পেশা কী? পেশার বৈশিষ্ট্য, পেশার উপাদান বর্ণনা কর। পেশা ও বৃত্তির মধ্যে পার্থক্য কী?
ভূমিকা :
আমরা সবাই কম বেশি পেশার সাথে পরিচিত। সাধারণ আমরা যে উপায় বা পন্থা অবলম্বন করে জীবিকানির্বাহ করি তাকে পেশা বলে। তবে এক্ষেত্রে বিশেষ যোগ্যতা, শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষতা ও কৌশল অর্জন, পেশাগত সংগঠন, নৈতিক মানদণ্ড, পেশাগত দায়িত্ব প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যর বিদ্যমান আবশ্যক। অন্যথায় তা বৃত্তি হিসেবে গণ্য হবে। কেননা পেশা বলতে নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য, দক্ষতা, নৈপুণ্য এবং বিশেষ জ্ঞানসম্পন্ন বৃত্তিকে বুঝায়। পেশা বলতে নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য, দক্ষতা, নৈপুণ্য এবং বিশেষ জ্ঞানসম্পন্ন বৃত্তিকে বুঝায় ।
পেশা :
পেশা বলতে ঐ সকল বৃত্তিকে বুঝায় যার জন্য ব্যক্তির বিশেষ প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানার্জন করতে হয়। আর এ জ্ঞান ব্যক্তি দীর্ঘ সময়ব্যাপী সুনির্দিষ্ট সিলেবাসের আলোকে সুনির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গ্রহণ করে থাকে । পেশা এর গুণগত দিকগুলো যেমন- সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ, গোপনীয়তা, শৃঙ্খলা, প্রশিক্ষণ সমাজকর্মকে বিশেষভাবে পেশার মর্যাদা প্রদান করেছে।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা :
কম্পটন ও গ্যালাওয়ে (Compton and Galaway) তাদের 'Social Work Practice' গ্রন্থে বলেন, “সুসংহত তত্ত্ব নির্ভর সুশৃঙ্খল জ্ঞান, মূল্যবোধ ও নৈতিকতার সাথে এসব জ্ঞান ও তত্ত্বের প্রয়োগের ওপর ভিত্তি করেই মূলত পেশা গড়ে ওঠে।”
এ. ই. বেন এর মতে, পেশা হলো অন্যকে নির্দেশনা, পরিচালনা বা উপদেশনা প্রদানের এমন একটি জীবিকা যার জন্য বিশেষ জ্ঞানার্জন করতে হয়।
সমাজবিজ্ঞান অভিধানের সংজ্ঞানুযায়ী, “পেশা হচ্ছে, নৈপুণ্য ভিত্তিক বুদ্ধিদীপ্ত কৌশল দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত বৃত্তি।
Dictonary of Social Welfare এর সংজ্ঞানুযায়ী, “পেশা হলো বিশেষায়িত জ্ঞান, শিক্ষা, দক্ষতা এবং কৌশল ভিত্তিক বৃত্তি, যা সাধারণ কার্যনীতি এক বিশেষ নৈতিক মানদণ্ড দ্বারা পরিচালিত হয়।
পেশার বৈশিষ্ট্য :
পেশার কতকগুলো স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা বৃত্তি থেকে পেশাকে পৃথক করেছে। পেশা ও বৃত্তি উভয়ের মাধ্যমে জীবনধারণ করা গেলেও এদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আর এ পার্থক্যগুলো হচ্ছে পেশার স্বতন্ত্র স্বীকৃতি। পেশার সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো--
১. বিশেষ জ্ঞান ও যোগ্যতা :
বিশেষ জ্ঞান ও যোগ্যতা পেশার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। প্রত্যেক পেশাদারকর্মীকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার আলোকে নির্দিষ্ট বা স্বাতন্ত্র্য প্রয়োগ কৌশল অর্জনের জন্য বিশেষ জ্ঞান ও যোগ্যতার অধিকারী হতে হয় যা পরবর্তীতে সমাজকর্মীর সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।
