সমাজকর্মের বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক ব্যাখ্যা কর।

সমাজকর্মের বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক ব্যাখ্যা কর।

সমাজকর্মের বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক  ব্যাখ্যা কর।

ভূমিকা:

কোনো লক্ষার্জনের জন্য কতিপয় সুশৃঙ্খল ও ধারাবাহিক কর্মপদ্ধতি ও কৌশলের সমষ্টিই পদ্ধতি। অর্থাৎ পদ্ধতি অনুসরণ করার মাধ্যমে সুপরিকল্পিত উপায়ে কতকগুলো কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। যেখানে সীমিত সম্পদের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করে স্বল্প সময়ে ও সহজে লক্ষ্য অর্জন সহজ হয়। বর্তমান বিশ্বে সমাজকর্ম একটি পদ্ধতিনির্ভর, বিজ্ঞানভিত্তিক ও সমস্যা সমাধানকারী প্রক্রিয়া। পেশাদার সমাজকর্মী এ পদ্ধতিসমূহ অনুশীলনের মাধ্যমে সাহায্যার্থীকে সহায়তা প্রদান করে থাকেন।

 

সমাজকর্মের বিভিন্ন পদ্ধতিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক:

পেশাগত সমাজকর্মের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ব্যক্তির সক্ষমতার বিকাশ ঘটিয়ে ব্যক্তির সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতার বিকাশ ঘটানো। তিনটি ভিন্ন আঙ্গিকে ব্যক্তিকে সক্ষম করার জন্য পেশাগত সমাজকর্মের রয়েছে পৃথক পদ্ধতি এবং ব্যক্তির পূর্ণাঙ্গ বিকাশের জন্য এ পদ্ধতিগুলো একসাথে প্রয়োগ করা হয়। তাই বলা যায় পেশাগত সমাজকর্মের পদ্ধতিগুলো পরস্পর আন্তঃসম্পর্কিত। নিম্নে সমাজকর্মের বিভিন্ন পদ্ধতিগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক আলোচনা করা হলো-

১. পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতানির্ভর সম্পর্ক:

আধুনিক সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতি ও সহায়ক পদ্ধতি অনুশীলন করার সব প্রক্রিয়া ও কৌশল পেশাগত সমাজকর্মের তাত্ত্বিক জ্ঞান ও দক্ষতানির্ভর হয়ে থাকে। অর্থাৎ সব পদ্ধতির প্রাসঙ্গিক জ্ঞান ও ধারণা পেশাগত সমাজকর্মের আদর্শ, মূল্যবোধ ও নীতিমালা থেকে উৎসারিত।যেমন- পেশাগত সমাজকর্মের মূল্যবোধ মৌলিক পদ্ধতিগুলোর জন্য যেমনভাবে প্রযোজ্য, সহায়ক পদ্ধতিগুলোর জন্যও একইভাবে প্রযোজ্য। মোটকথা এক ও অভিন্ন উৎস থেকে জ্ঞান আহরণ করার ভিত্তিতে সমাজকর্মের পদ্ধতিসমূহের মাঝে এক গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান।

 

২. সংগঠিত ও প্রাতিষ্ঠানিক সেবা:

একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা এজেন্সির প্রতিনিধি হয়ে সমাজকর্মী পেশাগত সমাজকর্ম অনুশীলন করে থাকেন। এ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব মূল্যবোধ অনুযায়ী ব্যক্তি সমাজকর্ম, দল সমাজকর্ম, সমষ্টি সংগঠন ও সমষ্টি উন্নয়ন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। সাহায্যার্থীর সমস্যার প্রকৃতি অনুযায়ী ব্যবহার করা মৌলিক পদ্ধতিসমূহের প্রয়োগ প্রচেষ্টা সুনির্দিষ্ট ও লক্ষ্যমুখী করার জন্য প্রয়োজন সামাজিক প্রশাসন। 

এক্ষেত্রে সেবা ব্যবস্থার বাস্তবতা তুলে ধরে সমাধান কৌশলকে আরও লক্ষামুখী, যুগোপযোগী করার জন্য সামাজিক গবেষণা প্রয়োগ করা হয়। এছাড়াও সেবা ব্যবস্থা সমষ্টিতে প্রয়োগ করার জন্য সবার সচেতনতার বিকাশ ঘটিয়ে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য পেশাগত সমাজকর্মের আরেক সাহায্যকারী পদ্ধতি সামাজিক কার্যক্রমে প্রয়োগ করা হয়। সুতরাং বলা যায় পেশাগত সমাজকর্মের কার্যকর অনুশীলন নিশ্চিত করার জন্য সব পদ্ধতিই যুগপৎভাবে প্রয়োগ করা হয়।


৩. সমস্যা সমাধান কৌশল বা প্রক্রিয়া:

পেশাগত সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতিসমূহের সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ায় সমস্যা সম্পর্কে তথ্যসংগ্রহ, সমস্যা নির্ণয় ও সমাধান ব্যবস্থা এ তিনটি ধাপের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। তাই বলা যায় সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ার দিক দিয়ে সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতিগুলো পরস্পর আন্তঃসম্পর্কিত। আবার এ পদ্ধতিসমূহের শৃঙ্খলিত ও ধারাবাহিক প্রয়োগ নিশ্চিত করার জন্য সমাজকল্যাণ প্রশাসন সেবা ব্যবস্থার কার্যকারিতা যাচাইয়ের জন্য সামাজিক গবেষণা এবং সেবা কৌশলের প্রয়োগের জন্য অনুকূল সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সামাজিক কার্যক্রম ব্যবহার করা হয়। সুতরাং সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ার দিক দিয়ে পেশাগত সমাজকর্মের পদ্ধতিগুলো পরস্পর আন্তঃসম্পর্কিত।


৪. অন্তর্নিহিত সম্পর্ক:

পেশাগত সমাজকর্মের প্রতিটি পদ্ধতিই সাধারণ নীতিমালা, আদর্শ, মূল্যবোধ, লক্ষ্য ও উপাদান দ্বারা পরিচালিত হয়। সমাজকর্মের জ্ঞান ব্যবহার করে প্রতিটি পদ্ধতিই সেবা প্রদান করে থাকে। সমাজকর্মের পদ্ধতিগুলো পেশাগত শিক্ষা ও দক্ষতায় অভিজ্ঞ সমাজকর্মীর দ্বারা অনুশীলন করা হয়। তাই বলা যায়, পেশাগত তাত্ত্বিক বিষয়কে কেন্দ্র করে সমাজকর্মের পদ্ধতিগুলো পরস্পর আন্তঃসম্পর্কিত।


৫. প্রয়োগ ক্ষেত্রগত সম্পর্ক:

সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি কোনো না কোনো দলের সদস্য এবং অবশ্যই সে একটি সমষ্টিতে বসবাস করে। তাই ব্যক্তি সমাজকর্ম প্রয়োগ করার মাধ্যমে ব্যক্তির সক্ষমতার বিকাশ সাধন করে তাকে পুনর্বাসিত করতে হলে তাকে দলীয় জীবন ও সমষ্টিগত জীবনের উপযোগী আচরণ শিখতে হবে। আর এজন্য দল সমাজকর্ম ও সমষ্টি সমাজকর্ম পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়। তাই ব্যক্তির পূর্ণ সক্ষমতার বিকাশের জন্য পেশাগত সমাজকর্মের মৌলিক ও সহায়ক পদ্ধতিগুলো পারস্পরিক আন্তঃসম্পর্কের ভিত্তিতে প্রয়োগ করা হয়।


৬. নীতিমালাগত সম্পর্ক :

পেশাগত সমাজকর্মের সাধারণ নীতিমালাগুলো হচ্ছে ব্যক্তির অন্তর্নিহিত মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি, সামাজিক দায়িত্ব, আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার, সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি, সবার সমান সুযোগ ইত্যাদি। এসব মূল্যবোধ ও নীতিমালাগুলো পেশাগত সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতি চর্চা করার ক্ষেত্রে সরাসরি প্রয়োগ করা হয়। সুতরাং মূল্যবোধ ও নীতিগত দিক থেকে পেশাগত সমাজকর্মের পদ্ধতিগুলো পারস্পরিক আন্তঃসম্পর্কিত।


৭. সমস্যা সমাধানগত দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে:

ব্যক্তি সমাজকর্ম, দল সমাজকর্ম, সমষ্টি সমাজকর্ম সমস্যার স্থায়ী সমাধান দেওয়ার জন্য প্রতিকার, প্রতিরোধ ও উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। তাই বলা যায়, সমস্যা সমাধানের দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে পেশাগত সমাজকর্মের পদ্ধতিসমূহের মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান।

উপসংহার :

উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পেশাগত সমাজকর্মীরা সাহায্যার্থীদের সমস্যা সমাধানে বিশেষ ধরনের হস্তক্ষেপ কৌশল হচ্ছে সমাজকর্ম পদ্ধতি। পেশাগত সমাজকর্মের লক্ষ্য অর্জনের জন্য মৌলিক পদ্ধতি ও সহায়ক পদ্ধতি অনুশীলন করা হয়। বিচিত্রান্ত বহুমুখী সমস্যা মোকাবিলায় পেশাগত সমাজকর্ম অনুশীলন করা হয়। সাহায্যার্থীকে পুনর্বাসিত করার জন্য পরস্পর আন্তঃসম্পর্কিত এ পদ্ধতিগুলো যুগপৎ অনুশীলন করা হয়।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post