ধর্ম কী? পৃথিবীর প্রধান ধর্মগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

 

ধর্ম কী? পৃথিবীর প্রধান ধর্মগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত লেখ ।

 ধর্ম কী? পৃথিবীর প্রধান ধর্মগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত লেখ ।

ধর্ম একটি অতি প্রাচীন প্রতিষ্ঠান। মানুষের জীবনের সাথে ধর্ম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সভ্যতার শুরু থেকে ধর্মের উদ্ভব হয়। প্রাচীন যুগে ধর্মের খুব বেশি গুরুত্ব ছিল না। মধ্যযুগে সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করতো ধর্ম। তবে আধুনিক যুগে ধর্মের সাথে সাধারণ মানুষের ব্যাপক সমন্বয় হয়েছে। সাধারণভাবে ধর্ম বলতে মানুষ যা ধারণ করে তাকে বুঝানো হয়। পৃথিবীতে অনেকগুলো ধর্ম রয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব সময়ে অধিকাংশ ধর্মের উৎপত্তি ঘটে। তবে অধিকাংশ ধর্মই পরিবর্তিত এবং রূপান্তরিত। পৃথিবীর সকল ধর্মের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো মানুষের কল্যাণসাধন ।

ধর্মের পরিচয় :

ধর্মের সর্বজনীন সংজ্ঞা প্রদান করা একটি জটিল ও দুরূহ ব্যাপার। ধর্মের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Religion. এ Religion শব্দের উৎপত্তি হয়েছে ল্যাটিন শব্দ Religia থেকে। এর বাংলা অর্থ হলো বন্ধন, ধারণ করা, দৃঢ়ভাবে বেঁধে রাখা, নিয়ন্ত্রিত করা ইত্যাদি ।সাধারণভাবে মানুষ যা ধারণ করে তাই ধর্ম। অন্যভাবে বলা যায়, সামঞ্জস্যপূর্ণ সামাজিক জীবনের বৃহত্তর ঐক্যের ভিত্তিতে যা মানুষ ধারণ করে তাকে ধর্ম বলে ।

২. প্রামাণ্য সংজ্ঞা :

দার্শনিক কান্টের মতে, ধর্ম হলো আমাদের সকল কর্তব্যকে ঐশ্বরিক আদেশরূপে স্বীকার করে নেওয়া।

মায়ার্সের মতে, ধর্ম হলো যা কিছুকে আমরা জাগতিক নিয়ম বলে জানি তার প্রতি মানুষের আত্মার সুস্থ ও স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। টেইলরের মতে, ধর্ম হলো আত্মিক জীবে বিশ্বাস।

ম্যাক্স মুলারের মতে, ধর্ম হলো অসীমের প্রত্যক্ষণ বা উপলব্ধি।

পৃথিবীর প্রধান ধর্মগুলো : নিম্নে পৃথিবীর প্রধান ধর্মগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

১. ইসলাম ধর্ম :

পৃথিবীর অন্যতম প্রধান ধর্ম হলো ইসলাম ধর্ম। এটি একটি একেশ্বরবাদী ধর্ম। ইসলামের মূলভিত্তি হলো তওহিদ বা একত্ববাদ। যা অন্যান্য ধর্ম থেকে ইসলামকে পৃথক করেছে। ইসলাম ধর্ম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এ ধর্মে মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র সম্পর্কে দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আল কুরআন হলো ইসলাম ধর্মের ধর্মগ্রন্থ। ইসলামের অনুসারীদের মুসলিম বলা হয়। ইসলাম ধর্ম একটি বিকাশমান ধর্ম। পৃথিবীর প্রায় ১৪০ কোটি মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী । জনসংখ্যার দিক থেকে এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। ইসলামের ৪টি মূল উৎস রয়েছে। এগুলো হলো- আল কুরআন, আল হাদিস, ইজমা ও কিয়াস । ইন্দোনেশিয়াতে সবচেয়ে বেশি ইসলাম ধর্মের অনুসারী রয়েছে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম  ইসলাম।

২. খ্রিস্টধর্ম :

