খাদ্য নিরাপত্তা কাকে বলে
খাদ্য নিরাপত্তা (Food Security) হচ্ছে
অবাধ খাদ্য সরবরাহ এবং সারা বছর বাদ্যের পর্যাপ্ত প্রাপ্যতা। শুধু খাদ্য নয়, স্বাস্থ্যকর,
পুষ্টিসমৃদ্ধ নিরবিচ্ছিন্ন খাদ্য সরবরাহ প্রয়োজন যার ফলে মানুষের কর্মোদ্যম, কর্মস্পৃহা
বৃদ্ধি পায়। খাদ্য নিরাপত্তার ধারণা বেশ পুরানো। প্রায় ১০,০০০ বছর পূর্বে মিসরীয়
ও চায়না সভ্যতায়ও এর প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়। তখনও দুর্ভিক্ষ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের
আশঙ্কায় খাদ্য মজুদ করে রাখা হতো। গত শতাব্দীর ৭০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে খাদ্য নিরাপত্তা
ধারণা আনুষ্ঠানিক (formal) রূপ লাভ করে। তখন হতে খাদ্য নিরাপত্তা ধারণাটি জাতীয় পর্যায়ে
চিন্তার বিষয় হিসেবে বিবেচনা শুরু হয়। ১৯৭৪ সালে বিশ্ব খাদ্য সম্মেলন অনুযায়ী খাদ্য
নিরাপত্তা বলতে বোঝায়, পর্যাপ্ত খাদ্যের যথাযথ ব্যবহার বৃদ্ধি এবং খাদ্য উৎপাদন ও
এর দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখা।
(FAO)মতে , “খাদ্য নিরাপত্তা
সকল মানুষের সমগ্র জীবনের জন্য মৌলিক খাদ্য প্রাপ্তির ভৌত এবং অর্থনৈতিক অধিকারের নিশ্চয়তাকে
নির্দেশ করে।”
পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে বিশ্বব্যাংক কর্তৃক
দারিদ্র্য ও ক্ষুধা সংক্রান্ত এক রিপোর্টে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টিকে আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে
উপস্থাপন করে বলা হয়, “খাদ্য নিরাপত্তা বলতে সকল মানুষ সমগ্র
জীবনব্যাপী কার্যকর ও স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তাকে
বোঝায়।”
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ
(USDA) এর মতে, “খাদ্য নিরাপত্তার অর্থ হলো একটি পরিবারের
সকল সদস্যেও জন্য সর্বদা পর্যাপ্ত খাদ্যের ব্যবস্থা যাতে তারা একটি কর্মঠ ও স্বাস্থ্যকর
জীবনযাপন করতে পারে।”
সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য এই সংজ্ঞাটির মধ্যে
উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দিক (Dimensions) হলো:
(i) খাদ্যের প্রাপ্যতা (Food
availability),
(ii) খাদ্যের ক্রয়যোগ্যতা (Food
access),
(iii) খাদ্যের উপযোগিতা (Food
Utilization) এবং
(iv) খাদ্যের স্থিতিশীলতা (Food
Stability).
খাদ্য নিরাপত্তা দুই প্রকার:
১। পারিবারিক খাদ্য নিরাপত্তাঃ
প্রতিটি পরিবার যেন প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত
খাদ্য গ্রহণ ও সংরক্ষণ করতে পারে, সেই বিষয়টি সর্বদা গুরুত্ব দিতে হবে।
২। জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তাঃ
জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা সারা দেশের জনগণের
জন্য যথেষ্ট, প্রয়োজনীয়, অবাধ এবং মানসম্মত খাদ্য সংগ্রহের সামর্থ্যের উপর নির্ভরশীল
বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তার সমস্যা
১. খাদ্যের যোগান:
বাংলাদেশে খাদ্যের যোগান
নির্ভর করে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন, খাদ্য আমদানি এবং বৈদেশিক সাহায্য হিসেবে প্রাপ্ত খাদ্য
সাহায্যের উপর। গত তিন দশকে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশে কৃষিতে
বিপ্লব ঘটেছে। জৈব প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন আধুনিক কলাকৌশল প্রয়োগে কৃষি উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি
পেয়েছে। তথাপি খাদ্য আমদানি বন্ধ হয়নি। বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যের প্রয়োজন পূরণে
প্রতি বছর প্রচুর খাদ্য আমদানি করতে হয়।
২. দারিদ্র্য প্রবণতা:
বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি অঞ্চলভেদে বিভিন্ন। উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয়
উপজেলা, জেলাগুলোতে দারিদ্র্যের প্রাবাল্য বেশি। উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতেও একই রকম। ময়মনসিংহ,
নেত্রকোনা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, বগুড়া এবং বান্দরবান, রাঙামাটি জেলাসমূহে চরম দারিদ্র্যসীমার
