আমরা একটি প্রযুক্তি বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। যে বিপ্লব পাল্টে দেবে মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার চিরচেনা রূপ। এতটাই পরিবর্তন আসবে যা মানুষ আগে কল্পনাও করতে পারেনি। পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী, এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সরকারী, বেসরকারী, একাডেমিসহ সব খাত এবং নাগরিকদের সম্মিলিতভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।
শিল্প বিপ্লবের ইতিহাস:
১ম শিল্প বিপ্লব: (১৭৮৪-স্টিম):
১ম শিল্প বিপ্লবে পানি ও স্টিম পাওয়ার ব্যবহার করে উৎপাদনকে মেকানাইজ করা হয়েছে।
২য় শিল্প বিপ্লব: (১৮৭০-বিদ্যুৎ):
ব্যাপক
উৎপাদনের ক্ষেত্রে ত্বরিত ক্ষমতাকে ব্যবহারের মাধ্যমেই এসেছিল ২য় শিল্প বিপ্লব।
৩য় শিল্প বিপ্লব: (১৯৬৯-ইন্টারনেট):
ইলেকট্রনিক্স ও
ইনফরমেশন টেকনোলজি ব্যবহার করে সয়ংক্রিয় উৎপাদনের বিপ্লব নিয়েই ঊনবিংশ শতাব্দীর
শেষ প্রান্তে এসেছিল ৩য় শিল্প বিপ্লব। ইন্টারনেটের আবির্ভাবে তৃতীয়
শিল্পবিপ্লবের সময় তথ্যপ্রযুক্তির সহজ ও দ্রুত বিনিময় শুরু হলে সারা বিশ্বের গতি
কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সামনে আসছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ইন্টারনেট অব থিংস বা
যন্ত্রের ইন্টারনেট যা কিনা সম্পূর্ণ রূপেই মানবসম্পদের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হতে
পারে!
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব (ডিজিটাল বিপ্লব): আগের তিনটি বিপ্লবকে ছাড়িয়ে যেতে পারে ডিজিটাল বিপ্লব। এ নিয়েই এখন সারা দুনিয়ায় তোলপাড় চলছে। এটিকে এখন বলা হচ্ছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব:
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব
হলো সেই পরিবর্তন যা আমরা আগে কখনও সেই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়নি। স্মার্টফোনের
মাধ্যমে সারা বিশ্বের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের পরিবর্তন, ইন্টারনেট অব থিংস,
যন্ত্রপাতি পরিচালনায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ, রোবোটিকস, জৈবপ্রযুক্তি,
কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের মতো বিষয়গুলো চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সূচনা করেছে।
ডিজিটাল বিপ্লবের এই
শক্তির চিত্রটি বিশ্বব্যাংকের সম্প্রতি প্রকাশিত ‘ডিজিটাল
ডিভিডেন্ডস' শীর্ষক এক প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, ইন্টারনেটের
মাধ্যমে এখন এক দিনে বিশ্বে ২০ হাজার ৭০০ কোটি ই-মেইল পাঠানো হয়, গুগলে ৪২০ কোটি
