শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ ২০২৪

 

শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ

শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ

প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে বর্তমান সরকারের উদ্যোগ

বাংলাদেশের সংবিধান নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত জাতি, বর্ণ, ধর্ম, লিঙ্গ নির্বিশেষে সবার জন্য অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদান নিশ্চিতকরণের অধিকার দিয়েছে। সে প্রেক্ষিতে সরকার প্রাথমিক শিক্ষার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রাথমিক শিক্ষা খাতে মোট ২৪,০৪১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। 

 

এছাড়া, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (SDG) এর ৪নং লক্ষ্যমাত্রায় সকলের জন্য অন্তর্ভূক্তিমূলক সমতাভিত্তিক গুনগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষালাভের সুযোগ সৃষ্টির কথা ব হয়েছে। এ লক্ষমাত্রার আলোকে ২০৩০ সালের মধ্যে সকল শিশুর জন্য মানসম্মত প্রাকপ্রা শিক্ষা নিশ্চিতকরণের সূচক নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া, বিদ্যালয় গমনোপযোগী সকল শিশুকে ২০৩০ সালের মধ্যে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান নিশ্চিত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। 


এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সরকার উপবৃত্তি প্রকল্প, চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪), রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন (রস্ক) প্রকল্প, দারিদ্রপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচি, চাহিদাভিত্তিক সরকারি ও নতুন জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্প (১ম পর্যায়) এবং মৌলিক স্বাক্ষরতা প্রকল্প (৬৪ জেলা) সহ আরো কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।


১৯৯১ সালে বাংলাদেশে মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ৪৯,৫৩৯টি। বর্তমানে এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাড়িয়েছে ১,২৯,২৫৮টি (ব্র্যাক সেন্টার, রস্ক সেন্টার, বিভিন্ন এনজিও স্কুল, শিশু কল্যাণ ও মাদ্রাসা মসজিদ ভিত্তিক কেন্দ্রকিওমী মাদ্রাসাসহ মোট ২৫ ধরনের বিদ্যালয়)। প্রাথমিক শিক্ষার ছাত্রী ভর্তির সংখ্যা ও হার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রী ভর্তির হার বেশী। ১৯৯১ সালে ছাত্রছাত্রীর ভর্তির অনুপাত ছিল ৫৫:৪৫। বর্তমানে তা ৪৯.২৫:৫০-৭৫-এ উন্নীত হয়েছে। 


আর্থ-সামাজিক নানাবিধ কারণে অনেক শিক্ষার্থীই প্রার্থমিক পর্যায়ের শিক্ষা শেষ না করেই বিদ্যালয় ত্যাগ করতে দেখা যায়। সরকারের নেয়া নানা বাস্তবমুখী কর্মসুচির ফলে ছাত্র-ছাত্রী ঝরে পড়ার হার ক্রমাগত হ্রাস  পাচ্ছে। 


শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ

প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে বর্তমান সরকারের উদ্যোগ ও গণশিক্ষা খাতে গৃহীত উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম:


প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ৪র্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী ছাত্রহাত্রীদের ভর্তি ও উপস্থিতির হার বৃদ্ধি, ভর্তিকৃত ছাত্রছাত্রীদের ঝরে পড়া রোধ এবং স্কুল সংযোগ ঘন্টা বৃদ্ধির বিষয়ে অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে।


বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মহিলা ও পুরুষ শিক্ষকের অনুপাত ৬০: ৪০ অনুসরণ করা হয়। বর্তমানে মহিলা ও পুরুষ শিক্ষকের আনুপাতিক হার হলো 64.52%।


প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে স্কুল লেভেল ইমপ্রুভমেন্ট প্ল্যান (SLIP) ও উপজেলা এডুকেশন প্ল্যান (UPEP) পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।


আনুষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো গঠন করা হয়েছে। এছাড়া, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাকে আরও গতিশীল, কার্যকর ও কর্মমুখী করার প্রয়াসে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষানীতি অনুমোদন এবং উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন-২০১৪' প্রণয়ন করা হয়েছে।


• উপবৃত্তি এবং সুবিধাভোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমানে বৃদ্ধি করা হয়েছে। একইসাথে সুবিধাভোগীর সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে মোট ১.৪ কোটি শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে।