নিচে বসবাসকারী জনসংখ্যা বেশ উল্লেখযোগ্য। পুষ্টিকর খাবারের আশা না করে শুধুমাত্র খাবার
এখানে সবাই প্রত্যাশা করলেও দারিদ্র্যের চরম কষাঘাতে তা সংস্থান করতে পারে না।
৩. খাদ্য ভোগ
এবং স্বাস্থ্য বিধিঃ
বাংলাদেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতি এবং ভূমিহীন
মানুষের সংখ্যা দ্বারা বোঝা যায়, স্বাস্থ্য বিধি না মেনে শুধুমাত্র জীবন বাঁচানোর
জন্যও সকল মানুষের তিন বেলা খাবার সংস্থান হয় না। খাদ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এ সংকটকে
আরও ঘনীভূত করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন উনড়বত দেশের তুলনায় বাংলাদেশে পুষ্টিহীনতার হার
বেশ উচ্চ।
৪. শিক্ষা:
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা- ২০২০ অনুযায়ী,
দেশের ২৫.৬% জনগোষ্ঠী এখনো সাক্ষরতার বাইরে। মৌলিক শিক্ষা যা মানুষের বিবেককে জাগ্রত
করে এবং উচ্চ শিক্ষার হার আরও কম। শিক্ষার সাথে জীবনমান উনড়বত করার গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
যেহেতু বাংলাদেশের মানুষ প্রকৃত শিক্ষার অভাবে সচেতন হতে পারেনি, তাই তারা খাদ্যের
মান ও পুষ্টিগত গুণাবলি সম্পর্কেও সচেতন নয় ।
৫. জলবায়ু পরিবর্তন:
বাংলাদেশ বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ
প্রভাবের দেশ । গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন,বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি,
পরিবেশ দূষণ, পানি সেচের সংকট, উত্তরাঞ্চলে মরুময়তা ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশে কৃষি
উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এরূপ পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও হুমকির মুখে পড়তে
পারে।
৬. বিবিধ কারণ:
এদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির উচ্চহার, দুর্বল গ্রামীণ অবকাঠামো, দ্রুত কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত, কৃষি উৎপাদন বাড়লেও প্রতি বছর খাদ্য আমদানি করতে হয় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে। এছাড়া স্বল্প সঞ্চয় ও বিনিয়োগ, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, সিডর প্রভৃতির ফলে ভাসমান ছিনড়বমূল মানুষের মিছিল বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। বাংলাদেশ ২০১৩ সালের মধ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও তা আজও অর্জিত হয়নি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণ, দরিদ্র এবং ভূমিহীন প্রান্তিক চাষিদের ভাগ্যোনড়বয়নের লক্ষ্যে ক্রয়ক্ষমতা সৃষ্টি, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলা, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি এবং খাদ্যোৎপাদন বৃদ্ধি ও সংগ্রহের জন্য অনুকূল পরিবেশ রচনা করা না হলে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার স্থায়ী অংশীদার হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
খাদ্য নিরাপত্তায় সরকারের পদক্ষেপ
বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি জনবহুল দেশ।
যদিও খাদ্যের বিষয়ে আমরা মূলত কৃষিনির্ভর তবুও আমরা আমাদের কৃষি ব্যবস্থার তেমন উন্নয়ন
ঘটাতে পারিনি। তাই আজ আমরা খাদ্য আমদানী নির্ভর একটি দেশে পরিণত হয়েছি। বাংলাদেশের
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পূর্বে খাদ্য নিরাপত্তার
সাথে জড়িত বিবিধ বিষয়গুলোকে নীতি নির্ধারকদের বিবেচনায় নিতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তার
সাথে জড়িত বিবিধ বিষয়গুলো হলঃ
১. খাদ্যের মজুদ, সরবরাহ, আমদানী ও চাহিদার
সুষ্ঠু সমন্বয় সাধন;
২. খাদ্যের বর্তমান মজুদ ও ভবিষ্যৎ চাহিদা
মোকাবিলা করার জন্য সুনির্দিষ্ট ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা;
৩. বিশাল জনগোষ্ঠীকে মানবসম্পদে পরিণত
করা;
৪. প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বাধিক ব্যবহার
নিশ্চিত করা ও অপচয় রোধ করে অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করা;
