হিজরত কি? হিজরতের ঘটনা ও ফলাফল বিস্তারিত ২০২৪খ্রি।


হিজরত কি? হিজরতের ঘটনা ও ফলাফল বিস্তারিত ২০২৪খ্রি।

ভূমিকা :

ইসলামের ইতিহাসে হিজরত বলতে মহানবি (সা.)-এর মক্কা থেকে মদিনায় গমন করাকে নির্দেশ করে। নবুয়ত লাভের পর মহানবি (সা.) মক্কায় প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত শুরু করলে মক্কার কুরাইশরা সকল প্রকার জুলুম নির্যাতন চালিয়েও তাঁকে ইসলাম প্রচার থেকে বিরত রাখতে পারেনি। সর্বশেষ তারা মহানবি (সা.)-কে হত্যার ষড়যন্ত্র করলে আল্লাহর নির্দেশে তিনি ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় হিজরত করেন ।

হিজরত কি :

হিজরত শব্দটি আরবি হাজারুন শব্দ হতে উদ্ভব। যার আভিধানিক অর্থ ত্যাগ করা, ছেড়ে দেওয়া, স্থানান্তরিত হওয়া, ফেলে দেওয়া, বর্জন করা ইত্যাদি। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর সন্তুষ্টি অর্জন ও ইসলামের পতাকা সমুন্নত করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশে আশ্রয় গ্রহণ করাকে হিজরত বলে। অন্য কথায়, দারুল হারব থেকে দারুল ইসলামে স্থানান্তরিত হওয়ার নাম হিজরত।

মহানবি (সা.) মক্কায় প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার শুরু করলে তাঁকে বাধা দেওয়ার জন্য মক্কার কুরাইশরা সব ধরনের নির্যাতন চালায়। আকাবা শপথের পর মহানবি (সা.) নওমুসলিমদের ছোট ছোট দলে বিভক্ত করে মদিনায় প্রেরণ করেন। মক্কার কুরাইশরা এতে আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে দারুন নদওয়ার বৈঠকে মহানবি (সা.)-কে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। মহানবি (সা.)-কে হত্যার ষড়যন্ত্র করার পর তিনি মদিনায় হিজরতের জন্য আল্লাহর নির্দেশ লাভ করেন । আল্লাহর নির্দেশ লাভের পর তিনি আবু বকর (রা.)-এর গৃহে গিয়ে তাঁকে হিজরতের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেন।

মক্কায় কুরাইশরা দারুন নদওয়ার বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মহানবি (সা.)-কে হত্যার জন্য তাঁর বাসগৃহ ঘিরে রাখেন। মহানবি (সা.) আলি (রা.)-কে তাঁর বিছানায় ঘুমানোর ও গচ্ছিত আমানত ফেরত দানের নির্দেশ দেন। মহানবি হযরত মুহম্মদ (সা.) ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে হযরত আবু বকর (রা.)-কে সাথে করে মদিনায় হিজরতের জন্য রওয়ানা দেন। তাঁরা মক্কার অদূরে 'সঙর পর্বতে চারদিন আশ্রয় নেওয়ার পর আবার মদিনার পথে রওনা হন। লোহিত সাগরের তীর ঘেষে তাঁরা মদিনার কুফা নামক স্থানে পৌছান। সেখান থেকে পরে মদিনা গমন করেন।

হিজরত শব্দের অর্থ কি? হিজরত শব্দের অর্থ ত্যাগ করা, ছেড়ে দেওয়া, স্থানান্তরিত হওয়া ।

অতএব বলা যায় যে, মহানবি (সা.)-এর মদিনা হিজরত ছিল শিশু ইসলামকে উপযুক্ত পরিবেশে বিকশিত করার আসমানি নির্দেশ, যা মহানবি (সা.)-এর জীবনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দেয়। ইসলাম প্রচারের নতুন দ্বারা উন্মোচন করে দেয় । ফলে মদিনা হিজরতের পর ইসলাম দ্রুত সারা বিশ্বে বিকশিত হয় ।

হিযরতের কারণ কি কি :

মহানবি (সা.)-এর হিজরতের মূল কারণসমূহ নিম্নে তুলে ধরা হলো : 

১. ভৌগোলিক কারণ : 

