বাংলাদেশে সমাজকর্মের উদ্ভব ও বিকাশ আলোচনা কর।

বাংলাদেশে সমাজকর্মের উদ্ভব ও বিকাশ আলোচনা কর।

বাংলাদেশে সমাজকর্মের উদ্ভব ও বিকাশ আলোচনা কর।

ভূমিকা : 


দানশীলতা দিয়ে সমাজকর্মের সূচনা ঘটলেও কালের পরিক্রমায় সমাজকর্ম আজ একটি স্বীকৃত পেশা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে সময়ের দাবিতে, প্রয়োজন পূরণের নিরিখে সমাজকর্ম তার সম্পূর্ণ পেশাগত অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। দানশীলতাভিত্তিক সমাজসেবা কার্যক্রম দ্রুত শিল্পায়ন ও শহরায়নের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অপর্যাপ্ত বিবেচিত হয়। তাই অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পরিবর্তনশীল সমাজের চাহিদার সাথে সংগতি রেখে সমাজকর্মের পর্যায়ক্রমিক বিকাশ সাধিত হয় ।


বাংলাদেশে সমাজকর্ম শিক্ষা ও সমাজকর্মের বিকাশ : আমাদের দেশে প্রাতিষ্ঠানিক সমাজকর্মের গোড়াপত্তন হয় ভারত বিভক্তির পর থেকে অর্থাৎ পঞ্চাশের দশক থেকে। নিম্নে বাংলাদেশে সমাজকর্ম শিক্ষা ও সমাজকর্মের বিকাশ আলোচনা করা হলোঃ

১. জাতিসংঘের সাহায্য কামনা :

১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে উদ্ভূত সামাজিক সমস্যা মোকাবিলায় এদেশে পেশাদার সমাজকর্মের যাত্রা শুরু হয়।  দেশ বিভক্তির পর এদেশে আর্থসামাজিক সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করলে পাকিস্তান সরকার জাতিসংঘের সাহায্য কামনা করে ।

২. জাতিসংঘের কার্যক্রম : 

১৯৫২ সালে মুহাজের সমস্যা সমাধানে  Dr.James Dumpson এর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসে। বিশেষজ্ঞ দল উদ্ভূত পরিস্থিতি ও বিরাজমান আর্থসামাজিক অবস্থার ওপর ব্যাপক সমীক্ষা চালায়। সমীক্ষার পর তারা সমাজকর্ম শিক্ষার প্রবর্তন ও স্বেচ্ছাসেবী সমাজকর্ম সংগঠন প্রতিষ্ঠার জন্য সুপারিশ করেন ।

৩. প্রশিক্ষণ কোর্স :

জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ দলের সুপারিশ মোতাবেক ১৯৫৩ সালে ঢাকায় সমাজকর্মবিষয়ক তিন মাস মেয়াদি প্রথম প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করা হয়।  পরবর্তীতে ১৯৫৬ সালে এ কোর্সকে নয় মাসে উন্নীত করা হয়।

৪. সমাজকর্ম কলেজ প্রতিষ্ঠা :

নয় মাসের কোর্সের সফলতার ভিত্তিতে একটি নিয়মিত কোর্সের প্রস্তাবে ১৯৫৮ সালে 'কলেজ অব সোশাল ওয়েলফেয়ার এন্ড রিসার্চ সেন্টার' নামক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয় যার বর্তমান নাম সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট। ১৯৫৮-৫৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এই কলেজে স্নাতকোত্তর কোর্স চালুর মাধ্যমে সমাজকর্ম শিক্ষার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।  পরবর্তীতে ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ বছর মেয়াদি স্নাতক কোর্স চালু করা হয় ।

৫. বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকর্ম শিক্ষা : 

১৯৭৩ সালে ‘College of Social Welfare and Research’কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আনা হয়। উক্ত প্রতিষ্ঠানটি সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আত্মীকরণ হয়। বর্তমানে এখানে ৪ বছর মেয়াদি অনার্স কোর্স, ১ বছর মেয়াদি স্নাতকোত্তর কোর্স চালু রয়েছে। এছাড়া ১৯৬৪-৬৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৯৩-৯৪ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯৯২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকর্ম বিষয়ে স্নাতক কোর্স চালু করে ।