৫. বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের পরিধি
বৃদ্ধি করা;
৬. জনসংখ্যা, উৎপাদন, প্রাকৃতিক সম্পদ
ও খাদ্য উৎপাদনের মধ্যে সমন্বয় সাধন;
৭. খাদ্যের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চাহিদা মোকাবিলা
করার জন্য প্রয়োজনীয় মজুদ নিশ্চিত করা
৮. আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সঠিক সময়ে
ও প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে খাদ্যশষ্য আমদানী নিশ্চিত করা ইত্যাদ
খাদ্য নিরাপত্তায় সরকারের পদক্ষেপ
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ
সরকার বহুমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। খাদ্য নিরাপত্তার সাথে একটি দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক
স্থিতিশীলতা নির্ভর করে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কৃষিখাত সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে পড়ায়
বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা বড় ঝুঁকির মুখে পড়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও
বিশেষজ্ঞগণ বিভিন্ন দেশকে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করে দিচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তা
নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ হলো নিম্নরূপ:
১. নীতি প্রণয়ন:
১৯৯৬ বাংলাদেশে খাদ্য নীতি প্রণয়ন হয়।
এতে সমন্বিতভাবে খাদ্য নিরাপত্তার সকল দিক (all Dimensions) যেমন খাদ্যের প্রাপ্যতা,
ক্রয়যোগ্যতা, উপযোগিতা বা ব্যবহার গুরুত্ব পায়। তিনটি মূল লক্ষকে কেন্দ্র করে খাদ্য
নীতি প্রণীত হয়। তা হলো:
ক. নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্যের পর্যাপ্ত
ও স্থিতিশীল সরবরাহ।
খ. ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ।
গ.সকলের জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার
নিশ্চিত।মহিলা ও শিশুদের জন্য অগ্রাধিকার।
জাতীয় কৃষিনীতি ২০১৮ প্রণয়নঃ
কৃষিখাতের সার্বিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন
ফসলের উন্নত এবং প্রতিকূলতাসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন, নতুন শস্যবিন্যাস উদ্ভাবন,পানিসাশ্রয়ী
সেচ প্রযুক্তি আবিষ্কার, ভূপরিস্থ পানি ব্যবহারের মাধ্যমে সেচ এলাকা সম্প্রসারণ, সমন্বিত
বালাই ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি অনুসরণ, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, ট্রান্সজেনিক ফসল উৎপাদন প্রভৃতি
কার্যক্রম গ্রহন করা হয়েছে। পরমাণু ও জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করে লবণাক্ততা সহিষ্ণু
এবং স্বল্প- সময়ের শস্যের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিশাল উপকূলীয়
এলাকা ধান চাষের আওতায় আনার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। সেচ সুবিধার সম্প্রসারণ ও সেচ যন্ত্রপাতির
সহজলভ্যতা বৃদ্ধি, ভূপরিস্থ পানি ব্যবহার করে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ, লক্ষ্যভিত্তিক
কৃষি সম্প্রসারণ, কৃষিজাত পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ, ফসল সংরক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা
গ্রহণসহ সকল কৃষিজাত পণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
ফসলের উৎপাদনশীলতা, উৎপাদন এবং কৃষকের আয় বৃদ্ধি, শস্যবহুমুখীকরণ, পুষ্টিসমৃদ্ধ নিরাপদ
খাদ্য উৎপাদন, বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়ন, লাভজনক কৃষি ও দক্ষ প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের
মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার
উপর গুরুত্ব আরোপ করে জাতীয় কৃষিনীতি ২০১৮ প্রণয়ন করা হয়েছে।
২. করোনা মহামারীতে গৃহীত উদ্যোগ:
বিশ্বব্যাপী মহামারি সৃষ্টিকারি করোনাভাইরাস
(কোভিড-১৯) এর প্রভাব বাংলাদেশের কৃষিতেও পড়েছে। করোনা ভাইরাস উদ্ভুত পরিস্থিতিতে
অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের কর্মপরিকল্পনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার
হলো কৃষিখাতের উৎপাদন অব্যাহত রাখা। দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য
কৃষি উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে শ্রমিকের
গমনাগমন সমস্যা ও আগাম বন্যার বিষয় বিবেচনায় রেখে, হাওড় অঞ্চলের সাত জেলার ধান কাটার
জন্য জরুরি ভিত্তিতে কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। করোনার
প্রভাব মোকাবেলায় বিগত বছর সমূহের ন্যায় কৃষি খাতে ভর্তুকি, সার-বীজসহ অন্যান্য কৃষি
উপকরণের প্রণোদনা ও সহায়তা কার্ড, কৃষি পুর্নসাবন সহায়তা, স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে
বিশেষ কৃষি ঋণ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী
খাদ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে চাষযোগ্য প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা
গ্রহণ করা হয়েছে।
৩. খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধিঃ
দেশে পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য উৎপাদন না হলে
আমদানি নির্ভরতার উপর দাঁড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয় । তাই সরকার
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কৌশল হিসাবে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ
করে। এ লক্ষ্যে ইউরিয়া ব্যতীত সকল প্রকার সারের মূল্য অর্ধেকে কমিয়ে আনা, ভালো বীজ
সহজলভ্য করা, ডিজেলের মূল্যে কৃষককে ভর্তুকি দেয়া, ন্যায্যমূল্যে কৃষি উপকরণ সহজলভ্যকরণ
ও সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ ও সেচ যন্ত্রপাতির সহজলভ্যতা বৃদ্ধি, ব্যাংক
ঋণ সহজ করাসহ কৃষিতে ভর্তুকি বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়। এতে কৃষকরা ফসল উৎপাদনে উৎসাহী
হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছিলো ৪৫৪.০৪ লক্ষ মেট্রিক টন।
৪. কৃষি গবেষণায় গুরুত্ব প্রদান:
কৃষকের চাহিদা ও বাজার চাহিদাভিত্তিক কীটপতঙ্গ-রোগবালাই
মুক্ত, খরা/লবণাক্ততা সহিষ্ণু, আবহাওয়া ও পরিবেশ উপযোগী এবং স্বল্প সময়ে
(Short-duration) ফসল পাওয়া যায় এরূপ শস্যের জাত ও প্রযুক্তি
উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণসহ সার্বিক কৃষি গবেষণাকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। ইতোমধ্যে
পরমাণু ও বায়োটেকনোলজি পদ্ধতি ব্যবহার করে লবণাক্ততা সহিষ্ণু এবং স্বল্পসময়ের শস্যের
জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা হয়েছে।
৫. ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের সহায়তা:
দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের উৎপাদিত
শস্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে নষ্ট হওয়ার কারণে তাদেরকে শস্যমূল্য সহায়তার জন্য কৃষিবিমা
এবং কৃষক পর্যায়ে কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্যও বিভিন্ন উদ্যোগ
গ্রহণ করা হয়েছে ।
৬. কৃষি জমির আওতা সম্প্রসারণ:
লবণাক্ততা সহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবনের
ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিশাল উপকূলীয় এলাকা ধান চাষের আওতায় আনার সুযোগ সৃষ্টি
হয়েছে। আবার স্বল্প সময়ের (সর্বোচ্চ ১১০ দিন) শস্যের জাত চাষের ফলে উত্তরাঞ্চলের
মঙ্গা দূরীকরণ সম্ভব হয়েছে। এছাড়া জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও হাওর এলাকায় পরিকল্পিত পানি
নিষ্কাশনের মাধ্যমে কৃষি জমির আওতা সম্প্রসারণ ও একাধিক ফসল উৎপাদনের সুযোগ সৃষ্টির
মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
৭. অভ্যন্তরীণ খাদ্যশস্য সংগ্রহ:
সরকার প্রতি বছরে কৃষকদের মূল্য সহায়তা
ও খাদ্য নিরাপত্তা মজুদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণভাবে খাদ্যশস্য সংগ্রহ কার্যক্রম
গ্রহণ করে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ খাদ্যশস্য সংগ্রহ হয়েছিল ২৪.১৮ লক্ষ মে. টন
এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে ২২.৬৯ লক্ষ মে.