পৃথিবীর অন্যতম প্রধান ও প্রাচীন ধর্ম হলো খ্রিস্টধর্ম । যিশুখ্রিস্ট (ইসা আ.) কে খ্রিস্টধর্মের জনক হিসেবে অভিহিত করা হয়। এটি একটি একেশ্বরবাদী ধর্ম। এর গোড়াপত্তন অনেক প্রাচীন হলেও খ্রিস্টের জীবন ও শিক্ষার ওপর ভিত্তি করে খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে এ ধর্মের উদ্ভব হয়। খ্রিস্টধর্মের অনুসারীদের খ্রিস্টান বলা হয় । খ্রিস্টানরা যিশুকে মসিহ মনে করেন এবং তাকে যিশুখ্রিস্ট বলে ডাকে। এ ধর্মের ধর্মগ্রন্থ হলো নিউ টেস্টামেন্ট বা বাইবেল । পৃথিবীর প্রায় ২২৫ কোটি মানুষ খ্রিস্টধর্মের অনুসারী । অনুসারী সংখ্যার দিক দিয়ে এটি পৃথিবীর বৃহত্তম ধর্ম। এ ধর্মের অনুসারীরা ত্রিত্ববাদ তথা তিন ঈশ্বরে বিশ্বাসী ।

৩. হিন্দুধর্ম :

হিন্দুধর্ম বিশ্বের প্রাচীন ধর্মগুলোর মধ্যে একটি। এর গোড়াপত্তন হয় আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫ শতকে । ভারতীয় উপমহাদেশের একাধিক স্থানীয় ধর্মীয় ঐতিহ্য একত্রে হিন্দুধর্ম নামে পরিচিত। এ ধর্মের কোনো একক প্রতিষ্ঠাতা নেই । বিভিন্ন দেবদেবীতে বিশ্বাস থাকলেও এটি একটি একেশ্বরবাদী ধর্ম। এটিকে সনাতন ধর্ম হিসেবে অভিহিত করা হয়। এছাড়া হিন্দুধর্মকে বৈদিক ধর্মও বলা হয়। এ ধর্মের গ্রন্থ হলো বেদ। বিশ্বের পায় ৯০ কোটি মানুষ হিন্দুধর্মের অনুসারী।

 ৪. ইহুদিধর্ম :

একেশ্বরবাদী ইহুদিধর্ম বিশ্বের প্রধান ধর্মগুলোর একটি। এটিকে সেমেটিক ধর্ম হিসেবেও অভিহিত করা হয়। এর গোড়াপত্তন হয় আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৩ শতকে। এ ধর্মের ধর্মগ্রন্থ হলো ওল্ড টেস্টামেন্ট। এ ধর্মের অনুসারী প্রায় দেড় কোটি।

 ৫. বৌদ্ধধর্ম :

বৌদ্ধধর্ম গৌতম বুদ্ধ কর্তৃক প্রচারিত একটি ধর্মবিশ্বাস এবং জীবনদর্শন। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে এ ধর্মের উৎপত্তি ঘটে। ভারতীয় উপমহাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এ ধর্মের বিস্তার ঘটে। বর্তমান বৌদ্ধধর্ম দুটি প্রধান মতবাদে বিভক্ত । এগুলো হলো হীনযান বা থেরবাদ ও মহাযান। বিশ্বের প্রায় ৩৮ কোটি মানুষ বৌদ্ধধর্মের অনুসারী।

৬. শিখধর্ম :

শিখ একটি একেশ্বরবাদী ধর্ম। খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে ভারতের পাঞ্জাব অঞ্চলে এ ধর্ম প্রবর্তিত হয়। এ ধর্মের মূল কথা গুরুর ধর্মোপদেশ। বিশ্বের ৬ষ্ঠ বৃহত্তম ধর্ম হলো শিখধর্ম। এ ধর্মের অনুসারীদের উপাসনালয়ের নাম গুরুদুয়ারা।

৭. জৈনধর্ম :

জৈনধর্ম প্রাচীন ভারতে প্রবর্তিত একটি ধর্মমত বা ঈশ্বরহীন দর্শন। জৈনধর্মে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নেই। তারা আত্মাতত্ত্বে বিশ্বাসী। সংখ্যায় কম হলেও বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধর্মাবলম্বীদের দেখা যায়।

উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, মানুষের লিখিত ইতিহাসের বয়স প্রায় ৫০০০ বছর। তাই এর আগের ধর্মীয় ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায় না। কালের আবর্তে অনেক ধর্ম হারিয়ে গিয়েছে আবার অনেক ধর্মের সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বে বর্তমানে অনেক ধর্ম রয়েছে। এর মধ্যে ইসলাম ধর্মই একমাত্র ব্যতিক্রম। এখানে বহু ঈশ্বরবাদের কোনো স্থান নেই। সর্বোপরি বলা যায় যে, মানুষের সামগ্রিক জীবনে ধর্মের অবদান অপরিসীম।

মানবজীবনে ধর্মের প্রভাব আলোচনা কর. এ সম্পর্কে মনীষীদের মন্তব্য কী?