ভর্তির হার বৃদ্ধি এবং শিক্ষার্থীদেরকে স্কুলে ধরে রাখার লক্ষ্যে স্কুল ফিডিং কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ১০৪টি উপজেলার ২৯.০৮ লক্ষ শিশুদের স্কুল খোলার দিন জনপ্রতি ৭৫ গ্রাম ফর্টিফাইড বিস্কুট বিতরণের কার্যক্রম চলমান আছে।


বিদ্যালয় বহির্ভূত এবং ঝরে পড়া ৮-১৪ বছর বয়সী প্রায় ১০ লক্ষ সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে পিইডিপি-৪ এর আওতায় সেকেন্ড চান্স এডুকেশন প্রোগ্রাম বাস্তবায়িত হয়েছে।


প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি-৪,' পিটিআই বিহীন নির্বাচিত ১২টি জেলা সদত্রে পিটিআই স্থাপন, চাহিদাভিত্তিক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্প (১ম পর্যায়)' প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়িত হচ্ছে। এছাড়াও দেশের সকল উপজেলাসমূহকে মৌলিক শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় আনয়নের লক্ষ্যে মৌলিক সাক্ষরতা (৬৪ জেলা)' প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে।

 

২৬,১৯৩টি রেজিষ্টার্ড বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ এবং এসব বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের সরকারিকরণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সকল বিধিবিধান অনুসরণপূর্বক ২৬ ১৮৫টি বিদ্যালয় জাতীয়করণের সরকারী আদেশ জারি করা হয়েছে। জাতীয়করণকৃত বিদ্যালয়ের প্রতিটিতে প্রধান শিক্ষকসহ ৫টি করে পদ সৃজন করা হয়েছে। এছাড়াও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বিবেচনায় আরও ২১১টি বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়েছে।


জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০' অনুসরণে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত উন্নীতকরণের লক্ষ্যে এ পর্যন্ত ৭৬৪টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেনী খোলা হয়েছে।


প্রাথমিক অবকাঠামো সুবিধাদি

শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ

প্রাথমিক শিক্ষার গুনগতমান উন্নয়নে অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবহরে ফেব্রুয়ারী ২০২০ পর্যন্ত নিম্নোক্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছেঃ


চাহিদাভিত্তিক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্প (১ম পর্যায়) এর আওতায় ২০১৯-২০ অর্থ বছর পর্যন্ত মোট ৮,১৫০টি বিদ্যালয় উন্নয়নে জন্য অনুমোদিত হয়েছে।


চাহিদাভিত্তিক নতুন জাতীয়করণকৃত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্প (১ম পর্যায়) এর আওতায় চলতি অর্থবছর পর্যন্ত মোট ৬,৭২০টি বিদ্যালয় উন্নয়নের জন্য অনুমািেদত হয়েছে।


সমাপনী পরীক্ষা ও বৃত্তি প্রদান


২০০৯ সাল থেকে সারাদেশে অভিন্ন প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা এবং এবতেদায়ী মাদ্রাসা সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২০১৯ সালের পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় প্রায় ২৪.৫৪ লক্ষ পরীক্ষার্থী অংশ নেয় এবং ৯৫.৫০ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাশ করে। অনাদিকে, এবতেদায়ী মাদ্রাসা সমাপনী পরীক্ষায় অবতীর্ণ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২.৭৪ লক্ষ এবং এ পরীক্ষায় ৯৭.৬৯ শতাংশ বর্তমানে পৃথকভাবে বৃত্তি পরীক্ষা গ্রহণ না করে সমাপনী পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। বৃত্তির সংখ্যাও প্রতিবছর বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ২০১৯ সালে মোট ৮২,৫০০ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হয় এর মধ্যে ট্যালেন্টপুল প্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৩৩,০০০ সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছে মোট ৪৯,৫০০ শিক্ষার্থী।

এছাড়াও, দেশের শ্রমজীবী শিশুদের জন্য শহর, নগরাঞ্চল ও গ্রামাঞ্চলে প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। শ্রমজীবী মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়া অব্যাহত রাখার জনা শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে বিশেষ বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে।