বিভিন্ন বিষয় খোঁজা হয়। এক যুগ আগেও তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে এ পরিবর্তনগুলো ছিল
অকল্পনীয়।
বহু উদীয়মান
প্রযুক্তির সঙ্গে পঞ্চম প্রজন্মের টেলিকম প্রযুক্তি যুক্ত হয়ে চতুর্থ
শিল্পবিপ্লবের ফিউশন প্রযুক্তির দুয়ার খুলে যাচ্ছে। এ রকম কিছু প্রযুক্তির কথা
বলতে গেলে চলে আসবে বহু নাম। যেমন এজাইল বিজনেস প্রসেস, রোবটিকস ইন্ডাস্ট্রিয়াল
অটোমেশন, ত্রি-ডি প্রোডাকশন, পঞ্চম প্রজন্মের টেলিকম, স্মার্টফোনের রিয়েল
অ্যাপ্লিকেশন, ইন্টারনেট অব থিংস (IoT), ম্যাসিভ কানেকটিভিটি, ম্যাসিভ ট্র্যাকিং,
দূর নিয়ন্ত্রণ, স্যাটেলাইট ইন্টারনেট, ফাইভ-জি ড্রোন, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি,
অগমেন্টেড রিয়েলিটি, বিগ ডেটা ও মেশিন লার্নিং, ক্লাউড ও কোয়ান্টাম কম্পিউটিং,
যন্ত্রপাতি পরিচালনায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের ব্যাপকতা, চালকবিহীন গাড়ি,
ফিনটেক ফাইন্যান্স, ব্লকচেইন ও ভার্চুয়াল কারেন্সি, পেমেন্ট সিস্টেম থেকে
জৈবপ্রযুক্তি, রিমোট সার্জারি ইত্যাদি ।
চতুর্থ শিল্প বিল্পবের উপাদানসমূহঃ
চতুর্থ শিল্প বিল্পবের যেসব উপাদানসমূহ আমাদের জীবনকে বদলে দিচ্ছে,নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হলোঃ
১. ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি)
বস্তু,যন্ত্র এবং
অন্যান্য উপাদানের মধ্যে বৃহৎ নেটওয়ার্কই হলো ইন্টারনেট অব দিসে (loT)। এগুলোর
মধ্যে সফটওয়্যার, সেন্সর এবং ইলেকট্রনিকসের সাহায্যে তথ্য আদান প্রদান করানোই
আইওটির কাজ। প্রযুক্তিবিদেরা বলেছেন, আইওটি আমাদের জীবনে বড় রূপান্তর আনতে
যাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি সেবাদাতা মার্কিন প্রতিষ্ঠান সিসকোর এক প্রতিবেদনে বলা
হয়েছে, পরবর্তী দশকে প্রযুক্তিশিল্পে আইওটির বাজারমূল্য হবে ১৪ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন
ডলার।
আমাদের চারপাশের সকল
বস্তু যখন নিজেদের মধ্যে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ করবে এবং নেটওয়ার্ক গড়ে
তুলবে, সেটাই ইন্টারনেট অব থিংস। ইতোমধ্যে আমরা গুগল হোম, এ্যামাজনের আলেক্সার কথা
শুনেছি যা আপনার ঘরের বাতি, সাউন্ড সিস্টেম, দরজাসহ অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এখন অন্যান্য অনেক কিছুই হয়ে পড়ছে স্মার্ট, মানে
ছোট্ট একটি কম্পিউটার ভরে দেয়া যায় এখন টিভি, ফ্রিজ, গাড়ি, এমনকি দরজার
তালাতেও। আর নেটওয়ার্কিং প্রযুক্তির উন্নতির ফলে এই নতুন স্মার্ট ডিভাইসগুলা
ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।
এসব যন্ত্রপাতি এখন
নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারবে, আর অন্যান্য অনেক কিছুর সঙ্গে যোগাযোগ করে