টন।
৮. খাদ্যশস্য আমদানি:
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে
খাদ্য চাহিদার একটি বিরাট অংশ সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে, নীতিমালার মধ্য থেকে প্রতি
বছর আমদানি করে থাকে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে (ফেব্রু. ২০২০ পর্যন্ত) মোট খাদ্যশস্য আমদানির
পরিমাণ ছিলো ৪৬.২১ লক্ষ মেট্রিক টন।
৯. খাদ্য নিরাপত্তার জন্য খাদ্য মজুদ:
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার নিরিখে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত
করতে ও আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ গড়ে তোলার চেষ্টা
করেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে (ফেব্রু ২০২০ পর্যন্ত) দেশে খাদ্যগুদামসমূহের মোট ধারণক্ষমতা
২১.৭২ লক্ষ মেট্রিক টন। ধারণক্ষমতা আরও বাড়ানোর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
দেশে উৎপাদিত খাদ্যশস্য অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সংগ্রহ করে এবং বিদেশ হতে আমদানি করে
এ মজুত গড়ে তোলা হয়।
১০. সরকারি খাদ্যশস্য বিতরণ:
দেশের বিপুল সংখ্যক নিম্নব আয় ও দরিদ্র
মানুষের জন্য খাদ্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা বিধান করা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। এ শ্রেণির
(দরিদ্র, হতদরিদ্র প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী, গার্মেন্টস শ্রমিক ও
অন্যান্য) জনগোষ্ঠীর জন্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে খাদ্য সরবরাহ করা বড় চ্যালেঞ্জ। সরকারি
খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থার (Public Food Distribution Systems) আওতায় নানা ধরনের কর্মসূচি
রয়েছে। এ সব কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হলো সামাজিক নিরাপত্তা বলয় গড়ে
তোলা। এর মধ্যে রয়েছে:
১. খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রির (ওএমএস)
মাধ্যমে নিম্নব আয়ের মানুষের জন্য খাদ্য প্রাপ্তির সুযোগ সৃষ্টি করা,
২. খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি
3. Essential Priority (EP), Others
Priority (OP)
৪. বৃহৎ জনবল (এল.ই)
৫. দুস্থ জনগোষ্ঠীর জন্য বিনামূল্যে খাদ্য
সরবরাহ করা, ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ),
৬. দুর্যোগকালীন রিলিফ (জিআর),
৭. খাদ্যশস্যের বিনিময়ে গ্রামীণ যোগাযোগ
অবকাঠামো ও প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন [টেস্ট রিলিফ (টি আর), কাজের বিনিময়ে খাদ্য-কাবিখা।]
৮. ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট (ভিজিডি)
কর্মসূচি ইত্যাদি ।
গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে সরকারিভাবে
২৯.১৭ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বিতরণের সংশোধিত বাজেটের বিপরীতে ২৫.৯৩ লক্ষ মেট্রিক
টন খাদ্যশস্য বিতরণ করা হয় (আর্থিক খাতে ১৩.৮৭ লক্ষ মেট্রিক টন এবং ত্রাণমূলক খাতে
১২.০৬ লক্ষ মেট্রিক টন)। ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ৩২.১৭ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য
বিতরণের সংস্থান রাখা হয়েছে। এর বিপরীতে ফেব্রুয়ারি ২০২০ পযর্ন্ত নগদ সহায়তা খাতে
যেমন- এসেনসিয়াল প্রায়োরিটি (ইপি), আদারস প্রায়োরিটি (ওপি), বৃহৎ জনবল (এল.ই), ওএমএস,
ফেয়ার প্রাইজ কার্ড, মুক্তিযোদ্ধা) ৮.৭০ লক্ষ মেট্রিক টন সরাসরি খাদ্য সহায়তা খাতে
(কাবিখা, টিআর, ভিজিএফ, ভিজিডি, জিআর ও অন্যান্য) ৫.৯১ লক্ষ মেট্রিক টন অর্থাৎ সর্বমোট
১৪.৬১ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বিতরণ করা হয়েছে।
১১. নিরাপদ খাদ্য:
দেশের জনসাধারণের নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ এর আলোকে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠন
করা হয়েছে, যা ফেব্রুয়ারি ২০১৫ থেকে কার্যক্রম শুরু করেছে। নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে ব্যাপক
জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিবছর ২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস হিসাবে
ঘোষণা করা হয়েছে এবং ২০১৮ সাল থেকে দিবসটি পালতি হয়ে আসছে। আইনটি কার্যকর হওয়ার
সাথে সাথে নিরাপদ খাদ্য সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি, আইনটির মৌলিক বিষয়সমূহের উপর সম্যক
ধারণা ও সঠিক প্রয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও সংস্থানসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ
কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার সমন্বয়ে করবে। সমগ্র দেশে নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনার স্বার্থে সকল খাদ্য ও খাদ্য উপাদান উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, প্রস্তুতকরণ ও বিপণন ইত্যাদি কার্যক্রম পরিবীক্ষণ এবং উৎকৃষ্ট পদ্ধতির অনুশীলন ও তা অনুশীলনে উপাত্ত বিশ্লেষণ, সমাধান প্রভৃতি কার্যক্রম “বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এর দায়িত্বের মধ্যে থাকবে।(অক্টোবর-নভেম্বর) হাতে কোনো কাজ থাকে না।
আয়ের কোনো উৎস না থাকায় বাজারে পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ থাকলেও তাদের পক্ষে তা কিনে খাওয়া সম্ভব হয় না। উত্তরাঞ্চলের এরূপ খাদ্যাভাবকে আধাদুর্ভিক্ষ বা মঙ্গা নামে পরিচিত। এরূপ খাদ্যাভাব দূর করতে ‘অতি দরিদ্রদের জন্য ১০০ দিনের কর্মসংস্থান কর্মসূচি নামে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করা হয় । এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলোঃ
(ক) অতি দরিদ্র বেকার জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থান
ও ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি,
(খ) সার্বিকভাবে জনগোষ্ঠী ও দেশের জন্য
সম্পদ সৃষ্টি করা এবং
(গ) গ্রামীণ এলাকায় ক্ষুদ্র পরিসরে অবকাঠামো
ও যোগাযোগ উন্নয়ন, যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিবেশ উন্নয়ন ।
এছাড়া মৌসুমি বেকারদের জন্য ৮০ দিনের
কর্মসংস্থান প্রকল্প রয়েছে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে উত্তরাঞ্চলের মঙ্গাপীড়িত
৫টি জেলা যথা: রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম এলাকায় কর্মচাঞ্চল্যের
সৃষ্টি হয়েছে এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে গতিশীলতা এসেছে।
১২. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা:
খাদ্য নিরাপত্তা উনড়বয়নে ২০০৮ থেকে ২০১৫ মেয়াদি বাংলাদেশ ফুড পলিসি অ্যাকশন প্ল্যান (Bangladesh Food Policy Action Plan, 2008-2015 ) গ্রহণ করে। এর আলোকে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা বিনিয়োগ পরিকল্পনা (Bangladesh Food Security Country Investment Plan - CIP) প্রণয়ন করা হয়। দানাদার খাদ্যশস্যসহ পুষ্টিকর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ পদক্ষেপ নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়। একই সাথে কৃষি ফসল, মৎস্য চাষ, পশু সম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি, প্রক্রিয়াকরণ ও বাজার নিশ্চিতকরণসহ ১২টি খাতকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে ৭.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি প্রাক্কলন ব্যয় নির্ধারণ করা হয়।
একটি আদর্শ পরিকল্পনা
হিসাবে CIP ২০১০ সালের জুলাই মাসে ম্যানিলায় অনুষ্ঠিত ‘এশিয়া ও প্রশান্ত
মহাসাগরীয় খাদ্য নিরাপত্তা বিনিয়োগ ফোরাম’ মডেল হিসেবে
উপস্থাপন করে এবং বাংলাদেশকে দৃষ্টান্তমূলক দেশ (Show Case Country) হিসেবে তুলে ধরা
হয়। একইভাবে অক্টোবর, ২০১০ সালে রোমে অনুষ্ঠিত বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা কমিটির ৩৬তম
সভায় বাংলাদেশের ‘খাদ্য নিরাপত্তা বিনিয়োগ পরিকল্পনা’ অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত
হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এর ফলশ্রুতিতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পথ সুগম হয়। ইতোমধ্যেই
বিশ্বব্যাংকের বিশ্ব কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচি (GAFSP) থেকে ৩৭০ কোটি টাকা অনুদান
পাওয়া গেছে ।
দেশের দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের অবস্থার
উন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়ে সরকার সামাজিক উন্নয়ন খাতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করেছে। ২০২০-২১
অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ২৬,৭৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।
টেকসই দারিদ্র্য বিমোচনে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদায় প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণে
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে নীতি ও কৌশল নির্ধারণপূর্বক একটি
‘জাতীয় সামাজিক
নিরাপত্তা কৌশল’(National Social Protection Strategy) প্রণয়ন করা
হয়েছে। ফলে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা সম্প্রসারণ এবং এ কর্মকান্ডকে জোরদার
করা সম্ভব হয়েছে।