শেষ নবির আবির্ভাব আরবে কেন?
যখন
অন্ধকারের ঘনঘটা সর্বপ্রকার পাপের বিভীষিকা নিয়ে পৃথিবীতে নেমে এসেছিল, যখন
শয়তানের তাণ্ডবলীলায় পৃথিবীর প্রত্যেকটি কোণ, অলিগলি, আনাচকানাচ পর্যন্ত কলুষিত
হয়ে পড়েছিল, যখন সমগ্র পৃথিবী পাপের তাড়নায় অধীর হয়ে ত্রাণকর্তার অপেক্ষায়
কাতর নয়নে চাতক পাখির মতো স্বর্গাভিমুখে তাকিয়ে রয়েছিল, সেসময় তিমিরাচ্ছন্ন
তপ্ত তাপিত ধরাধামে জান্নাতি মশাল হাতে নিয়ে, মুক্তির স্নিগ্ধ মধুর, শান্ত শীতল,
পুণ্য পীযূষ ধারা প্রবাহিত করে পুণ্য ও প্রেমের রাজ্য প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আল্লাহ
তায়ালা সাম্যবাদী, স্বাধীনচেতা, অসামান্য বীরত্বের অধিকারী, দুর্ধর্ষ আরব জাতির
আবাসভূমি, পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল আরব উপদ্বীপে প্রেরণ করেন সৃষ্টির সেরা মহামানবকে।
কিন্তু কেন তাকে আরবে প্রেরণ করা হলো? ভৌগোলিকভাবে আরবের অবস্থান এবং আরব জাতির কী
কী এমন বৈশিষ্ট্য ছিল যে, হযরত মুহম্মদ মুস্তফা (স.) কে আরবে প্রেরণ করা অপরিহার্য
ছিল । এ বিষয়ে আলোচিত হলো।
মক্কা পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল
মানচিত্রের
দিকে লক্ষ করলেই দেখা যায়, ভৌগোলিক দিক থেকে আরব দেশে বিশেষত মক্কা নগরী
ভূমণ্ডলের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। স্থলপথে ইরাক হয়ে মক্কা পৃথিবীর ইরান,
তুর্কিস্তান, খোরাসান, কাবুল ও ভারতবর্ষে আসা যায় । কেন্দ্রস্থল অপরদিকে, সিরিয়া
হয়ে মিসর, তিউনিসিয়া, মরক্কো ও স্পেন পর্যন্ত যাতায়াত করা যায়। আবার জলপথে
আফ্রিকা ও ইউরোপের নানা শহরে যাওয়া যায় । অপরদিকে, ভারতবর্ষে, জাভা, সুমাত্রা
এবং চীন পর্যন্ত সুগম পথ বিদ্যমান ।
বংশমর্যাদা
প্রাক
ইসলামি যুগে আরব দেশে বংশগত ও গোত্রগত কৌলীন্য প্রথার প্রভাব অপ্রতিহতভাবে
প্রতিষ্ঠিত ছিল। এ বংশমর্যাদা নিয়ে বিভিন্ন গোত্রের লোকদের মধ্যে ঘৃণা বিদ্বেষ
যথেষ্ট পরিমাণে বিদ্যমান ছিল । এ কৌলীন্য রক্ষার জন্য তারা অতি যত্নসহকারে স্ব স্ব
গোত্রের মূল এবং ক্রমে ক্রমে কীরূপে শাখাপ্রশাখা গোত্রগুলোর সৃষ্টি হলো ইত্যাদি
তথ্য বংশমর্যাদা প্রামাণিকভাবে রক্ষা করে রাখত ।
প্রাচীনকাল
হতেই নিজেদের বংশ পরিচয়, বংশের মূল ও শাখাপ্রশাখার পূর্ণ বিবরণ যথাযথভাবে রক্ষা