২. বিশেষ দক্ষতা ও নৈপুণ্য :
পেশাদার সমাজকর্মী তার পেশাগত ক্ষেত্রে শুধুমাত্র জ্ঞান এবং যোগ্যতা অর্জন করলেই হবে না বরং পেশাদার সমাজকর্মীকে তার পেশাগত ক্ষেত্রে বিশেষ দক্ষতা ও নৈপুণ্য অর্জন করতে হবে যা ব্যবহার করে পেশাদার ব্যক্তি সাহায্যকারী সমস্যা দ্রুত সামাধান করবে। পেশাদার সমাজকর্মী দক্ষতা ও নৈপুণ্যের ওপর ক্লায়েন্টের সমস্যা সমাধানের দ্রুততা নির্ভর করে আর ক্লায়েন্ট সব সময় তার সমস্যা দ্রুত সমাধান চায় ।
৩. পেশাগত সংগঠন :
প্রতিটি পেশারই পেশাগত সংগঠন থাকবে যে সংগঠন পেশার মানোন্নয়ন, পেশাদার সমাজকর্মীদের নিয়ন্ত্রণ ও স্বার্থরক্ষার্থে পরিচালিত হবে। পেশাগত সংগঠনের কিছু সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকে যা এ পেশার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মেনে চলতে বাধ্য থাকে এবং পেশাদার সমাজকর্মীদের মধ্যে শৃঙ্খলা আনয়ন করে।
৪. পেশাগত দায়িত্ব :
প্রতিটি পেশারই কিছু সুনির্দিষ্ট পেশাগত দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকে যেগুলো পেশাদার ব্যক্তিরা ক্লাইন্ট, সমাজ, পেশাগত সংগঠনের স্বার্থরক্ষার জন্য পালন করে থাকেন । তাছাড়া পেশার ব্যক্তিদের মধ্যে নিজ উদ্যোগে পেশাগত দায়িত্ব গ্রহণ ও পালন করার মানসিকতা থাকবে।
৫. জনকল্যাণমুখিতা :
পেশার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে জনকল্যাণমুখিতা। প্রতিটি পেশার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণের কল্যাণসাধন। জনকল্যাণ ব্যতীত কোনো বৃত্তি পেশার মর্যাদা লাভ করতে পারে না। কেননা প্রতিটি পেশাই জনকল্যাণের জন্য কাজ করে।
৬. পেশাগত মূল্যবোধ :
যেকোনো পেশারই তার পেশাগত ক্ষেত্রে কতকগুলো মূল্যবোধ থাকবে, যা ঐ পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিকে এ সকল মূল্যবোধের আলোকে পরিচালিত করবে। মূল্যবোধ হচ্ছে পেশার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। প্রত্যেকটি পেশারই পৃথক পৃথক মূল্যবোধ থাকে আর সেসব মূল্যবোধ পেশাদার ব্যক্তিরা মেনে চলে।
৭. সামাজিক স্বীকৃতি :
পেশার জন্য সামাজিক স্বীকৃতি আবশ্যক। রাষ্ট্র বা সামাজিক স্বীকৃতি ব্যতীত কোনো বৃত্তি কখনোই পেশার মর্যাদা লাভ করতে পারবে না। পেশা হিসেবে কোনো বৃত্তির স্বীকৃতির জন্য রাষ্ট্র বা সমাজ কর্তৃক আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক স্বীকৃতি আবশ্যক ।
৮. ঐতিহাসিক পটভূমি :
যেকোনো পেশা স্বল্প সময়ে পেশার মর্যাদা লাভ করে না, বরং প্রতিটি পেশার পিছনে থাকে সুদীর্ঘ ইতিহাস আর সুদীর্ঘ ইতিহাসের ধারাবাহিকতা অনুসরণ করে একটা পর্যায়ে পেশা তার মর্যাদা লাভ করে। যার পিছনে থাকে গৌরবান্বিত ইতিহাস ঐতিহ্য। তাছাড়া পেশার গুণগত মান অর্জন ও ধরে রাখার জন্য ইতিহাস সহযোগিতা করে থাকে ।
৯. জ্ঞানের বাস্তবমুখিতা :
প্রতিটি পেশার পেশাগত জ্ঞান হবে বাস্তবমুখী । পেশাগত জ্ঞানের সাথে বাস্তব জীবনের জ্ঞানের মিল থাকবে। জনকল্যাণ সাধনের জন্য পেশাদার ব্যক্তিকে বাস্তব জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে।
