টেকসই উন্নয়ন কি? টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ। টেকসই উন্নয়নে বাংলাদেশের করণীয়।



টেকসই উন্নয়ন কি? টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ। টেকসই উন্নয়নে বাংলাদেশের করণীয়।

টেকসই উন্নয়ন কি? টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ। টেকসই উন্নয়নে বাংলাদেশের করণীয়: 

ভূমিকা:

বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন সরকার ও সাহায্যদাতা সংস্থাগুলোর বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচিতে প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশগত ভারসাম্যের বিষয়টি উপেক্ষিত হচ্ছে। বরং উন্নয়ন কর্মসূচি কেন্দ্রীভূত থেকেছে প্রতিকূল শর্তযুক্ত বৈদেশিক ঋণ, নগরায়ণ ও শিল্পায়ন এবং এর ফলে প্রাকৃতিক সম্পদের দ্রুত ক্ষয়সাধন ও পরিবেশের বিপন্নতার মাঝে। ফলে বিশ্ব আজ এক অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন, যার দায়ভার কেবল বর্তমান প্রজন্মকেই নয়, বরং অনাগত ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও যুগ যুগ ধরে বহন করতে হবে। এসব ভাবনার ফলে উন্নয়ন ধারণায় উঠে আসে উন্নয়নের স্থায়িত্ব ও এর পরিবেশগত প্রভাবের বিষয়টি, যাকে বলা হয় টেকসই উন্নয়ন। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে তাই টেকসই উন্নয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ।

 

টেকসই উন্নয়ন কি:

টেকসই উন্নয়ন কি? টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ। টেকসই উন্নয়নে বাংলাদেশের করণীয়।

টেকসই উন্নয়ন বলতে শুধুমাত্র ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা পূরণের জন্য বর্তমান প্রজন্মের ভোগ সীমিতকরণকেই বোঝায় না; বরং এটি সংখ্যালঘিষ্ঠের অটেকসই ভোগের কারণে বর্তমান প্রজন্মের অবশিষ্ট জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদা পূরণের প্রক্রিয়া যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সেটিও নিশ্চিত করে। অতএব, টেকসই উন্নয়নের আরেকটি মাত্রা হচ্ছে আন্তঃপ্রজন্মগত সমতা। অন্য কথায়, টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে সমবণ্টন ।

 

WCED-এর (World Commission on Environment and Development) এর সংজ্ঞা অনুসারে, A development that fulfils the needs of the present without jeopardizing the ability of future generations to meet their own needs is known as sustainable development."

 

United Nations Charter "sustainable development is a system approach to growth and development and to manage natural, produced and social capital for the welfare of their own and future generations."

 

UNEP প্রতিবেদন অনুসারে, পরিবেশকে ভিত্তি করে সংঘটিত আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন টেকসই উন্নয়ন।"

 

World Commission on Environment and Development (WCED) Our Common Future' গ্রন্থে টেকসই উন্নয়নের কতকগুলো বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে আলোচনা করা হলো:

 

১. মানুষের বাঁচার ন্যূনতম প্রয়োজন-বাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, পানি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার প্রয়োজন মিটিয়ে জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি,

২. জনসংখ্যাকে একটি নির্দিষ্ট সীমায় ধরে রাখা;

৩. জৈব সম্পদ আহরণ করার ক্ষেত্রে প্রকৃতিকে সংরক্ষণ করা ,

৪. বনিজ সম্পদের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা এবং রিসাইক্লিংয়ের ওপর জোর দেয়া;

৫. প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের মাধ্যমে ভোগ;

৬. জল ও বায়ুদূষণকে নিয়ন্ত্রণে আনা;

৭. আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার ওপর জোর দেয়া;

৮. গ্রাম উন্নয়নের ওপর জোর দেয়া, যাতে গ্রামের মানুষ নিরন্তর শহরের দিকে না আসে,

৯. ভূমির সুষ্ঠু ও সুষম ব্যবহার এবং তা সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় আনা;

১০.আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি পুনর্বণ্টনের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ।


 

টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ:

 

তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের গতি অত্যন্ত মন্থর ও অপরিকল্পিত। নানাবিধ অর্থনৈতিক, সামাজিক, পরিবেশগত, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান এদেশের টেকসই উন্নয়নের পথে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে। টেকসই উন্নয়নের অধিকাংশ নির্ধারক আমাদের দেশে অনুপস্থিত। নিচে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ গুলো তুলে ধরা হলো:

 

১. জনসংখ্যা সমস্যা:

কোনো দেশের অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখতে সে দেশের আয়তনের সাথে জনসংখ্যাকে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে সীমাবদ্ধ রাখতে হয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, আমাদের দেশের জনসংখ্যা দেশের কাম্য জনসংখ্যার পরিমাণকে অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছে। তাই জনসংখ্যার এই বিস্ফোরণ এদেশের টেকসই উন্নয়নে অন্যতম বাধা।

 

২. নিম্ন মাথাপিছু আয়:

বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের প্রধান বাধা হলো জনগণের নিম্ন মাথাপিছু আয়। বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ১,১৯০ মার্কিন ডলার। স্বল্প আয়ের জনগণ যেখানে তাদের মৌলিক প্রয়োজনই পূরণ করতে পারে না, সেখানে তারা টেকসই উন্নয়নের চিন্তাই করতে পারে না।

 

৩. বন উজাড়করণ:

বৃক্ষ নিধন ও বনভূমির উজাড়করণ বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের পথে বিরাট একটি হুমকি। একটি দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য টিকিয়ে রাখার জন্য যেখানে দেশের মোট ভূমির ২৫ শতাংশ বনভূমির প্রয়োজন, বাংলাদেশে সেখানে বনভূমির পরিমাণ মোট ভূমির মাত্র ১৭.৫ শতাংশ। বৃক্ষ নিধনের ফলে বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়, যা টেকসই উন্নয়নকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে।

 

৪. অবকাঠামোগত দুর্বলতা:

বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের পথে প্রধান বাধা হচ্ছে অবকাঠামোগত দুর্বলতা। টেকসই উন্নয়নের জন্য দৃঢ় ভিতের অবকাঠামো দরকার। কর কাঠামো, কর আদায় ও মুদ্রা বিনিময় প্রভৃতি ক্ষেত্রের দুর্বল অর্থনৈতিক কাঠামো এদেশের টেকসই উন্নয়নের অন্যতম বাধা ।

 

৫. পরিবেশ দূষণ:

পরিবেশ দূষণ টেকসই উন্নয়নের পথে শুধু একটি বাধাই নয়, বরং এটা বিদ্যমান উন্নয়ন ব্যবস্থাও ধ্বংস করে দেয়। আর বাংলাদেশের বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, শব্দ দূষণ, মাটি দূষণ প্রভৃতি নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্ম দেয়, যা টেকসই উন্নয়নকে মুহূর্তেই ধ্বংস করে দেয় ।

 

৬. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা:

টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে বলা হয়ে থাকে, রাজনৈতিক উন্নয়ন টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত। কিন্তু বাংলাদেশের সরকারি ও বিরোধী দলগুলোর নিম্ন রাজনৈতিক সংস্কৃতি চর্চার ফলে টেকসই রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। তাছাড়াও দুর্নীতি, স্বার্থপরতা, ঋণখেলাপিদের দৌরাত্ম্য, নিরক্ষরতা, বেকারত্ব, দারিদ্র্য, পুষ্টিহীনতা, স্বাস্থ্যহীনতা, সাম্প্রদায়িকতা, স্বৈরতন্ত্র, পুরুষতন্ত্র, সন্ত্রাস, সামরিক শাসন ও প্রশাসনিক অস্বচ্ছতা ইত্যাদি আমাদের দেশের টেকসই উন্নয়নের প্রচেষ্টাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে।

 

৭. প্রশাসনিক জটিলতা:

 বাংলাদেশের শাসনতন্ত্রের মূল চালিকাশক্তি রাজনৈতিক প্রকৃতির হলেও মূল কাজকর্ম পরিচালনা করে আমলারা। এই আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দেশের সকল উন্নয়ন প্রচেষ্টার গতিকে মন্থর করে দেয়।