করার জন্য প্রত্যেক গোত্রেই দু একজন বেতনভুক্ত বংশ পরিচয় বিশারদ নিযুক্ত থাকত ।
তাদের স্মরণশক্তিও ছিল অসাধারণ। তারা প্রাচীন ও মধ্যযুগের লক্ষ লক্ষ কবিতা অক্ষরে
অক্ষরে মুখস্থ করে রেখেছিল। বাৎসরিক মেলা ও হজ উপলক্ষে গোত্র বিবরণবেত্তা ও কবিগণ
প্রকাশ্য সম্মিলন ক্ষেত্রে নিজেদের জ্ঞান ও ধীশক্তির পরিচয় দিয়ে প্রশংসিত হওয়ার
উদ্দেশ্যে প্রতিযোগিতা করতো। তারা এরূপ অসাধারণ স্মরণশক্তির অধিকারী ছিল বলেই
ইসলামের প্রাথমিক যুগে পবিত্র কুরআন ও হাজার হাজার হাদিস অক্ষরে অক্ষরে কন্ঠস্থ
করে রাখতে পেরেছিল।
তাদের
মধ্যে বিভিন্ন গোত্রের জন্য স্বতন্ত্র দেব মন্দির প্রতিষ্ঠার প্রথা থাকা সত্ত্বেও
পরিত্র কাবাগৃহকে তারা নিজদের সাধারণ ও শ্রেষ্ঠতম ধর্মমন্দির বলে বিশ্বাস করতো।
তারা প্রতিবছর মক্কায় সমবেত হয়ে হজব্রত পালন করতো। এ পবিত্র ঘরের রক্ষণাবেক্ষণ,
কাবাস্থিত ঠাকুর দেবতাগণের পূজা করা, তাদেরকে ভোগাদি দেওয়া, হজ যাত্রীদের পানাহার
ও বাসস্থানের তত্ত্বাবধান করা তাদের নিকট সবচেয়ে গৌরবজনক কাজ ছিল। এ কাজের
অধিকারী ছিল একমাত্র মক্কাবাসী বংশবিশেষ। এ বিশিষ্ট বংশের একচেটিয়া অধিকারে কারো
কোনো আপত্তি ছিল না ।
কারণ
তারা দাবি করতো আমরা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সম্ভ্রান্ত বংশীয় লোক । হযরত ইব্রাহীম ও
তদীয় পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.) আমাদের পূর্বপুরুষ । আবার তারাই হলেন এ পবিত্র কাবা
গৃহের নির্মাতা এবং হযরত ইসমাইল (আ.) হলেন এর সর্বপ্রথম সেবায়েত। বংশমর্যাদা এবং
উত্তরাধিকার উভয় হিসেবেই আমরা এ সেবার অধিকারী। অতএব সেবায়েত ও পুরোহিত হওয়ার
অধিকার আমাদের ব্যতীত অন্য কারো নেই এবং থাকতেও পারে না ।
অন্য
বংশের লোকেরা অবনতমস্তকে তাদের এ দাবিকে মেনে নিত। কারণ তারা আবহমানকাল হতে
নিজেদের পূর্বপুরুষগণের প্রমুখাৎ ইসমাইল বংশীয়দের পুরাবৃত্তসমূহ শুনে আসছে এবং
আরবের বংশ পরিচয় বেত্তাগণ সর্বসম্মতিক্রমে তাদের এ দাবি সমর্থন করছে। আবার যুগপৎভাবে
এটিও দেখে আসছে, তাদের পূর্বপুরুষগণ স্মরণাতীত যুগ হতে এ দাবির সত্যতা স্বীকার করে
হযরত ইসমাইল (আ.) ও তদীয় পিতা হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর অনুষ্ঠানের স্মৃতি রক্ষার্থে