১০. নৈতিক মানদণ্ড :
পেশার কতকগুলো নৈতিক মানদণ্ড থাকবে যেগুলো পেশাদার ব্যক্তিরা মেনে চলবে। পেশার বিকাশ ও মর্যাদার সাথে নৈতিক মানদণ্ডের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। নৈতিক মানদণ্ড পেশার গুণগত মানের উন্নয়ন সাধন করে।
১১. ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধ ও জবাবদিহিতা :
পেশাদার সমাজকর্মীদের পেশাগত বিষয়ে দায়িত্ববোধ থাকবে। তারা নিজ উদ্যোগে পেশাগত দায়িত্ব পালন করবে। তাছাড়া পেশাদার সমাজকর্মী তার কাজের জন্য পেশাগত সংগঠনের নিকট জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে। তাই ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধ ও জবাবদিহিতা পেশার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ।
১২. পেশাগত কর্তৃত্ব :
পেশাদার সমাজকর্মী তার পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ক্লায়েন্টের ওপর কর্তৃত্ব করবে। আর এ কর্তৃত্ব পেশাগতভাবে স্বীকৃত। ক্লায়েন্টের ওপর কর্তৃত্ব ক্লায়েন্টকে ইতিবাচক দিকে পরিচালনার জন্য পেশাদার ব্যক্তি করে থাকে।
১৩. উপার্জনশীলতা :
পেশার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে উপার্জনশীলতা। পেশাদার সমাজকর্মী তার পেশা চর্চার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতে সক্ষম হবে। সেবা গ্রহণকারী ব্যক্তি অর্থের বিনিময়ে পেশাদার সমাজকর্মীকে পারিশ্রমিক প্রদান করবে।
উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সমাজকর্মের একটি অপরিহার্য প্রত্যয় হচ্ছে পেশা। সাধারণত উপযুক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো যদি কোনো বৃত্তিতে বিদ্যমান থাকে তবে তাকে পেশা বলা যাবে। পেশার এই বৈশিষ্ট্যগুলোই বৃত্তিকে পেশাদারী মর্যদায় রূপান্তর করে। অর্থাৎ, সকল পেশার জন্য বৈশিষ্ট্য একান্ত আবশ্যক। অন্যথায় কোনো বৃত্তিতে এসব বৈশিষ্ট্য না থাকলে তাকে পেশা বলা যাবে না।
পেশার উপাদান
পেশার উপাদান : নিম্নে পেশার উপাদানগুলো আলোচনা করা হলো-
১. পেশাদার কর্মী :
পেশার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে পেশাদার কর্মী। পেশাদার কর্মী ব্যতিরেকে কখনো পেশা বিকাশ লাভ করতে পারে না। যেকোনো পেশার বিকাশের জন্য সেই পেশার সংশ্লিষ্ট কর্মী আবশ্যক। পেশাদার কর্মী গড়ে তুলতে পারলে পেশা তার লক্ষ্য পূরণে সক্ষম হবে।
২. পেশাগত সংগঠন :
পেশাদার ব্যক্তিদের পেশাগত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পেশাগত সংগঠন থাকবে। পেশাগত সংগঠনের মাধ্যমে পেশাদার ব্যক্তিরা যেমন একদিকে নিয়ন্ত্রিত হয় ঠিক তেমনি পেশাগত সংগঠন পেশাদার ব্যক্তিদের জীবনমান, উন্নয়নের জন্যও কাজ করে থাকে ।
৩. পেশাগত মূল্যবোধ :
প্রত্যেক পেশার কতকগুলো স্বাতন্ত্র্য মূল্যবোধ থাকবে যেগুলো পেশাদার ব্যক্তিরা পেশাগত ক্ষেত্রে চর্চা করবে। তাই পেশাগত মূল্যবোধ পেশার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত।
৪. সুনির্দিষ্ট নীতিমালা :