শুষ্ক জলবায়ু এবং উষ্ণ আবহাওয়ার জন্য মক্কাবাসী ছিল রুক্ষ ও বদমেজাজি। মক্কাবাসীর আর্থিক অবস্থা ছিল অসচ্ছল। অভাবের কারণে কোনোকিছু গভীরভাবে চিন্তা করার অবকাশও তাদের ছিল না। অপরপক্ষে শস্যশ্যামল মদিনাবাসী সুরুচিসম্পন্ন এবং চিন্তাশীল ছিলেন। তাদের ভালো-মন্দ চিন্তা করার ক্ষমতা ছিল। 

২. কুরাইশদের স্বার্থে আঘাত : 

মক্কার স্বার্থপর পুরোহিত শ্রেণি এবং আভিজাত কুরাইশরা প্রথম হতেই ইসলাম প্রচারের সামাজিক মর্যাদা এবং রাজনৈতিক প্রভুত্ব সবই শেষ হয়ে যাবে, সেজন্য কুরাইশরা একজোট হয়ে মুহম্মদ (সা.)-এর পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। পুতুল পূজার অবসান হয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হলে তাদের অর্থোপার্জনের পথ, বিরোধিতা করে। অপরদিকে, মদিনায় ঐরূপ কোনো অভিজাত সম্প্রদায় না থাকায় সেখানে মুহম্মদ (সা.)-এর বসবাস এবং ধর্মপ্রচার উভয়ই সহজ ও স্বাভাবিক ছিল ।

৩. আওস ও খাজরাজ সম্প্রদায়ের আমন্ত্রণঃ

মদিনার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব সংঘাত চলে আসছিল। বিশেষ করে আওস ও খাজরাজ গোত্র দুটি 'বুয়াস' নামক ভয়াবহ যুদ্ধে কয়েক যুগ ধরে লিপ্ত ছিল। ফলে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়েছিল এবং জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল । তাদের মধ্যে মধ্যস্থতা এবং শান্তি স্থাপনের জন্য একজন নিরপেক্ষ, ন্যায়নিষ্ঠ এবং আধ্যাত্মিক পরিচালকের প্রয়োজন ছিল । মুহম্মদ (সা.)-এর অসাধারণ ব্যক্তিত্বের পরিচয় পেয়ে তাঁকে মদিনাবাসী আমন্ত্রণ জানালে তিনি মদিনায় হিজরত করেন।

৪. আত্মীয়তার সম্পর্ক :

মাতৃকুলের দিক দিয়ে মদিনাবাসী হযরতের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ছিল। তাঁর পিতা আব্দুল্লাহ এবং প্রপিতামহ হাশিম মদিনাতে বিবাহ করেছিলেন। এ ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তার জন্য মুহম্মদ (সা.) মদিনাবাসীদের সুহৃদয়তা ও সহযোগিতা পাবেন বলে আশা করেছিলেন । তাই তিনি মদিনায় হিজরত করতে আগ্রহী হন ।

৫. ইহুদিদের আগ্রহ :

মদিনায় বসবাসকারী ইহুদি সম্প্রদায় তাদের ধর্মগ্রন্থ আসমানি কিতাব তাওরাতের মাধ্যমে শেষ নবির আগমন সম্পর্কে অবগত ছিল । কাজেই মুহম্মদ (সা.)-কে প্রতিশ্রুত নবি হিসেবে তাদের মধ্যে মদিনায় পাওয়ার জন্য তারা আগ্রহী ছিল । হিজরতের পূর্বে এভাবে মদিনায় তাঁর আশ্রয়স্থল ও কর্মস্থল প্রস্তুত হয়েছিল ।

৬. আকাবার শপথ :

৬২০ থেকে ৬২২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত হজের মৌসুমে পর পর তিন বছর ৬, ১২ ও ৭৫ জন মদিনাবাসী আল আকাবা নামক স্থানে মহানবি (সা.)-এর হাতে শপথ গ্রহণ করেন। আকাবা শপথে তারা ইসলাম প্রচারের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার ও মুহম্মদ (সা.)-কে মদিনায় আশ্রয়দানের প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। ফলে মহানাবি (সা.) মদিনায় হিজরতে আগ্রহী হন ।