স্মার্ট সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। উদাহরণ- বাজার করতে হবে? ফ্রিজ খোলার দরকার নেই,
আপনার ফ্রিজ নিজেই ভিতরে কী আছে তা জেনে আপনাকে জানাবে বা নিজেই সরাসরি অনলাইনে
অর্ডার দিয়ে কিনে ফেলতে পারবে। আপনার কাজ কমে গেল।
আপনার বাসার চুলাকে আপনি একবার শিখিয়ে দেবেন কখন কি খেতে পছন্দ করেন। ধরেন বৃষ্টির দিনে আপনি খিচুড়ি ভালবাসেন, আপনার চুলা সেটা মনে রাখবে এবং বাইরে বৃষ্টি পড়লে সেদিন আপনার জন্য খিচুড়ি রান্না করে রাখবে। আপনি সকালে ডিম রুটি খাবেন সেটাও সে প্রতিদিন করে দিবে অথবা সপ্তাহের একেকদিন তাকে একেক রেসিপি রাঁধতে বলবেন সে তাই করবে।
আপনার চোখের চশমা কিংবা কানের হেডফোনই আপনাকে রাস্তা দেখাবে আর সব তথ্য দিয়ে দেবে। যুক্তরাজ্যে ইতোমধ্যে এই ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে যেখানে তাদের সরকার এনার্জি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানদের স্মার্ট মিটার ব্যবহার করতে বলেছে। অবশ্য আইওটি শুধু ঘরে ব্যবহার উপযোগী যন্ত্রপাতি তৈরির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
আইওটির মূল লক্ষ্য
'স্মার্ট সিটি তৈরি করা যেখানে ট্রাফিক সিগন্যাল থেকে শুরু করে শিল্প এবং
কৃষিক্ষেত্রে পণ্যের মান এবং উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিভিন্ন সেন্সর এবং আধুনিক যন্ত্র
ব্যবহার করা, স্বাস্থ্যখাতেও আসবে আমূল পরিবর্তন। ইন্টারনেট অব থিংসের ব্যবহার
অলরেডি শুরু হয়ে গেছে এবং খুব শীঘ্রই বাজার দখল করে নেবে।
২. রোবটিক্সঃ
বিজ্ঞানিরা ধারনা করছে
আগামী বছর গুলোতে রোবট মানুষের ১১ টি কাজ কেড়ে নিবে। কাজ গুলো হলোঃ
১। দীর্ঘ পরিবহন
ড্রাইভার:
২। টাক্সি ও ডেলিভারি
ড্রাইভার:
৩। গ্রাহক সেবা ও অফিস
সহায়ক:
৪। স্বাস্থ্য কর্মী;
৫ । গুদাম
শ্রমিক;
৬। ইনভেনটরী ম্যানেজার
ও স্টকিষ্ট;
৭। খুচরা ও
গ্রাহক ইন্টারএ্যাকশন জবস;
৮। ব্যাংকের ক্যাশিয়ার
ও প্রতিনিধি;
৯ । নির্মাণ শ্রমিক
১০ । ফাইনান্সিয়াল
এ্যানালিস্ট;
১১। উৎপাদন কম্পানির
শ্রমিক;
৩. ভার্চুয়াল রিয়ালিটি (ভিআর)
গভীর সমুদ্রে সাঁতার কাটা কিংবা মঙ্গলের বুকে হেঁটে আসা এখন আর কঠিন
কিছু নয়।সত্যি সত্যি না হলেও কৃত্রিমভাবে এই অভিজ্ঞতা দিচ্ছে ভিআর।কম্পিউটার সিস্টেম
ব্যবহার করে কৃত্রিম পরিবেশ তৈরি করার এই প্রযুক্তির সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত।ত্রিমাত্রিক
ভার্চুয়াল দুনিয়ার এই অভিজ্ঞতা সামনে আরো নানা কাজে আসবে।
৪. থ্রিডি প্রিন্টারঃ
ত্রিমাত্রিক বস্তু তৈরি
করার ক্ষমতা সম্পন্ন প্রিন্টারই হলো থ্রিডি প্রিন্টার। কম্পিটারের কোন একটি থ্রিডি
মডেলকে বাস্তব বস্তুতে পরিনত করতে পারে এই প্রিন্টার। সম্প্রতিক সময়ে এই