প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য উপবৃত্তি

শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ

দরিদ্র পরিবারের পিতা-মাতাগণ তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে না পাঠিয়ে উপার্জনের জন্য বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত করে অথবা পিতা-মাতার পেশায় সহযোগী হিসেবে নিয়োজিত রাখে। বহু শিশু প্রাথমিক শিক্ষার পাঁচ বছর মেয়াদী চক্র শেষ না করেই বিদ্যালয় ত্যাগ করে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ৬৯২৩.০৫ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে 'প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি' ৩য় পর্যায়-প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। সারা দেশে মোট ১.৪ কোটি শিক্ষার্থীকে প্রকল্পের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। ১ম-৫ম শ্রেণী পর্যন্ত এই বৃষ্টির হার এক, দুই, তিন ও চার সন্তানের জন্য যথাক্রমে ১০০ টাকা, ২০০টাকা, ২৫০ টাকা এবং ৩০০ টাকা। অন্যদিকে ৬ষ্ঠ-৮ম শ্রেণী পর্যন্ত এক  সন্তানের জন্য ১২৫ টাকা, দুই সন্তানের জন্য ২৫০ টাকা, তিন সন্তানে জন্য ৩৫০ টাকা এবং চার সন্তানের জন্য মাসিক ৪০০ টাকা হারে উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে।

 

বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ


প্রতিবছর সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করছে। বছরের প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্য বই তুলে দেয়া হচ্ছে। ২০২০ শিক্ষাবর্ষে ৯.৮৫ কোটি বই বিতরণ করা হয়েছে। ২০২০ সালে প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য মোট ৩৩.৩৭ লক্ষ বই এবং প্রায় ৩৩.৩৭ লক্ষ আনুষঙ্গিক শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। বইয়ের প্রতি শিশুদের মনোযোগ আকর্ষনের জন্য চার রংয়ের নতুন বই সরবরাহ করা হচ্ছে। ২০২০ সালের প্রথমে প্রাক- প্রাথমিক পর্যায়ে সারা দেশে ৫টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর (চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো, সাদরী) শিক্ষার্থীদের মাঝে (১ম - ৩য় শ্রেণীর জন্য) প্রায় ২.৩০ লক্ষ বই বিতরণ করা হয়েছে।

 

সংযোগ ঘন্টা বুদ্ধি

 

ইতঃপূর্বে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির জন্য বাৎসরিক সংযোগ সময় ছিল ৫৯৫ ঘণ্টা এবং তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির জন্য ছিল ৮৩৩ ঘণ্টা । পরবর্তীতে প্রায় ৪,০০০ দুই শিফটের বিদ্যালয়কে এক শিফটে রুপান্তরিত করা হয়। এর ফলে এক শিফটের বিদ্যালয়ে প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণিতে বার্ষিক সংযোগ সময় বৃদ্ধি পেয়ে ৯১৯ ঘণ্টা এবং তৃতীয়-পঞ্চম শ্রেণির ক্ষেত্রে ১,২৩১ ঘন্টা হয়েছে। দুই শিফটের বিদ্যালয়ে প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণি এবং তৃতীয়-পঞ্চম শ্রেণির ক্ষেত্রে বার্ষিক সংযোগ সময় যথাক্রমে ৬০০ ঘণ্টা এবং ৭৮৯ ঘণ্টায় দাঁড়িয়েছে।

 

শিক্ষক নিয়োগ

শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ

মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শূন্যপদে ও সৃষ্টপদে শিক্ষক নিয়োগের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শূন্যপদে ৬০ শতাংশ শিক্ষিকা নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলে বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষিকা ও শিক্ষকের আনুপাতিক হার প্রায় ৬৪.৫২ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৮,১৪৭ জন সহকারী শিক্ষক। আরো প্রায় ২৬,৩৬৬টি সহকারী শিক্ষকের পদ সৃজন করা হয়েছে।

 

বিদ্যালয় বহির্ভূত ও কর্মজীবী শিশুদের জন্য কার্যক্রম


স্কুল বহির্ভূত, ঝরে পড়া এবং শহরের কর্মজীবী শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে সরকার বহুমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। যেমন: 'রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন (২য় পর্যায়)' প্রকল্প, মৌলিক  সাক্ষরতা প্রকল্প (৬৪ জেলা) ও সেকেন্ড চান্স এডুকেশন প্রকল্প ইত্যাদি।


মাধ্যমিক শিক্ষা

শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ

সকলের জন্য সমন্বিত ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করে একবিংশ শতাব্দির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপযোগী সুশিক্ষিত, আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন মানবসম্পদ গড়ে তুলতে সরকার বিগত মেয়াদে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০' প্রণয়ন করেছে। এ শিক্ষানীতি অনুসরণে শিক্ষার্থীদের মধে স্বদেশ প্রেম, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ, সামাজিক সচেতনতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ তৈরির জন্য ধর্ম এবং নৈতিক শিক্ষা, দুর্নীতি, জঙ্গীবাদ, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, নারী নির্যাতন, যৌন হয়রানি, এইডস ও এইচ.আই.ভি, অটিজম, মানবাধিকার, নারী ও শিশু পাচার, আইসিটি ইত্যাদি বিষয়াদি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