৭. মুসয়াবের অনুকূল রিপোর্ট :

মুহম্মদ (সা.) মুসয়াব নামক একজন সাহাবিকে তাঁর হিজরতের এক বছর পূর্বে ইসলাম প্রচারের জন্য মদিনায় পাঠিয়েছিলেন। মদিনাবাসীর মনোভাব ইসলাম ধর্মের অনুকূলে বলে তিনি হযরতকে জানান। মদিনায় ধর্মপ্রচার সহজতর হবে মনে করে তিনি তথায় হিজরত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন ।

৮.হিমারীয় ও মুদারীয় সংঘর্ষ:

মুদারি ও হিমারি অর্থাৎ উত্তর ও দক্ষিণ আরবের লোকদের বংশগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও ঘোর বিদ্বেষ হিজরতের প্রধানতম সহায়ক কারণ ছিল। মদিনায় আওস ও খাজরাজ গোত্র দুটি ছিল দক্ষিণ আরবের হিমারীয় ফশোদ্ভূত। মুদার বংশের মক্কাবাসী কুরাইশরা ছিল তাদের জাতশত্রু । এ অবস্থায় মক্কার অবাঞ্ছিত ব্যক্তি মুহম্মদ (সা.)-কে সাদরে গ্রহণ করতে তারা দ্বিধাবোধ করেনি। মুহম্মদ (সা.) নিরাপদ আশ্রয়ের নিশ্চয়তা লাভ করলেন ।

৯. মহানবি (সা.)-কে হত্যার পরিকল্পনাঃ

মুহম্মদ (সা.)-এর ইসলাম প্রচার রুখতে না পেরে সর্বশেষ তারা 'দারুণ নদওয়ার' বৈঠকে  মুহম্মদ (সা.)-কে হত্যার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। 

১০. আল্লাহর নির্দেশ :

মক্কার কুরাইশরা মুহম্মদ (সা.)-কে হত্যার ষড়যন্ত্র করলে আল্লাহ তাআলা ওহির মাধ্যমে মহানবি ((সা.)-কে এটি অবহিত করে মদিনায় হিজরতের নির্দেশ দেন। তাই মুহম্মদ (সা.) নিজের জীবন এবং ইসলাম ধর্ম রক্ষার্থে। আল্লাহর আদেশে ৬২২ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে মক্কা হতে মদিনায় হিজরত করেন।

রাসুল সাঃ কত বছর বয়সে মদিনায় হিজরত করেনঃ রাসুল সাঃ ৫২বছর বয়সে মদিনায় হিজরত করেন ।


হিজরতের ঘটনা

কুরাইশদের অত্যাচারের হাত থেকে নিজেকে এবং ইসলামকে রক্ষার জন্য মহান আল্লাহর প্রত্যাদেশ লাভ করার পর মুহাম্মদ (স) মদিনার বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে হিজরত করার সিদ্ধান্ত নেন।

হযরত জিবরাঈল (আ) এসে সংবাদ দেন যে কুরাইশরা তাঁকে হত্যা করতে আসছে। এ সংবাদ শুনে ৬২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ সেপ্টেম্বর হযরত আলীকে নিজ বিছানায় শুইয়ে রেখে হযরত আবু বকর (রা)-কে সাথে নিয়ে রাসুল (স) মদিনার উদ্দেশ্যে মক্কা ত্যাগ করেন, যা ইসলামের ইতিহাসে হিজরত নামে খ্যাত।

হযরতকে হত্যা করতে এসে তাঁকে গৃহে না পেয়ে হত্যাকারীরা তাঁর পশ্চাদ্ধাবন করে । এমতাবস্থায় তিনি আবু বকর (রা)-কে সাথে নিয়ে সাওর পর্বতের গুহায় আশ্রয় নেন । সাওর পর্বতের গুহায় ৩ দিন থাকার পর তিনি মদিনার উদ্দেশ্যে আবার যাত্রা শুরু করেন এবং মদিনা থেকে ৩ মাইল দূরে কুবায় এসে উপস্থিত হন।