টেকনলোজির ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে এবং ব্যবহার করা হচ্ছে। এই প্রযুক্তি গয়না
প্রস্তুত, পাদুকা শিল্প, ইন্ডস্ট্রিয়াল ডিজাইন, স্থাপত্য, প্রকৌশল ও নির্মাণ,
অটোমোটিভ, মহাকাশ, দন্ত এবং চিকিৎসা শিল্প, শিক্ষা, ভৌগলিক তথ্য ব্যবস্থা,
পুরকৌশল, এবং অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বিভিন্ন ধরনের কাজে
বিভিন্ন ধরনের প্রিন্টার ব্যবহার এবং ভিন্ন ভিন্ন কাজে ভিন্ন ভিন্ন কাচামাল
ব্যবহার করা হয়। অধিকাংশ প্রিন্টারে কাচামাল (কাগজ, পলিমার বা ধাতব) তরল অবস্থায়
থাকে এবং এটিকে (selective laser sintering - SLS) এবং (fused
deposition modeling -FDM) এবং এর মাধ্যমে কাটা বা সংযোজন করা হয়।
কিছু প্রতিষ্ঠান পলিমার
পাউডারের মাধ্যমে তৈরী করে মডেলটি Selective laser sintering - SLS এর মাধ্যমে
একটি বস্তুকে লেজার রশ্মির মাধ্যমে কাটা হয় এবং আকৃতি প্রদান করা হয়। আর Fused
deposition modeling -FDM এর মাধ্যমে তরল/অর্ধতরল পদার্থকে কম্পিউটারের লেআউটের
আকারে কোন একটি লেআউটে ঢালা হয় । থ্রিডি প্রিন্টের আগে যে অবজেক্টের প্রতিরূপ
বানানো হবে তা বিশেষ ধরনের স্ক্যানারের মাধ্যমে স্ক্যান করা হয় এবং তা কম্পিউটারে
আকৃতিটির থ্রিডি প্রিন্টারের উপযোগি মডেলে রূপান্তরিত করা হয়। পরবর্তিতে থ্রিডি
প্রিন্টারে প্রিন্ট শুরু করা হয়।
৫. অগমেন্টেড রিয়েলিটি (এআর)
এআর-এর বেলাতেও একই কথা খাটে। বিশেষ করে পোকেমন গেমটি যারা খেলেছেন,
তারা আরও ভালো জানেন এটা ৷ আর ভিআর এবং এআর এই দুই প্রযুক্তি নিয়েই তৈরি হচ্ছে এমআর
বা মিক্সড রিয়েলিটি ।
৬. আর্টিফিসিয়াল ইন্টলিজেন্স (এআই)
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা
এআইকে বলা যেতে পারে কম্পিওটারকে মানুষ করার উপায়। কম্পিউটার বিজ্ঞানের এই
শাখাটির উদ্দেশ্যই হলো বুদ্ধিমান যন্ত্র তৈরি করা। আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স যে
চারটি কাজ মূলত করে তা হলো-
কথা শুনে চিনতে পাৱা
- নতুন
জিনিস শেখা
- পরিকল্পনা করা
- সমস্যার সমাধান করা.
.
এআই রোবটিকসের সঙ্গেও
যুক্ত। রোবট দিয়ে দিক নির্ণয়, স্থান চিহ্নিত করা, বস্তুর রুপান্ত্র ও স্থানান্তর
কিংবা গতি পরিকল্পনার মতো কাজ করিয়ে নিতে এআই ছাড়া উপায় নেই। সেপটাইম এর কথা
উল্লেখ করা যায়। এখন প্রায় সকল স্মার্টফোনেই আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্সের
ব্যবহার হচ্ছে গ্রাহকের অভ্যাস এবং প্রয়োজনীয়তা মনে রেখে কাস্টমাইজ সেবা দিতে।
যাত্রা শুরু করেছিল ২০১৪ সালে।
এরই মধ্যে পৃথিবীর
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক উদ্যোগ হয়ে উঠ সেন্সটাইম। এই
প্রতিষ্ঠানে মোট ৮০০ গবেষক আছন। যাঁদের মধ্যে দেড় শর বেশি কর্মী বিশ্বের সেরা