 

ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে সবার শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি, ঝরে পড়া রোধ, শিক্ষাকে মানসম্মত, সর্বব্যাপী ও ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের বিনামুল্যে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করা হচ্ছে। বছরের প্রথম দিন পাঠ্যপুস্তক উৎসব দিবস উদযাপন করা হয়। এদিন সমগ্র বাংলাদেশে একযোগে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মাঝে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়। এ কার্যক্রমের আওতায় ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ৩৫ কোটি ৩৯ লাখ পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। 


২০১৭ শিক্ষাবর্ষে সর্বপ্রথম বিনামূল্যে ব্রেইল পদ্ধতির পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করা হয়। এ কার্যক্রমের আওতায় ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে মোট ৭৫০ জন শিক্ষার্থীর মাঝে মোট ৯,৫০৪টি ব্রেইল পদ্ধতির পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়াও, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিক স্তরের পাঁচটি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর (চাকমা, মারমা, সাদরি, ত্রিপুরা ও গারো) ৯৭,৫৭২ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ২,৩০,১০৩টি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।

 

নারী শিক্ষা বিস্তার এবং ঝরে পড়া রোধ করার লক্ষ্যে বিভিন্ন উপবৃত্তি প্রকল্পের মাধ্যমে সভা সমাবেশ, সচেতনতামূলক কর্মশালা এবং মা সমাবেশের আয়োজন করা হয়ে থাকে। সেকেন্ডারি এডুকেশন এন্ড অ্যাকসেস এনহেন্সমেন্ট প্রজেক্ট (সেকায়েপ)' প্রকল্পের মাধ্যমে নিবাচিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ক্লাস (ইংরেজি, গণিত এবং বিজ্ঞান) গ্রহণ কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দক্ষ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।


কারিগরি শিক্ষা


কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে দেশের যুবশক্তিকে উৎপাদনশীল ও দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। এ লক্ষ্যে বৃত্তিমূলক ও কারিগরী শিক্ষার প্রসারের জন্য মাদ্রাসাসহ মাধ্যমিক পর্যায়ে ভোকেশনাল কোর্স চালুকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কারিগরি শিক্ষাক্ষেত্রে গত ১০ বছরে ভর্তির হারে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। ২০১৯ সালে কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার শতকরা ১৬.০৫ শতাংশ। 


সে ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের মধ্যে কারিগরি শিক্ষায় এনরোলমেন্ট শতকরা ২০ ভাগে উন্নতির লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্প/গোগ্রাম নেয়া হয়েছে। কারিগরি শিক্ষার সকল ক্ষেত্রে ন্যাশনাল টেকনিক্যাল এন্ড ভোকেশনাল কোয়ালিফিকেশনস ফ্রেমওয়ার্ক (এনটিভিকিউএফ) বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। SDG ও ৭ম পঞ্চ-বার্ষিক এর সাথে সমন্বয় করে সমন্বিত TVET Action Plan তৈরি করা হয়েছে।


অস্বচ্ছল পরিবারের তরুণ-তরুণীদেরকে আত্মকর্মসংস্থান উপযোগী ও দেশে-বিদেশে চাকুরীর বাজার চাহিদার ভিত্তিতে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য যুগোপযোগী ট্রেড ও টেকনোলজি কারিগরি শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত মোট ১০,২২৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তন্মধ্যে সরকারি ১১৯টি। এছাড়া, কারিগরি ক্ষেত্রে উচ্চ শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, সিলেট ও বরিশাল ইভিনিয়ারিং কলেজে সিভিল, ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স এবং কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান আছে।

 

মাদ্রাসা শিক্ষা

 

মাদ্রাসা শিক্ষার কলেবর বৃদ্ধি ও মানোন্নয়ন, যুগোপযোগী পাঠক্রম প্রস্তুত, সুষ্ঠু তদারকি এবং প্রশাসনিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বর্তমানে সারা দেশে ৭,৬২৪টি এমপিওভুক্ত মাদ্রাসা রয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে ১ম থেকে আলিম শ্রেণি পর্যন্ত কুরআন, আকাইদ ও ফিকাহ, আরবি ও হাদিস বিষয়ের শিক্ষাক্রম উন্নয়ন করা হয়েছে। 