 

৮. বৈদেশিক সাহায্যনির্ভরতা:

টেকসই উন্নয়ন বলতে স্বাবলম্বিতা ও স্থায়িত্বশীলতাকে নির্দেশ করে। কিন্তু বৈদেশিক সাহায্যনির্ভর উন্নয়নকে কখনও টেকসই বলা যায় না। বৈদেশিক সাহায্য উন্নয়নের নামে আমাদের পরনির্ভরশীল করে তুলছে,যা টেকসই উন্নয়নের সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী একটি বিষয়। তাই বৈদেশিক সাহায্যনির্ভরতা বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের অন্তরায়।

 

৯. সঞ্চয়ের নিম্ন হার:

একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ১৬ থেকে ২০ শতাংশ জাতীয় সঞ্চয়ের প্রয়োজন। কিন্তু সেখানে বাংলাদেশে জাতীয় সঞ্চয়ের পরিমাণ ছিল মাত্র ৮ শতাংশ। সুতরাং জাতীয় সঞ্চয়ের এই নিম্ন হার উন্নয়নের পথে একটি বড় বাধা। প্রত্যাশার কথা হলো বর্তমানে তা গড়ে ৩০.৫৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। [অর্থ. সমীক্ষা-২০২৩]

 

১০. কাঠামোগত বৈষম্য:

বাংলাদেশের কাঠামোগত বৈষম্য ঐতিহ্যগতভাবে তিনটি ক্ষেত্রে বিরাজমান। আয় বা সম্পদের বণ্টনে বৈষম্য, শহর ও গ্রামের মধ্যে আঞ্চলিক অবস্থানজনিত বৈষম্য এবং নারী-পুরুষের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের পথে বড় বাধা। কেননা এই বিরাজমান কাঠামোগত বৈষম্য বজায় রেখে টেকসই উন্নয়নের চিন্তা বাস্ত বায়ন সম্ভব নয় ।

 

১১. সম্পদের অসম বণ্টন:

 সম্পদের অসম বণ্টন ও ভোগ স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের পথে বিরাট একটি বাধা। বাংলাদেশে ৫ শতাংশ লোক ভোগ করে ৮০ শতাংশ সম্পদ। সম্পদ ও সুযোগের এই চরম বৈষম্য টেকসই উন্নয়নই শুধু নয়, দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন প্রচেষ্টাকেই ব্যর্থ করে দেয়।

 

১২. আমদানি নির্ভরতা:

 বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে রপ্তানির তুলনায় আমদানির আধিক্যের কারণে বাণিজ্যিক লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতি সৃষ্টি হয়। প্রতিটি আর্থিক বছরে এ ঘাটতির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে আসছে। এ আমদানি নির্ভরতা তথা বাণিজ্য ঘাটতি বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করছে।

 

১৩. প্রতিকূল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি:

বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটেও টেকসই উন্নয়নের পক্ষে অনুকূল নয়। টেকসই উন্নয়নের একটা বড় দিক হলো ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন, যা ব্যতীত টেকসই উন্নয়নের কথা চিন্তাই করা যায় না।

 

টেকসই উন্নয়নে বাংলাদেশের করণীয়:

টেকসই উন্নয়ন কি? টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ। টেকসই উন্নয়নে বাংলাদেশের করণীয়।

টেকসই উন্নয়নের এসব বিদ্যমান প্রতিকূলতা দূরীকরণের মাধ্যমে আমাদের দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য নিম্নোক্ত বিষয়াবলির প্রতি গুরুত্বারোপ করা উচিত:

 

১. প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা:

প্রশাসনিক জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা টেকসই উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। দুর্নীতি এদেশের স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের পথে বিরাট বাধা। সরকারের দুর্বল ও দুর্নীতিগ্রস্ত প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা জনগণের উন্নয়ন প্রত্যাশা পূরণে বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। তাই দেশে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে প্রথমেই নিশ্চিত করতে হবে প্রশাসনের সর্বস্তরের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ।

 

২. গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ:

বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থার অর্থনৈতিক রূপরেখা হলো মুক্তবাজার অর্থনীতি, যার বিকাশে গণতান্ত্রিক চর্চার প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান অপরিহার্য। কিন্তু বাংলাদেশে গণতন্ত্রের চর্চা নেই বললেই চলে। তাই এদেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে আমাদের ব্যক্তিজীবন, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র তথা সর্বত্র গণতন্ত্রের চর্চা করতে হবে এবং গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করতে হবে।

 

৩. অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন রোধ:

একটি দেশের উন্নতির পথে অন্যতম বাধা বা প্রতিবন্ধকতা হলো অর্থনৈতিক দূর্বৃত্তায়ন । এদেশের অর্থনীতিকে দুর্বৃত্তরা বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। এরা রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে সমাজ উন্নয়নবিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। বাংলাদেশের সাবেক অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বিদেশি সাহায্যের ৫ শতাংশ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কারণে টার্গেট গ্রুপ তথা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় পৌছাতে পারেনি। তাই স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের স্বার্থেই এই অর্থনৈতিক অথচ অনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ করতে হবে।

 

৪. জনগণের ক্ষমতায়ন:

টেকসই উন্নয়নের জন্য জনগণের ক্ষমতায়ন অপরিহার্য। তাদের ক্ষমতা, বুদ্ধি, বিচক্ষণতা, জ্ঞান, টিকে থাকার ক্ষমতা প্রভৃতির বিকাশ সাধন করতে হবে এবং তাদের উন্নয়নের নিছক ফলভোগী না করে উন্নয়নের চালকের আসনে বসাতে হবে। কেননা নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের মতে, উন্নয়ন বলতে বোঝায় জনগণের ক্ষমতার বিকাশ ও তা ভোগ করার অধিকার ।

 

৫. বৈষম্য বিলোপ সাধন:

টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে সমাজ ব্যবস্থায় বিদ্যমান সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। পৃথিবী নামক এই গ্রহটা সমগ্র মানবজাতির । মুষ্টিমেয় লোভী ধনী দেশ এবং ধনী লোকেরা এটাকে লুট করবে তা হতে দেয়া যায় না। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতে, উন্নয়ন বলতে সমাজের নিম্নশ্রেণির উন্নয়নকেই বোঝায়। তাই টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে আগে নিম্নশ্রেণির জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।

 

৬. প্রাকৃতিক সম্পদের পরিকল্পিত ও যথার্থ ব্যবহার:

 প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের যথাযথ ও পরিকল্পিত ব্যবহার টেকসই উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। তাই বায়ুমণ্ডল সংরক্ষণ, টেকসই ভূমি ব্যবস্থা, অরণ্য বিনাশ রোধ, খরা ও মরুকরণ প্রতিরোধ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, জৈব প্রযুক্তির পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা, সমুদ্র ব্যবস্থাপনা ও সুরক্ষা, মিঠা পানির ব্যবস্থাপনা ও সুরক্ষা প্রভৃতির পরিকল্পিত ব্যবহার ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।

 

উপসংহার:


পরিশেষে বলা যায়, পরিবেশের কোনো ভৌগোলিক সীমারেখা নেই এবং কোনো দেশই বিচ্ছিন্নভাবে নিজ পরিবেশ ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটিয়ে এককভাবে নিজের ভবিষ্যৎকে শঙ্কামুক্ত করতে পারবে না। এজন্যই টেকসই উন্নয়নের জন্য অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশ্বের অংশীদারিত্বের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। আর এজন্য আমাদের ন্যায়বিচার, নৈতিকতা, সাম্য, সৌন্দর্যবোধ, ভালোবাসা, দেশপ্রেম প্রভৃতি মূল্যবোধের বিষয়ে আলোচনা ও চর্চার ওপর জোর দিতে হবে। কারণ এই মূল্যবোধসমূহ হারিয়ে যাওয়ার কারণেই উন্নয়নের মানবিক অবয়ব আজ হারিয়ে গেছে। তাই বলা যায়, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জাতি পেতে পারে উন্নয়নের স্থায়ী সুফল ও সমৃদ্ধি ।


Post a Comment

Previous Post Next Post