ধর্ম একটি অতি প্রাচীন প্রতিষ্ঠান। সভ্যতার শুরু থেকে মানুষের সাথে ধর্মের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই কোনো না কোনো ধর্মের অনুসারী। বর্তমান পৃথিবীতে একেশ্বরবাদী, বহু ঈশ্বরবাদী, ঐশ্বরিক, অদ্বৈতিকসহ বিভিন্ন ধরনের ধর্ম রয়েছে। পৃথিবীতে অগণিত ধর্ম থাকলেও সব ধর্মের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হলো মানব কল্যাণসাধন। পৃথিবীর কোনো ধর্মই অন্যায় অনাচার ও অশ্লীল কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করে না। মানবজীবনের সাথে ধর্ম অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত । মানুষের সার্বিক চিন্তাভাবনা ও কর্মকাণ্ডের মধ্যে ধর্মের একটি প্রভাব লক্ষ করা যায় ।

 মানবজীবনে ধর্মের প্রভাব : নিম্নে মানবজীবনে ধর্মের প্রভাব আলোচনা করা হলো :

১. সামাজিক প্রভাব :

মানুষের সামাজিক জীবনে ধর্মের প্রভাব অপরিসীম। সামাজিক কর্মকাণ্ড সম্পাদন ও সামাজিক সম্পর্ক স্থাপনে ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সামাজিক ক্ষেত্রে নানাবিধ অনুষ্ঠান ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ধর্মীয় অনুশাসনের অধীনে থেকে মানুষ তার কার্যাবলি সম্পাদন করে। নিজ ধর্মের নির্দেশনাবলি সম্পর্কে সচেতন থেকেই মানুষ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড পালন করে।

২. ধর্মীয় প্রভাব :

ধর্মীয় ক্ষেত্রেও ধর্মের প্রভাব লক্ষ করা যায়। প্রত্যেকেই নিজ ধর্মের ধর্মীয় বিধিনিষেধ পালনের চেষ্টা করে।ধর্মীয় কার্যাদি সম্পাদনকে মানুষ মুক্তিলাভের উপায় হিসেবে মনে করে ।

৩. অর্থনৈতিক প্রভাব :

মানুষের অর্থনৈতিক জীবনেও ধর্মের প্রভাব অপরিসীম। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পাদনে মানুষ সবসময় ধর্মীয় অনুশাসন সম্পর্কে সচেতন থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তবে এক্ষেত্রে অনেক সময় ব্যতিক্রম দেখা যায়। ধর্মীয়ভাবে অনুমোদিত নয় এমন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও মানুষের দ্বারা সম্পাদিত হয় ।

৪. সাংস্কৃতিক প্রভাব :

মানুষের দৈনন্দিন জীবনের কর্ম প্রভাবই একটি সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। মানুষের জীবনধারা, শিল্প, সাহিত্য, ধর্ম, আদর্শ ও বিশ্বাস সংস্কৃতির অন্যতম অঙ্গ। মানবজীবনে আচার অনুষ্ঠান পালন ও আয়োজনে ধর্মের প্রভাব লক্ষ করা যায় । প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্মের আদর্শ অনুসারে ধর্মীয় উৎসবাদী পালন করে।

৫. রাজনৈতিক প্রভাব :

মানুষের রাজনৈতিক জীবনেও ধর্মের প্রভাব অপরিসীম।রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অনেক সময় মানুষ ধর্ম ব্যবহার করে । কারণ ধর্মের মাধ্যমে মানুষকে অত্যন্ত সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায় ।

মানবজীবনে ধর্মের প্রভাব সম্পর্কে মনীষীদের মন্তব্য

মানুষের ওপর ধর্মের প্রভাব বা মানবজীবনে ধর্মের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে বিশ্বের অনেক মনীষী মন্তব্য করেছেন । নিম্নে কয়েকটি মন্তব্য উল্লেখ করা হলো: 