বিদ্যমান সাধারণ শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্য বিধান করে মাদ্রাসা শিক্ষার জনা মাধ্যমিকস্তর পর্যন্ত আরবি বিষয়সমূহ বাতীত সাধারণ আবশ্যিক এবং ঐচ্ছিক বিষয়ে জাইয়া শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রণীত শিক্ষাক্রম ও পাঠাসূচি অনুসৃত হচ্ছে। সকল বিষয়ের পাঠ্যপুস্তক এনসিটিবির মাধ্যমে মুদ্রণ ও বিতরণ করা হচ্ছে। তাছাড়া, ২০১৪ সাল থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত আরবি ও ইসলামী বিষয়সমূহ বাহীত অন্যান্য বিষয়ে যেমন কৃষি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষাসহ প্রতিযোগিতামূলক, আধুনিক ও জীবনমুখী বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন ও ফরম পূরণের কার্যক্রম অনলাইনে সম্পাদিত হচ্ছে।


এছাড়া, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় বাস্তবায়নাধীন ৬৫৩টি মাদ্রাসায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুম স্থাপন প্রকল্পের মাধ্যমে ৩২২টি মাদ্রাসার প্রত্যেকটিতে ০১টি প্রজেক্টর, ০১টি ল্যাপটপ, ০১টি ইন্টারেক্টিভ হোয়াইট বোর্ড, ০১টি স্পিকার, ০১টি ইউপিএস এবং ০১টি মোডেম সরবরাহ কার্যক্রম চলমান আছে এবং মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাপনা এবং প্রশাসনকে দ্রুত, গতিশীল এবং সময়োপযোগী করার লক্ষ্যে MEMIS (Madrasha Education Management Information System) সেল প্রতিষ্ঠার বিষয়টি বাস্তবায়নাধীন।

 

উচ্চশিক্ষা


দেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ ও গুণগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের মাধ্যমে সরকার বেশকিছু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের পুরাতন প্রায় সব জেলাতেই একটি করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে মোট ৪৯টি পাবলিক এবং ১০৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর জন্য সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে নতুন ও পুরাতন বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের একাডেমিক ভবন, শিক্ষার্থী-শিক্ষক কর্মচারীদের আবাসিক ভবনসহ বিভিন্ন ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ করে উচ্চশিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।

 

শিক্ষায় আইসিটি কার্যক্রম

 

শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি সম্পৃক্ত করে একটি দক্ষ ও যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে শিক্ষার সকল স্তরকে সম্পৃক্ত করে ICT in Education Master Plan প্রণয়ন করা হয়েছে। মাধ্যমিক স্তরে সকল শিক্ষার্থীর জন্য কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আইসিটি শিক্ষক নিয়োগ প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি করে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল ও কলেজ) এর জনবল কাঠামো এবং এম.পি.ও নীতিমালা-২০১৮ প্রণয়ন করে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিম্ন মাধ্যমিক স্তরে আইসিটি শিক্ষকদের এম.পি.ও প্রদানের বিষয়টি উন্মুক্ত করা হয়েছে। 

এছাড়াও আইসিটি ল্যাব সংরক্ষণের জন্য কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর (সরকার প্রদত্ত কম্পিউটার ল্যাব চালু থাকলে) পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং কম্পিউটার ল্যাব ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হচ্ছে। সেসিপ এর আওতায় মাধ্যমিক পর্যায়ে আইসিটি বিষয়ে শিক্ষক কর্মকর্তাসহ মোট ১,৫২৮ জনকে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের আইসিটি কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আইসিটি সেল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। 

 

নারী শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ

শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ

নারী শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি কর্মসূচি চালুর ফলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার স্তরে লিঙ্গ বৈষম্য বিলোপ করে ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থীর মধ্যে সংখ্যাসাম্য অর্জন সম্ভব হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন ও আর্থসামাজিক কর্মকাণ্ডে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত উপবৃত্তি প্রদান, বেতন মওকুফ, বই ক্রয়ের জন্য আর্থিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে। পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য নারী শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফি প্রদান করা হয়। তাছাড়া, মেধাবী ছাত্রীদের জন্য সাধারণ মেধাবৃত্তি এবং বৃত্তিমূলক কারিগরি শিক্ষাবৃত্তির পরিমাণ ও সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করা হয়েছে।


 

 


Post a Comment

Previous Post Next Post