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করে এখানে যোগ দিয়েছেন। কৃত্রিম
বুদ্ধিমত্তা খাতে এটা চীনা গবেষকদের সবচেয়ে বড় দল। ৪০০ টি সরকারি-বেসরকারি
প্রতিষ্ঠানকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয় এই প্রতিষ্ঠান। চীনা সরকারের
নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখে সেন্সটাইম।
৭. মেশিন লার্নিং
সাধারণ অ্যাপ ও ML ইম্প্লিমেন্টেড
অ্যাপের মধ্যে তফাৎ হল এই, সাধারণ অ্যাপ্লিকেশন সব সময় সাধারণই থাকবে কিন্তু গখ
ইস্প্লিমেন্টেড অ্যাপটি হবে অনন্যসাধারণ, প্রতিবার ব্যবহার করার পর আপনার মনে হবে
অ্যাপটি যেন আরও ইন্টেলিজেন্ট হচ্ছে। তবে ML যে শুধু অ্যাপকে ইন্টেলিজেন্স দিতে
পারে তাই নয়, রোগ নির্ণয় থেকে শুরু করে যেকোন ধরণের ক্লাসিফিকেশন ও প্রেডিকশনের
জন্য গখ এর জুড়ি নেই।
মেশিন লার্নিং
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের একটা বিভাগ যেখানে ইন্টেলিজেন্ট সিস্টেম তৈরি করা
হয় ডেটাসেট কিংবা ইন্টারঅ্যাক্টিভ এক্সপেরিয়েন্সের মাধ্যমে। মেশিন লার্নিং
টেকনোলজি Cyber security, Bioinformatics, Natural Language Processing. Computer
Vision, Robotics ছাড়াও প্রচুর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে।
বর্তমানে
ইন্ডাস্ট্রিয়াল লেভেলে মেশিন লার্নিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। কিছু না
কিছু মেশিন লার্নিং মেথডলজি জানা সকলেরই উচিৎ। মেশিন লার্নিংয়ের বেশ কিছু জিনিসই
ডেটা সায়েন্সের সাথে ওভারল্যাপ করবে, কিন্তু মেশিন লার্নিংয়ের মূল টার্গেট হল
প্রেডিক্টিভ মডেল বিল্ড করা। মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদমগুলোকে প্রধানত চার
ক্যাটেগরিতে ভাগ করা যায়।
1. Supervised
Learning;
2. Unsupervised
learning;
3. Semi-Supervised
learning;
4. Reinforcement
learning.
৮। ক্লাউড স্টোরেজঃ
তথ্য সংরক্ষণ করার জন্য এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি হলো অনলাইন
ক্লাউড স্টোরেজ। মেমোরী কার্ড বা কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক নষ্ট হয়ে যাওয়া বা হারিয়ে
যাওয়ার ফলে আপনার গুরুত্বপূর্ন সব তথ্য নিমিষেই হারিয়ে যেতে পারে। তাই অনলাইন ক্লাউড
স্টোরেজে এসব সংরক্ষণ করা অনেক নিরাপদ।
ক্লাউড স্টোরেজ কি?
সার্ভারে ইউজারের ডাটা আপলোড করে সংরক্ষণ করে রাখার উপায়কেই ক্লাউড
স্টোরেজ বলে। ক্লাউড স্টোরেজ এ ইউজারেরা নিজেদের ছবি, গান, ডকুমেন্টস, ভিডিওসহ অন্যান্য
ফাইল এসব ক্লাউড স্টোরেজে সেইভ করে।
সর্বাধিক জনপ্রিয় ক্লাউড স্টোরেজ গুলো হলোঃ
১.
ড্রপবক্স
২.
মাইক্রোসফট ওয়ানড্রাইভ
৩.
মিডিয়াফায়ার
৪.
গুগল ড্রাইভ
৫.