উইলিয়াম জেমস: মার্কিন মনোবিজ্ঞানী উইলিয়াম জেমসের মতে, মানসিক দুশ্চিন্তার সবচেয়ে বড় চিকিৎসা হলো আল্লাহর ওপর ইমান আনা।

ডেল কার্নেগি: মার্কিন লেখক ডেল কার্নেগির মতে, ধার্মিকতা রোগের জন্য প্রতিকারস্বরূপ।" তিনি বলেন, মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, উদ্বেগ ও স্নায়ুতন্ত্রের উত্তেজনা দমন করার জন্য এবং এসব রোগ নিরাময় করার জন্য মজবুত বিশ্বাস এবং ধর্মাচার যথেষ্ট।"

আলি ইজজাত বিগোভিচ: সাবেক বসনিয়া হার্জেগোভিনিয়ার প্রেসিডেন্ট আলি ইজজাত বিগোভিচের মতে, বস্তুবাদ সবসময় প্রাণী ও মানুষের যৌথ দিকগুলোকেই সমর্থন করে। পক্ষান্তরে, ধর্ম এ দুটি বিষয়ের মাঝে পার্থক্য নির্ণায়ক বিষয়গুলোর ওপর জোর প্রদান করে।

আরনল্ড টয়েনবি : ব্রিটিশ ঐতিহাসিক আরনল্ড টয়েনবির মতে, ধর্মই হলো জীবন। তিনি বলেন ধর্ম হলো মানব স্বভাবের আবশ্যক ঝোঁক। এটুকু বলা যথার্থ যে, মানুষের ধর্মহীনতা তাকে এক ধরনের আত্মিক হতাশার দিকে ধাবিত করে। ফলে সে ধর্মীয় সান্ত্বনা খুঁজতে বাধ্য হয়।

উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ন্যায়নীতি, শান্তিশৃঙ্খলা ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার প্রেরণা থেকেই ধর্মের উদ্ভব হয়েছে। শৈশব থেকে যে ব্যক্তি যে ধর্মে বিশ্বাসী সে ব্যক্তি সে ধর্মের রীতিনীতি ও বিধিবিধানগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে। সে তার ধর্মীয় মূল্যবোধ দ্বারা লালিত হয় এবং স্বধর্মীয় বৈশিষ্ট্যগুলো তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে প্রতিফলিত হয়। ধর্ম মানুষের মনে সামাজিক মূল্যবোধ সঞ্চারিত করে সত্যবাদিতা, কর্তব্যসচেতনতা, ন্যায়পরায়ণতা, সহমর্মিতা প্রভৃতি আদর্শ ও গুণের দ্বারা গুণান্বিত হতে শিক্ষা দেয় ।

 ইসলাম ধর্মের প্রধান বৈশিষ্ট্য : নিম্নে ইসলাম ধর্মের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো :

১. একত্ববাদ :

ইসলামের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো একত্ববাদ বা তওহিদ। এ বৈশিষ্ট্যই ইসলামকে অন্যান্য ধর্ম থেকে পৃথক করে রেখেছে। ইসলামে একমাত্র আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন এবং তার উপাসনা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখানে আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরিক করার কোনো সুযোগ নেই। মহান আল্লাহ বলেন, আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং জন্ম নেননি। তাঁর সমকক্ষ আর কেউ নেই।

২. সর্বজনীন ও বিশ্বজনীন ধর্ম :

ইসলামের অপর বৈশিষ্ট্য হলো এটি একটি সর্বজনীন ও বিশ্বজনীন ধর্ম। এখানে সমাজের সকল স্তরের মানুষের কল্যাণের কথা বলা হয়েছে। যেকোনো সময় যেকোনো ব্যক্তি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ ও অনুসরণ করতে পারে । এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময়, স্থান ও পাত্রের প্রয়োজন হয় না ।

৩. আধ্যাত্মিকতা :

ইসলাম একটি পবিত্র ধর্ম । এখানে বৈরাগ্য বা সন্ন্যাসী জীবনের কোনো স্থান নেই। তবে আধ্যাত্মিকতা রয়েছে। মুসলিম মনীষীগণ আধ্যাত্মিক জীবনযাপন করতে পারে। এ ধরনের আধ্যাত্মিকতাকে সুফিবাদ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় ।

৪. সাম্য প্রতিষ্ঠা :

