে কার্বন নির্গমন হার
হ্রাস করতে বিশ্ববাসীকে বাধ্য করা;
৭. জনসংখ্যা হ্রাসে পদক্ষেপ গ্রহণ করা;
৮. তেজস্ক্রিয় পদার্থ তথা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে প্রতিবন্ধকতা
সৃষ্টির লক্ষ্যে CTBT চুক্তিতে স্বাক্ষর ও অনুমোদন করার জন্য বিভিন্ন দেশকে রাজি
করানো;
৯. জৈব জ্বালানি নিষিদ্ধকরণের লক্ষ্যে কাজ করা;
১০. শক্তিশালী রাষ্ট্র কর্তৃক ক্ষুদ্র ও দুর্বল রাষ্ট্র যাতে
আক্রান্ত না হয় এবং যুদ্ধকালীন সময়ে যাতে তেজস্ক্রিয় রাসায়নিক ও মরণাস্ত্র
ব্যবহার করা না হয় সে লক্ষ্যে জাতিসংঘের মাধ্যমে কঠোর আইন পাস করানোর ব্যবস্থা
করা;
১১. দেশের মানুষের মধ্যে পরিবেশের ভারসাম্য টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে
সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সবাই একসঙ্গে কাজ করা;
১২. উপকূলীয় অঞ্চলে প্রাকৃতিক সবুজ বেষ্টনী তৈরি করা;
১৩. মহাপরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে বেড়িবাঁধ নির্মাণসহ প্রতিরক্ষা
ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করা;
১৪. কার্বন গ্যাস নির্গমনকারী দেশগুলো থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের
লক্ষ্যে বিভিন্ন সংস্থা ও আঞ্চলিক সহযোগী সংঘের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ আদায় করা;
১৫. উন্নয়ন পরিকল্পনার ক্ষেত্রে পরিবেশকে সর্বাগ্রে প্রাধান্য
দেয়া ।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেসমূহ:
বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য কোনভাবেই দায়ী না হওয়া সত্ত্বেও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের এক নির্দোষ শিকার বাংলাদেশ। এই বাস্ত বতায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় অভিযোজন কার্যক্রমে বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ নিম্নরূপ :
অভিযোজন ও প্রশমন:
জলবায়ু
পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলা ও অভিযোজন কর্মসূচি ত্বরান্বিত করার উদ্দেশ্যে সরকার
নিজস্ব তহবিল হতে ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন
তহবিল গঠন করেছে। ২০১০-১১ অর্থবছর ও ২০১১-১২ অর্থবছরে উক্ত ফান্ডে ৭০০ কোটি টাকা
বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছর পর্যন্ত সর্বমোট ২,৭০০ কোটি টাকা সরকার
এই ফান্ডে বরাদ্দ প্রদান করেছে।
জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড এর আওতায় পরিবেশ অধিদপ্তর উক্ত অর্থায়নে নিম্নোক্ত প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন করছে:
- সমগ্র বাংলাদেশের শহরগুলোর (পৌরসভা/মিউনিসিপ্যালিটিগুলোর) জৈব
আবর্জনা ব্যবহার করে 'প্রোগ্রাম্যাটিক সিডিএম' শীর্ষক প্রকল্প ।
- জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিরূপণ ও পরিবীক্ষণ কার্যক্রম জোরদারকরণের লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় গবেষণাগারের সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন শীর্ষক প্রকল্প ।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় গৃহীত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রকল্প নিম্নরূপ:
- জলবায়ু পরিবর্তনে চরম হুমকির মুখে প্রতিকূল পরিবেশে অবস্থানকারী নারী ও শিশুর সুপেয় পানি সরবরাহ সহ সামাজিক সুরক্ষাকরণ প্রকল্প ।
- জলাভূমি সংরক্ষণ প্রকল্প।
- উপকূলীয় এলাকায় বিস্তৃত বনায়ন প্রকল্প।
- Solar Home System সহজলভ্য করার জন্য সরকার আমদানিকৃত Solar Home System এর উপর শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। সারাদেশে প্রায় ৯ লক্ষ Improved Cook Stoves বা উন্নত প্রযুক্তির চুলা বিতরণ করা হয়েছে যা দেশে লাকড়ির চাহিদা হ্রাসসহ বৃক্ষরাজি রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা রেখেছে ।
- জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা মোকাবিলার জন্য ইতোমধ্যে বন অধিদপ্তরও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং জলবায়ু ট্রাস্টি বোর্ডের অর্থায়নে ৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে বর্ণিত প্রকল্পসমূহের আওতায় ১১৮৯ হেক্টর ব্লক বাগান, ৬৫২ কি. মি. স্ট্রিপ বাগান এবং ২.৫৪ লক্ষ চারা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে গৃহীত কার্যক্রম:
পরিবেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে বায়ু। দেশের বিভিন্ন স্থানের বায়ু দূষণ মনিটরিং এবং এর ফলাফলের ভিত্তিতে তা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। পরিবেশ অধিদপ্তর দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহর যেমন ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহীতে সার্বক্ষণিক বায়ু মনিটরিং কেন্দ্র স্থাপন করেছে। এ সকল স্থান হতে সার্বক্ষণিক বায়ু মনিটরিং ফলাফল পাওয়া যায় ৷