সাফা-মারওয়ার প্রদক্ষিণ, মিনায় কুরবানি ও শয়তানের প্রতি কঙ্কর নিক্ষেপ ইত্যাদি
কাজগুলোকে ধর্মের অন্তর্ভুক্ত মনে করে আসছে।
বীরত্ব
আরব
জাতি ছিল অপরিসীম বীরত্বের অধিকারী। কোনো শক্তির বল বিক্রমের ভয় সংকোচ কখনও তাদের
অন্তরকে স্পর্শ করতে পারেনি। ভয়াবহ রণাঙ্গনকে তারা ধূলি খেলার চেয়ে অধিক মর্যাদা
দেয়নি। তৎসঙ্গে তাদের অন্তরে ছিল আনুষ্ঠানিকভাবে কর্ম সম্পাদনের অদম্য প্রেরণা।
এজন্যই তারা একা শুধু পারস্য ও রোম সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে নয়; বরং পৃথিবীর সব জাতি
ও সমগ্র রাজ্যের বিরুদ্ধে এক সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করতে সক্ষম হয়েছিল এবং অতি অল্প
সময়ের মধ্যেই একদিকে ভারত এবং অপরদিকে স্পেন ও ফ্রান্স পর্যন্ত ইসলামের বিজয়
পতাকা উড্ডীয়মান রাখতে পেরেছিল।
স্বাধীনতা
সৃষ্টির
আদিযুগ হতে কোনোদিনই আরব কোনো বিদেশি শক্তির অধীনতাপাশে আবদ্ধ হয়নি। বিশেষভাবে
ইসমাইল বংশীয়দের আবাসভূমি উত্তর আরব চিরদিনই স্বাধীন রয়েছে। এ বীর জাতি কোনোদিনই
কারো নিকট মাথানত করেনি। উপলক্ষে পারস্য সম্রাট কিসরার দরবারে উপস্থিত হয়।
বিপক্ষের কৌশলী অপরাধী প্রাক ইসলামি যুগে কোনো এক আরব এক মামলার শুনানি সাব্যস্ত
করার উদ্দেশ্যে উক্ত আরবকে তথা আরব জাতিকে দোষারোপ করে বললেন,
“তোমরা হিংস্র যাযাবর জাতি, অতি সামান্য বিষয়ে মারামারি, রক্তারক্তি ও যুদ্ধবিগ্রহ করতে অভ্যস্ত” উক্ত আরব গুরুগম্ভীর স্বরে উত্তর দিল : সমগ্র পারস্য সাম্রাজ্যে কোটি কোটি লোকের মধ্যে মাত্র একজন লোক রাজসিংহাসনে উপবিষ্ট হওয়ার যোগ্য ছিলেন। অনুরূপ বিশাল রোম সাম্রাজ্যেও মাত্র একজন ব্যতীত রাজমুকুট ধারণ করার যোগ্য অন্য কেউ ছিল না। সুতরাং এদের প্রত্যেকেই বিশাল সাম্রাজ্যের অধিকারী হয়ে সিংহাসনে আরোহণও করেছেন। তথাপি এতদুভয়ের মধ্যে সর্বদা বিবাদ-বিসম্বাদ, যুদ্ধবিগ্রহ লেগেই থাকে।
কিন্তু আপনি তাদেরকে হিংস্র বলে আখ্যা দিতে রাজি হবেন না। অপরদিকে, আরবের লক্ষ লক্ষ অদিবাসীর প্রত্যেকেই বলে বিক্রমে, সাহসে- বীরত্বে, বংশমর্যাদায় এক বিস্তৃত সাম্রাজ্যের অধীশ্বর হওয়ার যোগ্য। অথচ রাজমুকুট, সিংহাসন এবং রাজ্য বলতে তাদের কিছুই নাই। যদি তাদের মধ্যে যুদ্ধবিগ্রহ লেগে থাকে তবে বিচিত্র কী? এজন্য কি তারা হিংস্র আখ্যায় আখ্যায়িত হতে পারে?