ইসলাম ধর্মকে সাম্যের এক অপূর্ব নিদর্শন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এখানে কোনো ধরনের বৈষম্যের স্থান নেই। আমির, ফকির, ইমাম, আশরাফ-আতরাফ, উঁচু-নীচু, ধনী-দরিদ্র এদের মধ্যে কোনো রকমের পার্থক্য নেই। সকলে একই শ্রেণির। তবে তাকওয়াবান ব্যক্তিরা আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদাপ্রাপ্ত ।

৫. সহজবোধ্য জীবন ব্যবস্থা :

ইসলাম একটি সহজসরল জীবন ব্যবস্থা। এখানে কোনো ধরনের জটিলতা বা অসম্পূর্ণতা নেই । ইসলাম ধর্মে সব বিষয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দেওয়া হয়েছে।

৬. ভ্রাতৃত্ববোধ :

ইসলাম ধর্মের প্রধান দুটি উৎস আল কুরআন ও আল হাদিসে মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। পৃথিবীর সব মুসলমানকে পরস্পরের ভাই হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এমনকি সমগ্র মুসলিম জাতিকে একটি শরীরের সাথে তুলনা করা হয়েছে।

৭. সহজসরল জীবনযাপন :

ইসলাম ধর্মে সহজসরল জীবনযাপনকে উৎসাহিত করা হয়েছে। এখানে কোনো ধরনের আভিজাত্যের স্থান নেই। ইসলামে অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই বলা হয়েছে।

৮. মধ্যমপন্থা :

ইসলাম একটি মধ্যমপন্থা জীবন ব্যবস্থা হিসেবে পরিচিত। এখানে কোনো ধরনের কঠোরতা বা জবরদস্তির স্থান নেই। ইসলাম ধর্মে দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড পালনে মধ্যমপন্থা অনুসরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

৯. পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান :

ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ রয়েছে ইসলাম ধর্মে। পৃথিবীর অন্য কোনো ধর্মে পূর্ণাঙ্গ জীবনের বিবরণ নেই। একমাত্র ইসলামেই মানুষের সার্বিক জীবনের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ রয়েছে।

১০. বুদ্ধিভিত্তিক জীবনবিধান :

ইসলাম একটি বুদ্ধিভিত্তিক জীবনবিধান। এখানে গোঁড়ামি বা অন্ধ অনুকরণের কোনো সুযোগ নেই। এ ধর্মে বুদ্ধিবিবেচনাকে কাজে লাগিয়ে ইসলামের অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, যারা জানে আর যারা জানে না, তারা কি সমান হতে পারে? এছাড়া প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জ্ঞানার্জন ফরজ বা আবশ্যক করা হয়েছে।

১১. স্থায়ী বিধিবিধান :

ইসলাম ধর্মের অপর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো স্থায়ী বিধিবিধান। ইসলামের সব নির্দেশনাবলি আল কুরআন ও আল হাদিসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এসব বিধানসমূহ অপরিবর্তনযোগ্য। এগুলো সংকোচন, পরিবর্ধন বা পরিমার্জন করার কোনো সুযোগ নেই।

১২. শাশ্বত জীবনবিধান :

ইসলাম একটি শাশ্বত জীবনবিধান। এটি পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকে উদ্ভূত হয়েছে এবং পৃথিবী ধ্বংসের পূর্ব পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। পৃথিবীর সকল ধর্ম বিলুপ্ত হয়ে গেলেও ইসলাম বিলুপ্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই এটিকে শাশ্বত জীবনবিধান বলা হয়।

উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ইসলামের বৈশিষ্ট্য অতুলনীয় এবং সীমাহীন। পৃথিবীর সকল কল্যাণ একমাত্র ইসলাম ধর্মের মধ্যেই নিহিত রয়েছে। এটি সর্ব যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ জীবনাদর্শ । এটি মহান আল্লাহ প্রদত্ত এবং সকল প্রকার সংস্কারমুক্ত ধর্ম। এর মূল উৎস হচ্ছে আল কুরআন। এ ধর্ম সবসময় সকল সমস্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম। এছাড়া ইসলাম একটি মানবতাবাদী বিশ্বজনীন ধর্ম। ইসলামের সকল বাণী সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রেরিত। এটি কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চল, ব্যক্তি বা সময়ের জন্য নয় । সর্বোপরি বলা যায়, ইসলাম একটি শ্রেষ্ঠ ধর্ম।

ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মের পার্থক্যঃ 

ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মের পার্থক্য

১. স্থায়িত্ব :