মেগা
৯। ব্লকচেইনঃ
একটি ব্লকচেইন তথা
ব্লক-এর শিকল হলো যা ক্রমাগত বর্ধমান রেকর্ড তালিকা যা ক্রিপ্টোগ্রাফির দ্বারা
সংযুক্ত এবং নিরাপদ প্রতিটি ব্লকের প্রকৃতি এরূপ যে তা পূর্বের ব্লকের একটি
ক্রিপ্টোগ্রাফিক হ্যাস নিয়ে গঠিত এবং একটি কার্যকাল ও কার্যপ্রকৃতির সমন্বিত
তথ্য। সম্পূর্ণ ব্লকচেইনের প্রত্যেকটি সিঙ্গেল ব্লকে মূলত তিনটি জিনিস থাকে- ডেটা,
হ্যাশ এবং চেইনে তার আগের ব্লকটির হ্যাশ ।অর্থাৎ, ব্লকচেইনের থাকা প্রত্যেকটি
ব্লকে থাকে সেই ব্লকটির নিজস্ব ডেটা, ব্লকটির নিজের হ্যাশ এবং ঠিক তার পেছনে যুক্ত
থাকা আগের ব্লকটির হ্যাশ।
গঠনগতভাবে ইহা কার্যকাল
ও কার্যপ্রকৃতির তথ্য সমন্বিত তথ্যভান্ডার এবং তথ্য পরিবর্তনরোধী কৌশল।এটা হলো
একটি উন্মুক্ত বিভাজিত তথ্যভান্ডার যা যাচাইযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য প্রক্রিয়ায়
সম্পাদিত কাজের রেকর্ড করতে পারে একটি বিভাজিত তথ্যভান্ডার হিসেবে ব্যবহারকল্পে,
একটি ব্লকচেইন প্রকৃতিগতভাবে পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্ক সংগঠনের মাধ্যমে
ব্যবস্থাপনা করা হয় যা একটি প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হয় নতুন ব্লক যাচাইকরনের
জন্য।
একবার রেকর্ড হওয়ার পর
একটি ব্লকের তথ্য সবগুলো উপ-অনুক্রমিক ব্লকের পরিবর্তন ব্যতীত পরিবর্তন করা যায়
না এবং এ ধরনের পরিবর্তনের চেষ্টায় নেটওয়ার্কে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা হয়।
ব্লকচেইন নকশা দ্বারা নিরাপদ যা এমন একটি কম্পিউটার প্রক্রিয়ার সাথে তুলনীয় যা
উচ্চ বাইজেনটাইন ফল্ট টোলারেন্স যুক্ত। ফলে ব্লকচেইন কেন্দ্রীকতাবিহীন ঐক্য সৃষ্টি
করে। এটা ব্লকচেইনকে আপেক্ষিকভাবে ঘটানা,চিকিৎসা সংক্রান্ত রেকর্ড এবং অন্যান্য
রেকর্ড ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কাজের উপযোগী করে তোলে।এসব কাজের মধ্যে রয়েছে
পরিচয় ব্যবস্থাপনা, কার্যসম্পাদনা প্রক্রিয়াকরণ, ঐতিহাসিক স্থান নথিকরণ, খাদ্য
নিরাপত্তা এবং নির্বাচন ।
২০০৮ সালে ব্লকচেইনের
উদ্ভাবক সাতশি নাকামতো কেবল ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েন-এর সাধারণ লেনদেনের তথ্যভান্ডার
নিরপত্তারয় ব্যবহার করার জন্য এটি উদ্ভাবন করেন। বিটকয়েনের জন্য ব্লকচেইন
আবিষ্কার এটিকে প্রথম ডিজিটাল মুদ্রায় পরিণত করে যা দ্বৈত খরচ সমস্যার সমাধান করে
কোনো প্রকার বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান বা কেন্দ্রীয় সার্ভার-এর সাহায্য ছাড়াই।
বিটকয়েনের নকশা অন্যান্য প্রয়োগিক কাজে ব্যবহারের ক্ষেত্রে এটি অনুপ্রাণিত
করেছে।
১০। ন্যানোটেকনোলজিঃ
ন্যানোপ্রযুক্তি (ন্যানোটেকনলজি বা সংক্ষেপে ন্যানোটেক) পদার্থকে
আণবিক পর্যায়ে পরিবর্তন ও নিয়ন্ত্রণ করবার বিদ্যা। সাধারণত ন্যানোপ্রযুক্তি এমন সব
কাঠামো নিয়ে কাজ করে যা অন্তত একটি মাত্রায় ১০০ ন্যানোমিটার থেকে ছোট। ন্যানোপ্রযুক্তি
বহুমাত্রিক, এর সীমানা প্রচলিত সেমিকন্ডাকটর পদার্থবিদ্যা থেকে অত্যাধুনিক আণবিক স্বয়ং-সংশ্লেষণ
