ক্রায়োসার্জারি (Cryosurgery) কি?
চিকিৎসাবিদ্যায় ব্যবহৃত এক প্রকার শৈলচিকিৎসাকে
ক্রায়োসার্জারি বলা হয়। যে চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে অত্যধিক শীতল তাপমাত্রা প্রয়োগ
করে ত্বকের অস্বাভাবিক ও রোগাক্রান্ত টিস্যু ধ্বংস করা হয় সেই চিকিৎসা পদ্ধতিকে ক্রায়োসার্জারি
বলে।
ক্রায়োসার্জারিকে Cryotherapy-ও বলা হয়। গ্রিক শব্দ Cryo-এর অর্থ বরফশীতল। তাই ক্রায়োসার্জারির বাংলা অর্থ দাঁড়ায় বরফশীতল সার্জারি।
ক্রায়োসার্জারি বয়সঃ
খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ সালের আগে মিসরীয়রা
ত্বকের বিভিন্ন ধরনের ক্ষত ও প্রদাহের চিকিৎসায় বরফশীতল তাপমাত্রা ব্যবহার করতেন।
ঐতিহাসিকভাবে দেখা যায়, বেশ কিছু চিকিৎসায় ক্রায়োসার্জারি ব্যবহার করা হতো।
বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ক্রায়োসার্জারিতে ব্যবহৃত পণ্যের উৎপাদন ব্যবস্থায় কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ক্রায়োসার্জারি উৎপাদনে কাঁচামাল সংগ্রহ এবং ব্যবহার থেকে শুরু করে পণ্য উৎপাদন, বিপণন ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহারের ফলে এই শল্যচিকিৎসাটি বর্তমান বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
যেসকল রোগী বয়স্ক, যাদের থেরাপি বা অপারেশন করা যাবে না তাদের ক্ষেত্রে মূলত এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। বরফশীতল তাপমাত্রায় দেহকোষের কোষকলার ভিতরে বল আকারের ছোট ছোট ক্রিস্টাল তৈরি হয় যা কোষকলাকে ধ্বংস করে ফেলে। এই ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে অস্বাভাবিক কোষকে ধ্বংস করা হয়। ক্রায়োসার্জারির ক্ষেত্রে পৃথক পৃথকভাবে তরল নাইট্রোজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড, আরগন এবং ডাইমিথাইল ইথেন-প্রোপেন-এর মিশ্রণ ব্যবহার করা হয় ।
উন্নত প্রযুক্তিতে ক্রায়োসূচ তৈরির মাধ্যমে এ প্রক্রিয়া আরও উন্নত ও গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে । প্রয়োগ পদ্ধতি কত মাত্রায় ঠাণ্ডা প্রয়োগ করা হবে তা নির্ভর করে ক্ষতের অবস্থান, আয়তন, গভীরতা ও কোষকলার ধরনের উপর। যেমন— সাধারণ টিউমারের ক্ষেত্রে −২০ ডিগ্রি থেকে –৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা ব্যবহার করা হয়। আবার, ক্যান্সারের ক্ষেত্রে –৪০ ডিগ্রি থেকে –৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা প্রয়োগ করা হয়।
১৯৫০ সালে ড. রে এলিংটন ক্রায়োসার্জারিতে তরল নাইট্রোজেন প্রয়োগ করেন। ড. ইরাডিং কুপার এবং আর্নোভ নিসর হাত ধরে আধুনিক ক্রায়োসার্জারির যাত্রা শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে তরল নাইট্রোজেন (–১৯৬°C) এবং অন্যান ক্রায়োজেনিক এজেন্ট যেমন— তরল নাইট্রাস অক্সাইড (–৮৯°C) তরল কার্বন ডাইঅক্সাইড (–৭৯°C) তরল আর্জন (—১৯৬°C) ইথাইল ক্লোরাইড ডাই মিথাইল ইথার প্রপেন (–৪১°C) এবং ক্লোরিনেটেড হাইড্রোকার্বন ইত্যাদি ব্যবহা করে ক্রায়োসার্জিক্যাল চিকিৎসা আরও উন্নতি সাধন করা হয়।
যখন কোষগুলোকে হিমায়িত করা হয় তখন অস্বাভাবিক কোষের আশেপাশের ভালো কোষগুলো যাতে শীতল না হয় সেজন্য থার্মোসেন্সরের সাহায্য নেওয়া হয়।
ক্রায়োসার্জারির ব্যবহার :
একটা সময় ত্বকের বিভিন্ন অসুস্থতা যেমন— আচিল, মেছতা, তিল এবং ত্বকের ক্যানসার চিকিৎসায় এ পদ্ধতি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু এখন শুধু ত্বকে নয় যকৃত, পাইলস, মুখের ক্যানসার, হাড়ের ক্যানসার, জরায়ু মুখের ক্যানসার, লিভার ক্যানসার ইত্যাদির চিকিৎসায় ক্রায়োসার্জারি ব্যবহার করা হচ্ছে।
এছাড়া Plantar Facilities এবং Fibroma ক্ষেত্রেও ক্রায়োসার্জারি ব্যবহার করা হয়।