এ উত্তর হতে দুর্ধর্ষ আরব জাতির প্রকৃত স্বরূপ হৃদয়ঙ্গম করা যায়। তাদের এ অসাধারণ বল-বিক্রম এবং বীরত্বের দরুনই বাবেলের দুর্দান্ত অত্যাচারী রাজা বোখতে নসর বনু ইসরাইলকে ধ্বংস করে দিলেন; কিন্তু আরবের দিকে চক্ষু উঠাতেও সাহস করলেন না। গ্রিক ও রোমকগণ বহু শতাব্দী যাবৎ মিসর হতে ইরাকের সীমান্ত পর্যন্ত রাজত্ব করল; কিন্তু ভুলেও কোনোদিন আরবের অভ্যন্তরে পা রাখেনি।
আলেকজান্ডার এবং রোমীয় সেনাপতিগণ যতবারই আরবের দিকে লোলুপ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল, ততবারই বিফল মনোরথ হয়ে পশ্চাৎপদ হতে হলো। আরব পারস্য ও রোমের সীমান্তে অবস্থিত ছিল, তথাপি এ অপ্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিদ্বয় আরবের দিকে হাত বাড়াতে সাহস পায়নি। হাবশিগণ ইয়েমেন জয় করে হাতির পাল নিয়ে মক্কা আক্রমণ করেছিল বটে, কিন্তু আল্লাহর কুদরত তাদেরকে চিরতরে ধ্বংস করে দেয়।
বিজাতীয় প্রভাব মুক্ত
আরব
জাতি বিদেশিদের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় প্রভাব হতে সম্পূর্ণ মুক্ত ছিল।
দীর্ঘকাল যাবৎ বহির্জগতের সাথে তাদের পরিচয়ই ছিল না। বহির্জগতের সাথে পরিচয়
হওয়ার পরও বিদেশের কোনো প্রভাব আরব দেশে কখনোই প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এজন্যই
খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দী পর্যন্ত গুটি কতক লোক ব্যতীত সমগ্র আরব বিজাতির প্রভাব
মুক্ত জাতি নিরক্ষর ছিল। আহকামুল হাকিমিন আল্লাহ তায়ালার কী আশ্চর্য হিকমত! শত শত
বছর পূর্বেই পবিত্র তওরাতে উম্মী (নিরক্ষর) জাতির মধ্যে তার প্রিয় হাবিব উম্মী
নবিকে প্রেরণ করার সুসংবাদ দিয়ে রেখেছিলেন: এজন্যই হয়ত আরব জাতির অন্তরে বিদেশি
জ্ঞানের প্রভাব এবং সে প্রভাবের দাসত্ব হতে মুক্ত ও উম্মী থাকার প্রেরণা জুগিয়ে
রেখেছিল।
তারা
মানবরচিত অলীক ধর্মের প্রভাব হতেও মুক্ত ছিল। খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীতে আরব
ব্যতীত জগতের প্রত্যেক জাতিই মানবরচিত কুসংস্কার অন্ধবিশ্বাসপূর্ণ ধর্মপদ্ধতি
অনুসরণ করছিল। সেসব দেশের লোকদের কোনো বিষয়ে স্বাধীন চিন্তা করার অধিকার ছিল না।
তারা ধর্মগুরু, পুরোহিত ও যাজকদের দাসত্ব শৃঙ্খলে আবদ্ধ ছিল। অবস্থা এমনই শোচনীয়
হয়ে পড়েছিল, ধর্মের অন্তরালে প্রচারিত প্রত্যেক অনাচার তারা অবনত মস্তকে অবশ্য
পালনীয় ও অপরিহার্য কর্তব্য বলে স্বীকার করে নিতে বাধ্য হতো।
আরবেও কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসের ইয়াত্তা ছিল না সত্য; কিন্তু মানবরচিত কোনো অলীক ধর্ম পদ্ধতির অনুসরণ করার দরুন তাদের মধ্যে এসব কুসংস্কার প্রবেশ করেনি; বরং সকল ধর্ম বর্জন করে তারা প্রকৃতির ক্রোড়ে লালিতপালিত হয়ে তার বৈচিত্র্যগুলোকে বিস্মিত নয়নে অবলোকন করে নিজেদের সীমাবদ্ধ জ্ঞানে যেসব তত্ত্ব আবিষ্কার করতে সক্ষম হতো, তাতেই তারা বিশ্বাস স্থাপন করতো। সুতরাং মূর্খ ও নিরক্ষর থেকে স্বাধীন চিন্তা করার পূর্ণ অধিকার প্রাপ্তিই ছিল কুসংস্কার উৎপত্তির একমাত্র কারণ। তাদের দেশ, দেহ, মন এবং চিন্তা সবকিছুই ছিল স্বাধীন। এজন্যই সত্য ধর্ম পবিত্র ইসলামের ডাকে সাড়া দিতে তারা বিলম্ব করেনি।