প্রতিটি পেশার সুনির্দিষ্ট নীতিমালার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তাই নীতিমালা পেশার গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণের মাধ্যমে পেশার বিকাশ ও উন্নয়ন সাধিত হয়।
৫. নিরপেক্ষতা :
নিরপেক্ষতা বজায় রাখা পেশাদার ব্যক্তির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। পেশাদার ব্যক্তি তার পেশাগত ক্ষেত্রে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবে। পেশাদার ব্যক্তি স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে ক্লাইন্টের সমস্ত গোপনীয়তা রক্ষা করে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবে।
৬. নিয়মকানুন :
সকল পেশারই নিজস্ব নিয়মকানুন থাকে। এসব নিয়মকানুন পেশাদার ব্যক্তিরা পেশাগত চর্চার সময় মেনে চলে যা পেশা শৃঙ্খলা বজায় রাখে। তাই প্রত্যেক পেশাদার ব্যক্তিকে তার পেশার সংশ্লিষ্ট নিময়কানুনগুলো জেনে নিতে হয়।
৭. পেশাজীবীর শ্রেণিভুক্ততা :
প্রত্যেক পেশাজীবীরাই তাদের পেশার শ্রেণিভুক্ত হন। তাদের সহজে শ্রেণিভুক্ত করার মাধ্যমে এক পেশা থেকে অন্য পেশাকে আলাদা করে পরিমাপ করা যায়। আর পেশার মর্যাদাও পেশাজীবীদের শ্রেণিভুক্তকরণে ভূমিকা রাখে। তাই পেশাজীবীদের শ্রেণিভুক্ত করা পেশার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ।
৮.পেশা অপরিবর্তনীয় :
পেশার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে পেশা অপরিবর্তনীয়। পেশাদার ব্যক্তি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান অর্জন করে পেশার স্বীকৃতি পান বলে পেশা অপরিবর্তনীয়।
৯. সম্পর্কিত বিষয়ে জ্ঞানার্জন :
সম্পর্কিত বিষয়ে জ্ঞানার্জন পেশার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পেশাদার ব্যক্তি তার পেশাগত বিষয়ে জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি পেশার সাথে সম্পর্কিত বিষয়ে জ্ঞানার্জন করতে হয়।
You
May also like: বাংলাদেশ সরকারের শিশুকল্যাণ কার্যক্রম আলোচনা কর।
পেশা ও বৃত্তির মধ্যে পার্থক্য কী?
পেশা বলতে নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য, দক্ষতা, নৈপুণ্য এবং বিশেষ জ্ঞানসম্পন্ন বৃত্তিকে বুঝায়। সময়ের পরিবর্তনে শর্ত পূরণের মাধ্যমে বৃত্তি পেশায় রূপান্তরিত হয়। পেশা ও বৃত্তির মধ্যে গুণগত পার্থক্য রয়েছে। বৃত্তিধারী ব্যক্তিকে তার জীবিকানির্বাহের জন্য বিশেষ জ্ঞান অর্জন করতে হয় না। তবে পেশাদার ব্যক্তিকে তার পেশা চর্চার জন্য বিশেষ জ্ঞানার্জন করতে হয়।
পেশা ও বৃত্তির মধ্যে পার্থক্য :
পেশা ও বৃত্তি জীবিকানির্বাহের উপায় । নিম্নে পেশা ও বৃত্তির মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করা হলো—
১. পেশা হলো অন্যকে উপদেশ নির্দেশনা প্রদানের এমন এক জীবিকা যার জন্য ব্যক্তিকে বিশেষ জ্ঞানার্জন করতে হয়। পক্ষান্তরে, বৃত্তিধারী ব্যক্তির কোনো একক বিষয়ে বিশেষ জ্ঞানার্জনের প্রয়োজন নেই।
২. পেশাদার ব্যক্তিকে তার পেশাগত নৈপুণ্য ও দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় । যেমন- ডাক্তার, উকিল। পক্ষান্তরে, বৃত্তিধারী ব্যক্তির এ ধরনের কোনো তাত্ত্বিক, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় না। যেমন— ভিক্ষুক, কুলি।