প্রযুক্তি পর্যন্ত; আণবিক কাঠামোর নিয়ন্ত্রণ থেকে নতুন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ন্যানোপদার্থের
উদ্ভাবন পর্যন্ত বিস্তৃত।
রিচার্ড ফাইনম্যানকে ন্যানোপ্রযুক্তির জনক বলা হয়। ন্যানোপ্রযুক্তির
ব্যবহার চিকিৎসাবিজ্ঞান, ইলেকট্রনিক্স, শক্তি উৎপাদনসহ বহু ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন
আনতে পারে। অপরদিকে পরিবেশের উপর এর সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব নিয়েও সংশয় রয়েছে। তারপরও
পৃথিবীর বহু দেশে ন্যানোপ্রযুক্তি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চলছে।
১১। বায়োটেকনোলজিঃ
বায়োটেকনোলজি শব্দের
অর্থ হল-জৈবপ্রযুক্তি। এই শব্দটি হয়তো আপনাদের কাছে নতুন শোনাচ্ছে। কিন্তু
বাস্তবে এর প্রয়োগ শুরু হয়েছে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে। একে ব্যবহার
করে মানুষ দুধ থেকে দই, মাখন, পনির ইত্যাদি এবং fermentation (গাজন) প্রক্রিয়ার
মাধ্যমে মদ, অ্যালকোহল প্রভৃতি উৎপাদন করে আসছে।
বর্তমানকালে
বায়োটেকনোলজির এই চরম উন্নতির কারনে বিশ্বের সর্বস্তরের বিজ্ঞানীগন “বায়োটেকনোলজি” কে
একুশ শতকের বিজ্ঞান বা একুশ শতকের প্রযুক্তি বলে অভিহিত করেছেন। বায়োটেকনোলোজি বা
জৈবপ্রযুক্তি হল- মানুষের কল্যানের জন্য অনুজীব বা কোষীয় উপাদান (cell
components) সুনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার বা ব্যবহারের কলাকৌশল। বায়োটেকনোলজি শব্দটি
১৯১৯ সালে হাঙ্গেরীয় প্রকৌশলী কার্ল এরেকি সর্বপ্রথম প্রবর্তন করেন।
প্রতিবছরই পৃথিবীর জনসংখ্যা ও রোগের জটিলতা বেড়ে চলছেই। আর পৃথিবীর তিন-চতুর্থাংশ মানুষ উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত।তাই বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে প্রতিটি ঘরে দ্রুত চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে এখন বায়োটেকনোলজির আশ্রয় নিচ্ছেন।বায়োটেকনোলজির কল্যানে আজ আমরা পেয়েছি ভ্যাকসিন, এন্টিবায়োটিক, হরমোন, এনজাইম ইনটারফেরন সহ জীবপ্রযুক্তির নানান আশির্বাদ ।
নিচে এ ধরণের কিছু পণ্য ও তার ব্যবহার দেয়া হল:
১. ইনসুলিন- ডায়বেটিস।
২.সিরাম অ্যালবুমিন-
সার্জারি।
৩. ইনটারফেরন-
ক্যানসার ও ভাইরাল ইনফেকশন।
৪. মনোক্লোনাল এন্টিবডি-
মলাশয় ক্যানসার।
কৃষিক্ষেত্রটা
বায়োটেকনোলজি ছাড়াতো ভাবাই যায় না। যেমন ধরুন ভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে
সংকর ঘটিয়ে নতুন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন উন্নতমানের উদ্ভিদ উৎপন্ন করা হয়। তাছাড়া
অল্পসময়ে অনেক বেশি চারা উৎপন্ন করা যায়।আবার যেসব উদ্ভিদের বীজ উৎপাদন করা
সম্ভব হয়না সেসব উদ্ভিদের ক্ষেত্রে টিস্যু কালচার করে চারাগাছ উৎপন্ন করা যায়।
টিস্যু কালচার হল- উদ্ভিদ থেকে টিস্যু নিয়ে পুষ্টিমাধ্যমে (culture media) আবাদ
(culture) করে পুর্ণঙ্গ চারা উদ্ভিদ তৈরী করা। প্রোটিন ধারনক্ষমতা সম্পন্ন উদ্ভিদ
বা সালোকসংশ্লেষনে বেশি সক্ষম উদ্ভিদ উৎপাদনেও বায়োটেকনোলজির গুরুত্ব অপরিসীম ।
বেশি মাংস ও দুধ উৎপাদনকারী সুস্থ সবল গবাদিপশু উৎপাদন করা যায়।