 You May Also Like: বাংলাদেশে সমাজকর্মের পরিধি আলোচনা কর

৬. ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ প্রদান : 

বাংলাদেশে সমাজকর্মবিষয়ক উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে তাত্ত্বিক জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি ব্যবহারিক প্রশিক্ষণকে পাঠক্রমের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা ফিল্ড ওয়ার্ক নামে পরিচিত। যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীগণ সমাজকর্মের তাত্ত্বিক জ্ঞান বাস্তবে প্রয়োগের সুযোগ পায় ।

৭. উচ্চ মাধ্যমিক সমাজকর্ম : 

বাংলাদেশে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোর্সের পাশাপাশি উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়েও সমাজকর্ম শিক্ষা চালু করা হয়েছে।

৮. চিকিৎসা সমাজকর্ম : 

চিকিৎসা ক্ষেত্রে রোগীদের সহায়তা করার জন্য সমাজকর্মের ব্যবহারিক ক্ষেত্র চালু হয়। ১৯৫৮ সাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে এ কর্মসূচি চালু রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের সব জেনারেল ও ডায়াবেটিক হাসপাতালে এ কর্মসূচি চালু আছে ।

৯. সমাজকর্ম বাস্তবে প্রয়োগ : 

১৯৫৮ সালে সংশোধনমূলক কার্যক্রম ও প্রতিবন্ধী কল্যাণ, ১৯৬৯ সালে সংশোধনমূলক কার্যক্রম ও প্রতিবন্ধী কল্যাণ, ১৯৬৯ সালে বিদ্যালয় সমাজকর্ম, ১৯৬৩ সালের আন্তঃসার্ভিস প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রভৃতি ক্ষেত্রে সমাজকর্মের বাস্তব প্রয়োগ সাধিত হয় ।

১০. জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ :

১৯৬৫ সালে বাংলাদেশে প্রাদেশিক সমাজকল্যাণ পরিষদ গঠন করা হয়, যা বর্তমানে সমাজকল্যাণ পরিষদ নামে পরিচিত।  এ পরিষদ দেশে বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজ সম্পাদন করে থাকে ।

১১. পেশাগত সংগঠন :

পেশার মানোন্নয়ন এবং কর্মীদের সাধারণ স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য পেশাদার সংগঠনের গুরুত্ব অপরিসীম। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকর্মী সমিতি' ও ১৯৮৬ সালে 'বাংলাদেশ সমাজকর্ম শিক্ষক পরিষদ' নামে আরেকটি সংগঠন গঠিত হয় । কিন্তু বর্তমানে এদের তৎপরতা নেই।

১২. সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় :

১৯৬১ সালে সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গঠন করা হয় সমাজকল্যাণ পরিদপ্তর। সমাজকল্যাণ পরিদপ্তরের কর্মতৎপরতায় সাফল্য এবং সমাজকর্মের প্রসারতার লক্ষ্যে স্বাধীনতার পর সমাজকল্যাণ পরিদপ্তরকে সমাজসেবা অধিদপ্তরে রূপান্তর করা হয়। বর্তমানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।  বাংলাদেশে সমাজকর্মের বিকাশে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা একটি দৃঢ় পদক্ষেপ ।

১৩. অন্যান্য কর্মসূচি :


উল্লিখিত কার্যক্রম ছাড়াও বাংলাদেশে পেশাদার সমাজকর্মের আরও কিছু কর্মসূচি চালু রয়েছে। এগুলো হলো শ্রম কল্যাণ, শিশু কল্যাণ, পরিবার কল্যাণ, নারী কল্যাণ, মাদকাসক্ত পুনর্বাসন, অপরাধ ও ভবঘুরে পুনর্বাসন, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, শহর সমাজসেবা, গ্রামীণ সমাজসেবা প্রভৃতি ।

You May Also Like:  সমাজকর্মের দার্শনিক মূল্যবোধসমূহ আলোচনা কর


বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সমাজকর্ম পাঠের গুরুত্ব আলোচনা 


বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের একটি দেশ। এদেশে ক্রমে উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। এর পিছনে শিল্পের অগ্রসরতা ও তথ্য প্রযুক্তির অধিক ব্যবহার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করছে। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে প্রকৃত উন্নতির ফলে সমাজজীবন তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন জটিল ও বহুমুখী সমস্যা। এসব সমস্যার প্রতিকার প্রতিরোধ ও উন্নয়নে সমাজকর্ম অনবধ্য ভূমিকা রাখতে পারে ।  তাই বাংলাদেশে সমাজকর্মের গুরুত্ব অত্যাধিক 

বাংলাদেশে সমাজকর্ম পাঠের গুরুত্ব : 

নিম্নে বাংলাদেশে সমাজকর্মের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো—

১. সামাজিক সচেতনতাবোধ জাগ্রত হওয়া : 

বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগণের মধ্যে সামাজিক সচেতনতার খুবই অভাব । তারা এখনো অজ্ঞতা ও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন । গ্রামের দরিদ্র, অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে এখনো কুসংস্কারের প্রভাব লক্ষণীয়। সমাজকর্মই এসব জনগোষ্ঠীর মধ্যে সামাজিক সচেতনতাবোধ জাগ্রত করে। এক্ষেত্রে সমাজকর্মী অগ্রণী ভূমিকা রাখে।

২. সমস্যা সম্পর্কে তথ্যসংগ্রহ : 

আধুনিক সমাজব্যবস্থা আর্থসামাজিক রাজনৈতিক মনোদৈহিকসহ নানাবিধ সামাজিক সমস্যায় জর্জরিত। আর সমাজকর্ম হলো এমন একটি বিষয় যা অধ্যয়ন করে এসব সমস্যার সঠিক সমাধান বের করা সম্ভব। এজন্য সমস্যার প্রকৃতি, ধরন, বিস্তারসহ যাবতীয় তথ্যসংগ্রহ করা প্রয়োজন। সমাজকর্ম যেহেতু সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করে তাই সমাজকর্ম অধ্যয়নের মাধ্যমেই সমস্যা সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যসংগ্রহ করা সম্ভব । 

৩. সমস্যার বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধান : 

বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা বহুমুখী সমস্যায় জর্জরিত। এসব সমস্যার বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের প্রয়োজন।  নিরক্ষরতা, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, মাদকাসক্তি, বেকারত্ব, দারিদ্র্য, অপরাধ প্রভৃতি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য সমাজকর্ম অধ্যয়ন করে বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধান করতে হবে।  এক্ষেত্রে সমাজকর্মের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

৪. জন অংশগ্রহণ : 

যেকোনো কাজে সফলতা অর্জনের জন্য  প্রথমেই প্রয়োজন কাজের প্রতি আগ্রহ ও জনঅংশগ্রহণ। সমাজকর্ম মানুষকে কাজ করতে উৎসাহী করে। সমাজকর্মীরা তাদের পেশাগত জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দেশের সমস্যা সম্পর্কে সচেতন করে জনঅংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারে।

৫. মানব সম্পদ উন্নয়ন : 

যেকোনো এলাকার জনগণকে জনসম্পদে রূপান্তর করার প্রক্রিয়াকে মানব সম্পদ উন্নয়ন বলে। বাংলাদেশের বহু জনগোষ্ঠী আজও উন্নয়নের অংশীদার হতে পারেনি। এসব জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের অংশীদার করতে হলে তাদেরকে মানব সম্পদে পরিণত করতে হবে।  সঠিক শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে এসব জনগোষ্ঠীকে মানব সম্পদে পরিণত করা যায়।

৬. সম্পদের সদ্ব্যবহার : 

বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির তুলনায় সম্পদ খুবই সীমিত। এ সীমিত সম্পদকে যথাযথভাবে ব্যবহার করে জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন ও জাতীয় উন্নয়ন সাধন করা যায়। এ সমাজ সবসময় সম্পদের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে প্রয়াসী। তাই সমাজকর্মে এর প্রয়োজন অধিক। 

৭.পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষা :

 সমাজকর্ম সমাজের অসহায়, অবহেলিত, এতিম, অনাথ, বিধবা, নিপীড়িত, ভূমিহীন, সুবিধাবঞ্চিত প্রভৃতি শ্রেণির ভাগ্য উন্নয়নের ক্ষেত্রে সমাজকর্মের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে থাকে। আর সমাজকর্মীগণ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষার জন্য সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ার আলোকে তাদের উন্নয়নের চেষ্টা করে থাকে । তাই পিছিয়ে পড়া তথা সুবিধাবঞ্চিত জনগণের স্বার্থরক্ষার তাগিদে সমাজকর্ম পাঠ করা অপরিহার্য।

৮. স্বাবলম্বী হওয়া : 

বাংলাদেশের অনেক জনগণের মধ্যে কর্মবিমুখতা, বেকারত্বের সমস্যা ও পরনির্ভরশীলতার মনোভাব দেখা যায়। এসব মনোভাবের কারণে তারা স্বাবলম্বী হতে পারে না। এরূপ কর্মবিমুখতা ও পরনির্ভরশীল মনোভাব দূর করতে সমাজকর্ম সাহায্য করে থাকে। আধুনিক সমাজকর্ম সমস্যাগ্রস্ত জনগণকে এমনভাবে সহায়তা করে, যাতে তারা তাদের নিজেদের সম্পদ সক্ষমতার মাধ্যমে সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে নিজেরাই নিজেদের বিদ্যমান সমস্যা সমাধান করে স্বাবলম্বী হতে পারে ।  এক্ষেত্রে সমাজকর্মকে একটি সাহায্যকারী প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

৯. দক্ষতা সম্পন্ন পেশাদার সমাজকর্মী সৃষ্টি :

বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন ঘটাতে হলে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানেও দক্ষতাসম্পন্ন পেশাদার সমাজকর্মী থাকা দরকার । সমাজে বিদ্যমান সমস্যা সমাধান এবং উন্নয়নমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নে পেশাদার সমাজকর্মীর গুরুত্ব অনস্বীকার্য। আর এ দক্ষতাসম্পন্ন পেশাদার সমাজকর্মী সৃষ্টি করার জন্য সমাজকর্ম অধ্যয়ন করা আবশ্যক ।

১০. সার্বিক সামাজিক উন্নয়ন : 

সমাজকর্ম সার্বিক সামাজিক উন্নয়ন সাধনের লক্ষ্যে কাজ করে। এতে ছোট-বড়, ধনী-দরিদ্র, উঁচু-নিচুর কোনো ভেদাভেদ নেই। সমাজকর্মের মূল উদ্দেশ্য হলো সর্বসাধারণের কল্যাণের লক্ষ্যে বহুমুখী কর্মসূচি প্রণয়ন এবং ইহার বাস্তবায়ন। সমাজকর্ম অধ্যয়নের মাধ্যমেই এ ব্যাপারে যাবতীয় বিষয়াদি সম্পর্কে জানা যায়।

১১. সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণ : 

সামাজিক বৈষম্যের কারণে সমাজের সব মানুষ সমান সুযোগ সুবিধা উপভোগ করতে পারে না। তাদের মধ্যে উন্নয়নমূলক কাজ করার যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও কাজে অংশগ্রহণ করতে পারে না। ফলে তারা সামাজিক বৈষম্যের শিকার হয়।  এসব সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণের উপায় জানতে হলে সমাজকর্ম অধ্যয়ন করা দরকার। 

You May Also Like:  সমাজকর্মের বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক ব্যাখ্যা কর।

১২. সামাজিক নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন : 

বাংলাদেশ বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে আর্থসামাজিক রাজনৈতিক, ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য জনগণের জনকল্যাণকর সামাজিক নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করা খুবই দরকার। আর সমাজকর্ম এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট ধারণা দিয়ে থাকে ।

 উপসংহার : 

উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশে ১৯৪৭ সালে সমাজকর্মের সূচনা ঘটলেও এখনো পেশা হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। বর্তমানে পেশাগত মর্যাদা অর্জনে সমাজকর্ম অগ্রগতি লাভ করছে এবং সমাজকর্ম শিক্ষার বিস্তার ব্যাপকভাবে লাভ করেছে একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় এবং ভবিষ্যতে জোরালো কর্মতৎপরতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে সমাজকর্ম পেশাগত স্বীকৃতি লাভ করবে বলে আশা করা যায় ।


Post a Comment

Previous Post Next Post