৩. পেশাদার ব্যক্তিরা যে ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করে তাকে পরবর্তীতে সেই ক্ষেত্রেই কাজ করতে হয়। পক্ষান্তরে, নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে জ্ঞান, দক্ষতা অর্জন করেও অন্য কোনো বৃত্তিতে কাজ করা যায় ।
৪. প্রত্যেক পেশারই নিজস্ব জ্ঞানভাণ্ডার রয়েছে যে জ্ঞান পেশাদার ব্যক্তিরা পেশাগত কাজে ব্যবহার করে। পক্ষান্তরে, বৃত্তির জন্য বৃত্তিধারী ব্যক্তিকে কোনো সুনির্দিষ্ট জ্ঞানার্জন করতে হয় না বলে এর নিজস্ব জ্ঞানভাণ্ডার নেই।
৫. পেশার কাজ অবশ্যই প্রযুক্তিসম্পন্ন ও বৈজ্ঞানিক হবে। পক্ষান্তরে, বৃত্তির কাজ প্রযুক্তিসম্পন্ন হতেও পারে আবার নাও হতে পারে ।
৬. কোনো বৃত্তি তখনই পেশার মর্যাদা লাভ করে যখন সে পেশার সকল শর্ত পূরণ করে। পক্ষান্তরে, বৃত্তির ক্ষেত্রে শর্ত পূরণ আবশ্যক নয় ।
৭. পেশাদার ব্যক্তিদের পেশার মানোন্নয়ন ও পেশাগত জ্ঞান চর্চার জন্য পেশাগত সংগঠন রয়েছে। পক্ষান্তরে, বৃত্তিধারী ব্যক্তিদের এ ধরনের কোনো সংগঠন নেই, থাকলেও তা রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত নয় ।
৮. পেশা অপরিবর্তনশীল। ব্যক্তি যে পেশায় জ্ঞান অর্জন করবে সেই পেশাই তাকে চর্চা করতে হবে। পক্ষান্তরে, বৃত্তি পরিবর্তনশীল। যেকোনো ব্যক্তি যেকোনো সময় যেকোনো বৃত্তি গ্রহণ ও পরিবর্তন করতে পারে ।
৯. পেশাদার ব্যক্তিদের নিজ নিজ পেশা চর্চার ক্ষেত্রে দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং জবাবদিহিতা রয়েছে। পক্ষান্তরে, বৃত্তিধারী ব্যক্তিদের কোনো দায়িত্ব ও কর্তব্য বা জবাবদিহিতা নেই ।
১০. পেশাদার ব্যক্তিরা কতকগুলো মূল্যবোধ ও নীতিমালা অনুসরণ করে পেশার চর্চা করে। পক্ষান্তরে, বৃত্তিধারী ব্যক্তিদের কোনো মূল্যবোধ বা নীতিমালা অনুসরণ করতে হয় না।
১১. পেশার উদ্দেশ্য হচ্ছে জনকল্যাণসাধন। পক্ষান্তরে, বৃত্তির সাথে জনকল্যাণের সম্পর্ক নাও থাকতে পারে ।
১২. পেশাদার ব্যক্তির পেশা অবশ্যই রাষ্ট্র ও সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত হবে। পক্ষান্তরে, বৃত্তির কাজ সমাজ ও রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত নয় ।
১৩. পেশাদার ব্যক্তিদের মধ্যে সেবামূলক মনোভাব থাকবে। যা পেশাদার ব্যক্তিদের পেশাগত কাজ পরিচালনার জন্য অত্যাবশ্যকীয়। পক্ষান্তরে, বৃত্তিধারী ব্যক্তিদের সেবামূলক মনোভাব নাও থাকতে পারে।
১৪. পেশা একটি বৃত্তি। পক্ষান্তরে, বৃত্তি পেশা নয় ।
You
May also like: কল্যাণরাষ্ট্র কী? কল্যাণরাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর।
উপসংহার :
পরিশেষে
বলা যায় যে, পেশা ও বৃত্তি উভয়েই জীবিকানির্বাহের অন্যতম মাধ্যম। তবে প্রকৃতিগত
দিক থেকে উভয়ের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। উপর্যুক্ত পার্থক্যগুলো বৃত্তি
থেকে পেশাকে পৃথক করেছে। তবে পেশা ও বৃত্তির মধ্যে পার্থক্য থাকলেও উভয় পদ্ধতিতে
ব্যক্তি জীবিকানির্বাহ করতে পারে।