অতিথিসেবা ও বদান্যতা
অতিথিসেবা
এবং প্রতিবেশীদের জন্য আত্মোৎসর্গ করা ছিল তাদের একটি বিশেষত্ব। সুনাম অর্জনের
জন্য মূল্যবান উষ্ট্র জবেহ করে অপরিচিত বিদেশি অতিথিদের আপ্যায়ন করা; জুয়াখেলায়
প্রতিযোগিতায় এবং জুয়াখেলায় বিজয়ীদেরকে পুরস্কার দিয়ে অথবা ভোজসভায়
আপ্যায়িত করে নিজেদের ধনসম্পদ বিলিয়ে দেওয়া এবং আশ্রিত ও আত্মসমর্পণকারীদের
সাহায্যে নিজের জানমাল উৎসর্গ করে দেওয়া ছিল তাদের চিরাচরিত প্রথা। প্রাক ইসলামি
যুগের কবিদের রাশি রাশি কবিতা এ কথার জ্বলন্ত প্রমাণ ।
পৃথিবীর
সকল অনাচার ও অবিচারের প্রতিকার ও প্রতিবিধান করার জন্য যে মহামানবের আগমন হবে তার
এমন দেশে আবির্ভূত হওয়াই ছিল সমীচীন। যে দেশ পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত, যে
দেশের লোকেরা অতি অল্প সময়ের মধ্যে নিজেদের স্বাধীন চিন্তা দ্বারা পবিত্র ধর্মের
সত্যতা উপলব্ধি করতে পারবে, তার সহচর (সাহাবি) ও সহায়ক (আনসারী) হয়ে অপ্রতিহত
বীরত্ববলে আল্লাহর শত্রুদেরকে পরাভূত করতে সমর্থ হবে।
তাঁর
বর্তমান ও অবর্তমানে নিজেদের বংশমর্যাদা বলে পৃথিবীর সকল জাতির ওপর নেতৃত্ব ও
কর্তৃত্ব করতে এবং নির্ভীক চিত্তে মহাপরাক্রমশালী ব্যক্তির সম্মুখে বজ্রকণ্ঠে সত্য
প্রচার করতে সক্ষম হবে, এ মহান ত্রাণকর্তার আবির্ভাবের সুসংবাদ শুনে দেশ-দেশান্তর
হতে পঙ্গপালের ন্যায় আগত নিঃসহায়, নিঃসম্বল দিন-দুঃখীদেরকে নিজেদের বদান্যতাবলে আশ্রয়
দিয়ে এবং তাদেরকে মেহমানদারি করে বিনা দ্বিধায় ধনসম্পদ সর্বস্ব লুটিয়ে দিতে
পারবে এবং নিজেদের আল্লাহ প্রদত্ত স্মরণশক্তি বলে আল্লাহর পবিত্র কালাম এবং
রাসুলের অমূল্য উপদেশ কণ্ঠস্থ করে পৃথিবীর দূরদূরান্তে প্রত্যেক নরনারীর কর্ণকুহরে
পৌঁছে দিতে পারবে। আরব ব্যতীত আর কোনো দেশ বা জাতি এমন গুণসম্পন্ন ছিল না।
অন্য সব দেশ তখন পরাধীনতার ভীষণ চাপে, বহিঃশত্রুর অমানুষিক অত্যাচারে এবং পুরোহিতদের প্রচন্ড প্রতাপে মানুষের স্বাভাবিক জ্ঞান, বুদ্ধি বিবেচনা এবং বলবীর্য পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। এজন্যই সর্বজ্ঞ আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় হাবিব, সমগ্র বিশ্বের ত্রাণকর্তা শেষ নবিকে প্রেরণ করলেন চিরমুক্ত চিরস্বাধীন বীরের দেশ আরবের মক্কা নগরীতে।
“আল্লাহই বেশি ভালো জানেন তার পয়গাম কোথায় এবং কাকে সোপর্দ করা হবে।” কুরআন : ৬ : ১২৪ এসব কারণে আল্লাহ তায়ালা আরব উপদ্বীপ ও মক্কা মুকাররমাকে রাসুল (সা.) এর আবির্ভাব, আসমানি ওহির অবতরণ এবং দুনিয়ার বুকে ইসলাম প্রচারের বিশ্বব্যাপী কেন্দ্র ও সূচনাবিন্দু হিসেবে নির্বাচিত করেন।