ইসলাম একটি চিরস্থায়ী ধর্ম। পৃথিবী যতদিন থাকবে ততদিন ইসলাম ধর্ম টিকে থাকবে। হিন্দুরাও মনে করে থাকে হিন্দুধর্ম পূর্বেও ছিল, বর্তমানে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরাও স্বীয় ধর্মকে স্থায়ী ধর্ম হিসেবে পরিগণিত করে ।

২. একত্ববাদ :

একত্ববাদ ইসলামকে অন্যান্য ধর্মের থেকে পৃথক করে একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য প্রদান করেছে। ইসলাম হলো একত্ববাদে বিশ্বাসের ধর্ম। এ ধর্মে এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো উপাসনা করার কোনো সুযোগ নেই। খ্রিস্টানরা ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসী। ইহুদিরা ওজায়ের (আ.) কে আল্লাহর পুত্র বলে মনে করে । এছাড়া হিন্দুধর্ম বহু দেবদেবীতে বিশ্বাসী একটি ধর্ম।

৩. পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা :

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। ইসলাম ধর্ম মানবজাতির ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সকল সমস্যার সঠিক ও সুষ্ঠু সমাধান প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু পৃথিবীর অন্যান্য ধর্মে পূর্ণাঙ্গ জীবন যাপনের প্রক্রিয়া সম্পর্কিত নির্দেশনা নেই ।

৪. ঈশ্বর প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থা : 

ইসলাম ধর্ম হলো একমাত্র প্রভু আল্লাহ প্রদত্ত । এটিকে একেশ্বরবাদী ধর্ম হিসেবেও মনে করা হয় । খ্রিস্ট ও ইহুদিধর্মকেও ঈশ্বর প্রদত্ত ধর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয় । কিন্তু কনফুসীয়, হিন্দু, জৈন প্রভৃতি ধর্ম হলো মানব রচিত

৫. শিক্ষাগত পার্থক্য :

ইসলাম শিক্ষা দেয় সব মানুষই সমান। জন্ম ও মর্যাদার কারণে মানুষে মানুষে কোনো মৌলিক ভেদাভেদ নেই ৷ ইসলাম ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠার প্রতি গুরুত্বারোপ করে । কিন্তু অন্যান্য ধর্মে এ বিষয়টি তেমন গুরুত্ব পায়নি।

উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পৃথিবীতে অগণিত ধর্ম রয়েছে। তবে প্রধান ধর্মসমূহের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য পাওয়া যায় না। একমাত্র ইসলামই ব্যতিক্রম ধর্ম। এ ধর্মে কোনো ধরনের বৈষম্য, অত্যাচার, অবিচারের সুযোগ নেই। এছাড়া একমাত্র ইসলাম ধর্মই একত্ববাদে বিশ্বাসী ধর্ম। অন্যান্য ধর্মের মধ্যে বহুত্ববাদ ও দেবদেবীর পূজা স্থান পেয়েছে। সর্বোপরি বলা যায় যে, সমগ্র বিশ্বে ইসলাম দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম হলেও এ ধর্মের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যসমূহ ইসলামকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে আসীন করে।


এমবাপ্পের ধর্ম কি: এমবাপ্পের  ধর্ম কি এটা এখন্ও অজানা।  তিনি তার ধর্ম প্রকাশ্যে এখনও ঘোষনা করেননি।

মিয়া খলিফার ধর্ম কি:  মিয়া খলিফার ধর্ম ইসলাম।

পৃথিবীতে কোন ধর্মের লোক বেশি:  পৃথিবীতে খ্রিস্টান ধর্মের লোক বেশি।

পৃথিবীর প্রাচীনতম ধর্ম কোনটি: পৃথিবীর প্রাচীনতম ধর্ম হিন্দুত্ববাদ। তবে এটা নিয়ে বিতর্ক আছে।

মেসির ধর্মঃ মেসির ধর্ম রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টান।

ক্রোয়েশিয়া ধর্ম কি: রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টান।

দক্ষিণ কোরিয়ার ধর্মঃ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধন দুটি ধর্ম  খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ।

নোরা ফাতেহি ধর্মঃ নোরা ফাতেহি ধর্ম ইসলাম।

রোনালদো কোন ধর্মের অনুসারী:  রোনালদো রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী।

নেইমারের ধর্ম কি: নেইমার খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসি।


Post a Comment

Previous Post Next Post