বাংলাদেশ
সরকার বায়ু দূষণ রোধকল্পে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। বিশ্ব ব্যাংকের
আর্থিক সহায়তায় পরিবেশ অধিদপ্তর বায়ুর মান উন্নয়নের লক্ষ্যে Clean Air
Sustainable Environment (CASE) শীর্ষক প্রকল্পটি ২০০৯-১৪ মেয়াদে বাস্তবায়ন
করছে। প্রকল্পের মূলত দুটি কম্পোনেন্ট:
ক. পরিবেশঃ এই কম্পোনেন্টে ইট ভাটার নিঃসরণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, এই কম্পোনেন্টটি পরিবেশ অধিদপ্তর বাস্তবায়ন করছে এবং
খ. যানবাহনঃ এই কম্পোনেন্টের আওতায় যানবাহন ব্যবস্থাপনা এবং কারিগরি দিক অন্তর্ভুক্ত। বায়ুদূষণ রোধকল্পে যেসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে তা নিম্নে উল্লেখ করা হল:
- ইট প্রস্তুতে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ;
- বায়ু দূষণ রোধক স্থাপনে বাধ্য করা;
- যানবাহন হতে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য আরও কঠোর আইন প্রণয়ন;
- বার্ষিক/পিরিওডিক যানবাহন নিঃসরণ পরিবীক্ষণ বাধ্যতামূলককরণ;
২০১৩-১৪ অর্থবছরে বন অধিদপ্তর কর্তৃক গৃহীত উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম নিম্নরূপ:
- কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন এলাকায় ১০০ কি. মি., সন্দ্বীপ দ্বীপ সংলগ্ন বাঁধএলাকা এবং পটুয়াখালী জেলার নবসৃষ্ট রাঙ্গাবালি উপজেলায় সবুজবেষ্টনি সৃজনের কার্যক্রম চলছে;
- সুন্দরবন সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ইকো-সিস্টেম এর উৎপাদনশীলতার উন্নয়ন এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অর্থায়নে ১২৭.৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘সুন্দরবন এনভায়রনমেন্টাল এন্ড লাইভলিহুড সিকিউরিটি (সীলস); প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে;
n
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ:
জীববৈচিত্র্য
প্রতিবেশ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার এক অমূল্য সম্পদ। দেশের মূল্যবান জীবসম্পদ
সংরক্ষণে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০২০ প্রণয়ন করা হয়েছে। উক্ত কর্মপরিকল্পনার
আওতায় বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। National Bio-safety Framework
বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ‘ইমপ্লিমেন্টেশন অব ন্যাশনাল বায়োসেফটি ফ্রেমওয়ার্ক' শীর্ষক
প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া উপকূলীয় ও জলাভূমিস্থ জীববৈচিত্র্য
সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা ও টেকসই ব্যবহার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কক্সবাজার,
সেন্টমার্টিন দ্বীপপুঞ্জ এবং হাকালুকি হাওরের জীববৈচিত্র্যা সংরক্ষণের কার্যক্রম
পরিচালিত হচ্ছে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক গৃহীত প্রকল্প সমূহ
নিম্নরূপ :
- জাতিসংঘ জীববৈচত্র্যি সনদের আওতায় গৃহীত কৌশলগত পরিকল্পনা ২০১১-২০ এর সাথে বাংলাদেশের জাতীয় জীববৈচিত্র্য কর্মকৌশল (National Biodiversity Strategy & Action Plan) কে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং হালনাগাদ করে প্রণয়নের লক্ষ্যে একটি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে ।
- জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে 'কমিউনিটি বেইজড এডাপশন ইন দ্যা ইকোলজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এরিয়াজ থ্র বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশন এন্ড সোসাল প্রটেকশন' শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
ü
একুশ
শতকের এই বিশ্বায়নের যুগে বিশ্ব পরিবেশ আজ মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। বিজ্ঞানের
চরম উৎকর্ষ পরিবেশের মারাত্মক দূষণ তথা মানবজাতিকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
আর বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলো তার বিরূপ প্রভাব ভোগ করছে এবং ভবিষ্যতে এর প্রভাব
বাড়বে বৈ কমবে না । পরিবেশ রক্ষা ও ভারসাম্যমূলক পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে উত্তর ও
দক্ষিণের দেশসমূহকে সহনশীল নীতি গ্রহণ করতে হবে যার কোন বিকল্প নেই বলে
পরিবেশবাদীরা মনে করেন। নতুবা বিশ্ব মানবতা সম্মুখীন হবে চরম ব্যর্থতার।