তিনি এখানে ৩ দিন অবস্থান করে কুবাবাসীর মধ্যে ইসলাম প্রচার করেন এবং একটি মসজিদ নির্মাণ করেন । পথে রানুনা নামের স্থানে জুমার নামাজ আদায় শেষে হযরত মুহাম্মদ (স) ৬২২ খ্রিষ্টাব্দের ১ অক্টোবর মদিনায় পৌছালে মদিনার আওস ও খাযরাজ গোত্র তাঁদের স্বাগত জানায়। ফলে ইসলামের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয় । ঐতিহাসিক জোসেফ হেল বলেন, হিজরত ইসলামের ইতিহাসে মোড় পরিবর্তনকারী গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ।

হিজরতের ফলাফল :

মহানবি (সা.) ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় হিজরত করে নির্বিঘ্নে ইসলাম প্রচারের সুযোগ লাভ করেন। মহানবি (সা.)-এর জীবন এবং ইসলামের ইতিহাসে হিজরত একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। নিম্নে হিজরতের হিজরতের ফলাফল আলোচনা করা হলো :

১. জুলুম নির্যাতনের অবসান : 

মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের মাধ্যমে মহানবি (সা.) ও নওমুসলিমরা মক্কার কুরাইশদের জুলুম নির্যাতনের হাত থেকে মুক্তিলাভ করেন । মহানবি (সা.) জুলুম নির্যাতনের হাত থেকে মুক্ত হয়ে মদিনায় নবজীবন লাভ করেন । 

২.নিরাপদ আশ্রয় লাভ :

মক্কায় কুরাইশরা মুসলমানদের ওপর সর্বদা জুলুম নির্যাতন চালাতো। কুরাইশদের অত্যাচারে মক্কার মুসলমানদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। মদিনায় হিজরত করার পর জুলুম নির্যাতন থেকে মুক্তি লাভ করে মুসলমানরা বসবাসের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল লাভ করে ।

৩. ইসলামের প্রসার :

মুসলমানরা মদিনায় হিজরত করার পর জুলুম নির্যাতন থেকে মুক্তি লাভ করে নির্বিঘ্নে ইসলাম চারের সুযোগ লাভ করেন। মুসলমানরা নির্বিঘ্নে ইসলাম প্রচারের সুযোগ লাভের ফলে দ্রুত ইসলামের বিকাশ ঘটে। ইসলাম আন্তর্জাতিকভাবে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ তৈরি হয় ।

৪. মদিনা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা :

মুসলমানরা মক্কা থেকে ইয়াসরিবে হিজরত করে সেখানে বসবাসরত সব ধর্ম ও জাতির লোকদের নিয়ে সাধারণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে নাম দেন মদিনাতুন্নবি । মদিনা রাষ্ট্রে বসবাসকারী সব নাগরিকদের সমান নাগরিক মর্যাদা প্রদান করা হয় । মদিনা রাষ্ট্রে সবাই সমান অধিকার ভোগ করে বসবাস করতো।

৫. মদিনা সনদ প্রণয়ন :

মহানবি (সা.) মদিনায় হিজরত করার পর সেখানে সাধারণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। মদিনা রাষ্ট্রপরিচালনার জন্য সব সম্প্রদায়ের লোকদের মতামতের ভিত্তিতে একটি সাধারণ নীতিমালা প্রণয়ন করেন। যা মদিনা সনদ নামে পরিচিত । মদিনা সনদ পৃথিবীর সর্বপ্রথম লিখিত সনদ ।

৬. মহানবি (সা.)-এর নেতৃত্ব লাভ :

মহানবি (সা.) মদিনায় হিজরত করার পর সেখানে মদিনা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন । আর মহানবি (সা.) নিজে মদিনা রাষ্ট্রের প্রধান নিযুক্ত হন । মহানবি (সা.) মদিনা রাষ্ট্রের প্রধান হওয়ার মাধ্যমে বিশ্ব নেতৃত্বের দিকে একধাপ এগিয়ে যান ।

৭. ইসলামের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ :

মহানবি (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করে সেখানে সাধারণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসলাম স্বীকৃতি লাভ করে । ফলে ইসলাম দ্রুত সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

৮.ধর্মীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা :

মহানবি (সা.) মদিনায় হিজরত করার পর সেখানে যে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন তা ইসলাম ধর্মের আলোকে পরিচালিত হতো ।মদিনা রাষ্ট্র ইসলামি বৈশিষ্ট্যের আলোকে পরিচালিত হতো। মহানবি (সা.) মক্কায় জন্মগ্রহণ করলেও সেখানে ধর্মীয় বিধান বাস্তবায়ন করতে পারেননি। হিজরত করার মাধ্যমে মদিনায় সর্বপ্রথম ধর্মের আলোকে রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন ।

৯. জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা :

জাহেলি আরবে বিভিন্ন গোত্রপ্রথা প্রচলিত ছিল । সেখানে কোনো জাতীয় চেতনা ছিল না। আরব জাতি মদিনায় হিজরত করে সর্বপ্রথম সব সম্প্রদায়ের লোকদের নিয়ে সাধারণ জাতি প্রতিষ্ঠা করেন । ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গোত্রে বিভক্ত হয়ে পরিচালিত হতো। তাদের মাধ্যমে কোনো জাতীয় চেতনা ছিল না। 

১০. দ্বন্দ্ব কলহের অবসান :

মহানবি (সা.) মদিনায় হিজরত করার পূর্বে সেখানকার বিভিন্ন সম্প্রদায় বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত ছিল। তাদের মাঝে প্রায় দ্বন্দ্ব সংঘাত লেগে থাকত । মহানবি (সা.) মদিনায় হিজরত করে সেখানকার প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মাঝে সম্প্রীতি স্থাপন করতে সক্ষম হন । ফলে তারা দ্বন্দ্ব বিবাদ ভুলে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকে । 

১১. অর্থনৈতিক উন্নতি :

মুসলমানরা মক্কায় অকথ্য নির্যাতন ভোগ করতো এবং তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্দশাগ্রস্ত ছিল । মুসলমানরা মদিনায় হিজরত করার পর সারা বিশ্বে বাণিজ্য করার সুযোগ লাভ করেন । ফলে তাদের আর্থিক সচ্ছলতা বৃদ্ধি পায়। এতে ইসলাম দ্রুত প্রসার লাভ করে ।

১২. মহানবি (সা.)-এর দূরদর্শিতার পরিচয় :

মহানবি (সা.)-এর হিজরতের পর ইয়াসরিববাসিগণ বহুদিনের শত্রুতা ও ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হলেন । ইয়াসরিবে ইসলামি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি সভাপতি নিয় হন। ধর্মগুরুর ভূমিকা ছাড়াও তখন কূটনীতিবিদ রাজনৈতিক নেতা এবং শাসকের ভূমিকা গ্রহণ করেন। মহানবি (স.) সর্বক্ষেত্রে তাঁর দায়িত্ব সুচারুরূপে সম্পন্ন করে তিনি বিশ্ব ইতিহাসকে নতুনভাবে প্রভাবান্বিত করেছেন।

১৩. হিজরি সন প্রবর্তন :

মহানবি (সা.)-এর হিজরতকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য হযরত ওমর (রা.) হিজরি সনের প্রবর্তন করেন । ফলে পৃথিবীতে আরবি সনের নতুনভাবে গণনা শুরু হয় । যা ছিল হিজরতের অন্যতম গুরুত্ব।

১৪. মক্কা বিজয় :

মহানবি (সা.) কুরাইশদের অত্যাচারে মদিনা হিজরতে বাধ্য হন। কিন্তু মদিনার উপযুক্ত পরিবেশের কারণে অল্প দিনে সেই মক্কা নগরী জয় করতে সক্ষম হন ।

উপসংহার:

উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, হিজরত সম্পর্কে ঐতিহাসিক জোসেফ হেল বলেন, হিজরত ইসলামের ইতিহাসে মোড় পরিবর্তনকারী একটি ঘটনা। মহানবি (সা.) কুরাইশদের অত্যাচারের ফলে আল্লাহর নির্দেশে ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় হিজরত করেন। মহানবি (সা.)-এর মদিনা হিজরতের ফলে ইসলাম নির্বিঘ্নে উপযুক্ত পরিবেশে বিস্তার লাভ করে । ফলে অল্পদিনে সারা বিশ্বে ইসলামের বিস্তৃতি ঘটে ।

 

 

 

 

 

Post a Comment

Previous Post Next Post